জলবায়ু পরিবরতনঃ আমাদের - TopicsExpress



          

জলবায়ু পরিবরতনঃ আমাদের অবস্থান একবিংশ শতাব্দীর শুরতেই জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন ও মানবজাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর আন্ত : সরকারী প্যানেল (Intergovernmental Panel on climate Change-IPCC) বিজনেস আজ ইউজুয়াল পটভূমিতে হিসেব করে দেখিয়েছে যে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা ৪.২ ডিগ্রী বাড়বে । জলবায়ুর পরিবর্তনের ব্যাপারটি এক সময় আশংকা মনে করা হতো, এখন প্রায় সকলে একে অবশ্যম্ভাবী মনে করেন ।জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বে একটি মারাত্মক হুমকি রূপে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বৃদ্ধি, আবহাওয়া উপাদান সমূহে পরিবর্তন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণ এবং এদের প্রভাবে আজ জীবন ও জীবিকা বিপন্ন। যদিও জলবায়ু পরিবর্তন একটি বিশ্বব্যাপি সমস্যা কিন্তু এর প্রভাবে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মত দরিদ্র পীড়িত দেশসমূহ। ভৌগোলিক অবস্থান, অত্যাধিক জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীলতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের বিপন্নতা খুবই ভয়াবহ। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ধারণাঃ সাধারণভাবে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন যা প্রাকৃতিক ভাবে ঘটে তাকে বোঝায়। পৃথিবীর কোন অঞ্চলের আবহাওয়ার গড় অবস্থার পরিবর্তন মানুষের কর্মকান্ডের ফলেও ঘটতে পারে। মনুষ্যসৃষ্ট দূষণের কারণে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বনীকরণ ও মরুকরণের ফলে ভূমিতে প্রতিফলনীয়তা পরিবর্তন ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক সৌর শক্তি শোষণের পরিমাণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বিদু্যৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত সালফারের এরোসল মেঘমালাকে পরিবর্তিত করে। ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের কারণে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তরের পরিবর্তন জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। জলবায়ুর পরিবর্তনের গড় জলবায়ুর মাত্রা উন্নীত হবে। তবে প্রকৃতপক্ষে গড় নয়, আবহাওয়ার চরম ভাবাপন্নতাই ক্ষতি ঘটাবে বেশি। এতে ঘটবে প্রচন্ড খরা ও ঝড়, পরিণামে ঘটবে মৃতু্য । জলবায়ু পরিবর্তন মূলত একটি প্রকৃতিক ঘটনা কিন্তু মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বিশ্ব উশ্নায়ন (Global Warming) নামে অভিহিত। শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই বায়ুমন্ডলে তাপ ধরে রাখতে সক্ষম গ্যাস সমূহের পরিমান বাড়ছে। ফলে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বিজ্ঞানের ভাষায় এক গ্রীনহাউজ প্রভাব (Greenhouse Effect) বলে। আর গ্রীনহাউজ প্রভাবের জন্য দায়ী গ্যাসসমূহকে গ্রীনহাউজ গ্যাস বলে। গ্রীনহাউজ গ্যাস সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: কার্বনডাইঅক্সাইড (CO2), ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন (CFC), নাইট্রাসঅক্সাইড (NO2) এবং মিথেন (CH4)। গত শতাব্দিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বেড়েছে ২৫%, নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমান বেড়েছে ১৯% এবং মিথেনের পরিমান বেড়েছে ১০০%। বিশ্ব উষ্ণায়ন, আবহাওয়ার ধরন এবং ঋতু বৈচিত্র পাল্টে দিচ্ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- অতি বৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ইত্যাদি ঘটার সম্ভাবনা ও ফলে ক্ষতির পরিমান বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যাঃ ২০০৭ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু বিষয়ক পরিষদের (আইপিসিসি) চতুর্থ প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব প্রমাণ এবং বিশ্বব্যাপী এর ক্ষতিকর প্রভাবের প্রভূত বিবরণ রয়েছে । গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া যদি অব্যাহত থাকে তবে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের গাছপালা ও পশুপাখির ২০ শতাংশই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে সমুদ্র উপকতবর্তী নিম্ন এলাকাসমূহ চিরতরে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত স্পষ্ট । আইপিসিসি এর মতে এই মূহুর্তে বায়ুমন্ডলে যে পরিমাণ গ্রীনহাউস গ্যাস আছে তা ২০২৫ সাল নাগাদ ১.