পিতৃতান্ত্রিকতা ও - TopicsExpress



          

পিতৃতান্ত্রিকতা ও মাতৃতান্ত্রিকতা মানব জাতির ইতিহাসের সাথে পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজের ইতিহাস জড়িত রয়েছে। পৃথিবীর পুর্ব-গোলার্ধে হাজার হাজার বছর ধরে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ গড়ে উঠেছে আর পশ্চিমা সমাজ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলেছে। ইসলাম, খৃষ্টিয়ানিটি ও জুদাইজম পিতৃতান্ত্রিকতার প্রতীক। অষ্টাদশ শতাব্দির শেষের দিকে ইউরোপীয় রেনেসাঁর পন্ডিতগন পৃথিবীকে আধুনিক করার পরিকল্পনা গ্রহন করলেন। আধুনিকতার যুগে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মুল কাজ হল আধুনিক দক্ষ মানুষ বানানো। আধুনিক রাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিক মানুষ বানাবার কারখানা। এখানে যুক্তিবিন্যস্থ মানুষ তৈরী হবার কথা। কিন্তু আধুনিকতাবাদ কার্য-কারন সম্পর্ক রক্ষার নামে ধর্মের দু’ধারী তলোয়ার হাতে তুলে নিল। রেনেসাঁর দ্বি-দৃষ্টিক বিশ্ব দৃষ্টিভংগীঃ ভালো-মন্দ, সাদা-কালো, উত্তম-অধম, ওয়েষ্ট-ইষ্ট, ধনী-গরীব, বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত, মালিক-শ্রমিক, পুরুষ-নারীর মত প্রত্যয় সমুহের উঁচু-নীচু মান নির্ধারন নিশ্চিত করা হয়। আধুনিকতাবাদ উঁচু-নীচু ভেদাভেদের উপর প্রতিষ্ঠিত আধুনিক-পুর্ব অসাম্যবাদী সমাজের নয়া সংষ্করন। পুরুষের স্থান এখানেও নারীর উপর নির্ধারন করা হয়। পুরুষ এখানেও মহামানব হতে পারে, তবে নারীর মহামানবী হবার কোন জায়গা আধুনিকতায়ও নেই। এ ধারনার উপর ভিত্তি করে পশ্চিমা সমাজ পিতৃতান্ত্রিকতাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছে। পিতৃতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রাগৈতিহাসিক কালে বাংলাদেশের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। এশিয়া মহাদেশের সব দেশেই মাতৃতান্ত্রিক ছিল। ভারতীয় সমাজ মুলতঃ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। পরিবারের কেন্দ্রে ছিলেন মা। আজো পৃথিবীর পুর্ব-গোলার্ধ পারিবারিক মূল্যবোধ দ্বারা শাসিত। এই মূল্যবোধ সমষ্টিবাদের আদর্শ (Collectivism) বহন করে। অপর দিকে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রতাবাদ (Individualism) পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মগজ, পশ্চিমা সমাজের আত্মা। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রতাবাদকে লালন করে। ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রতাবাদ পুঁজিবাদের জন্মদাতা। বাংলাদেশ আজ একটি অগ্রগতিশীল পুঁজিবাদী দেশ। ধর্মীয় দিক-বিচারে বাংলাদেশ একটি আদর্শ পিতৃতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশের পিতৃতান্ত্রিকতা নিয়ে আলোচনার পূর্বে আমরা আমাদের বৃহত্ প্রতিবেশী ভারতের দিকে তাকাতে পারি। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কৃষ্টি-কালচারের প্রভাব আমাদের দেশে এসেও ঠেক খাচ্ছে। ভারত কি পিতৃতান্ত্রিক? না, মাতৃতান্ত্রিক? এ নিয়ে দীর্ঘ দিন বিতর্ক চলছে। ভারতের বিখ্যাত লেখিকা অরুন্দতী রায় বিষয়টিকে বিতর্কিত হিসেবে দেখছেন। বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন সে দেশের দু’ মহান জাতীয় নেতা পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধী। ভারতের উন্নয়ন ধারনার (Development) বিতর্কে নেহেরু ও গান্ধী ও একে অপরের বিপরীতে অবস্থান গ্রহন করেছেন। একজন পিতৃতান্ত্রিক এবং অপরজন মাতৃতান্ত্রিক মডেল গ্রহন করেছেন। অরুন্দতী রায় লিখেছেনঃ The Nehru v. Gandhi argument