“ডা. জাকির - TopicsExpress



          

“ডা. জাকির নায়েকের সমালোচনা ও বাস্তবতা” বই থেকে লিখেছেন ব্লগার খান, জুন-২০১১ হৃদয় ক্ষরিত রক্তাক্ত ভাষা থেকে… এতোদিন ড. জাকির নায়েক শুধু আলোচনার বিষয় থাকলেও বর্তমানে তিনি আলোচনার পাশাপাশি অনেকের সমালোচনার পাত্রও বটে। ভারতের আল্লামা সাইয়্যিদ খালিক সাজিদ বোখারী কর্তৃক ড. জাকির নায়েকের বিপক্ষে ‘হাকীকতে ড. জাকির নায়েক’ নামক একটি বই লেখার পর আমাদের দেশের কয়েকজন শীর্ষ আলেম এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী পত্রিকা ড. জাকির নায়েকের কঠোর সমালোচনা করে বই ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। তাই বর্তমানে আমাদের ইসলামী অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তোলা এ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। মূল বিষয়ে আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে মুসলিম উম্মাহ্র বর্তমান সময়ে এ বিষয়টিতে গুরুত্বারোপের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু বা আদৌ এর দরকার ছিলো কি না, সে বিষয়ে কয়েকটি কথা বলে নেয়া অপরিহার্য মনে হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সা. তার এক হাদীসের মাঝে ইরশাদ করেছিলেন, ﻋَﻦْ ﺛَﻮْﺑَﺎﻥَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻳُﻮﺷِﻚُ ﺃَﻥْ ﺗَﺪَﺍﻋَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻷُﻣَﻢُ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺃُﻓُﻖٍ ﻛَﻤَﺎ ﺗَﺪَﺍﻋَﻰ ﺍﻷَﻛَﻠَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺼْﻌَﺘِﻬَﺎ . ﻗِﻴﻞَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪ : ﻓَﻤِﻦْ ﻗِﻠَّﺔٍ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ؟ ﻗَﺎﻝَ ﻻَ ، ﻭَﻟﻜِﻨَّﻜُﻢْ ﻏُﺜَﺎﺀٌ ﻛَﻐُﺜَﺎﺀِ ﺍﻟﺴَّﻴْﻞِ ﻳُﺠْﻌَﻞُ ﺍﻟْﻮَﻫْﻦُ ﻓﻲ ﻗُﻠُﻮﺑِﻜُﻢْ ﻭَﻳُﻨْﺰَﻉُ ﺍﻟﺮُّﻋْﺐُ ﻣِﻦْ ﻗُﻠُﻮﺏِ ﻋَﺪُﻭِّﻛُﻢْ ﻟِﺤُﺒِّﻜُﻢُ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﻛَﺮَﺍﻫِﻴَﺘِﻜُﻢُ ﺍﻟﻤَﻮْﺕَ . অর্থ: হযরত সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, মহানবী সা. বলেছেন, “এমন একটি সময় আসবে যখন (অমুসলিম) জাতিসংঘ একে অপরকে প্রতিটি অঞ্চল থেকে তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য আহ্বান করতে থাকবে, যেভাবে একই পাত্রে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য একে অপরকে আহ্বান করা হয়ে থাকে। একজন জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘এটা কি এই কারণে হবে যে আমরা তখন সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন- ‘না, (তোমরা সংখ্যায় তখন অনেক থাকবে কিন্তু) তোমরা হবে বন্যার পানির উপর ভেসে যাওয়া ময়লার মতো। আল্লাহ তোমাদের অন্তরের মধ্যে ‘ওয়াহন’ ঢুকিয়ে দেবেন এবং তোমাদের শত্র“দের অন্তর থেকে তোমাদের প্রভাব ও ভয়কে উঠিয়ে নিবেন।’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ‘ওয়াহন’ কি?’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা আর (আল্লাহর পথে) মৃত্যুকে ঘৃণা করা।” (আবু দাউদ হাঃ- ৪২৯৭, আহমদ- হাঃ-২২৪৫ উত্তম সনদে ‘কিত্বালের প্রতি ঘৃণা’- এই শব্দ সহকারে, বায়হাকী হাঃ -১০৩৭২) প্রিয়নবী সা. এর উপরোক্ত হাদীসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে আজ মুসলিম উম্মাহ্ বিশ্বজুড়ে কি ভীষণ দূরাবস্থার মধ্য দিয়ে বর্তমান সময় অতিক্রম করছে তা সচেতন পাঠক আর বিদগ্ধ জ্ঞানী মহল ভালো করেই জানেন এবং উপলব্ধি করছেন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে প্রতিদিন মুসলিমরা জুলুম আর নির্যাতনের ষ্টিমরোলারে পিষ্ট হচ্ছে। ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, বসনিয়া, চেচনিয়া, সোমালিয়া, আরাকান, কাশ্মীর, লেবানন, পাকিস্তানসহ মুসলি ভূখন্ড গুলোতে আজ মুসলিমদের লাশের স্তুপ পরে আছে। আবূ গারীব আর গুয়ান্তানামোর বন্দি শিবির গুলো লাখো লাখো ফাতেমা আর আব্দুল্লাহদের আর্তনাদে প্রতি মুহূর্ত ভারী হয়ে উঠছে, কিন্তু তাদেরকে এই দূরাবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য বিশ্বের কোন প্রান্ত থেকেই আজ আর কেউ এগিয়ে আসছে না। একেকটি ভূখন্ডে আগ্রাসন শুরু হওয়ার সময় মুসলিমদের সারি সারি লাশ, ছিন্ন-ভিন্ন দেহ আর রক্তস্রোত দেখে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা মৌন কিছু প্রতিবাদ জানাই, কিন্তু দু’দিন পর মিডিয়ায় আর তাদের খবর আসা বন্ধ হয়ে গেলে আমরাও নিরব হয়ে যাই। ইস্যু শেষ মনে করে আমরা আবার ঘুমিয়ে পরি গাফলতীর গভীর ঘুমে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী কুফুরী শক্তির আগ্রাসন মিডিয়ার আড়ালে চলতে থাকে নিজ অব্যাহত গতিতে। খানিক ব্যবধানে তা বিস্তৃত হয় আরেক ভূখন্ডে। আবার প্রথম কয়েকদিন মুসলিম বিশ্বে খানিকটা বিক্ষোভ এরপর নিরব। এভাবে চলছে গত অর্ধ শতাব্দীরও অধিক সময় ধরে। মুসলিম উম্মাহ আজ বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং নিষ্পেষিত কিন্তু কেন? তাদের কি সম্পদের অভাব? না, বরং গ্যাস সম্পদের ক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বের ৪৫% এককভাবে তাদের হাতে, তেলের ক্ষেত্রে পৃথিবীর ৭৫% তেল মুসলিম ভূমি থেকে উত্তোলন হয়, দেশ হিসেবে মুসলমানদের ৫৭ টি ভুখন্ড আছে, জনসংখ্যার দিক থেকে দেড়শত কোটিরও বেশি। মুসলিম ভূখন্ডগুলো খনিজ সম্পদের উপর ভাসমান। মুসলিমদের রয়েছে ৬৭ লক্ষেরও অধিক প্রশিক্ষিত এবং নিয়মিত মুসলিম সেনাবাহিনী। এতো এতো কিছু আছে মুসলিমদের কিন্তু নেই শুধু একটি ইসলামিক রাষ্ট্র। নেই একজন মুসলিম খলীফা বা আমিরুল মু’মিনীন। যার ফলে আদর্শিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও অভিভাবকহীন মুসলিম উম্মাহ আজ বিশ্বজুড়ে পরিগণিত হচ্ছে ‘গণীমতের’ মাল হিসেবে। মুসলিমদের তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ কাফিররা লুটে নিচ্ছে। মুসলিমরা আজ দুনিয়ার প্রতি অধিক ভালোবাসার কারণে ভুলে গেছে জিহাদকে। তাই এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান, নবীন- যুবকেরা আজ আর ভাবে না তার অপর মুসলিম ভাইয়ের কথা, নির্যাতিত বোনকে কাফিরদের হাত থেকে মুক্ত করার কথা চিন্তাও করে না। যে জাতির কান্ডারীরা একজন উসমান হত্যার বদলা নেয়ার জন্য ১৪০০ লোক প্রিয় রাসূলের হাতে হাত রেখে বাইআত নিয়েছিলো, আমরণ জিহাদের দৃপ্ত শপথ করেছিলো, প্রয়োজনে মৃত্যু বরণ করে নিতে চেয়েছিলো; আজ কি হলো সেই জাতির? যে জাতির একজন সদস্য বোন ফাতেমার আর্তনাদে সাড়া দেয়ার জন্য সূদুর আরব থেকে সিন্ধুনদের অববাহিকায় ছুটে এসেছিলেন মুহাম্মাদ ইবনে কাসিম, সে জাতির হাজারো বোন, হাজারো ফাতেমা আর আফিয়া সিদ্দিকী আজ কাফিরদের কারাগারে নিজেদের সম্ভ্রম হারাচ্ছে, প্রতিদিন অসংখ্য বার নির্যাতিত হচ্ছে; জেল থেকে রক্তমাখা পত্র পাঠাচ্ছে উম্মাহর নবীনদের কাছে, মুহাম্মাদ বিন কাসিম আর সালাহউদ্দীন আইয়ূবীর উত্তরসূরীদের কাছে, কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেয়ার কথা কেউ চিন্তাও করছে না। একজন উসমানের শাহাদাত বরণের সংবাদে যে জাতির ১৪০০ শত সাহাবীর খাওয়া-ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো, সেই জাতির লক্ষ লক্ষ উসমান আজ নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে; মুসলিম শিশুদের সারি সারি রক্তাক্ত লাশের মিছিল যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের গভীর নিদ্রার কোন ব্যাঘাত ঘটছে না। আজ মুসলিমদের ৫৭ টি ভুখন্ড আছে, কিন্তু একটি ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা নেই। অনেক শাসক আছে, কিন্তু একজন খলীফা বা ইমাম নেই। ৬৭ লক্ষ প্রশিক্ষিত এবং নিয়মিত মুসলিম সেনাবাহিনী আছে, কিন্তু মুসলিমদের নিরাপত্তা নেই। কারণ মুসলিম সেনাবাহিনীকে জালিম কাফিরদের বিরুদ্ধে মার্চ করার নির্দেশ দেয়ার কেউ নেই। তাইতো রাসূল সা. বলেছিলেন, ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻲْ ﻫُﺮَﻳْﺮَ ﺍَﻧْﻪُ ﺳَﻤَﻊَ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﻘُﻮْﻝُ .… ﻭَﺍِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻻِﻣَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ ﻳَﻘﺎ ﺗَﻞُ ﻣِﻦْ ﻭﺭﺍﺀﻩ ﻭَﻳُﺘﻘﻰ ﺑِﻪِ – ﺑﺨﺎﺭﻯ ﺝ١ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﺑﺎﺏ ﻳﻘﺎﺗﻞ ﻣﻦ ﻭﺭﺍﺀﺍﻻﻣﺎﻡ অর্থ: “হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, আর ইমাম (খলীফা) হলো ঢাল। তার অধিনে যুদ্ধ পরিচালিত হবে এবং তার মাধ্যমেই আত্মরক্ষা হবে।” (বুখারী – কিতাবুল জিহাদ, ইমামের নেতৃত্বে জিহাদ অধ্যায়], হাঃ ২৭৫৭, মুসলিম হাদীসঃ ১৮৩৫, নাসাই হাদীসঃ ৪১৯৩) আজ পীর-মুরিদীর বাইআত আছে, কিন্তু খিলাফতের বাইআত নেই। অনেক ধরণের সংগ্রাম আছে, কিন্তু জিহাদ নেই। উপরন্তু মুসলিমদেরকে নিরাপত্তাদানকারী আদর্শিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং ইমাম হিসেবে মুসলিমদের অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণকারী খলীফা না থাকার কারণে মুসলমানদের এই সকল সম্পদ আর সম্ভাবনা ‘হরিনের দেহের মূল্যবান মাংসের’ মতোই হায়েনাদের কাছে মুখরোচক ‘গণীমতের মাল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মুসলিম উম্মাহর এতো সম্পদ, এতো সেনাবাহিনী সঞ্চালক বিহীন থাকার ফলে জমাট বাধা রক্তে পরিণত হয়েছে। যা দেহে প্রাণ সঞ্চালন করতো, তাই আজ মৃত্যুর ক্রিয়া করছে। মুসলমানদের সেনাবাহিনী আজ মুসলমানদের বিরুদ্ধেই কাফিরদের ইচ্ছে মতো ব্যবহৃত হচ্ছে। ইরাক, আফগান, পাকিস্তান যার জ্বলন্ত উদাহরণ। মুসলিম উম্মাহর যুব- তরুণদেরকে বিজাতীয় অপসংস্কৃতির বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে নিজ বিশ্বাসের উপর থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। তাদের সামনে জীবনের চাওয়া পাওয়া আর স্বপ্ন হিসেবে বিপথগামিতাকে মেলে ধরছে। রেডিও, টিভি, ইন্টারনেট এমনকি মোবাইলের মতো দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য্য প্রযুক্তিও আজ ব্যবহৃত হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র ধ্বংসের জন্য। এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ভোগবাদী ও পুঁজিবাদী জীবন-দর্শন। রাসূলুল্লাহ সা. এর উত্তরসূরী এবং মুসলিম জাতির রাহবার ও অভিভাবক আলেম সমাজ ও জাতির যুব-তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা প্রায় শূন্যের কোটায়। অভিভাবক আর তার সন্তান একে অপরকে চিনে না। ফলে দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে তারা আলেমদের দিক- নির্দেশনা নিতে পারছে না এবং আলেম সমাজও মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে দূরে থাকার কারণে নিজ সন্তানদেরকে সঠিক দিক- নির্দেশনা দিতে পারছে না। তাদেরকে বিজাতীয় অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে। নবীর উত্তরসূরী উলামায়ে কিরামের কাছে এখনও বিরাট সুযোগ আছে। এদেশেই ৪০ হাজার মাদ্রাসা মকতব দীনের দূর্গ হিসেবে এখনও মাথা উচু করে আছে। ৩ লক্ষ মসজিদের মিনার আর মিম্বার আছে। যদি তারা আজ আবারও ঘুরে দাঁড়ায়, নিজের অতীতের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে উম্মাহকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য উদ্যোগ হয়, আভ্যন্তরীন বিবাদ আর বিভক্তিতে নিজেদের শক্তি বিনষ্ট না করে নতুন শতাব্দীর বিশ্ব নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে একে অপরের সাথে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে এক ঐশী ভ্রাতৃত্ব বন্ধন রচনা করে, তবে বিশ্ব প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। জাতির রাহবার, রাসূলের সুযোগ্য উত্তরসূরী আলেম সমাজ যদি আজ আবারও একযোগে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য দীনের ব্যাপকতর দাওয়া ও তাবলীগের কাজে উদ্যোগী হন, এদেশের ৪০ হাজার মাদ্রাসা মক্তব যদি দীনের দূর্গ ও যোগ্য রাহবার তৈরীর লক্ষ্যে অবিরাম ভূমিকা পালন করা শুরু করে, ৩ লক্ষ মসজিদের মিম্বার গুলো যদি আজ জেগে উঠে, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম, ইমাম ও খতীবদের হৃদয়স্পর্শী আহ্বান যদি এক যোগে ৩ লক্ষ মিনার থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পরতে থাকে, কোটি কোটি মুসলিম জনতা যদি তাদের আকীদা বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটি আদর্শিক রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্যে রাজপথে নেমে আসে, তবে রবের শপথ করে বলতে পারি, ইসলামের পুনর্জাগরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এই জাগরণের মাধ্যমে শুধু এই বঙ্গভূমিতেই নয়, বরং পুরো এশিয়া এবং পুরো বিশ্বজুড়েই পরিবর্তনের ঢেউ জাগতে পারে। তবে এজন্য সবার আগে প্রয়োজন হলো নিজের মধ্যে আর বিভক্তি না বাড়িয়ে বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করা। নিজেদের চিন্তার জগতকে শানিত করা। ইসলামকে সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হিসেবে যৌক্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে জাতির সামনে তুলে ধরা। আধুনিক প্রযুক্তি ও মিডিয়ার মাধ্যমে জাতিকে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়া যে, তাদের দৈনন্দিন জাতীয় ও আন্তর্জার্তিক সকল সমস্যার সমাধান পাওয়ার জন্য ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। তবে আমি জানি না যে, এক ব্যথিত হৃদয়ের এ করুণ আকুতি জাতির কর্ণধারদের কাছে পৌঁছবে কি না। এক নগন্যের হৃদয় ক্ষরিত রক্তাক্ত ভাষা থেকে ঝরা ক’ফোঁটা তিক্ত শব্দ তাদের অন্তরকে ছুঁয়ে যেতে পারবে কি না। না উল্টো নিজেই আবার গোমরাহ ও ভ্রান্ত মতবাদের প্রতিনিধি বলে আখ্যায়িত হবো। তবে সত্যের প্রয়োজনে এই অধমের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝরের রেশ ধরে দু’ একজনের অন্তরও যদি দুলে উঠে, কারো চিন্তার জগতে সামান্য নতুনত্ব আসে কিংবা গতবাঁধা জীবন চলার ক্ষেত্রে ন্যুনতম ছন্দপতন ঘটাতেও যদি আমার এই শ্রম সামান্য উপলক্ষ্য হিসেবে কাজে লাগে এবং তা অনাগত কোন সুবহে সাদিকের আগমনী বার্তার অগ্রদূত হিসেবে সামান্যও বিবেচিত হয় - তবে এ রকম শত অধমের