৮ ফা: তাপ বাড়াবে এবং পরবতর্ী শতাব্দীর শেষ নাগাদ এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ১০ ফা: । ত্রতে স্থানীয় আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হবে এবং তা সামাজিক ও পারিবেশিক ক্ষেত্রে সুদূর প্রসারী প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে । স্বল্প সময়ের তাপমাত্রার নাটকীয় পরিবর্তন মানব স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে। তাপতরঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষের বিপদ সবচেয়ে বেশী হবে। এর প্রভাব স্বাভাবিক কার্যকলাপে বিঘ্নতা ছাড়াও শ্বাস প্রশ্বাসতন্ত্র, বৃক্কতন্ত্র, অনালিগ্রন্থিতন্ত্র অথবা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক হয়। ম্যালরিয়াসহ কয়েকটি ভেক্টরবাহিত রোগের বন্টনের ওপর অনুমিত গড় তাপমাত্রাবৃদ্ধির একটি উল্ল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকতে পারে। জীবানু বাহকের জন্য অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি, মশা ও অন্যান্য রোগ বাহকের জীবনের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেতে পারে । জীবাশ্ম জ্বালানীর ফলে বায়ুদূষণ প্রতিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে ২০৬০ সালের পরে non melanoma skin ক্যান্সারের ঘটন সংখ্যা শতকরা ৬ থেকে ৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্র সমতল বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বৃহৎ শহর ও উপকূলের উর্বর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করে লক্ষ লক্ষ জনসাধারণকে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করবে। এটি শুধু ব্যবস্থাপনার অযোগ্য বিরাট সংখ্যক পরিবেশগত উদ্বাস্তুই (Environmental Refugees) তৈরি করবেনা বরং খাদ্য ঘাটতি এবং তার প্রেক্ষিতে কিছু কিছু অঞ্চলে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে । অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও আদ্র অবস্থা Bacteria এবং অন্যান্য বিষাক্ত উৎপাদক, যেমন- ফাংগাস থেকে নি:সৃত বিষাক্ত পদার্থ (Aflatoxins) বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তার ফলে খাদ্য দূষিত হয়ে নষ্ট হওয়ার পরিমাণ সম্ভবত বৃদ্ধি পাবে। আকাশ মেঘবৃত হওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে ভূপৃষ্টে পতিত সৌর বিকিরণ হ্রাস পাবে, যা তাপমাত্রা, বাস্পীয় প্রস্বেদন ও বারিপাতকেও হ্রাস করবে সল্পমেয়াদে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার ফলে কৃষি উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে চাষাবাদের সময়কাল সংকূচিত হতে পারে এবং উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে পৃথিবীর উষ্ণতাবাড়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বনাঞ্চল এবং সমুদ্রের ওপর। বনাঞ্চলে প্রভাব পড়লে প্রাকৃতিক ভারসাম্যেও পরিবর্তন আসতে পারে, প্রাণীকূল, ভূমি, পানি ইত্যাদির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে । জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাবঃ উচ্চহারে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও অপচয় এবং এরোসল সপ্রেসহ অন্যান্য পরিবেশ বিনষ্টকারী কীটনাশকসমূহের উৎপাদন ও ব্যাবহারের মাধ্যমে ফ্লোরোফ্লুরো কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় নানা রোগের উপসর্গ সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই গ্যাসগুলো ওজোন স্তরকে হালকা করে সৃষ্টি করছে ফাটল । জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাটি অতি ব্যাপক, বিস্তৃত ও মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরুপ, ভূপৃষ্টের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলতে শুরু করবে এবং জলভাগ তুলনামূলকভাবে স্ফীত হবে। ফলশ্রুতিতে উপকূলীয় নিম্মাঞ্চলে বসবাসরত প্রায় দুকোটি মানুষ বাস্তহারা হবে, এদেশের নিচু এলাকাসমূহ প্লাবিত হবে, স্বাদু পানি এলাকায় লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটবে। এমনকি ভূগর্ভস্থ পানির ক্ষেত্রেও এটা হবে। বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, খরা ও নদী ভাঙ্গনের প্রকোপ বাড়বে। খরা, বন্যা ও লবণাক্ততার ফলে ফসলের উৎপাদন মারাত্মক ভাবে হ্রাস পাবে । পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, কার্বন-ডাই-অক্্রাইডের মূল উৎস হলো কয়লা, পেট্রোলিয়াম, ডিজেলের মত জ্বালানি ব্যাবহার, বন নিধন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাপক শিল্পায়ন ইত্যাদি। অকেজো ও মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনে ব্যবহুত জ্বালানি ভালভাবে নিঃশেষ না হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কার্বন-ডাই-অক্্রাইড নিঃসরিত হয় । গোটা বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় উন্নত অনুন্নত নির্বিশেষে সব দেশের আবহাওয়াতেই মারাত্মক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই স্বাভাবিক আবহাওয়া জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় কমে যাচ্ছে শীতকালের স্থায়িত্ব, বাড়ছে ভূমি ও পাহাড় ধ্বস, ঘন ঘন দাবানল হচ্ছে, দীর্ঘায়িত হচ্ছে খরা, ঝড়ঝাঞ্ঝা, বন্যা, টর্নেডো, সাইক্লোনের মাত্রা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষতিকর প্রভাব। ফলে ধ্বংস হচ্ছে কৃষি, শিল্প, অর্থনৈতিক সম্পদ এবং মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে হুমকির সম্মুখীন। ১৮৫০-১৮৬০ সময়কার তুলনায় বর্তমান পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে বিশ্বের তাপমাত্রা প্রতিদশকে ০.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হারে বাড়ছে । জলবায়ুর পরিবর্তন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিশুস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।WHO পরিবেশিক স্বাস্থ্য (Environmental Health)এব সংজ্ঞায় বলেছে, Environmental Health includes both the direct pathological effects of chemicals, Radiation and some biological agents and the effects (obften indirect) on health and well being of the broad physical, psychological, social and aesthetic environment, which include housing, urban development, land use and transport . জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশের দক্ষিণের বিরাট অংশ তলিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় করণীয়ঃ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সামপ্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের যে আকস্মিকতা, দ্রুততা ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে তার পেছনে প্রধানত মানুষের কর্মকান্ডই দায়ী১৮। মানুষকেই এই ঝুঁকি থেকে বাচাঁর উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরুকরে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। ব্যক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকার, জাতীয়-আন্তর্জাতিক-আঞ্চলিক সংগঠন সকলের ভূমিকাই এক্ষেত্রে মুখ্য। সম্মিলিত প্রয়াসই পারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার প্রচেষ্টাকে সফল করতে। এক্ষেত্রে আমার তথা আমাদের করণীয় হচ্ছে, ১) কর্মপন্থা প্রণয়নঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সকল বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে তা মোকাবেলার জন্য এখন থেকেই কর্মপন্থা প্রণয়নের দিকে নজর দেয়া দরকার । ২) সতর্কতামূলক পথ অবলম্বনঃ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রত্যেকটা দেশের ভূমিকাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই আন্ত-র্জাতিক আলোচনায় সকলকে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে কর্মসূচী গ্রহণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে । যে সব দেশ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তাদেরকে সতর্কতামূলক পথ অবলম্বন করতে হবে। ৩) মনোযোগী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনাঃ আই, পি, সির ১৯৯২ সালে সংকলিত উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনার একটি রিপোর্টে সাগরা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া স্বরুপ তিন প্রকার অভিযোজন প্রক্রিয়া চিহৃিত করা হয়েছে। এগুলো প্রত্যাহার (Retreat), উপযোজন (Accommodation) এবং প্রতিরক্ষা বা সংরক্ষণ (Protection) । ব্যাপারটি আমাদের যুক্তিসম্মত মনোযোগী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে হবে, সেখানে নিলিপ্ত আবিষ্কার সুযোগ নেই। ৪) জমিকে কৃষি উপযোগী করাঃ পৃথিবী ব্যাপী মোট খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা হয়নি। যে সকল দেশে জনবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জমিকে কৃষি উপযোগী করা যায় সেখানে সাধারণভাবে কমবেশী স্বল্পকালীন কৃষি উৎপাদন থেকে আয় হ্রাস ও খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আঞ্চলিক, ঋাতুভিত্তিক ও আন্তঃবার্ষিক পার্থক্য থাকতে পারে । ব্যাপারটিকে গুরুত্বসহ চিন্তা করতে হবে এবং বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। ৫) গণমাধ্যমের ব্যবহার নিশ্চিতকরণঃ বর্তমান সময়ে জলবায়ূর পরিবর্তন সম্পকর্ীত খবরের ব্যাপক প্রচার ও দ্রুত বিস্তৃতি আধুনিক গণমাধ্যমেরই অবদান । গণমাধ্যম জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারে, এক্ষেত্রে গণমাধ্যম সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যম ছাড়া প্রয়োজনীয় তথ্য জনগণের নিকট পৌঁছানো সম্ভব নয়। ৬) কমু্যনিটি রেডিও বৃদ্ধি ও ব্যবহারঃ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণ সম্পর্কে বিশ্ববাসী বর্তমানে খুবই উদ্বিগ্ন এবং সচেতন। এটাকে আরো অর্থসহ ও কার্যকর করতে কমু্যনিটি রেডিও দ্রুত কাজ করতে পারে। এর সম্ভাবনা এদেশে জোরালোভাবে অবস্থান করছে। তাই একে কাজে লাগাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন । ৭) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনাঃ জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলার কৌশল সম্পর্কে সচেতন থেকে সম্ভব্য প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের অবশ্যই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। এ সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত গবেষণা ও তথ্যের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করে জলবায়ূর পরিবর্তন সম্পর্কে অবহত হয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত থাকতে হবে । গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনা করা দরকার । ৮) অবকাঠামোগত বিষয়াদিকেও গুরুত্বদানঃ জনসাধারণের খাপ খাওয়ানোর ক্ষমাতাকে বিবেচনায় রেখে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় কাঠামোগত পরিকল্পনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত বিষয়াদি, যেমন-ব্যাপক ভিত্তিতে বনায়ন, জনসাধারণকে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সহনশীল করে তোলা ইত্যাদি কর্মসূচী জরুরী ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া দরকার। ৯) শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাবধানতা অবলম্বনঃ আগামী প্রজন্মের সুন্দর ও নির্মল আবাস বিনির্মানের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র গোষ্ঠী স্বার্থের বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর এখনই সাবধান হওয়া উচিৎ। তানা হলে আমরা হয়ত দূর ভবিষ্যতের মানব সমাজের জন্য বিভীষিকাময় পরিবেশ ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারবনা । ১০) প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াসঃ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজম্মের স্বার্থে পৃথিবীর জলবায়ূ সুরক্ষার জন্য সকলদেশ তথা বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী প্রতিটি দেশই নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের অধিকার সংরক্ষণ করে। তবে কোন দেশের কর্মকান্ড যাতে অন্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি না করে সেদিকে তাদেরকে যত্মবান হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটি কোন দেশের নিজস্ব সীমানার মধ্যে আবদ্ধ নয়। এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী। যে কারণ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্বের সকল দেশের সম্মিলিত অংশগ্রহণ দরকার। প্রতিটি দেশকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রকৃতিতেও যাতে ক্ষতিকর সকল গ্যাস বেশি মাত্রায় শোষিত হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে । ১১) প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করাঃ জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সমস্যাবলির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। যেমন- অবাধে গাছপালা নিধন ও বনভূমি উজাড় করা। পরিকল্পিতভাবে কল-কারখানা স্থাপন ও বজর্্য নিস্কাশনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভূমিকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বাঁধা নিমর্াণ। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি যাতে স্বাদু পানির জলাশয় ও নদীতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাবসাথা নেয়অ। প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে গণ সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠ্যসূচিতে এসংক্রান্ত বিভিন্ন দিকতুলে ধরা। জলবায়ূ পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সময়ের অপরিহার্য দাবী। ১২) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণঃ জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর কৃষি, বণ ও পশু সম্পদ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এথেকে পরিত্রানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পোান্নত দেশসমূহ যদি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাহলে বায়ুমন্ডলে সি,এফ, সি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবেনা। জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধ করলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা রোধ করা যাবে। পরিবেশকে বিশুদ্ধ করে গড়ে তুলতে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। বাণিজ্যিক প্রয়োজনে প্রত্যেকটি দেশকে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস উৎপাদনের অনুমতি দেয়া যেতে বায়ুমন্ডলে এ গ্যাসের পরিমাণ হ্রাসপায়। ওজোনস্তরের ক্ষয়রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। ১৩) অবহেলা নয় গুরুত্ব দেয়াঃ জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গৃহীত কর্মসূচি সম্পর্কে নিয়মিত প্রকাশনা চালূ রাখতে হবে। গাছপালা, বনানী ও সমুদ্র সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে। সরকারকে উপকূলীয় অঞ্চল, পানি সম্পদ ও কৃষির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে সহযোগিতা করতে হবে। খরা ও বন্যাপ্রবণ এলাকা সংরক্ষণে সহযোগিতা করতে হবে। জলবায়ূ পরিবর্তন ও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কৌশল বাস্তবায়নে জনগনের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা এবং তার জন্য সূযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ১৪)বিদ্যমান কাঠামোর পরিবর্তনঃ জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য আমাদের আর্থ সামাজিক রীতিনীতি ও অর্থনীতির বিদ্যমান কাঠানোর মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবীদরা যেসব নীতি নির্ধারণী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, তার মধ্যে আছে, কার্বন/জ্বালানিকর, বিক্রয়যোগ্য পারমিট, কার্বন জ্বালানির উৎস থেকে সাবসিডি প্রত্যাহার, কার্বনমুক্ত উৎসবের জন্য ভতর্ুকি ও কর সুবিধা প্রদান, রিফান্ড ব্যবস্থা, কর্মদক্ষতার মান অর্জন বা প্রযুক্তি, জ্বালানির মিশ্রণ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা, পণ্য নিষিদ্ধকরণ, স্বেচ্ছামূলক চুক্তি, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ ইত্যাদি । ১৫) ঝুঁকি ঠেকাতে কর্মকৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়নঃ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমস্যাগুলো চিহৃিত করার পাশাপাশি সমাধানের প্রচেষ্ঠায় সম্মিলিত অংশগ্রহণের ব্যাপারটি প্রয়োজনীয় নিঃসন্দেহে। পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ স্বাক্ষরতা পরিবেশ সংরক্ষণের প্রধান শর্ত। যেহেতু জলবায়ুর পরিবর্তন প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলবে। খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে বা প্রতিক্রিয়া হ্রাস করার মাধ্যমে সব পরিবর্তন বা প্রতিক্রিয়াকে ঠেকানো যাবেনা। তবে ঝুঁকি কমানো সম্ভব হতে পারে। তবে ঝুকি কিছুটা বিলম্বিত করা যাবে । সেহেতু ঝুঁকি ঠেকাতে বাস্তব সম্মত কর্মকৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মুকাবেলায় করণীয় ;বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত: জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা খুবই নগন্য অথচ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেরই অবস্থান শীর্ষে। আর একারণে প্রাকৃতিক দুযের্াগে বাংলাদেশকে দিতে হয় চরম মূল্য। বাংলাদেশের জলবায়ু বিপন্নতার মূল কারণগুলো হলো- ভৌগোলিক অবস্থান নিচু ও সমতল ব-দ্বীপিয় ভূমিরূপ ঋতু বৈচিত্র বেশি