প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের - TopicsExpress



          

প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস তত্ত্ব: বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে, এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। তাঁরা আরো নিশ্চিত যে, এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ করছে। বিষয় দুটি আসলে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত – সম্প্রসারণ করছে বলেই শুরু আছে। অর্থাৎ এমন একটা সময় ছিল যখন এই মহাবিশ্ব বর্তমান অবস্থায় ছিল না। মহাবিশ্বের শুরুর মুহূর্তকে বিজ্ঞানীরা ‘বিগ ব্যাং’ নাম দিয়েছেন। কিছু একটা ‘নাম’ তো দিতেই হবে। ‘বিগ ব্যাং’ এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘মহাবিস্ফোরণ।’ এখানে স্মরণ রাখতে হবে যে, এই ‘মহাবিস্ফোরণ’ বা ‘ক্ষুদ্রবিস্ফোরণ’ এর শব্দ কিন্তু কেউই শোনেননি এবং কারো পক্ষে শোনাও আর সম্ভব নয়, যেহেতু এটি বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগের একটি ঘটনা। তবে যে কোনো ভাবেই হোক না কেনো, এই মহাবিশ্বের যে একটা শুরু আছে এবং মহাবিশ্বটি যে সম্প্রসারণও করছে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে বড় ধরণের কোনো সংশয়-সন্দেহ আছে বলে মনে হয় না। কোরআন বলছে: তিনি আকাশমন্ডলী ও জমিনকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী; তিনি যখন কিছু করতে চান তখন সেটিকে বলেন: ‘হয়ে যাও’, অমনি তা হয়ে যায়। (২:১১৭) To Him is due the primal origin of the heavens and the earth: When He decreeth a matter, He saith to it: ‘Be’, and it is. (2:117) বস্তুত তাঁর সৃষ্টিকার্য এরূপ যে, যখন তিনি কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করেন, তখন তিনি তাকে বলেন, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়। (৩৬:৮২) তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কোরআন অনুযায়ীও এই মহাবিশ্বের একটি শুরু আছে – অর্থাৎ এই মহাবিশ্বকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে নিয়ে আসা হয়েছে, তা ‘পরম শূন্য’ থেকে হোক বা অন্য যে কোনো ভাবেই হোক না কেনো। উপরোল্লেখিত আয়াতে উল্লেখিত ‘Be’ কম্যান্ডমেন্টকে ‘Big Bang’ এর সাথে অত্যন্ত যৌক্তিক ভাবেই তুলনা করা যেতে পারে – অর্থাৎ মহাবিশ্বের শুরুর মুহূর্ত। বিজ্ঞানীরা যেমন বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে ‘সুইচ টিপে’ কৃত্রিম বিগ ব্যাং শুরু করতে যাচ্ছেন, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ‘Be’ কম্যান্ডমেন্ট এর মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় পনের বিলিয়ন বছর আগে বাস্তব বিগ ব্যাং শুরু করেছিলেন। কেউ কেউ আবার এই ‘Be’ কম্যান্ডমেন্টকে নিয়ে বেশ কৌতুক করার চেষ্টা করে। কারো মধ্যে সামান্যতমও সাধারণ বোধ বলে কিছু থাকলে এই বিষয়টা নিয়ে কৌতুক করার আগে দু’বার করে ভেবে দেখা উচিত। অনস্তিত্ব থেকে কোনো কিছুকে অস্তিত্বে নিয়ে আসতে হলে ‘Be’ কম্যান্ডমেন্ট ছাড়া অন্য কোনো পন্থা আছে কি? ফ্যাক্টরীতে যেভাবে হাত ও মেশিন দ্বারা ‘কোনো কিছু’ থেকে ‘অন্য কিছু’ তৈরী করা হয়, কোরআনে হয়তো সেরকম কিছু না পেয়ে ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে কৌতুক করার চেষ্টা করা হয়! তাছাড়া ‘Be’ কম্যান্ডমেন্ট এর মাধ্যমে কারো পক্ষে যদি ‘কোনো কিছু’ থেকে ‘অন্য কিছু’ তৈরী করা সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে কোনো পাগলেও পয়সা-শ্রম খরচ করে একই জিনিস তৈরীর জন্য ফ্যাক্টরিতে যাবে না! অধিকন্তু, এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা আবার কোন্‌ স্রষ্টার তৈরী করা ফ্যাক্টরিতে যাবেন! ইট ডাজ নট মেক এনি সেন্স, ম্যান! কোরআন বলছে: Do not