আত্মত্যাগ শতভাগ সফল। ড. জাকির নায়েকের সমালোচনার জবাব প্রসঙ্গে লিখে অহেতুক তর্ক- বিতর্কের এই ময়দানে কোন পক্ষভুক্ত হওয়ার কোন ইচ্ছা আমার আগেও ছিলো না এখনও নেই। কারণ এটি এই মুহূর্তে মুসলিম উম্মাহর জন্য উল্লেখযোগ্য তো নয়ই সাধারণ কোন সমস্যাও নয়। ড. জাকির নায়েকের সমালোচনা যারা করেছেন তারা সাধারণ কেউ হলে এ বিষয়ে আমি ভুলেও ফিরে তাকাতাম না। কিন্তু এক্ষেত্রে এমন কয়েকজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও প্রভাবশালী আলেম কলম ধরেছেন, যাদের অনেকের সম্পর্কে আমি নিজেও অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও আস্থাশীল ধারণা পোষণ করি। আমার বিশ্বাস তারা যা লিখেছেন তার অনেকাংশই অন্যের ‘কান কথা’র উপর ভিত্তি করে লিখেছেন। তারা যে এই কাজ শতভাগ ইখলাসের সাথে এবং উম্মাহর কল্যাণের জন্য করেছেন তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই। আর এ কারণেই আমার মতো তাদের অন্যান্য ভক্ত ও গুনগ্রাহীগণও নিশ্চয়ই এবার এক ভুলের উপর ভিত্তি করে আরো শত ভুলের জন্ম দিবেন। প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে অচিরেই এ সম্পর্কে আরো অনেক আলোচনা- সমালোচনা হবে। হয়তো আমার এই বই প্রকাশের আগেই জাকির নায়েকের সমালোচনায় আরো অনেকের লেখা প্রকাশিত হবে। তাই এক্ষেত্রে সমালোচনা গুলোর বাস্তবতা কি এবং ড. জাকির নায়েকের বিষয়ে আমাদের না পরে থেকে বরং উম্মাহর ঐক্য এবং দূরাবস্থা নিরসনের উপরোক্ত পয়েন্ট গুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত -মূলত: এই কথাটা বলার জন্যই আমার এই লেখা। জাকির নায়েকের সমালোচনার এ বিষয়ে লেখার পূর্বে এ বিষয়ে এ পর্যন্ত সমালোচনাকারী সকলের লেখা বই এবং প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগের যথার্থতা অনুসন্ধানের জন্য ড. জাকির নায়েকের ৫০ হাজার মেগাবাইটেরও অধিক পরিমাণ, ২০০ ঘন্টারও অধিক আলোচনা, অনেক গুলো বই সংগ্রহ করে এবং সরাসরি তার প্রতিষ্ঠানেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করার পূর্বে কষ্ট করে পুরো লেখাটি একবার পড়ে নেয়ার জন্য সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল। এরপরও যদি ড. জাকির নায়েক সম্পর্কে যদি কারো দ্বিমতও থাকে, থাকুক। এটাকে তার অবস্থায় রেখে আসুন আমরা এই উম্মাহর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় তাদের ঐক্য ও আদর্শিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সর্বসম্মত কাজে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করি। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে তার দীনের জন্য কবুল করুন। আমীন। কে এই জাকির নায়েক? ৯/১১ এর ঘটনার পর যখন বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় হচ্ছে, মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী বলে চতুর্দিকে প্রচার করা হচ্ছে। পৃথিবীর সকল এয়ারপোর্টে যাত্রীদেরকে বিশেষত: মুসলিমদেরকে সীমাহীন হয়রানি করা হচ্ছে, ঠিক তেমনি এক সময়ে ২০০৩ সালের ১২ অক্টোবর দাঁড়ি-টুপি আর মুসলিম অবয়বের এক ব্যক্তি আসলেন আমেরিকার লস এঞ্জেলস এয়ারপোর্টে। এমনিতেই মুসলিম তার উপরে আবার দাঁড়ি- টুপি। আর যায় কোথায়। পুরো এয়ারপোর্টে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়লো। তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ঘরে নিয়ে আসা হলো। শুরু হলো জিজ্ঞাসাবাদ। অফিসার : আপনি এখানে কেন এসেছেন? আগন্তুক : একটি পুরস্কার নিতে এসেছি। অফিসার : পুরস্কার? কিসের জন্য কি পুরস্কার? আগন্তুক : মানবতার জন্য পুরস্কার। International Islamic Internet University নামক লস এঞ্জেলস এর একটি প্রতিষ্ঠান আমাকে মানবতার জন্য একটি পুরস্কার দিবে, তাই নিতে এসেছি। অফিসার : কেন আপনাকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে? আপনি কি করেছেন? আগন্তুক : আমি সত্যকে ভালোবাসি এবং তাকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আপনাদের যিশু নিজেও গসপল অব জন, ৮ম অধ্যায়ের ৩২ অনুচ্ছেদে বলেছেন, “তোমরা সত্যকে খুঁজে বেড়াও এবং তাকে ছড়িয়ে দাও। সত্যই তোমাকে মুক্ত করবে।” -আমিও এভাবে সত্যকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আমি একজন দায়ী। দীনুল হককে ছড়িয়ে দেয়াই আমার ধর্ম। এরপর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আরো বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করতে লাগলো। তার ব্যাগ নিয়ে খোলা হলো। ব্যাগে একটি ভিডিও ক্যাসেটও পাওয়া গেলো যাতে লেখা ছিলো “জিহাদ এন্ড টেরোরিজম।” এটা দেখে কর্তৃপক্ষের প্রশ্নের ধরণও পাল্টে গেলো। অফিসার : আপনি কি জিহাদে বিশ্বাস করেন? আগন্তুক: হ্যাঁ। অবশ্যই। এমনকি যিশু নিজেও জিহাদের কথা বলেছেন। সত্যের জন্য চেষ্টা ও সংগ্রাম করতে বলেছেন। আমিও তাতে বিশ্বাস করি। অফিসার : না না, জিহাদ বলতে আপনি কি যুদ্ধ করায় বিশ্বাস করেন? আগন্তুক : হ্যাঁ, একথা তো বাইবেলেই উল্লেখ আছে। বুক অফ এক্সোডাস এর ২২ অধ্যায়ের ২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “আপনাকে যুদ্ধ করতে হবে।” বুক অফ এক্সোডাস এর ৩২ অধ্যায়ের ২৭-২৮ অনুচ্ছেদে, বুক অব নাম্বারস এর ৩১ অধ্যায়ের ১-১৯ অধ্যায়েও বলা হয়েছে, “যুদ্ধ করতে হবে।” হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ভগবত গীতার ২ নং অধ্যায়ের ৩১-৩৩ অনুচ্ছেদে কৃষ্ণ বলেছেন, “ধর্মের পক্ষ থেকে যুদ্ধ করা, সেটা তোমার দায়িত্ব। যদি যুদ্ধ না করো তাহলে পাপ হবে। যদি যুদ্ধ করো তাহলে স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে।” আপনাদের যিশু নিজে গসপল অব লুক, ২২ অধ্যায়ের ৩৬ অনুচ্ছেদে বলেছেন, “তরবারী নিয়ে তোমরা যুদ্ধ করো।” তখন সেখানকার একজন খৃষ্টান অফিসার বললো : সেটি তো আত্মরক্ষার জন্য। আগন্তুক বললেন : হ্যাঁ, আমিও তাই বলি, আত্মরক্ষার জন্য। এভাবে আলোচনার ফলে সেই কাস্টমস অফিসাররা আরো কৌতুহলী হয় এবং তাকে আরো প্রশ্ন করে। তিনি তার মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দ্বারা সবটারই সুন্দর উত্তর দিয় দেন। তখন তাকে যেতে অনুমতি দেয়া হয়। দেখা গেল, তিনি যখন রুম ত্যাগ করছিলেন তখন তার সাথে এয়ারপোর্টের প্রায় ৭০ জন অফিসার তাকে ঘিরে তাদের নিজ ধর্ম ও ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তারা বলতে থাকে তারা খুবই বিস্মিত হয়েছে এবং তারা তার মতো এরকম জ্ঞানী লোক কখনো দেখেনি। -এভাবে সত্যকে অস্বীকার না করে সুন্দর ভাষার উত্তম জবাবের দ্বারা এয়ারপোর্ট থেকে যেই ব্যক্তিটি বেরিয়ে আসলেন তিনিই হলেন ড. জাকির নায়েক। ড. জাকির নায়েক ও তার কার্যক্রম: ডা. জাকির নায়েক ১৮ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার’স হাই স্কুল (আই.সি.এস.