এবং বর্ষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যার ব্যাপক ঘনত্ব ও দরিদ্রতা অধিকাংশ জনগন কৃষক কৃষিকাজ জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত বাংলাদেশে প্রতিদিন জলবায়ু বিপন্নদের সংখ্যা বাড়ছে। নদী ভাঙ্গন, প্লাবন ইত্যাদি কারণে মানুষ ঘরবাড়ি, জমি হারিয়ে পরিবেশ উদ্বাস্তু হচ্ছে যারা পরবর্তীতে শহরাঞ্চলে বস্তিতে মানবেতর জীবন যাপন করে। IPCC (Intergovernmental Panel on Climate Change) এর চতুর্থ সমীক্ষা রিপোর্টেও বাংলাদেশের জলবায়ু জনিত পরিবর্তন গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো- বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে ১০ সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ৮,৩০,০০০ হেক্টর আবাদি জমির ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভয়াবহ বন্যার পূনরাবৃত্তি ঘটে গত ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৭ সালে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে। গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কি.মি. নদীতে প্রবেশ করছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন কমবে প্রায় ৮% এবং গমের উৎপাদন কমবে প্রায় ৩২%। বাংলাদেশ যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন: প্ল্লাবন: সমুদ্র তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রাথমিকভাবে ১২০ হাজার বর্গ কি.মি. এলাকা সরাসরি প্ল্লাবন জনিত ক্ষতির সম্মুখীন হবে। হঠাৎ বন্যা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশব্যাপী বৃষ্টির পরিমান বাড়বে। ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। যেমন- ভয়াবহ বন্যার পূনরাবৃত্তি ঘটে গত ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ এবং ২০০৭ সালে। পাহাড়ি বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিশেষত: মেঘনা অববাহিকায় প্রতি বছর আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছাস: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে প্রতি বছর মে-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ধ্বংসাত্মক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে। উদাহরনস্বরূপ বলা যেতে পারে- ১৫ নভেম্বর ২০০৭ সালে মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এতে প্রায় ৪ হাজার লোকের মৃতু্য ঘটে এবং অন্যান্ন প্রানী ও সুন্দরবনের অকল্পনীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে। আবার ২৫ মে ২০০৯ সালে আইলার আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায় এবং অনেক মানুষ ও প্রাণীর মৃতু্য ঘটে। বাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রের লোনা পানি প্রবেশ করায় লক্ষ লক্ষ চিংড়ি চাষী অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি: বায়ুন্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধিও ফলে দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করেছে। এর ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩৫ ভাগ এলাকা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানিতে লবণক্ততা বৃদ্ধি: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামুদ্রিক লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে উপকূলীয় নদ-নদীর লবণাক্ততা বাড়িয়ে দেবে। বিশেষত: নদ-নদীর মোহনায় অবস্থিত দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অধিক পরিমান লোনা পানি প্রবেশ করবে। এতে করে মৎস সম্পদ ও কৃষিখাতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কি.মি. পর্যন্ত প্রবেশ করছে। খরা: খরা জলবায়ু পরিবর্তনেরই একটি ফল। কোন এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হলে সেখানে খরা দেখা দেয়। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও পানির অভাবে দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে চাষাবাদের ব্যাপক অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে এবং ফসল উৎপাদনের হার কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে কয়েকটি জেলায় যে মঙ্গা দেখা দেয় তার জন্য প্রধানত দায়ী হলো খরা। নদী ভাঙ্গন: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অতিবৃষ্টির ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাথে সাথে নদীভাঙ্গনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর যমুনা ও পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের ফলে অনেক গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে। করণীয় সমূহ হচ্ছেঃ জ্বালানী সাশ্রয়ের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। বিদু্যৎ শক্তির দক্ষব্যবহার নিশ্চিত করা। গ্যাসের অপচয়রোধ এবং গ্রামেগঞ্জে উন্নত চুলার ব্যবহার বৃদ্ধি করা। উন্নত চুলা ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভিদজাত জ্বালানীর সাশ্রয় নিশ্চিত করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানী শক্তির ব্যবহার বাড়ানো। চাষাবাদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত আবহাওয়া ও পরিবেশের উপযোগী শস্যবীজ উদ্ভাবন করা। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলা। গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাস ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড (ঈ০২) গ্যাস শোষণের জন্য বৃক্ষচ্ছেদন বাড়াতে হবে । জলবায়ুর পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে অব্যাহতি লাভের উপায়ই হচ্ছে অধিক হারে গাছ লাগানো। গাছ কর্তন বন্ধ ও বন ধ্বংস বন্ধ করা। প্রয়োজনে একটি গাছ কাটলে তিনের অধিক গাছ লাগানো। পাহাড়ী এলাকায় জুমচাষ বন্ধ করা এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যানবাহনে ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন ব্যবহার বন্ধ করা। যানবাহন থেকে নির্গত ধোয়াকে অবিষাক্ত গ্যাসে পরিণত করার জন্য গাড়ির মধ্যে প্রযু্িক্ত ব্যবহারের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা। পরিকল্পিত উপায়ে শিল্পকারখানা স্থাপন করা। শিল্প কারখানা হতে নির্গত বর্জ পদার্থকে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্য শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্্রাইড গ্যাসের পরিমাণ কমানোর বিশেষ উপায় ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পরিমাণে সংরক্ষণ পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। গ্রীনহাউজ গ্যাস নি:সরনে বাংলাদেশের দায়ভার খুবই নগন্য কিনু্ত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিপন্ন দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই বাংলাদেশের প্রয়োজন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন। আন্তর্জাতিক আলোচনায় কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখা যাতে অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় তহবিল পায়। গ্রীনহাউজ গ্যাস নি:সরণ কমানোর জন্য উন্নত বিশ্বের উপর আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও অভিযোজনের উপায় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় মানুষ ও গবাদি পশুপাখিকে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আধুনিকায়ন এবং ঘূর্ণিঘড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো সক্রিয় হতে হবে। দেশের প্রধান নদ-নদী গুলো যথারীতি খনন করতে হবে। জলবায়ু বিপন্নতা বিষয়টি উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ করা। সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তনে আতংকিত হওয়ার চেয়ে মোকাবেলার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেই কল্যাণ। জলবায়ু পরিবর্তন ও পানির উচ্চতা বৃদ্ধি যদি আগামীতে হতেও থাকে হবে অত্যন্ত ধীর গতিতে যাতে বাস্তবিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রস্তুত থাকলে মানুষ পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হবে। বর্তমানে I.G.B.P -র কার্যক্রমের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগসূত্র স্থাপন করে জলবায়ুর পরিবর্তনের গতিধারা সম্পকে সুষ্ঠু ধারণা পাওয়া সম্ভব। এটা ঠিকযে জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের জন্যে মোটেই সুখকর নয়। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর যে নতুনধারা বিন্যাস সৃষ্টি হবে, সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ অত্যাবশ্যকীয়। মানব বাসের এ পৃথিবীতে যাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে না আসে সেজন্য বিশ্বসংস্থাসহ প্রত্যেকটি দেশ সমস্যা মোকাবিলায় এগিয়ে আসবে প্রত্যাশা এটাই।
Posted on: Tue, 16 Dec 2014 17:11:03 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015