বাঙালিত্বের বিকাশ - TopicsExpress



          

বাঙালিত্বের বিকাশ তত্ত্বঃ “ঢাকার শাহ-সাব” বনাম “কোলকাতার বাবু-সাব” নূর মোহাম্মদ কাজী ঢাকা নগরী ও কোলকাতা নগরীর নির্মাতা বাসিন্দা কারা ছিলেন? বাঙালিত্ব বিকাশে এ নির্মাতা বাসিন্দাদের কোন অবদান আছে কি? বাঙালিত্ব বিকাশে গ্রাম বাংলার মানুষদের অবদান বেশী, না শহরের বাসিন্দাদের অবদান বেশী? এ প্রশ্নগুলুর উত্তর খুঁজে পেতে আমাদেরকে ঢাকা নগরী ও কোলকাতা নগরীর অতীত বাসিন্দাদের শিকড় সন্ধানের পাশাপাশি গ্রাম বাংলার মানুষদের শিকড় অনুসন্ধান করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা “ঢাকার শাহ-সাব” বনাম “কোলকাতার বাবু-সাব”দের নিয়ে বিতর্কে জড়াতে চাই। এতে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে। বাঙালিত্ব পুরুষত্ব প্রাপ্ত হবে। জাতীয় দিশা উন্মোচিত হবে। আসুন আমরা আজিকার যুগসন্ধিক্ষনে জাতীয় দিশা প্রাপ্তির লক্ষ্যে বাঙালিত্ব বিকাশের সঠিক ইতিহাসের সন্ধান করি। এ প্রবন্ধের “ঢাকার শাহ-সাব” অধ্যায় আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা নির্ভর বর্ণনা এবং “কোলকাতার বাবু-সাব” অধ্যায়টিতে রয়েছে আমার পঠন-পাঠন নির্ভর বর্ণনা। বাংলাদেশের গ্রামে জন্ম গ্রহনকারী এক শিশু ঢাকা নগরীতে এসে কিভাবে বাঙালি হয়ে উঠলাম তা আমি এখানে উল্লেখ করছি। আমি কিভাবে বাঙালি হলাম আজ থেকে অর্ধ-শতাব্দির আগের কথা। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ-ঊপনিবেশবাদী শক্তি বহু-জাতিক ভারত বর্ষকে ধর্মভিত্তিক দু’টি রাস্ট্রঃ পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টি করে কেবল বিদায় নিয়েছে। এর কয়েক বছর পর এক সুর্যালোকিত সকালে আমার মা আমাকে সাথে নিয়ে কুমিল্লা জেলার ফরিদগঞ্জ থেকে ঢাকায় আগমন করেন। আমার বাবা তখন পুরানা ঢাকার চুড়ীটোলা মসজিদের ইমাম। মসজিদের কাছেই বাসা। বাসার উত্তর দিকে ঢাকার আদি বাসিন্দাদের বাস। তারা ভাংগা উর্দ্দুতে কথা বলে । আর দক্ষিন দিকে বিহারী কলোনী।এরা পাকিস্তান-হিন্দুস্থান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কালীন হিন্দু-মুসলিম দাংগার কারনে ভারতের পশ্চিম বংগ, মধ্য-প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ ও বিহার রাজ্য থেকে রেফিউজী হিসেবে ঢাকাসহ পুর্ব বাঙালার বিভিন্ন শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদের ভাষা উর্দ্দু। বালক আমি।বন্ধু চাই। ঢাকার আদি বাসিন্দাদের মাঝে বন্ধু পাব এ আশা করে বাসার ডান দিকে যারা খেলছে তাদের কাছে গেলাম। আমাকে দেখে বড় মত ছেলেটি বলল, “তুমি হালায় বাঙাল, গাঁও থাইকা উইড়া আইছ পুইড়া খাইবার লাইগা, ইখান থেকে যাও।” আমি তাদের কাছ থেকে চ লে এসে কান্না ভরা কণ্ঠে সেদিন মাকে প্রশ্ন করেছিলাম, -মা ওরা আমাকে “বাঙাল” বলে গালি দিল কেন? আমি খেলব কাদের সাথে? আমি খেলার সাথী পাব কোথায? মা বল্লেন, -পাবে, সবুর কর। কতদিন আর একা থাকা যায়। এবার গেলাম বিহারী কলোনীর দিকে। তারা আমাকে খেলায় নিল। প্রথম দিকে ওদের ভাষা বুঝতে আমার কষ্ট হচ্ছিল। পরে ঠিক হযে যায়। একদিন আমার সাথে খেলায না পেরে তাদের একজন আমাকে বলল, -তোম লোগ বাঙাল হায়, মাছলি খাতা, তাকাত নাহি হায়। হাম লোগ গোশ খাতা, তাকাত জাদা হায়”। দেখলাম অন্যান্য বিহারী ছেলেরা স্বজাতির ছেলেটার সাথে একাট্টা সায় দিচ্ছে। মন খারাপ হয়ে গেল। পরদিন থেকে আমি আর ওদের ওখানে খেলতে গেলাম না। মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকি। আমার মা খুব মিশুক প্রকৃতির মহিলা ছিলেন। আমাদের বাসা থেকে বের হলে একটি গল্লি, তার পরই আমার মার বান্ধবীর বাসা। আমার মন খারাপ দেখে মা বল্লেন, চল আমার বান্ধবী জমকার মার বাসায় যাই। জমকার মা জমজ দু’ছেলের মা।এর জন্য ওর নাম জমকার মা। জমজ দু’ভাই আমার বয়সী। আমি ওদের পেয়ে খূব খূশী। এর পর থেকে আমি ওদের সাথেই খেলাধুলা করি। একদিন বিকালের কথা। গলির মোড়ে আমরা তিন বন্ধু খেলছি। দেখলাম আমাদের গলির ভিতর মিছিল ডূকছে। তারা শ্লোগাণ দিচ্ছেঃ “আমার ভাষা, তোমার ভাষা-বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা; রাস্ত্র ভাষা বাংলা চাই-নুরুল আমিনের মুন্ডুচাই। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা-তোমার আমার ঠিকানা; আমার দেশ, তোমার দেশ-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; জ়াগো, জ়াগো- বাঙালী জ়াগো; মিছিলের শ্লোগাণগুলি যেন আমার মনের কথা। দু’জমজ বন্ধুকে বললাম, চল মিছিলে যাই।আমরা তিন জন মিছিলে সামিল হয়ে গেলাম। অনেক বড় মিছিল ছিল। সেদিন অনেক শ্লোগাণ দিয়েছিলাম। বেশী শ্লোগাণ দিয়েছিঃ জ়াগো, জ়াগো- বাঙালী জ়াগো; এ শ্লোগাণ আমার প্রিয় ছিল। আমাদের মত অনেক ছেলে-মেয়ে এ মিছিলে ছিল। মিছিলের বড় ভাইরা বললেন, কেহ মিছিল থেকে বাহির হবে না। আমরা তোমাদের বাসার কাছে ফিরে গেলে তোমরা বাসায় চলে যাবে। তিন বন্ধু সেদিন রাত ১০টায় বাসায় ফিরি। দেখি, আমার মা আর জমকার মা কান্নাকাটি করছে।আমাদের দেখে তাদের কি যে আনন্দ! আমাদের বললেন, আর কখনো এভাবে যাবি না। আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভরা কন্ঠে বললাম, -মা আজ থেকে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি আজ একা নই। আজ সারা শহরের সবাই বলছে, তারা বাঙালী।ওরা আমাকে “বাঙাল”, “বাঙালী” বলে গালী দিয়েছে বলে আমি দুঃখ পেয়েছিলাম। আজ আমি সারা শহর ব্যাপি শ্লোগান দিয়ে জানিয়ে এসেছি, আমার পরিচয়ঃ আমি বাঙালী; আমার ভাষা বাংলা; আমার দেশ বাংলাদেশ। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মা খুশীতে হাসছেন। বড় হয়ে মনে হয়েছে এটা ছিল ১৯৫৪ সালের যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচন কালীন ঘটনা। শৈশবের কয়েক বছর ঢাকায় থাকার পর আমরা গ্রামের বাড়ীতে ফিরে যাই।এখানে আমি প্রাইমারী ও হাই স্কূল পাশ করি। এ গোটা সময় ধরে আমি ঢাকার স্মৃতি ভুলতে পারি নাই।আমি বাঙালী এ বিষয়টি আমার মনে সদা জাগ্রত ছিল।অস্টম শ্রেণীতে পড়াকালে বাবা ইন্তেকাল করেন। বড় ভাই ঢাকায় চাকূরী করেন। তার রোজির উপর গোটা পরিবার নির্ভরশীল। এস,এস,সি ফাস্ট ডিভিশন পাওয়ায় আমার ভাই বল্লেন, “রেজাল্ট যখন ভাল হয়েছে। তা’ হলে ঢাকায় চল, ওখানেই যে কোন একটি ভাল কলেজে পড়া-শুনা করবে। উল্লেখ্য যে, সে সময় শুধু চাঁদপুরেই একটি কলেজ ছিল, ফরিদগঞ্জে কোন কলেজ ছিল না। আমি তো মহা খুশী। আমার স্বপ্নের শহর ঢাকায় আবার আমি যাব। আবার শ্লোগান দিতে পারব “জাগো, জাগো- বাঙালী জ়াগো। কি মজা হবে। ঢাকার পথে এটা আমার দ্বিতীয় যাত্রা। ১৯৬৭ সাল।এবার আর মা সাথে নেই। মা দোয়া করে বল্লেন, -এবার তোমাকে আল্লার হাতে সফে দিলাম। এবার তুমি আর ঢাকায় হারাবে না। এখন বড় হয়েছ। বড় ভাই তো ঢাকায় থাকবেই।