ই) থেকে মাধ্যমিক এবং চেল্লারাম কলেজ, মুম্বাই থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর টপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, নায়ের হসপিটাল, মুম্বাই থেকে পড়াশুনার পর মুম্বাই ইউনিভার্সিটি থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। ডা. জাকির নায়েক বর্তমানে ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) এর প্রেসিডেন্ট। তিনিই এর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বর্তমানে আইআরএফ এডুকেশনাল ট্রাষ্ট, মুম্বাইয়ের চেয়ারম্যান এবং ইসলামিক ডাইমেনশন মুম্বাইয়ের প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও তিনি ইসলামি রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামক আইআরএফ নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা যেটি পিস টিভি পরিচালনা করে থাকে। ড. জাকির নায়েক চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর পড়াশোনা করে একজন সফল ডাক্তার হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তার আগ্রহের বিষয় ছিলো ইসলাম। বিশ্বখ্যাত সুবক্তা ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বিশ্লেষক শেখ আহমাদ দীদাতের প্রাঞ্জল ভাষার অনলবর্ষী বক্তব্য এবং ইসলাম বিষয়ে তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ড. জাকির নায়েককে আরো উদ্বুদ্ধ করে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত শেখ আহমদ দিদাত ছিলেন একজন খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ। ইসলামের উপর তার পড়াশুনা ছিল ব্যাপক। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে ইসলাম বিদ্বেষীদের ছড়ানো সমালোচনা ও কটুক্তি খন্ডন করতেন ও অকাট্য জবাব দিতেন। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের সুন্দর উদ্ধৃতির মাধ্যমে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতেন সন্দেহাতীতভাবে। দীনের অক্লান্ত দায়ী শেখ আহমাদ দীদাতের জীবন ও কর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে ড. জাকির নায়েকও এগিয়ে আসেন দীন প্রচারে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে ইসলামের অবস্থান ও সত্য দীনকে তুলে ধরতে ডা. জাকির নায়েক আত্মনিয়োগ করেছেন। একজন ডাক্তারের পরিবর্তে আত্মপ্রকাশ করেন দীনের একজন দায়ী হিসেবে। ড. জাকির নায়েকের গভীর অধ্যয়ন আর পান্ডিত্যপূর্ণ শালীন ও সুন্দর উপস্থাপনায় ইসলামের স্বরূপ সম্পর্কে অমুসলিম বিশ্ব এবং ইসলাম সম্পর্কে উদাসীন মুসলিম সমাজ আকৃষ্ট হয় আবারও দীনের প্রতি। এভাবে দীনের দাওয়াত দেয়ার মাধ্যমে ড. জাকির নায়েকও ধীরে ধীরে নিজ আধ্যাত্মিক গুরু আহমাদ দীদাতকে এক সময় ছাড়িয়ে যেতে লাগলেন। ড. জাকির নায়েকের এতো অগ্রগতি দেখে স্বয়ং শেখ আহমদ দিদাত ১৯৯৪ সালে ডা. জাকির নায়েককে ‘দিদাত প্লাস’ হিসেব উল্লেখ করেন। জাকির নায়েকের দাওয়ার উপর যে বুুৎপত্তি অর্জিত হয়েছে এবং ধর্মসমূহের তুলনামূলক বিশ্লেষণের উপর তার যে পড়াশুনা তাতে জনাব দিদাত ২০০০ সালের মে মাসে জাকির নায়েককে দেয়া এক স্মারক উপহারের খোদাই- করে লিখেছিলেন, “”Son what you have done in 4 years had taken me 40 years to accomplish – Alhamdullilah.” ৪৬ বছর বয়সের ড. জাকির নায়েক ইতোমধ্যেই কুরআন-হাদীস এবং বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়াবলীর উপর প্রায় ১০০০ এরও বেশি বক্তব্য দিয়েছেন। গত ১০ বছরে ড. জাকির নায়েক কানাডা, ইউ কে, সৌদি আরব, মিশর, ইউ এক ইউ, ইতালি, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হং কং, থাইল্যাণ্ড, গায়ানা, (দক্ষিণ আমেরিকা), ত্রিনিদাদ, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ১৫০ টি দেশে ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন ও ভুল ধারণার অপনোদন কল্পে যুক্তি, বিশ্লেষণ ও বিজ্ঞানের দ্বারা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। ড. জাকির নায়েক অন্যান্য ধর্মের পন্ডিত ব্যক্তির সাথে সংলাপ ও বিতর্কে অংশ নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি বিতর্ক অনুষ্ঠান হয়েছিলো আমেরিকার শিকাগোতে ২০০০ সালের ১ এপ্রিল। ‘দি বাইবেল এন্ড দি কোরআন ইন দি লাইট অব সায়েন্স’ শীর্ষক এই বিতর্কে ড. জাকিরের প্রতিপক্ষ ছিলেন আমেরিকার একজন চিকিৎসক ও মিশনারি ব্যক্তিত্ব ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল। এই অনুষ্ঠানে ড. জাকির অত্যন্ত সফলভাবে উইলিয়াম ক্যাম্পবেলকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। ড. জাকির নায়েকের আরেকটি ঐতিহাসিক বিতর্ক হয়েছিলো ভারতের ব্যাঙ্গলোরে। ‘প্রধান ধর্ম গ্রন্থের আলোকে হিন্দুইজম এবং ইসলাম’ শীর্ষক এই বিতর্কে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন ভারতের আর্ট অব লিভিং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী রবী শংকর। এই বিতর্ক অনুষ্ঠানেও ড. জাকির নায়েক অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাকে পরাস্ত করেন। তার এসব বক্তৃতার অডিও ও ভিডিও ক্যাসেট দেশ- বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ইসলামপ্রিয় মানুষের কাছে তিনি প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। বাংলাদেশেও সম্প্রতি তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। তাকে স্যাটেলাইট টিভি চ্যালেন ‘পিস’ টিভিতে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়। এছাড়াও ডা. জাকির নায়েক ইসলামের উপর এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর বেশ কয়েকটি বই লেখেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ মধ্যে আছে, পিপলস টু দি মোস্ট কমন কোশচেনস আস্কড বাই নন-মুসলিম, কোরআন এন্ড মডার্ন সায়েন্স – কম্পেটিবল অর ইনকম্পেটিবল, উইমেনস রাইটস ইন ইসলাম – প্রোটেক্টেট অর সাবজুগেটেড, আল-কোরআন -শূড ইট বি রেড উইথ আন্ডারস্টান্ডিং, ইস দি কোরআন গডস ওয়ার্ড, ইসলাম এন্ড টেররিজম, কনসেপ্ট অফ গড ইন মেজর রিলিজিয়নস। সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিমায় আলোচনাকারী প্রখ্যাত এই মনিষী নিজেকে সব সময় ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়নকারী একজন ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সত্যের সাহসী উচ্চারণে তিনি বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসী আমেরিকার সন্ত্রাসবাদ সম্পকেও স্বরব। তিনি বলেন, বিন লাদেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসের মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন করে তাহলে তিনি বিন লাদেনের পক্ষে। এমনকি ইসলামের শত্র“ বা যুক্তরাষ্ট্রকে যে কোন উপায়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোকে সন্ত্রাস বলা হলে তিনি প্রত্যেক মুসলিমেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। তার এমন সাহসী উচ্চারণের জন্য ব্রিটেনের কয়েকটি অনুষ্ঠানে তিনি যেতে পারেন নি। এছাড়াও মাযহাব ও মাসআলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের কয়েকজন আলেম ও প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সমালোচিত হয়েছেন। তবে সমালোচকরাও ভিন্ন ধর্মের লোকদের সাথে ড. জাকির নায়েকের যুক্তিপূর্ণ ও তথ্যবহুল বিতর্কের প্রশংসা করেছেন এবং তাকলীদ, মাযহাব ও ইখতিলাফপূর্ণ মাসআলার বিষয় বাদ দিয়ে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা ও আলোচনায় অধিক মনোযোগ দেয়াই তার জন্য শ্রেয় বলে মন্তব্য করেছেন। দীনের এই দায়ী সকল প্রকার বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে ইসলামের খেদমত করুন এবং মহান আল্লাহ তাকে হায়াতে তাইয়্যিবা দান করুন এই প্রত্যাশা করছি। ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে অভিযোগ সমূহের গতি- প্রকৃতি মিডিয়ার কল্যাণে দ্রুত থেকে দ্রুততার সাথে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নামটি হলো ড. জাকির নায়েক। বর্তমানে আমাদের দেশেও ড. জাকির নায়েকের সমর্থক, শুভাকাঙ্খীর সংখ্যা একেবারে কম নয়। দিন দিন এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমাদের দেশের ইসলামী অঙ্গনে এতোদিন ড. জাকির নায়েক কেবল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অবস্থান করলেও বর্তমানে তিনি আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতেও পরিণত হয়েছেন। ড. জাকির নায়েকের বিপক্ষে আমাদের দেশের শীর্ষ উলামায়ে কিরাম বলে পরিচিত এবং হক্কানী আলেম বলে সুবিদিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কড়া ভাষায় সমালোচনা ও বিরুদ্ধাচারণ শুরু হয়েছে। ভারতের আল্লামা সাইয়্যিদ খালিক সাজিদ বোখারী কর্তৃক ড. জাকির নায়েকের বিপক্ষে ‘হাকীকতে ড. জাকির নায়েক’ নামক একটি বই লেখার পর তার সূত্র ধরে আমাদের দেশে এব্যাপারে প্রথম কলম ধরেন, আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় আলেম ও শীর্ষ ইসলামী চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী দা. বা.। তিনি সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘কালকণ্ঠ’ নামক আঞ্চলিক একটি ম্যাগাজিনে পর পর দু’বার ’ড. জাকির নায়েক আলেম বলে আমি কোনো প্রমাণ পাইনি’ এবং ‘জাকির নায়েক সম্পর্কে আমার বক্তব্যের ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই’ শিরোনামে সাক্ষাতকার দেন। এরপর তার এই সাক্ষাতকারটির বক্তব্য লিফলেট আকারে দেশের বিভিন্ন মসজিদে ছাড়া হয়। আরো কিছু সংযোজনী দিয়ে এটিকে একটি ছোট বই আকারে ‘জাকির নায়েকের আসল চেহারা’ নামে প্রথম এডিশনেই ১২ হাজার কপি ব্যাপকভাবে বাজারে ছাড়া হয়। এরপর এ বিষয়ে গত মে মাসে ড. জাকির নায়েক সম্পর্কে ভারতের বেশ কিছু শীর্ষ উলামায়ে কিরামের কিছু মন্তব্য ও অভিব্যক্তি একত্র করে মুফতী মীযানুর রহমান কাসেমী দা. বা. “ডা. জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ : পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ” নামে একটি বই প্রকাশ করেন। আমাদের দেশের ইসলামী অঙ্গনে বহুল প্রচলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ম্যাগাজিন ‘মাসিক আদর্শ নারী’ মত্রিকায়ও গত মে মাসে “ডা: জাকির নায়েকের দ্বীনী কথাবার্তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?” শিরোনামে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। উপরোক্ত বই ও প্রতিবেদন গুলোতে বেশ কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করে ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু দু:খজনক হলো অধিকাংশ পয়েন্টের ক্ষেত্রেই কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। মাওলান নূরুল ইসলাম ওলীপুরীকে প্রায় ১০ বার ফোন করার পর তিনি কল রিসিভ করেন। এপাশ থেকে সাংবাদিক শুনে অনেকটা ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আপনি সাংবাদিক না ওসি আমি বুঝব কি করে। আমি আপনাকে চিনিনা তাই কথা বলতে চাই না। এ পাশ থেকে দ্বিতীয়বার অনুরোধ করা হয়, স্যার আপনার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই, প্লিজ এক মিনিট সময় দিন। এ কথা শুনে তিনি বলেন আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। আপনার সঙ্গে বাজে কথা বলার সময় আমার নেই। এই বলেই ওপাশ থেকে লাইন কেটে দেন। মুফতী মীযানুর রহমান কাসেমী’র কাছে ‘রাসূল সা. এর একাধিক বিবাহ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ কথাটি কোথায় আছে কিভাবে পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ভারতের ওলামায়ে কেরাম এভাবে লিখেছেন। আমার বইটি আংশিক অনুবাদ। আমি ওলামায়ে দেওবন্দের অনুসরণ করেই বইটি লিখেছি। কিন্তু নিজে যাচাই না করে এভাবে লিখা কি ঠিক হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই যাচাই বাচাই করেছি। কিন্তু তার বইতে দেয়া অনেক বক্তব্যেরই কোন সূত্র তিনি দিতে পারেন নি। মাসিক আদর্শ নারী পত্রিকার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে প্রদত্ত জাকির নায়েক সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার সূত্র জানতে চাইলে তারা পরে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এই সকল পত্রিকা, বই ও তার লেখক- প্রতিষ্ঠান সমূহ নি:সন্দেহে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও সম্মানীত হলেও তাদের বক্তব্যের বেশ কিছু অসঙ্গতি, দূর্বল ও অসত্য তথ্যের উপস্থিতি আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। ড. জাকির নায়েকের প্রতি অতিরিক্ত কোন দরদ কিংবা পার্থিব স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা আগেও ছিলো না, এখনও নেই। কিন্তু একজন মুসলিম এবং দায়ী হিসেবে তিনি এখন পর্যন্ত যেই চেষ্টা- প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন -একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে অবশ্যই তার নির্মোহ মূল্যায়ন হওয়া উচিত। একইভাবে ইসলামী আকীদা কিংবা কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট কোন বক্তব্যের ক্ষেত্রে তার কোন ভিন্নমত বা ভুল বক্তব্য পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরোধী করতে হবে ঈমানের তাগিদেই। কিন্তু নফল ও মুস্তাহাব পর্যায়ের কোন বিষয়ের জন্য কিংবা ইমামদের মতবিরোধপূর্ণ কোন মাসআলায় নিজ ইমামের মতের কোন অংশের সাথে তার মিল না হলেই কাউকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ ‘ভিন্ন ধর্মের এজেন্ট’ বা তার বক্তব্যকে ‘অমার্জনীয় ধৃষ্টতা’ বলে কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য বা যৌক্তিক ও তথ্য প্রমাণহীন কেবল বিদ্বেষ মূলক আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান কোন মতেই সমর্থন যোগ্য হতে পারে না। কিন্তু সমালোচনা গুলোতে প্রায় তাই করা হয়েছে। একজন মু’মিন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত আবশ্যকীয় বিষয় হলো অপর কোন মুমিন, মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করার আগে বিষয়টি যাচাই করে নেয়া। এ নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। পবিত্র কুরআনে তিনি ইরশাদ করেছেন, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﻥْ ﺟَﺎﺀَﻛُﻢْ ﻓَﺎﺳِﻖٌ ﺑِﻨَﺒَﺄٍ ﻓَﺘَﺒَﻴَّﻨُﻮﺍ ﺃَﻥْ ﺗُﺼِﻴﺒُﻮﺍ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﺑِﺠَﻬَﺎﻟَﺔٍ ﻓَﺘُﺼْﺒِﺤُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻢْ ﻧَﺎﺩِﻣِﻴﻦَ . অর্থ: “হে ঈমানদ্বার গণ! যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে (সে ব্যাপারে কিছু বলা বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে) তোমরা তা যাচাই করে নাও। না হলে, তোমরা অজ্ঞতাবশত: কোন কওমকে আক্রমণ করে বসবে, অবশেষে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০৬) এই আয়াতের দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, কেবল মাত্র ধারণা প্রসূত এবং তৃতীয় পক্ষের কোন কথা শুনেই কারো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেয়া উচিত নয়। কোন মন্তব্য করাও ঠিক নয়। কারণ অনেক সময়ই মাধ্যম বাড়ার কারণে মূল বিষয় পরিবর্তিত হয়ে যায়। একারণেই যে কোন বক্তব্যের ক্ষেত্রে বা কারো সমালোচনার ক্ষেত্রে সরাসরি তার সাথে কথা বলা, সুনির্দিষ্টভাবে তার আলোচনা উদ্ধৃত করা কিংবা তার লেখা থেকে রেফারেন্স না দিয়ে কিছু বলার অর্থ অনেক সময়ই মিথ্যাচারে পরিণত হয়। এজন্যই মহানবী সা.