the Unbelievers see that the heavens and the earth were joined together (as one unit of creation), before We clove them asunder? We made from water every living thing. Will they not then believe? (21:30) এই আয়াতে বিগ ব্যাং ও তার পরবর্তী অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ একদম শুরুতেই হয়তো ‘Be’ কম্যান্ডমেন্ট এর মাধ্যমে বস্তু অথবা শক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে এবং সেটিকে পৃথক করে গ্রহ-নক্ষত্র তৈরী করা হয়েছে। কোরআন বলছে: And it is We who have built the universe, and behold, We are steadily expanding it. (51:47) এখানে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কোরআন বলছে: The Day when We shall roll up the heavens as a recorder rolleth up a written scroll. As We began the first creation, We shall repeat it. (It is) a promise (binding) upon Us. Lo! We are to perform it. (21:104) বিজ্ঞানীরাও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করছেন যে, এই মহাবিশ্ব একদিন ধ্বংস হবে। আর ধ্বংস হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে সম্প্রসারণ করতে পারে না। তা-ই যদি হয় তাহলে এই মহাবিশ্ব একদিন সঙ্কুচিত হওয়া শুরু করবে। আর সঙ্কুচিত হওয়া শুরু করলে একদিন-না-একদিন ধ্বংস অনিবার্য, যাকে বিজ্ঞানীদের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘Big Crunch’: If the gravitational attraction of all the matter within the observable horizon is high enough, the expansion of the universe eventually reverses. In physical cosmology, the Big Crunch is one possible scenario for the ultimate fate of the universe, in which the metric expansion of space eventually reverses and the universe recollapses, ultimately ending as a black hole singularity. (Wikipedia) কোরআনের উপরোক্ত আয়াতেও ‘Big Crunch’ এর অনুরূপ ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তাহলে কোরআন অনুযায়ী এই প্রাকৃতিক মহাবিশ্বকে ‘Be’ কম্যান্ডমেন্ট তথা ‘Big Bang’ এর মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে (২:১১৭, ২১:৩০)… তারপর থেকে মহাবিশ্বকে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে (৫১:৪৭)… ধীরে ধীরে সংকোচনের মাধ্যমে একদিন ধ্বংস করা হবে (২১:১০৪)… এবং আবারো নতুন করে মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করা হবে (২১:১০৪,১৪:৪৮)। অতএব, কোরআনে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস তত্ত্বকে কিন্তু বিজ্ঞানের সাথে যৌক্তিক ভাবেই সমন্বয় করানো যায়। এর মধ্যে যারা আবার ‘গাণিতিক সূত্র’ বা ‘পরীক্ষামূলক উপাত্ত’ আশা করে তাদের উচিত হবে কোনো এক মাদ্রাসাতে ভর্তি হয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের উপর কিছু ছবক নেওয়া। একটি ধর্মগ্রন্থ, যার উদ্দেশ্য হাতে-কলমে বিজ্ঞান শেখানো নয়, থেকে এর চেয়ে বেশী আর কী আশা করা যেতে পারে! অথচ সুস্পষ্ট কোনো যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে কোরআনের সৃষ্টি তত্ত্বকে মিথ, প্রাচীন, ছদ্মবিজ্ঞান, ফ্যান্সি স্টোরি, ইত্যাদি বলে অপপ্রচার চালিয়ে চরম হাস্যকর কিছু একটা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা চলছে। কেউ কেউ আবার পেগ্যান মিথলজির কাদা খুঁড়ে সেখানে থেকে বিভিন্ন দেব-দেবীকে পৃথক করে পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির কাহিনী নিয়ে এসে বলার চেষ্টা করেন যে, ইসলামের নবী সেই সকল পেগ্যান মিথলজি থেকে কোরানের ২১:৩০ নাম্বার আয়াত কপি করেছেন! বিশেষ একটি ধর্মগ্রন্থকে হেয় করার উদ্দেশ্যে মানুষের রুচিবোধের বহর দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। প্রথমত, যারা এই কাদা খোঁড়াখুড়ি করছেন তাদের কাছে কোনো দলিল-প্রমাণ আছে কি-না? অর্থাৎ তাদেরকে যদি চ্যালেঞ্জ করা হয় সেক্ষেত্রে তারা কি প্রমাণ দেখাতে পারবেন যে, ইসলামের নবী সত্যি সত্যি পেগ্যান মিথলজি থেকে কপি করেছেন? দ্বিতীয়ত, পেগ্যান মিথলজিতে নাকি দেব-দেবীকে পৃথক করে পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির কাহিনী আছে। যদিও সেই কাহিনী কোথায় লিখা আছে এবং সেটি কতদিন আগের লিখা তার সঠিক কোনো হদিস দেওয়া হয় না তথাপি এটি কি আদৌ বিজ্ঞানসম্মত? কোরআনের কোথায় লিখা আছে যে, দেব-দেবীকে পৃথক করে পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করা হয়েছে! তৃতীয়ত, কোরআনে আকাশমন্ডলীর কথা বলা হয়েছে, শুধু আকাশ নয়। আকাশ আর আকাশমন্ডলীর মধ্যে পার্থক্য আছে। চতুর্থত, কোরআনের ২১:৩০ আয়াত একটি স্বতন্ত্র আয়াত। এই আয়াতের সাথে তার আগে-পরের আয়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কোরআনের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যেটি মনুষ্য রচিত গ্রন্থ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ইসলামের নবী পেগ্যান মিথলজি থেকে এক লাইনের একটি উক্তি কপি করে সেটিকে আবার সংশোধন করে কোরআনের একটি সূরার মধ্যে স্বতন্ত্র একটি আয়াত হিসেবে বসিয়ে দিয়ে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী বলে দাবি করেছেন? অত্যন্ত নীচু মানসিকতার লোকজনই কেবল এভাবে ভাবতে পারে। ব্যাপারটা সেই বাংলা প্রবাদের মতই হয়ে গেল: তোর সাথে না পারলে কী হবে, তোর লাউ এর গাছ ছিঁড়েছি তো! তাছাড়া দলিল-প্রমাণ ছাড়া কাউকে অসৎ বলে দোষী সাব্যস্ত করাকে বিজ্ঞান মহল ও সভ্য সমাজে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। ‘পেগ্যানিজম’ নামে আসলে কোনো ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থ নেই। পেগ্যানিজম হচ্ছে মূল ধর্মের বিচ্যুতি। কোরআন অনুযায়ী যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির মধ্যে আল্লাহর বাণী-সহ নবী-রাসূল পাঠানো হয়েছে (১০:৪৭, ৩৫:২৪, ১৬:৩৬, ৪০:৭৮, ৪:১৬৪)। ফলে এমনও হতে পারে যে, কোরআনের ২১:৩০ আয়াত হয়তো কোরআনের পূর্বের কোনো ধর্মগ্রন্থেও ছিল। পরবর্তীতে হয়তো সেই আয়াতকে বিকৃত করে তার মধ্যে দেব-দেবীকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেহেতু সেই সময়ের মানুষের ‘শূন্য’ অথবা ‘শক্তি’ থেকে যে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। কোরআন যেহেতু তার পূর্বের কিতাবগুলোর সত্যায়নকারী ও সংরক্ষণকারী (৫:৪৮, ৩:৩, ৩৫:৩১, ১০:৩৭, ১২:১১১) সেহেতু সেই গুরুত্বপূর্ণ আয়াতকে হয়তো কোরআনে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে। এমনকি ইহুদী-খ্রীষ্টানদের কিছু বিচ্যুতিকেও কোরআনে সংশোধন করা হয়েছে (১৬:৬৪, ৫:১৫, ২৭:৭৬, ৫:৪৮)। এই পৃথিবীর বুকে অন্য কোনো গ্রন্থে এমন কথা লিখা নাই যে, সেই গ্রন্থ তার পূর্বের গ্রন্থগুলোর সত্যায়নকারী ও সংরক্ষণকারী। মানুষ এমন কিছু লিখার সাহসই পাবে না। ফলে পেগ্যান মিথলজি থেকে কপি করার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কিন্তু কোরআনের ক্ষেত্রে খাটছে না। ব্যাপারটা বরং উল্টো হওয়াটাই স্বাভাবিক। মজার ব্যাপার হচ্ছে পেগ্যানিজম বা অন্যান্য ধর্মের প্রচারকরা আবার কোন্‌ মিথলজি থেকে কপি করেছেন সেটার জন্য কিন্তু কাদা খোঁড়াখুড়ি করা হয় না। ফলে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, পেগ্যান মিথলজিতে যা আছে তা আসলে অবৈজ্ঞানিক এবং সেই সাথে হাস্যকরও বটে। অবৈজ্ঞানিক ও হাস্যকর কোনো কিছুকে কাদা খোঁড়াখুড়ি করে হেয় বা ভুল প্রমাণ করার দরকার নাই নিশ্চয়
Posted on: Sat, 16 Aug 2014 18:58:41 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015