যা সহযোগিতার দরকার সে তোমাকে করবে। তখন ফরিদগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে প্রথমে পায়ে হেটে বা নৌকায় করে চাঁদপুর আসতে হতো। পরে চাঁদপুর থেকে লঞ্চে করে ঢাকার সদরঘাঠে আসা সহজ ছিল। রাতের লঞ্চে রওয়ানা দিয়ে সকালে এসে সদর ঘাট নামতে হতো। যথারীতি সকালের আরেক সুর্যালোকে সদরঘাটে এসে নামলাম। হাতে একটা ভারী সুইট-কেইস। এতে রয়েছে দৈনন্দিন প্রয়োজ়নীয় জিনিস। যেতে হবে নিউমার্কেট। সেখানে আমার ভাই থাকে। বাস ধরতে হবে। বাস রুট হল ইসলামপুর রোড ধরে চকবাজার,চকবাজার থেকে লালাবাগ রোড ধরে লালবাগ কিল্লার মোড়, তারপর আজিম্ পুর হয়ে নিঊমার্কেট। তখনকার বাসগুলু ছিল খুব ছোট। নাম ছিল “মুড়ির টিন”। বাস ছেড়ে দেয় দেয় অবস্থা।বাসের বিহারী হেল্পার হাক-ডাক দিচ্ছে, -বাস ছোড় দিয়া, বাস ছোড় দিয়া; জলদি আইয়ে, জলদি আইয়ে! বাস আগাচ্ছিল, আর পিছাচ্ছিল। আমি দৌঁড়ে গিয়ে বাসে উঠতে গেলাম।হেল্পার বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে হাক দিচ্ছে। সে আমাকে জায়গা দিচ্ছে না। জ়োর করে যেই উঠতে গেছি, অম্নি বেচারা হেল্পার ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল।হেল্পার আমার বয়সি ছিল, কিন্তু আমি গ্রামের তরুন আমার শক্তি আলাদা। সে কান্নাভরা কন্ঠে চিত্কার দিতে লাগল আর বলতে ছিল, -মোজ়েকো ঘিরা দিয়া,মোজ়েকো ঘিরা দিয়া। বাসড্রাইভার জিজ্ঞাসা করল, -কেয়া হুয়ারে কেয়া হুয়া। হেল্পার বলল, “বাঙাল মুজেকো ঘিরা দিয়া”। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। বাসের পিছনের দিকে গিয়ে আমি হেন্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে আছি গন্তব্যস্থানে পৌছার আসায়। আর ভাবছি, বহু দিন পর আবার গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে এলাম। এসেই বিহারীদের সাথে আবার সংঘাতে জড়িয়ে গেলাম। ওরা ভাল লোক নয় । আমাদের দেখতে পারে না। এ সব চিন্তা করছি আর ততক্ষনে বাস ছেড়ে দিয়েছে। হেল্পার এখন টিকেট কাটা শুরু করেছে। সে আমার কাছে এসে আমাকে তার কনুই দিয়ে গুতা মেরে বলল, -টিকিটকা পয়সা দাও। তু বাঙাল হায়, তেরা বদনছে মাছলিকা বদবু নিকালতা হায়। আমি তাকে ভাড়ার পয়সা দিয়ে টিকিটতা হাতে নিয়ে বললাম, -তু বিহারী হায়, তেরা বদনছে চিকাকা বদবু নিকালতা হায়। উল্লেখ্য যে, ইতিপুর্বে আমি যখন ঢাকায় ছিলাম বিহারী ছেলে- মেয়েদের সাথে আমাকে ঝগড়া করতে হয়েছ।আমি জানতাম বিহারে নদী কম। পানির অভাব। এ জন্য বিহারীরা গোসল করে না। ওদের শরীর থেকে ইদুর পঁচা দুর্গন্দ বের হত। আমার প্রতিবাদের ভাষা শুনে ড্রাইভার বুঝে সেরেছে যে,এক নাছোড় ছেলে বাসে উঠেছে। সে হেল্পারকে হাক দিয়ে বলল, -রাহিম চুপ করকে টিকিট কাটো। এ ঘঠনা পরবর্তিতে আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। বাসের বিহারী হেল্পার আমাকে “বাঙাল” বলে গাল দিল কেন? আমার গা থেকে মাছের গন্ধ বেরোয় এ কথা বলল কেন? তবে কি এ শহর আমার নয়? এ প্রশ্ন দ্বিতীয়বার আমার মনে উদিত হল। বাঙালি পরিচিতির রাজনীতি গ্রামের বাঙালি কিভাবে ঢাকাবাসী হলো আমরা তা এখানে তুলে ধরতে চাই। ১৯৭১ সালে আমরা বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। এ যুদ্ধ আমরা করেছিলাম বাঙালি জাতির নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখে। বাঙালি জাতির কন্ঠে ছিল এক শ্লোগান-“বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর”। এ শ্লোগান ছিল এথনিক বাঙালির হাজার বছর ধরে বহিরাগত নিপীড়ন থেকে বাঁচার শ্লোগান। কিভাবে ষাট ও সত্তুর দশকের তরুন ও যুবকরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিল। তার এক খন্ড চিত্র আমরা এখানে তুলে ধরতে চাই। এখানে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে আমার কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতি বর্ননায় আনার জন্য পাঠকের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আমি ১৯৬৫ সালে ফরিদগঞ্জ হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেনীতে পড়াকালে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ি। এর পিছনে ফরিদগঞ্জ এলাকার স্বনাম ধন্য যুক্তফ্রন্ট নেতা নওজোয়ান ওয়ালীঊল্লাহ এম পি ও আওয়ামী লীগ নেতা, ফরিদগঞ্জ এ আর হাই স্কুলের হেডমাস্টার রাজা মিয়া এম পি আমার গুরু এবং উত্সাহ দাতা ছিলেন। ১৯৬৫ সালে আমি ফরিদগঞ্জ থানা শাখা পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হই। ১৯৬৮ সালে জগন্নাত কলেজের ছাত্র হিসেবে আমি কলেজের পুর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) এস, আর, হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হই। ১৯৬৮ সালের ৬ই ডিসেম্বর পল্টন ময়দানের অনুষ্ঠিত জন সভায় যোগদানের লক্ষ্যে জগন্নাত কলেজের ছাত্র মিছিলটি সংগঠিত করার ক্ষেত্রে আমি বিশেষ ভূমিকা পালন করি। সে দিনই আমি সর্বপ্রথম মহান জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানীর সান্নিধ্য লাভ করি। এবং তাঁর অনুমোদন নিয়ে বংগভবন ঘেরাও মিছিলে “জয় বাংলা” শ্লোগান দেই। “জয় বাংলা”র জন্ম কথা আমি কেন “জয় বাংলা” শ্লোগান দিলাম। কোথায় পেলাম? কেহ তো এর আগে রাজনীতির অংগনে এ শ্লোগান দেন নাই। আমি কোথায় পেলাম এ শ্লোগান? এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৬৭-৬৯ সেসনে জগন্নাত্ কলেজের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক অজিত গুহ এডভান্স বেংগলি কোর্স চালু করেন। আমি তাঁর এ কোর্স গ্রহন করি এবং তাঁর নির্দেশনায় বাংলা ভাষার ইতিহাসের উপর গভীরভাবে অধ্যয়ন করি। এ কোর্সের সুবাদে আমি বিখ্যাত উপন্যাসিক শওকত আলী, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, রাহাত খান, সামসুজ্জামান খানের মত মহতি শিক্ষকদের ছাত্র হবার সৌভাগ্য লাভ করি। অধ্যাপক অজিতগুহ তাঁর কোর্স প্যাকে কাজী নজরুল ইসলামের ১৯৩৫ সালে ফরিদপুর মুসলিম যুব সমিতির সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষনটি যুক্ত করেছিলেন। এ ভাষনটি কাজী নজরুল ইসলাম “জয় বাংলা” জয়োধবনি দিয়ে শেষ করে ছিলেন। ১৯৬৮-৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দেবার কালে জয় বাংলা এ শ্লোগানটি আমার সব চাইতে প্রিয় ছিল। জগন্নাত্ কলেজের আমার শ্রদ্বেয় শিক্ষক অজিত গুহ আমাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ইতিহাস জানার পথ দেখিয়ে ছিলেন বলেই আমি এ শ্লোগান দিতে সাহসী হয়েছিলাম। এ মহান শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভকে আজো আমি আমার জীবনের এক উজ্জ্বল সময় বলে মনে করি। বাঙালি জাতির মুক্তির লড়াই ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থানের সময়কালে আমি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সমাজ কল্যান বিভাগের অনার্সের ছাত্র ছিলাম। আমি বিভাগীয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হই। গনঅভ্যুত্থানকালে