pushes this very contemporary issue back into an old bottle. Nehru and Gandhi were generous men. Their paradigms for development are based on assumptions of inherent morality. Nehru’s on the parental, protective morality of the Soviet-style centralized State. Gandhi’s on the nurturing, maternal morality of romanticized village republics ( Arundhati Roy, 1999, The Cost of Living. p. 11). ‘নেহেরু বনাম গান্ধীর বিতর্ক আধুনিক ভারতের উন্নয়ন স্বপ্নকে পুরাতন বতলে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। অবশ্য এ দু’জনই উদার এবং মহানজন ছিলেন। এদের উন্নয়ন মডেলের ভিত্তিমূলে ছিল নৈতিকতার ধারনা। নেহেরুর চিন্তায় ছিল পিতৃতান্ত্রিক ভারত এবং সোভিয়েত ধরনের কেন্দ্রমুখি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মডেল। অপর দিকে গান্ধী স্বপ্ন দেখেছেন মাতৃতান্ত্রিক সেবাধর্মী ভারত এবং যেখানে গড়ে উঠবে স্বপ্নময় স্বয়ং সম্পুর্ন গ্রাম-প্রজাতন্ত্র’। ভারত রাষ্ট্রের এ দু’জন প্রতিষ্ঠাতা নেতা পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধী সে দেশের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর অগ্রগতি ও মুক্তির লক্ষ্যে পিতৃতান্ত্রিকতা ও মাতৃতান্ত্রিকতার মডেল রেখে গেছেন। কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে ধর্মনিরপেক্ষ পিতৃতান্ত্রিক রাজনীতি এবং বিজেপিকে কেন্দ্র করে ধর্মকেন্দ্রিক মাতৃতান্ত্রিক রাজনীতি আজ ভারতব্যাপী চলছে। এ বিভক্ত রাজনীতির ভিশন নিয়ে ভারত সামনে এগুচ্ছে। এ বিভাজনের রাজনৈতিক ঢেউ আজ বাংলাদেশে এসেও আচড়ে পড়ছে। স্বাধীনতার পর পিতৃতান্ত্রিক “নেহেরুবাদ” বাংলাদেশে “মুজিবাদ” রুপে আত্মপ্রকাশ করে। এ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে “জাতির পিতা” ঘোষনা করে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে সম্প্রতি গান্ধীবাদের জোর প্রচার শুরু হয়েছে। দেশের ধর্মপন্থী দলগুলুর নেতা- কর্মীরা গান্ধীবাদের পবিত্র পতাকা হাতে তুলে নিয়েছে। কারন তারা ধর্মনিরপেক্ষতা পছন্দ করে না। ধর্মপক্ষ ও ধর্মনিরপেক্ষ- এ দু’ কেন্দ্রে বাংলাদেশের রাজনীতিকেকে এখন বিভক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও কিছু লোক এখন “গান্ধীবাদী” হিসেবে পরিচয় লাভ করেছেন। মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনের ফসল খাঁদি কাপড়ের পোষাক গায়ে দিয়ে এরা চলাফেরা করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলুর ভিতর দ্রুত গান্ধীবাদী নেতা-কর্মী তৈরী করার কাজ চলছে। এরা তৈরী হচ্ছেন পিতৃতান্ত্রিক “নেহেরুবাদ” ও “মুজিবাদের” বিপরীত ধারায়। আওয়ামী লীগের পবিত্র পতাকা তলেও অনেকে ঈএ আদ র্শবাদ নিয়ে আছেন। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এদেশের শাসনতন্ত্রে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম করা হয়েছে। এ কারনে বাংলাদেশ একটি পিতৃতান্ত্রিক দেশ। এদেশের ধর্মসমুহ পিতৃতান্ত্রিকতার আদর্শ মানে। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার, সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে। প্রশ্নঃ বাংলাদেশ কি পিতৃতান্ত্রিকতা পরিহার করে মাতৃতান্ত্রিকতার দেশে পরিনত হবে? Nur Mohammad Kazi, s.w., Family Therapist MSW(DU).,MSS(DU).,MSW (McGill).,Ph.D.abd.(McGill). Project profamily/Executive Director myheritage/site-7299531/kazi / en.netlog/nurkazi
Posted on: Sat, 08 Jun 2013 23:57:44 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015