ও তার হাদীসের মাঝে সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেছেন, ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠّﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠّﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ: ” ﻛَﻔَﻰ ﺑﺎﻟﻤَﺮْﺀِ ﻛَﺬِﺑﺎً ﺃﻥْ ﻳُﺤَﺪِّﺙَ ﺑِﻜُﻞِّ ﻣﺎ ﺳَﻤِﻊَ ” অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সা. বলেছেন “মানুষের মিথ্যা বলার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট যে, সে কিছু শুনবে আর যাচাই-বাছাই না করেই তা অপরের কাছে বর্ণনা করবে।” (সহীহ মুসলিম, প্রথম খন্ড হাদীস নং ৮) ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﺛْﻢٌ অর্থ: “হে ঈমানদ্বার গণ! তোমরা কেবলমাত্র ধারণাপ্রসূত ও অনুমান নির্ভর বিষয় হতে বেঁচে থাকো। কেননা, অধিকাংশ ধারণা ও অনুমানই পরিশেষে গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০৬) ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে সমালোচকদের বক্তব্য কথা-বার্তায় দেখা যাচ্ছে যে, আসলে তারা অনেকেই ড. জাকির নায়েক সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই না জেনে, ধারণা প্রসূত এবং তৃতীয় কারো বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে মন্তব্য করেছেন এবং অবশ্যই গুনাহগার হচ্ছেন। ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি সমালোচনাকারী হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী সাহেব তার ‘জাকির নায়েকের আসল চেহারা বইতে স্পষ্টভাবে এটা স্বীকার করেও নিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, “আমি তার কোন অনুষ্ঠানও দেখতে যাই না, কোনো বই পুস্তকও পড়তে চাই না।” (জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ১৮) “জাকির নায়েক নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্যের কথা কখনো কি তার সঙ্গে শেয়ার করেছেন? কখনো যোগাযোগ করার ভাবনা আছে?” এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, “তিনি একজন আলেম, একথা আমার কাছে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম অথবা ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে আলাপ- আলোচনা বা মতবিনিময়ের জন্য তার সঙ্গে আমার যোগাযোগের কোনো প্রশ্নই আসে না।” (জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ১৯) একই বইয়ের ২৩ পৃষ্ঠায় তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, কেবলমাত্র তৃতীয় পক্ষের থেকে ‘শোনা’ কথার উপর ভিত্তি করেই তিনি সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি যেহেতু তার বইও পড়িনা, প্রোগ্রামও দেখিনা, তাই এগুলো যারা পড়েন বা দেখেন তাদের বাচনিকের ভিত্তিতেই আমার মন্তব্য করতে হবে।” এই যদি হয় একজন শীর্ষ আলেমের পক্ষ থেকে কারো ব্যাপারে সমালোচনার ভিত্তি, তাহলে কি অবস্থা আমাদের, ভাবতে খুবই কষ্ট লাগে। এছাড়াও ড. জাকির নায়েকের ব্যাপারে আমাদের দেশের যারা সমালোচনা করেছেন তারা যে সকল বিষয়ে সমালোচনা করেছেন তার অধিকাংশই জাকির নায়েক কখন কোথায় বলেছেন তার কোন উদ্ধৃতি নেই। অনেক ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের ব্যাপারে এমন কথা বলা হয়েছে যা আসলে জাকির নায়েক বলেন নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের একটি দীর্ঘ একটি আলোচনার মাঝখান থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অস্পষ্ট করে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে আসলে জাকির নায়েকের মুল বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। অনেক সমালোচনা করা হয়েছে অযৌক্তিকভাবে কেবলমাত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে। আর বাকি অধিকাংশ ইখতিলাফ তথা মতবিরোধপূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রেই ড. জাকির নায়েক কর্তৃক কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে বিভিন্ন মত উল্লেখ শেষে তার মধ্যে একটিকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টিকে বলা হয়েছে মনগড়া ব্যখ্যা বা কুরআন- হাদীসের অপব্যখ্যা। এসম্পর্কে এখন সমালোচকদের কিছু সমালোচনা ও আমার স্বল্প জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে তার বিপরীত বাস্তবতা বা তুলে ধরা হচ্ছে। অনেক পাঠকই হয়তো আমার দেয়া জবাবের চেয়েও ভালো জবাব দিতে পারবেন। তাদের জন্য শেয়ার করার সুযোগ রইলো। ১. “জাকির নায়েক আলেম নন।” (মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী লিখিত, জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ৫) – ‘ড. জাকির নায়েক আলেম নন’ -এই কথাটি কতটুকু সত্য? যারা বলছেন যে, তিনি আলেম নয়, তাদের কাছে আলেম হওয়ার মানদন্ড ও মাপকাঠি কি? আলেম হওয়ার জন্য কোন কওমী মাদ্রাসায় পড়াই কি একমাত্র পথ? আমরা জানি আরবদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্কুল-কলেজ আমাদের দেশের স্কুল-কলেজের মতো নয়। সেখানকার স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে আমাদের দেশের স্কুল-কলেজের সিলেবাস রাতদিন ব্যবধান। আমার জানামতে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মাদরাসাহ বলা হয়। আর সেই সকল প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনা আমাদের অনেক কওমী মাদ্রাসার চেয়েও যে শ্রেষ্ঠতর, তা না মেনে উপায় নেই। সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর উপর দীর্ঘ পড়াশোনার মাধ্যমে যে কেউ আলেম হতে পারেন। ড. জাকিরও এই হিসেবে আলেম বলে গণ্য হতে পারেন। উপরন্তু তার গবেষণা প্রতিষ্ঠানে আরব-আজমের এক ঝাঁক নবীন ও প্রবীণ মুহাক্কিক আলেমের স্বরব উপস্থিতি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো। ড. জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা আইআরএফ এর গবেষক প্যানেলে যে সকল আলেম আছেন তার কয়েকজন হলেন, আল্লামা সিরাজ ওয়াহহাজ, হুসাইন ইয়ে, ইয়াসির কাজী, সালীম আল আমরী, আসীম আল হাকিম, শেখ জাফর ইদ্রিস, রিয়াজ আনসারী, মুহাম্মাদ আল জিবালী, ওয়াজদি