আমার উপর দায়িত্ব পড়ে ফরিদগঞ্জ থানা এলাকাকে সংগঠিত করার। ১৯৭০ সালে পল্টন ময়দানে পুর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের (মাহবুবউল্লাহ) পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি মাহবুব উল্লাহ “স্বাধীন জনগনতান্ত্রিক পুর্ব বাংলা” ঘোষনা দেন এবং গ্রেপ্তার হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে আমি সুবেদার জহিরুল হক পাঠানের নেতৃত্ত্বে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। ভাসানী ন্যাপ, পুর্ববাংলার কমিউনিষ্ট পার্টী ও পুর্ববাংলা ছাত্র ইউনিয়নের নানাস্তরের নেতা কর্মীদের সমাবেশ ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের এ সেক্টরে। জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলাম। পুর্ববাংলার কমিউনিষ্ট পার্টীর নেতা কমরেড দেবেন শিকদার, কমরেড আবুল বাশারসহ বহুনেতা মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের ক্যাম্পে এসে যুদ্ধের রণনীতি-রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করতেন। মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত হবার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এলাম। মুক্তিযুদ্ধের পর পুর্ববাংলা ছাত্র ইউনিয়নের নাম “বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন হয়। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে এ সংগঠনের ঢাকা মহানগরী শাখার নির্বাচনে আমি সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হই। বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন ছিল বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টীর ছাত্র সংগঠন। আমি ছিলাম মনে-প্রানে জাতীয়তাবাদী। এ প্রসংগে আমরা এখানে বাংলাদেশের জনগনের মুক্তি অর্জনের লড়াইয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের ভুমিকা সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করতে চাই। উল্লেখযোগ্য যে, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে উভয় ছাত্র সংঠনের কর্মীরাই গেরিলা যুদ্ধে সামিল হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের প্রস্তুতি ছিল ভিন্ন ধরনের। যুদ্ধে ছাত্র লীগের নেতৃস্থানীয় কারো প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহন ছিল না। তারা ৯ মাস কোলকাতায় ছিলেন। তাদের স্মৃতিতে রণাংগন নেই। তারা ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের বিরুদ্ধে নানা প্রতিকুলতার সৃষ্টি করার দায়িত্ব গ্রহন করেছিল। বামপন্থী ছাত্ররাজনীতি নির্মূল করার জন্য ছাত্রলীগ কর্মীদের ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল। এবং তাদের কাজ শুরু হয়েছিল ১৬ই ডিসেম্বরের পর। এ কারনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা প্রদান ও মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভ্রান্তি আজো বিদ্যমান রয়েছে। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে দু’টি দেশের কায়েমী স্বার্থ রক্ষা ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দমনের লক্ষ্যে দু’টি ধর্মকে বলির পাঠা হিসেবে ব্যাবহার করেছিল। যা আজো অব্যাহত রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের শাসক শ্রেণীর মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। এ দু’ দেশের শাসক শ্রেণী জমিদার শ্রেণীর স্বার্থবাহী। কৃষক শ্রেণীকে পদানত রাখাই তাদের দেশ শাসনের লক্ষ্য। বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধ কৃষকের মুক্তিযুদ্ধ। ভারত ও পাকিস্তানের জাতি-স্বত্তাগুলোর মুক্তিযুদ্ধও কৃষকের মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান এসব আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আখ্যায়িত করে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে দমন করে আসছে। ভারত পূর্ব বাংলার কৃষকের মুক্তিযুদ্ধকে সহযোগীতা করবে কেন? এ মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানের সরকারের দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। সেই যুদ্ধকে কেন সহযোগিতা করেছিল ভারত? কেন অংশগ্রহণ করেছিল এ যুদ্ধে? এর যথার্থ ব্যাখ্যা বাংলাদেশের ক্ষমতার তালুকদাররা দেন না। কারন বাংলাদেশের শাসকদের স্বার্থ আর ভারত ও পাকিস্তানের সামন্তবাদী শাসকদের স্বার্থ একই সূতায় গাথা। আর আমরা যারা প্রকৃত জাতীয় মুক্তির জন্য ল্ড়াই শুরু করেছিলাম, আমাদের লক্ষ্য ছিল আলাদা। এ কারনেই আমরা লক্ষ্য করলাম, ১৬ই ডিসেম্বরের পর নুতন সরকার প্রধান ক্ষমতায় বসেই ঘোষণা দিলেন “নকশাল দেখা মাত্র গুলি কর”। নকশাল কারা? কৃষক মুক্তির স্বপ্ন দেখনেওয়ালারা ছিল নকশাল। স্বাধীনতার উষালগ্নে বাঙালি জাতির স্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে কৃষকরা লড়াই করলেন, ক্ষমতাসীনরা তাদেরকে “নকশাল” হিসেবে চিনহিত করলেন। মনে হলো, এই একটি মাত্র সমস্যা সমাধানের জন্যই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। ক্ষমতাসীনরা যার কারনে বাংলাদেশের নতুন সরকার আর একটি স্বশস্র যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। নয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদ এ প্রেক্ষাপটে ১৯৭৩ সালে বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের সর্বশেষ বিভাজন অনিবার্য হয়ে পড়ে। এ সংগঠনটি প্রকাশ্যে ভাসানী ন্যাপ ও গোপনে বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টীর সাথে সম্পর্কিত ছিল। আমরা কয়েকজন এ দ্বি-পার্টী সমর্থনের বিরুদ্ধে ছিলাম। উপরন্তু এ সময় বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টী ও জ্যোতি বসুর সিপিএমর সাথে মৈত্রী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার উদ্যেগ নেয়া হয়। আমরা এ মৈত্রীর বিরোধীতা করেছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমি মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলাম। মহান জাতীয় নেতা এ সময় ভারতীয় সম্প্রসারনবাদের আগ্রাসী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নবতর সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। বাংলার কমিউনিষ্ট পাটির প্রধান কমরেড দেবেন শিকদার মওলানা ভাসানী সুচিত জাতীয়তাবাদী ধারার সাথে আমার ঝোক লক্ষ্য করে আমাকে কমিউনিষ্ট পার্টীর সদস্য হবার অযোগ্য বলে ঘোষনা করলেন। এবং প্রকাশ্যে বললেনঃ -কাজী, তুমি শুধু মালানা মালানা কর, তুমি জান, মালানা ভাসানী এখন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষ্যে কথা বলছেন। আর তুমি তাঁর (রাগতস্বরে) রাজনীতি বিশ্বাস কর”। এ নিয়ে কমরেড দেবেন শিকদারের সাথে আমার কিছু কথা কাটাকাটি হয়। আমি বললামঃ - নানা, (কর্মীরা দেবেন শিকদারকে ডাকতো)মওলানা ভাসানী সারা জীবন নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছেন, সি আর দাস-সুভাস বোসকে নেতা মেনেছেন, অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের ঝান্ডাকে উর্দ্ধে তুলে ধরেছেন। এখন কেন তিনি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করবেন। আমি মওলানা ভাসানীর অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমি আপনাদের সাম্প্রদায়িক কমিউনিষ্ট হওয়ার তত্ত্বে বিশ্বাসী নই। এ কথা শুনে নানা আমার প্রতি খুব অসন্তুষ্ট হলেন। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে আমি বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগরী শাখার সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে পদ ত্যাগ করি। এবং প্রতিবাদ স্বরূপ নয়া জাতীয়তাবাদী ধারনার ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালে আমরা ভাসানী ন্যাপের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রদল গড়ে তুলি। মুলতঃ আমার তাগিদেই পুর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারন সম্পাদক জনাব নজমুল হক নান্নু জাতীয় ছাত্র দলের ঘোষনা পত্র রচনা করেন। এ ঘোষণাপত্রে আমরা জাতীয় পুঁজি বিকাশের লক্ষ্যে “জাতীয়মুক্তি”, “স্বাধীনতা” ও “গনতন্ত্র” প্রতিষ্ঠাকে মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহন করি। সাম্রজ্যবাদ, সম্প্রসারনবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী সংগ্রামকে অব্যাহত রেখে আমরা অসমাপ্ত গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সম্পন্ন করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করি। এ সংগঠনের পতাকা তলে আমরা ভারতীয় সম্প্রসারনবাদ বিরোধী এক নয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তুলি। নয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদের ব্রুন এ ভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের ২৩শে জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি, এস, সি তে আয়োজিত এক সম্মেলনে “জাতীয় ছাত্রদল” প্রতিষ্ঠার ঘোষনা প্রদান করা হয়। এ দিন ভাসানী ন্যাপের সেক্রেটারী জেনারেল জনাব মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়া সম্মেলন উদ্বোধন করতে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের টি এস সির গেটে এসে গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে মুজিববাদী ছাত্রলীগের গুন্ডারা তাকে শারিরীকভাবে নাজেহাল করে। তিনি সম্মেলন উদ্বোধন করতে পারননি। তিনি অপমানিত হয়ে ফিরে যান। আমরা কাতারবন্দী হয়ে তাকে সংবর্ধনা দিতে সেখানে অপেক্ষমান ছিলাম। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করি। মুজিব বাদীরা আমাকে গুলি করার জন্য পিস্টল নিয়ে তাড়া করে এবং শ্লোগান দিতে থাকে “বিশ্বে এলো নতুন বাদ-মুজিববাদ , মুজিববাদ”। জীবন নাশের হুমকিকে উপেক্ষা করে আমরা সেদিন শ্লোগান দিয়েছিলাম “জাগো জাগো –বাঙালি জাগো”, “রুশ-ভারতের দালালেরা-,হুশিয়ার-সাবধান”, “সিকিম নয়, ভুটান নয়-- এদেশ আমার বাংলাদেশ”। এদিন আমরা জাতীয় মুক্তির নয়া শ্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগের তথাকথিত মুজিববাদের বিপরীতে এক নয়াবাঙালি জাতীয়বাদের সুচনা করেছিলাম। ১৯৭৬ সাল নাগাদ এ নয়াবাঙালী জাতীয়বাদের পতাকাধারী জাতীয় ছাত্রদল সারাদেশের শিক্ষাংগনে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল। ছাত্র-যুবকদের উদ্দীপনায় এ সময় ভাসানী ন্যাপের ভিত্তিও গড়ে উঠছিল। আমরা পরিশেষে “জাতীয় মুক্তি”, “স্বাধীনতা” ও “গনতন্ত্র” প্রতিষ্ঠার নবতর অংগীকার নিয়ে ভাসানী ন্যাপের ছাত্র সংগঠন হিসেবে জাতীয় ছাত্র দল গঠন করলাম। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাকে আমরা “অসমাপ্ত জাতীয় মুক্তি”র লড়াই হিসেবে দেখি। ভারতীয় সম্প্রসারনবাদকে জাতীয় মুক্তির প্রধান বাঁধা হিসেবে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। মওলানা ভাসানীর বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারনার সাথে আমাদের ধারনা একই ধারায় এসে দাঁড়ায়। আমাকে জাতীয় ছাত্র দলের ঢাকা মহানগরী শাখার সভাপতি নির্বাচন করা হয়। জনাব নুর মোহাম্মদ খান এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও মিলু হক সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। আধিপত্যবাদ বিরোধী বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারা বাহিকতায় জাতীয় ছাত্রদল দ্রুত বিকাশ লাভ করতে থাকে। এর মধ্যে বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মওলানা ভাসানীর মৌন সমর্থন আদায় করে পার্টীর নাম “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ” এর স্থলে “বাংলাদেশে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ” রাখলেন। কৃষক শ্রমিক বঞ্চিত বাঙালির মুক্তির যে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও মজুলম জননেতা মওলানা ভাসানী শুরু করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষা করতে পারলেন না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও এ মতবাদের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও কর্মীরা স্বাধীনতার পরদিন থেকেই আক্রমনের লক্ষ্য বস্তুতে পরিনত হলো। আওয়ামি লীগের ছাত্র সংগঠন ১৯৭৩ সালে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে গেল। ছাত্রলীগের ক্ষমতার সাথে থাকা অংশ বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে “মুজিববাদ” এর বয়ান হাজির করল। ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ব্যক্তিবাদের কবলে পড়ে ফ্যাসীবাদে রুপ নিল। অপর অংশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালি জাতীয়তাবাদের অবিনাশি শক্তিকে বিনাশ করার লক্ষ্যে “বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে”র আদর্শিক বয়ান হাজির করল। এ উভয় আদর্শবাদই বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা দিল। এরা যৌক্তিকভাবেই আর বাঙালি জাতীয়তাবাদী রইল না। এ পর্যায়ে ছাত্রদল নেতৃত্বের একাংশ অজ্ঞাত কারনে সম্প্রসারনবাদ বিরোধীতা ত্যাগের প্রশ্ন তোলে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ভারতীয় সম্প্রসারনবাদের আগ্রাসী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নবতর সংগ্রাম গড়ে তোলায় বিশ্বাসী ছিলাম। জাতীয় ছাত্রদলের আমার এ বন্ধুরা “ভারতীয় সম্প্রসারনবাদ” শব্দটি ঘোষণা পত্র থেকে বাদ দিতে চায়। এ বিষয়টি নিয়ে ১৯৭৬ সালের প্রথম থেকে আমাদের মধ্যে মতান্তর দেখা দেয়। জাতীয় ছাত্রদলের ৭ সদস্যের সর্বোচ্চ কমিটির মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারন করে। কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন নুর মোহাম্মদ খান, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ঢাকা মহানগরী সভাপতি নুর মোহাম্মদ কাজী, সাধারন সম্পাদক জনাব জিয়াউল হক মিলু হক (অব্যাহতি চেয়েছেন), যূগ্ম সম্পাদক মিয়া শহীদ হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সদস্য সর্বজনাব ইফতেখার আহমদ চৌধুরী, মোবারক হোসাইন, শামসুজ্জামান মিলন ও আওকাত হোসাইন। সম্প্রসারনবাদ বিরোধী আন্দোলনকে যে কোন মুল্যে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় ঘোষনা করায় কমিটির অপর চার জন অগঠনতান্ত্রিক পদ্ধিতে আমাদের তিনজনকে বহিস্কার করে। আমরা তিন জন হলামঃ নুর মোহাম্মদ কাজী (আমি বিজয় দেখেছি, এম আর আখতার মুকুল, পৃঃ ৩৭০), ইফতেখার আহমদ চৌধুরী ও সামসুজ্জামান মিলন। সম্প্রসারনবাদ বিরোধী জাতীয়তাবাদী ধারার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে আমরা জাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন (নুর মোঃ কাজী) গঠন করলাম। অপর অংশ বি এন পির সাথে গিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গঠন করেছিল। উল্লেখ্য, বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় প্রথম আঘাত আসে একটি ছোট্ট এথনিক জাতির কাছ থেকে। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে কথা। আমি বাংলা ছাত্র ইঊনিয়ন করি। আমার রাজনৈতিক বন্ধু ও সমাজ কল্যান ইনষ্টিটিউটের আমার এক ক্লাশ সিনিয়র সুধা সিন্ধু খীসা। আমার রুম মেট। সে চাকমা। প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী। ক্ষুদ্র জাতি স্বত্তার অধিকার নিয়ে সে আমার সাথে মাঝে মাঝে কথা বলে। মানবেন্দ্র লাড়মা ঢাকায় এলে আমাদের সাথে থাকেন। সংবিধানে “বাঙালি জাতীয়তাবাদ” সম্পৃক্ত করনের জন্য বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃঢ় অবস্থান নেন। বাংলাদেশের নাগরিকরা বাঙালি নামে পরিচিত হবেন একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য যে, মানবেন্দ্র লারমা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জনসংখ্য এক ১% ভাগ ৫৭টি নৃ-জাতিক জনগোষ্ঠির কোন কোনটি অশ গ্রহন করেছে, তা সত্য, তবে চাকমারা নয়। সংসদ অধীবেশন বসার আগে লারমা ঢাকায় এসে বংগবন্ধুর সাথে বংগভবনে দেখা করলেন। বংগবন্ধু নানাভাবে তাকে বুঝালেন। বললেন, “লাড়মা, তোমরা বাঙালি হয়ে যাও”। সেদিন বিকালে সুধাসিন্ধু খীসা আমাকে বললো, “কাজী, আমরা ডক্টর আলীম আল-রাজীর সাথে দেখা করতে চাই। তুমি কি আমাকে ও লাড়মা দাদাকে নিয়ে যেতে পারো”? আমরা সে দিন বিকালেই রাজী সাহেবের ধানমণ্ডির বাসায় গেলাম। ডঃ রাজী তাদের কথা শুনে বললেন, “সংবিধানে নৃ-জাতিগোষ্ঠির অধিকার সংরক্ষন বিধান সকল দেশের সংবিধানেই তো রয়েছে। মুজিবুর রহমান সাহেবের তো এভাবে বলা ঠিক হয় নাই যে, সবাইকে বাঙালি হয়ে যেতে হবে”! যা হউক, সম্প্রতি তার এক লেখায় ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর, বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী প্রফেসর ইমাজউদ্দিন বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নির্মানে মানবেন্দ্র লারমাকে ক্রেডিট দিয়েছেন। এ কারনে তিনি তার প্রবন্ধে ১৯৭২ সালের ৩১শে অক্টোবর মানবেন্দ্র লারমার সংসদে প্রদত্ত ভাষনের উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন, “আমি একজন চাকমা। একজন চাকমা একজন মারমা হতে পারে না। আমার বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ কেঊ বলে নাই আমি বাঙালি। আমরা কোন দিনই নিজেদের বাঙালি মনে করি নাই। আজ যদি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধানে এই সংশোধনী পাশ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের চাকমা ও অন্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর অস্তিত্ব লোপ পেয়ে যাবে। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা নিজেদের বাংলাদেশী বলে মনে করি এবং বিশ্বাস করি। কিন্তু বাঙালি বলে নয়”। লক্ষ্যনীয়, মাত্র তিন শ’ বছর আগে বাহির থেকে আগত চাকমারা চার হাজার বছরের আদিবাসী বাঙালি জাতি-স্বত্ত্বাকে মেনে নিতে রাজী হলেন না। নিজেদের এথনিক স্বত্তা রক্ষার জন্য তারা লারমার নেতৃত্বে লড়াইয়ের শপথ নিলেন। দীর্ঘ ২০ বছর লড়াই করলেন। তবু এথনিক স্বত্তা ছাড়লেন না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের নেতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সাড়ে তিন বছরের শাসন আমলে চার ধরনের ক্ষমতা বলয়ের বিরোধীতার সন্মুখীন হলেন। এ ক্ষমতা বলয়গুলু হলোঃ ধর্মীয় আদর্শবাদ, কমিউনিষ্ট আদর্শবাদ, উপজাতি ও সেনাবাহিনী। বাঙালি জাতীয়তাবাদের একজন কর্মী হিসেবে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা আমি এখানে উল্লেখ করলাম। মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে তিন বছরের মাথায় “বাঙালি জাতীয়তাবাদে”র ধারাবাহিকতাকে বাদ দিয়ে তার স্থলে কেন “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে”র ধারা প্রবর্তিত হলো? বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য আছে কি? বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কি হঠাত জন্ম নেয়া কোন জাতীয়তাবাদ? এর কি কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। বাঙালিরা কি নিজ দেশে প্রবাসী? জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে এ প্রশ্নগুলু আমাকে বহুদিন থেকে তাড়িত করছে। আমি মনে করি দেশের বর্তমান জটিল মুহুর্তে এ প্রশ্নগুলুর বিশ্লেষন অতি জরুরী। এ লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশে বিদ্যমান তিনটি জাতীয়তাবাদী বলয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। এ বলয়গুলু হলোঃ(১) বাঙালি জাতীয়তাবাদী বলয়, (২) ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী বলয় ও (৩) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী বলয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ মুক্তিযুদ্ধের মহান দুই নেতা মওলানা ভাসানী ও বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি ও মুসলমান ছিলেন। বাঙালিত্ব ও মুসলমানিত্ব তারা চোখের মনির মত রক্ষা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের নামে হিন্দুস্থান ও মুসলিম জাতীয়তাবাদের নামে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয়। এ সময় বহির্বংগ থেকে যে সব মুসলমান “পাকিস্তানী” আত্মপরিচি নিয়ে পুর্ব বাংলায় এসেছিলেন তারা নিজেদের আশরাফ আর এদেশের ভূমিজ সন্তান বাঙালিকে আতরাফ ভাবা শুরু করেন। “বাঙালি মুসলমান” পরিচিতির রাজনীতি তারা কোন মতে মেনে নিতে পারেন নাই। যেমনি করে বহির্বংগ থেকে আগত বর্ণবাদী হিন্দুরা পারেন নাই বাঙালি বৌদ্ধকে মেনে নিতে, তেমনি বহির্বংগ থেকে আগত মুসলমানরাও বাঙালি মুসলমানদের প্রতি একই আচরণ করলেন। হিংসার বশবর্তি হয়ে বর্ণবাদী হিন্দুরা বাঙালি বৌদ্ধকে “চন্ডাল” নাম দিয়েছিলেন। বহির্বংগ থেকে আগত মুসলমানরা নানারূপ মিথ্যা আচরনের মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানদের বেকুপ বানিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। এরা পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবীদের প্রভু ভাবতো। আর বাঙালি মুসলমানদের “বাঙালিত্ব” নিয়ে নিন্দাবাদ করতো। বিহারী-গুজরাটি মুসলমানরা নিজেদের ভাষা-এথনিসিটি ছাড়ল না। উপরন্তু তাদের ভাষা-কালচার বাঙালি মুসলমানের উপর চাপাতে চাইল। বলল, উর্দ্দু ভাষা মুসলমানের ভাষা। উর্দ্দু ভাষা ধর। বাংলাভাষা কাফেরের ভাষা। বাংলা ভাষা ছাড়। এ ধরনের আচরন যে হবে, তা বাঙালি মুসলমান নেতারা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। এ নিয়ে প্রথম রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করেন মুসলিম লীগের সভাপতি আবুল মনসুর আহমদ। তিনি বংগীয় মুসলিম লীগের বার্ষিক সভায় সভাপতির ভাষনে তার মতামত তুলে ধরেন। তার বক্তব্য A History of Pakistan and its origins এ নিন্মোক্তভাবে লিখা হয়েছেঃ Nevertheless the rising popularity of the ‘theory of two nations’ could not sideline a powerful regional nationalism. In May 1944 a journalist, Abdul Mansur Ahmed became leader of the Muslim League in Bengal, and presided over the party’s annual conference. He declared that the Muslims of Begal were different not only fom the Hindus but also from Muslims from other provinces, because ‘religion and culture are not the same thing. Religion transends geographic frontiers, but culture behaves differently’ It was such a pronouncements which sowed the seed for the fiture Bangladesh back in the 1940s. (Edited by Christophe Jaffrelot, A History of Pakistan and its origins, London, Wimbledon Publishing Company, 2002, P.15). বহুল আলোচিত দ্বিজাতি তত্ত্ব শক্তিশালী আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদকে কখন ও পিছনে ফেলে দিতে পারেনি। ১৯৪৪ সালে অখন্ড বাংলা মুসলিম লীগের সভাপতি আবুল মনসুর আহমদ বাত্সরিক সভায় সভাপতির ভাষনে বলেনঃ বাঙালি মুসলমানরা শুধু হিন্দুদের থেকেই আলাদা নয়, তারা ভারতের অন্যান্য প্রদেশের মুসলমানদের থেকেও আলাদা। কারন ধর্ম ও সংষ্কৃতি এক জিনিস নয়। ধর্ম ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করতে পারে, কিন্তু সংষ্কৃতি তা পারে না। এখানেই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে বাঙালি মুসলমানের আলাদা দেশের অব্যাহত দাবীর ধারাবাহিকতা প্রমান করে। আমরা উপরোক্ত উদ্ধৃতি এ কারনেই এখানে করলাম যে, যারা ১৯৭১ সালে অর্জিত বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেন নাই, তারা কারা? যারা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে সামনে নিয়ে আসছেন তারা কারা? এটা আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এরা দ্বি-জাতি তত্ত্ববাদী। মুসলমানের নামে এরা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহবাদী, আর হিন্দুর নামে এরা অখন্ড হিন্দুস্থানবাদী। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহবাদী মুসলমানের কবি মোহাম্মদ ইকবাল গান লিখেছেন, “চীন ও আরব হামারা, হিন্দুস্থাঁ হামারা, মুসলিম হায় হাম, ওতন হায় সারে জাঁহা হামারা”। তাঁর কোন আঞ্চলিক রাষ্ট্রের দরকার নাই। অখন্ড ভারতপন্থী বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গেয়েছেন, “হে মোর চিত্ত, পুর্নতীর্থে জাগরে ধীরে, এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে”। এ কবি নিজের চিত্তকে ভারত তীর্থে জাগ্রত রাখার গান লিখেছেন। ১৯৭১ সালে আঞ্চলিকতার উপর ভিত্তিশীল বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হউক এ কবিগন তা চান নাই। এরা ছিলেন ধর্মীয় আদর্শবাদী ক্ষমতা বলয়ের মানুষ। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে গড়ে উঠা বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বিশ্ব ইতিহাসের এক অভুতপুর্ব সেনাবাহিনী। জাতীয়তাবাদী চেতনা এ সেনাবাহিনীর মধ্যে কারো চাইতে কম নয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে নয়, বিগত ৪৪ বছরে স্বাধীন দেশে এ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে নানা চক্রান্তের কারনে যত মেধাবী সেনা অফিসার মারা গেছেন, দুনিয়ার আর কোন দেশে এমনভাবে এত সেনা অফিসার মারা যান নাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদের নেতা, দেশের প্রেসিডেন্ট বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিছু সংখ্যক বিভ্রান্ত সেনা অফিসারের হাতে নিহত হন। খন্দকার মোস্তাক আহমেদ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ত্ব দানকারী অন্যতম সিনিয়র নেতা ছিলেন। তিনিও বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। দুর্ভাগ্য বশতঃ মুজিব মন্ত্রীসভার এ প্রবীণ নেতা ও সিনিয়র মন্ত্রী এত বড় হত্যাকান্ডের পর নিজেকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করেন। এ ঘোষণায় তিনি দেশের নাম “বাংলাদেশ গনপ্রজাতন্ত্র” বাতিল করেন এবং দেশের নাম “ বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র” রাখলেন। তিনি বংগবন্ধুর বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামি লীগ (বাকশাল) নাম বাতিল করেন। এবং পার্টির বাংলাদেশ আওয়ামি লীগ নাম পুনঃ প্রবর্তন করেন। শুধু তাই নয়, তিনি আওয়ামি লীগ নেতাদের নিয়ে তাত্ক্ষনিকভাবে একটি মন্ত্রী সভা গঠন করেন। এসব কিছু করতে গিয়ে বংগবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের লাশ সাড়ে তিন দিন তার ধানমন্ডির বাড়ীর সিড়ির উপর উপুত হয়ে পড়ে ছিল। এ সময় নবগঠিত আওয়ামি লীগের প্রথম মন্ত্রীসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ মন্ত্রীসভার আলোচ্যসূচী নিয়ে বাংলাদেশের স্বনামধন্য আইনবিদ ডঃ আলিম আল- রাজী তার লিখিত “পাক-ভারত-বাংলাদেশে সামরিক শাসনের উত্থান পতন” বইতে(ইংলিশ) ব্যাংগাত্ত্বক ভংগিতে যে মন্তব্য করেছেন তা প্রনিধান যোগ্য। তিনি লিখেছেনঃ “বাঙালি জাতীয়তাবাদের মহান পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ তিন দিন ধরে নিজ বাডীর সিড়িতে যখন উপুত হয়ে পড়েছিল, এবং তার লাশ সত্কার করা যখন সর্বোচ্চ গুরুত্ত্বপুর্ন বিষয় ছিল, তখন মন্ত্রী সভা আকাশ পাতাল খুঁজে প্রধান আলোচ্যসূচী নির্ধারন করলেন – বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় পোষাক