গাজ্জায়ি, ওয়ালিদ বাসইউনি প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য আলেম। যাদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ড. জাকির নায়েকের গবেষণা ও আলোচনা প্রস্তুত করার অনেক ক্ষেত্রেই এই সকল বিজ্ঞ আলেমের ভূমিকাও থাকে। এছাড়াও দীনী গবেষণা ও পর্যালোচনার জন্য রয়েছে বিচক্ষণ আলেমদের তত্ত্বাবধানে আলাদা টীম। ড. জাকির নায়েকের সমালোচকগণ একটু কষ্ট করলেই এই সকল তথ্য জানতে পারতেন। কিন্তু তারা তা না করেই সম্পূর্ণ কল্পনা প্রসূত বলে দিয়েছেন যে, জাকির নায়েক আলেম নন, তার সাথে আলেমদের সম্পর্ক নেই। যা নি:সন্দেহে দু:খজন। আমাদের দেশের অনেক আলেমের মধ্যকার এ ধরণের একটি সংকীর্ণ মানসিকতা প্রায় সময় কাজ করে থাকে। কারো মতের সাথে পুরোপুরি না মিললেই তাকে আলেমদের কাতার হতে আলাদা করে ফেলা হয় তার গবেষণায় আরবের অনেক বড় বড় আলেমের সম্পৃক্ততা থাকলেও তাদেরকে ধর্তব্যের বাইরে রাখা হয়। আল্লাহ আমাদের এই সংকীর্ণ মানসিকতা পরিহার করার তাওফীক দিন। আর যদি ড. জাকির নায়েক যদি বিজ্ঞ আলেম নাও হয়ে থাকেন তদুপরি পবিত্র কুরআনের সূরায়ে তাওবার ১২২ নং আয়াতের মাধ্যমে আমরা জানি যে, দীনের উপর তাফাক্কুহ বা গভীর জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজে আইন নয়, বরং ফরজে কিফায়া। কিন্তু সূরায়ে ইউসূফের ১০৮ নং আয়াত, সূরায়ে নাহল এর ১২৫ নং আয়াতসহ আরো অনেক আয়াতের দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে প্রতিটি মুসলিমের জন্য দীনের দাওয়াত দেয়া ফরজ। অন্যের কাছে দীনের কথা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ রাসূল সা. তার হাদীসেও দিয়ে গেছেন। সুতরাং ড. জাকির নায়েক যদি আলেম নাও হন, তিনি তো একজন মুসলিম, আর মুসলিম হিসেবে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনার আলোকে তিনি তার জানা অধ্যায় প্রমাণ সহকারে অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন। (আর ড. জাকির নায়েকও তার বিভিন্ন আলোচনায় নিজেকে সব সময় বিভিন্ন ধর্মের একজন ছাত্র বলে পরিচয় দেন, ফকীহ বা বিরাট মুহাদ্দিস হিসেবে নন।) এটা কি করে নিন্দনীয় ও সমালোচনার বিষয় হতে পারে ? ২. “তিনি পড়াশোনা করেছেন খৃষ্টান মিশনারী ও হিন্দুদের স্কুল- কলেজে।” এরপর তিনি ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং কুরআন হাদীস দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। (মুফতী মীযানুর রহমান কাসেমী লিখিত বই, ডা. জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ, পৃষ্ঠা ০৬) – উলামায়ে কিরামগণ এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, শরীয়তের কোন বিধান লংঘন না হলে স্বাভাবিকভাবে ও সাধারণত: স্কুল- কলেজে পড়াশোনা হারাম কিংবা অন্যায় কোন কাজ নয়। প্রয়োজনীয় দীনী ইলম অর্জনের পর একজন মানুষ যে কোন বিষয়ের ইলম অর্জন করতে পারেন। যে কোন বৈষয়িক বিষয়ে পান্ডিত্য লাভ করতে পারেন। সাহাবায়ে কিরাম রা. মুশরিক, ইহুদী ও অন্যান্য ধর্ম ছেড়ে মুসলিম হয়ে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নিজেকে পরিবর্তন করেছেন। এরপর দীনের দাওয়াত দিয়েছেন কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে। -এটা যদি অন্যায় বা নিন্দনীয় না হয়ে প্রশংসার বিষয় হয়, তাহলে স্কুল- কলেজে পড়াশোনা করার পর কুরআন- হাদীস নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা এবং তার পর দীনের দাওয়াতের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করাও নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। ৩. কুরআন হাদীস নিয়ে অধ্যয়ন করার জন্য একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন কিন্তু এ ব্যাপারে তার কোন শিক্ষক নেই। (মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী লিখিত, জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ৬, ৯) ড. জাকির নায়েকের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কোন শিক্ষক নেই বলে যারা মন্তব্য করছেন, নি:সন্দেহে তারা না জেনে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। আরব দেশগুলো শেখ আহমাদ দীদাতকে একজন শ্রেষ্ঠ ইসলামিক পন্ডিত বলে বিবেচিত। ড. জাকির নায়েক নিজে তার অধীনে ইসলামের উপর পড়াশোনা করেছেন। শেখ আহমাদ দীদাতও ড. জাকিরকে তার শ্রেষ্ঠ ছাত্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শেখ আহমাদ দীদাত সম্পর্কে জাকির নায়েকের সমালোচকগণও নিজ বইতে স্বীকার করেছেন যে, তিনি একজন শ্রদ্ধেয় এবং ‘হক পন্থী’ দীনের দায়ী। ড. জাকির নায়েক আলেমদের সম্পর্কহীন কথাটিও পুরোপুরি ভুল এবং সীমাহীন মুর্খতার পরিচায়ক। বরং ড. জাকির নায়েক যে পরিমাণ আলেম আর আন্তর্জাতিক শীর্ষ ইসলামী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে দীনের কাজ করেন, বর্তমান বিশ্বে তার দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। ড. জাকির নায়েকের যে কোন গবেষণা ও বক্তব্যে তার এই উলামা টীমের অবদান নি:সন্দেহে অনস্বীকার্য। তার আলোচনায় ইলমী এবং ইজতিহাদী বিষয়াবলীর সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম উপস্থাপনই বলে দেয় যে, এগুলো রচনা ও গ্রন্থনার পেছনে কত মেধাবান আর বিজ্ঞ আলেমদের অবদান ছিলো। আরবের প্রায় সকল শীর্ষ ইসলামী পন্ডিতদের সাথে ড. জাকির নায়েকের সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। গত রমজানে ড. জাকির নায়েকের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম, শায়খ সুদাইসী প্রাইভেট বিমান নিয়ে ছুটে আসেন এবং অনুষ্ঠান শেষ করে আবার মক্কায় ফিরে যান। এছাড়াও বর্তমান আধুনিক যুগে আরব- আজমের বড় বড় শায়খ ও আলেমদের সাথে ড. জাকির নায়েকের যে কি পরিমাণ যোগাযোগ, বিজ্ঞ আলেমদের কত বড় টিম নিয়ে জাকির নায়েক গবেষণা করেন, তার কোনরূপ ধারণা না নিয়ে কেবলমাত্র কল্পনাপ্রসূতভাবে ‘ড. জাকির নায়েকের কোন শিক্ষক ও নির্দেশক নেই’ বলে মন্তব্য করা অপবাদ বৈকি। কোন ব্যক্তিকে ইসলামের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর তা মূল্যায়ন করার একমাত্র গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে কুরআন এবং হাদীস। কেবলমাত্র কোন মাদ্রাসার থেকে আলেম হওয়ার ‘সনদ’ না থাকা কিংবা প্রচলিত আলেমদের মতো বেশ- ভুষা না থাকাই একজন ব্যক্তিকে ‘পথভ্রষ্ঠ’ কিংবা গোমরাহ বলার জন্য যথেষ্ট নয়। কারো কোন সুনির্দিষ্ট বক্তব্য বা লেখনীর ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সুনিশ্চিত বৈপরিত্বের প্রমাণ ব্যতীত কেবলমাত্র ‘’অনেক আলেম তার বিপক্ষে’ বক্তব্য দিয়েছেন’ বলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যতক্ষণ না সেই সকল আলেমদের বিরোধীতার কারণ গুলো (ইখতেলাফ পূর্ণ মাসআলার বাইরে) সুনিশ্চিতভাবেই কুরআন সুন্নাহ বিরোধী বুঝা যাবে। না হলে বর্তমান বিশ্বে ইহুদী এবং খৃষ্টানদের মধ্যেও কুরআন-হাদীসের উপর অভিজ্ঞ লক্ষ লক্ষ পাওয়া যাবে। তাদের সুন্নাতী লেবাস পোষাকও আছে। ইসলামী পন্ডিতদের অধীনে ছাত্র হিসেবে তারা পড়াশোনাও করেছে। তাই বলে তারা