সমস্যা”। মন্ত্রী সভার মাননীয় সদস্যগন দিনভর আলোচনা শেষে নির্ধারন করলেন বাংলাদেশের জাতীয় পোষাক হবে চিকন পায়জামা, পাতলা পাঞ্জাবী, গলাবন্দ আচকান ও কিস্তি টুপী। আলোচ্যসূচীর গুরুত্ব দেখে যে কোন মানুষের মনে হতে পারে জাতীয় পোষাক নির্ধারনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিবন্ধক ছিলেন। এ কারনে তাঁকে হত্যা করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল”। ক্যু-পাল্টা ক্যুয়ের খপ্পরে পড়ে খন্দকার মোস্তাক আহমদ তিন মাসের মধ্যে ক্ষমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্বেয় শিক্ষক প্রফেসর ইমাজউদ্দিন সম্প্রতি এক নিবন্ধে শহীদ প্রেসিডেণ্ট জিয়াউর রহমানকে “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” নির্মানের সর্বোচ্চ ক্রেডিট দান করেছেন। তার মতে জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জন্মদাতা। একই প্রবন্ধে তিনি চাকমা নেতা মানবেন্দ্র লারমা ও খন্দকার মোস্তাক আহমদকেও বাংলাদেশী জাতীয়বাদ নির্মানের ক্রেডিট দান করেছেন। বাঙালি জাতির মহাবীর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) ১৯৭১সালে ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের সর্বশেষ ঘোষণা দান করেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন ক রেন। ৭ নভেম্বর তিনি সিপাহী-জনতার বিপ্লবে সাহসী নেতৃত্বদান করেন। এবং সর্বশেষ প্রিয় পিতৃ-ভুমির বৃহত্তর কল্যানের পক্ষ্যে দাঁড়িয়েছিলেন বলে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। দেশের জন্য জীবন দানের মাধ্যমে তিনি “বাঙালি জাতির মহাবীরে”র (The Great National Hero) মর্যাদায় সমাসীন হয়েছেন। ২০১৩ সালে তাঁর মৃত্যু বার্ষিকীতে প্রদত্ব এক বক্তব্যে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জেনারল জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) কে “বাঙালি জাতির মহাবীর” হিসেবে মর্যাদা দানের দাবী উত্থাপন করেছি। আমরা এ দাবী উত্থাপনন করেছি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তরুণ ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান খেমকারান সেক্টরে বেংগল রেজিমেন্টের নেতৃত্ব দেন। এ যুদ্ধে তিনি সম্মুখ সমরে ভারতীয় বাহিনীকে পরাজিত করে পাকিস্তানকে রক্ষা করেন। মেজর জিয়াউর রহমানের এ বীরত্ত্বপুর্ন ভূমিকা পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে গৌরবের সাথে আজও স্মরণ করা হয়। বাঙালি জাতির এ মহাবীর জাতির দুর্দিনে বার বার জীবনের ঝুকি নিয়ে বীরত্ব ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর জাতীয় জীবনের এক মহাদুর্যোগ মুহুর্তে সিপাহী-জনতা বিপ্লবের মাধ্যেমে জেনারল জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতাসীন করেন। তার সাহসী ভুমিকায় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষিত হয়। তিনি সাড়ে পাঁচ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। এ সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে এক মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে তিনি আগ্রাসী শক্তির চক্রান্তে নিহত হন। বাঙালি জাতির উত্থানের ইতিহাসে স্বল্প স্থায়ী জীবনে জেনারল জিয়াউর রহমান যে বীরত্বপুর্ণ লড়াই ও নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা অন্য অনেক জাতির মহাবীরদের বীরত্ব গাঁথার মতই উজ্জ্বল। দেশ ও জাতির জন্য এ মহাবীরের বীরত্ব ও আত্ম-বলিদান আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের তরুন প্রজন্মের জন্য তার বীরত্বতগাঁথা এক অবিনাশী অনুপ্রেরণার উৎস। এখানে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর অবদান সমুহের মধ্যে কেবল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নির্মানের বিষয়টি নিয়ে এখানে আলোচনা করতে চাই। বলা হয়ে থাকে জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রকল্পের জন্মদাতা। আসলে কি তাই? কেন তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নির্মানে ব্রতি হলেন? জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নির্মানে কি বয়ান রেখেছেন আমরা এখানে তা কিঞ্চিৎ আলোচনা করতে চাই। তিনি বাংলাদেশ দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত তার দলীয় সাংসদদের জন্য আয়োজিত প্রশিক্ষন কর্মসূচীর উদ্বোধনী ভাষনে চার ধরনের জাতীয়তাবাদের উল্লেখ করেন। এগুলু হলোঃ রেইসিয়াল বা এথনিক জাতীয়তাবাদ ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ও আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ। এসব উপাদানকে জেনারেল জিয়াউর রহমান তার মনোমত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এতে বাঙালি জাতির হাজার বছরের বর্ণবৈষম্যবাদ (Racism) বিরোধী সংগ্রামের ইতিহাস আড়াল পড়ে যায়নি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যায় জেনারেল জিয়াউর রহমান চারটি উপাদান উল্লেখ করেছেন। (১) বাংলাদেশের মানুষের নৃতাত্ত্বিক উত্তরাধিকার (Ethnic Heritage) (২) সমৃদ্ধ ভাষা (Rich Language) (৩) ধর্মীয় ঐতিহ্য (Religious Tradition) ও (৪) ভৌগোলিক সীমানা (Geographic Location) জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যায় চারটি উপাদান উল্লেখ করেছেন। এ চারটি উপাদানের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নির্মানের কথা তিনি বলেছেন। জাতীয়তাবাদের এ উপাদানগুলুকে সম্পৃক্ত করনের নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা সুবিধাজনক বলে তিনি মনে করেছেন। সকল উপাদানগুলুকে সম্পৃক্ত করনের প্রত্যয় হিসেবে তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শিক ম্যাপ তৈরী করেন। নৃতাত্ত্বিক উত্তরাধিকারের বাঙালিত্ত্ব এখানে সম্পৃক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি রেইসিয়াল জাতীয়তাবাদ (Racial nationalism) বা এথনিক জাতীয়তাবাদকে (Ethnic nationalism) অপাংতেয় করে দেন নাই। তিনি বাঙালিত্বকে রেখেই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দিক-দর্শন নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর ভাসানী ন্যাপের সেক্রেটারী জেনারেল মশিউর রহমান যাদু মিয়া দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষমতাসীন আর্মড ফোর্সের সাথে ক্ষমতা শেয়ারের প্রয়োজনীয়তার কথা আমাকে বুঝিয়ে ছিলেন। তিনি আমাকে এই বলে আস্বস্থ করেছিলেন যে, জেনারেল জিয়াউর রহমানের সাথে তিনি আমাদের নয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রত্যয় (Concept) নিয়ে আলোচনা করেছেন। জেনারেল জিয়া আমাদের এ জাতীয়তাবাদী প্রত্যয় নব বিন্যস্থ পার্টির আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ প্রত্যয়ের মাধ্যমে তিনি