ইসলামের কল্যাণকামী বা মিত্রপক্ষ নয়। কারণ তাদের কর্মকান্ড এবং বক্তব্য গুলোকে কুরআন-সুন্নাহর কষ্টিপাথরে যাচাই করলে তাদের গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। নবী আ. গণ যেহেতু নিষ্পাপ এবং স্বয়ং মহান আল্লাহর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ছিলেন, সাহাবীগণ যেহেতু স্বয়ং প্রিয়নবী সা. এর প্রশিক্ষণে ও তত্ত্বাধানে ছিলেন। তাদের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ পরীক্ষা নিয়েছেন বলে ঘোষণা এসেছে, ইরশাদ হয়েছে; ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺍﻣْﺘَﺤَﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻗُﻠُﻮﺑَﻬُﻢْ ﻟِﻠﺘَّﻘْﻮَﻯ ﻟَﻬُﻢْ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺓٌ ﻭَﺃَﺟْﺮٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ অর্থ: “(রাসূলের প্রিয় সাহাবীগণ-) তারা হলেন সেই সকল মহান ব্যক্তি, স্বয়ং মহান আল্লাহ যাদের অন্তরের তাকওয়ার পরীক্ষা নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০৩) তাই এখন যারা বলবে যে আমরা কুরআন এবং হাদীস মানি, কিন্তু সাহাবীদেরকে মানি না, তারা আসলে হাদীসও মানে না, কুরআনও মানে না। কারণ সাহাবায়ে কিরাম রা. ছিলেন সরাসরি প্রিয়নবী সা. এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাধানে। রাসূল সা. ছিলেন তাদের শিক্ষক। আর সাহাবীদের ঈমান ও তাকওয়ার পরীক্ষা নিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ। এরপর স্বয়ং আল্লাহ সাহাবীদের ব্যাপারে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। যেমন উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে। এছাড়া মহানবী সা. তার অসংখ্য হাদীসে সাহাবীদের সমালোচনা ও নিন্দাবাদ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এরপরও যারা সাহাবীদের সমালোচনা করবে, মহান আল্লাহর পরীক্ষায় সন্তুষ্ট না হয়ে নিজেরাও তাদের পরীক্ষা নিতে চাইবে, তারা নি:সন্দে কুরআন এবং হাদীসের উপর পূর্ণাঙ্গ আস্থাশীল নয়। তবে অনেকের হয়তো প্রশ্ন আছে যে, তাহলে সাহাবীদের কারো জীবনে যদি কোন গুনাহ হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে সেটিও কি আমরা মেনে নেবো? এর জবাব হলো, সাহাবীগণ যেহেতু রাসূলের পর্যবেক্ষণে ছিলেন, রাসূল যেহেতু তাদের শিক্ষক ছিলেন, তাই ছাত্রের সাময়িক দূর্বলতার সমাধান তাদের শিক্ষক এবং আমাদের সকলের প্রিয় নবী সা. কি দিয়েছিলেন? তিনি যেই সমাধান দিয়েছিলেন সেটিই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আর বুঝতে হবে যে, এই সমাধানটি সারা বিশ্বের অনাগত সকল মানুষকে জানিয়ে দেয়ার জন্যই মহান আল্লাহ এমনটির অবতারণা করেছিলেন। । ভুলের উপর আমাদের আমল করা যেমন ভুল তেমনি সেই ভুল নিয়ে আমাদের বিশাল গবেষণায় মত্ত্ব হওয়াও অনুচিত যেহেতু এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট হাদীস আছে। – আর এমন সামান্য ব্যতিক্রম খুব কম ক্ষেত্রেই পাওয়া যাবে । তারা অবশ্যই আমাদের চেয়ে অনেক অনেক শ্রেষ্ঠ ও মহান। তাই সাহাবীগণ অবশ্যই সমালোচনার উর্ধ্বে। আর সাহাবীদের সমালোচনা না করা কিংবা তাদেরকে গালমন্দ না করার জন্য রাসূলের অনেক হাদীসও বর্ণিত হয়েছে (কলেবর না বাড়ানোর জন্য যার বিস্তারিত উদ্ধৃতি হতে বিরত রইলাম)। নবী এবং সাহাবী ব্যতীত পৃথিবীর আর কোন মানুষই সমালোচনা ও পর্যালোচনার উর্ধ্বে নয়। আর এই সমালোচনা ও পর্যালোচনার মানদন্ড বা মাপকাঠিও নির্ধারিত, তা হচ্ছে কুরআন এবং হাদীস। একইভাবে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে (ইখতেলাফপূর্ণ মাসআলা ব্যতীত) কুরআন এবং হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক কোন বক্তব্য পাওয়া গেলে অবশ্যই তার সেই বক্তব্যকে বর্জন করতে হবে। তাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। তবে সাথে সাথে এটাও স্মরণ রাখতে হবে যে, একজন ব্যক্তির একটি ভুলের কারণে তার সকল কাজকেই বাতিল করে দেয়া যাবে না। একজন মানুষের একটি পদস্খলন যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি একটি পদস্খলনের কারণে তার বাকী সকল ভালো কাজও পরিত্যাজ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে সকলকেই বাড়াবাড়ি এবং ছাড়াছাড়ি পরিহার করে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। ৪. “ড. জাকির নায়েকের কুরআন তিলাওয়াত শুদ্ধ নয়।” (মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী লিখিত, জাকির নায়েকের আসল চেহারা, পৃষ্ঠা নং ৯) – নি:সন্দেহে প্রতিটি মুসলমানের জন্য পবিত্র কুরআন শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করা দরকার। ইমাম সাহেবের তিলাওয়াত যদি লাহনে যলী হয় তাহলে তার ইমামতি শুদ্ধ হয় না এব্যাপারেও কারো দ্বিমত নেই। এটা ঠিক যে ড. জাকির নায়েকের আরবী উচ্চারণ খানিকটা আটকে যায়। শুধু আরবী উচ্চারণই নয় বরং যারা ড. জাকির নায়েকের আলোচনা শুনেছেন তারা দেখেছেন যে, ড. জাকির নায়েকের ইংরেজি ভাষা ও বক্তব্যও অতোটা শ্র“তিমধুর নয়। তার ইংরেজি শব্দ উচ্চারণও আটকে যায় এবং শব্দগুলো খানিকটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসে। জন্মগতভাবে কিংবা কারণবশত: যদি কারো মুখে জড়তা থাকে তাহলে এমনটি হতে পারে। তার তিলাওয়াত শুনে আমার যা মনে হয়েছে তা হলো, শারীরিক কোন ত্র“টি থাকার কারণেই সম্ভবত: তার শব্দের উচ্চারণ অতটা শ্র“তিমধুর নয়। যারা আগ্রহ করে তার আলোচনা শুনতে যান বা শুনেন তারা তার কথা এজন্য শুনেন না যে তাতে সূর, তাল, লয় কিংবা উচ্চাঙ্গের সাহিত্য- লালিত্যপূর্ণ ভাষা ও শৈল্পিক ব্যাকরণ আছে। বরং তারা তার থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য- তত্ত্ব এবং যৌক্তিক ও প্রামাণ্য আলোচনা শোনার জন্য। তবে এটা যদি শারীরিক কারণে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কিছু করার নেই। কিন্তু যদি তিলাওয়াত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটা দূর করার কোন ব্যবস্থা থাকে তাহলে তা করা দরকার। আর যদি এটি শারীরিক সমস্যা নাও হয়ে থাকে তাহলেও এটি এমন কোন বিষয় নয়, যার ফলে তার জন্য দীনের দাওয়াত দেয়া বন্ধ রাখতে হবে। উচ্চারণ সমস্যার কারণে যেমনিভাবে একজন মুসলিমের উপর নামাজ পড়া, রোজা রাখার বিধান রহিত হয় না, একইভাবে উচ্চারণ সমস্যার কারণে ড. জাকির নায়েককে ‘দীনের দাওয়াত ও তাবলীগ’ বন্ধ করে দিতে হবে এমনটিও আবশ্যক নয়। বরং এটা তো আরো প্রশংসনীয় যে, হযরত বিলাল রা. কিংবা হযরত মূসা আ. এর মতো মহান ব্যক্তিরা যেমন নিজেদের উচ্চারণ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও দীনের দাওয়াত নিয়ে এগিয়ে গেছেন তেমনি জাকির নায়েকও কষ্ট করে হলেও দীনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বোপরি ড. জাকির নায়েক যেহেতু ইমাম কিংবা কিরাআতের প্রশিক্ষক নন, তাই এই বিষয়টি দিয়ে তাকে অভিযুক্ত করা কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
Posted on: Sun, 16 Nov 2014 14:33:41 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015