একচেটিয়াভাবে (exclusive) বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্থলে জাতীয়তাবাদের সকল উপাদানগুলুকে সম্পৃক্ত করে (inclusive) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করলেন। এতে বাঙালি জাতির বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্ব শাসনের আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ আদর্শিক ত্যাগ ও অর্জনের আন্দোলন সম্পৃক্ত থাকার জায়গা সংকোচিত হয় বটে ত বে বিলুপ্ত হয়ে যায় না। এতে চাকমা উপজাতিরা নিজেদের চাকমা আইডেন্টিটি রক্ষার জায়গা পায়। অপর দিকে তিনি মনে করেছেন পশ্চিম বংগের বাঙালিরাও বাঙালি। এতে পশ্চিম বংগের বাঙালিদের সাথে বাংলাদেশের বাঙালিদের পার্থক্যও স্পষ্ট হয়। বংগীয় বদ্বীপের কয়েক হাজার বছর ধরে গড়ে উঠা নৃতাত্তিক বাঙালিদের উত্তরাধিকার স্বকীয়তা পায়। এ ছাড়াও বহির্বংগ থেকে আগত বাংলাদেশীরা স্ব-পরিচিত রক্ষার জায়গা পায়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদীরা নিজেদের জায়গা খুঁজে পায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাধু আকাংখ্যাকে তাঁর চারিপার্শ্বে ঘিরে থাকা বুদ্ধিজীবীরা ভুল ব্যাখ্যা করে। তারা কৌশলে দ্বি-জাতি তত্ত্বের পুরাতন মদ নতুন বতলে ভরে দেয়। য়মুক্তির মহাবীর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তার অর্জিত আসন থেকে দু’রে ঠেলে দেয়। তাকে বানানো হয় পাকিস্তানপন্থী। এ বুদ্ধিজীবীদের মনে রাখা দরকার ছিল পাকিস্তান ও ভারতের ফেডারেল রাষ্ট্রের পাশাপাশি বাঙালি জাতির একক জাতি-রাষ্ট্র বেমানান। বহুজাতিক দক্ষিন এশিয়ায় বাঙালির এথনিক জাতীয়তাবাদ বেমানান। বাঙালি জাতীয়তাবাদের এ নৃতাত্ত্বিক উত্তরাধিকারের ধারনাকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারনা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গড়ে তোলেননি। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সকল ধর্মমতকে সম্পৃক্ত করনের প্রকল্প। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বহুত্ত্ববাদী ধারনার (Pluralism) সাথে সম্পর্কিত। এ বহুত্ত্ববাদী ধারনা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারনাকে সমাজের নানা ক্ষমতাবলয়ের সাথে প্রতিযোগী করে তোলে। ফলে নানা জাতের জাতীয়তাবাদী ধারনা শাখা প্রশাখা বিস্তার করে। তিনি খন্দকার মোস্তাক আহমদের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ধারনা গ্রহন করেন। এর ফ লে জেনারেল জিয়াউর রহমান আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের ধারনার ও প্রবর্তন করেন। তিনি ইইসির মত আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ বিশ্বাস করতেন বলে সার্ক গড়ে তুলেছিলেন। সার্ক বৃহত্ ভারতের আধিপত্যকে স্বীকার করেই গড়ে তোলা হয়েছিল। ক্ষমতা বলয়ের সাথে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিযোগিতার সন্মুখীন হয়। এতে প্রবল ক্ষমতাধর আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী শক্তি সহজভাবে বাঙালি জাতির ঊপর আধিপত্য বিস্তার করার সুযোগ পায়। এতে করে বীর বাঙালি জিয়াউর রহমান বনের বাঘকে ঘরে ডেকে নিজেই বাঘের খাদ্য হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে শহীদ জিয়াউর রহমানের লিগাচিকে নুতনভাবে মুল্যায়ন করা যায় কি না তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে। বিভ্রান্তি, অনৈক্য ও সর্বনাশ এ প্রবন্ধের আমরা বাংলাদেশে বিদ্যমান বাঙালি জাতীয়তাবাদী বলয়, ধর্মীয় আদর্শবাদী বলয় ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ক্ষমতা বলয় নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের মানুষের মনোভূমিতে বাঙালি, ধর্মীয় ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ গড়ে ঊঠার ইতিহাস বর্ননা করেছি। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের নাগরিক মাত্রই জাতীয়তাবাদী। তারা সবাই এ দেশটিকে ভালোবাসে। এ প্রসংগে আমরা এখানে কিছু ব্যতিক্রমের কথাও উল্লেখ করছিঃ (১) চাকমারা নিজ নৃ -জাতি স্বত্ত্বা রক্ষায় দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। এরা বাঙালি জাতীয়তাবাদ মানেন না। (2) বাংলাদেশের কমিউনিষ্টরা আন্তর্জাতিকতাবাদী। এরাও বাঙালি জাতীয়তাবাদ চান না। (৩) পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মুসলমানরা বাঙালি জাতীয়তাবাদ চান না। (৪) বহির্বংগ থেকে আগত বর্ণহিন্দুরা বাঙালি জাতীয়তাবাদ চান না। বাঙালি জাতীয়তাবাদী হতে গিয়ে এ চার ধরনের ক্ষমতা বলয়ের সাথে আমরা কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার সন্মুখীন হয়েছি তার কিছু অস্পষ্ট বর্ননা আমার ব্যাক্তিগত বর্ননায় দেবার চেষ্টা করেছি। এদের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে পড়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের বারটা বেজে গেছে। এরা যে ক্ষমতা বলয় তৈরী করেছে তা দেশের সমগ্র বাঙালি জনসংখ্যার এক শতাংশ ১% মাত্র। এ এক শতাংশ মানুষ আজ বাংলাদেশের দন্ড-মুন্ডের মালিক। বাদবাকি নিরান্নব্বই শতাংশ (৯৯%) মানুষ হলেন বাংলাদেশে জন্ম গ্রহনকারী ভূমিজ সন্তান (Son of the soil)-বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ। এ ভূমিজ সন্তানরাই জন্মসূত্রে বাঙালি জাতীয়তাবাদী। এদের জাতীয়তাবাদ প্রকৃতির অপার অবদান। জাতীয়তাবাদ দেশপ্রেমের শিকড়। বাংলাদেশ বাঙালি সন্তানের দেশপ্রেমের ফসল। কিন্তু এ ফসল বাঙালি সন্তানের ঘরে উঠে নাই। নিরান্নব্বই শতাংশ বাঙালিকে এক শতাংশ অবাঙালি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী শাসন করছে। এরা ১৯৭৫ সালের মধ্য আগষ্ট থেকে “বাঙালি”ও “বাঙালি জাতীয়তাবাদ”কে সংবিধান থেকে বিদায় করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতার রাজনীতি ও বহির্দেশীয় প্রভুদের নির্দেশে এরা রাজনৈতিক দলগুলুর ঘোষণাপত্রে ও এ শব্দগুলু রাখতে দেয় নাই। আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বাঙালিত্ব নেই। পুরুষত্ব ছাড়া পুরুষ আর বাঙালিত্ব ছাড়া বাঙালি এক বরাবর। বাঙালি বিরোধী জনগোষ্ঠী প্রথমে ক্ষমতার রাজনীতির বিভ্রান্তির কবলে ফেলে বাঙালি ও বাংলাদেশীর নামে জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করে তোলে। এতে বাঙালি জাতির জাতিত্ব (Nationhood) অর্জন স্থগিত হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, জার্মান জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করা হয়েছিল ইটের দেয়াল দিয়ে। আর বাঙালি জাতির জাতীয় ঐক্য বিভক্ত করা হয়েছে তথাকথিত জাতীয়তাবাদী আদর্শ দ্বারা। একটি জাতির সকল মানুষের অংশ গ্রহনের মাধ্যমেই জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় ঐক্য নির্মিত হয়। এটা এমন কোন কাজ নয় যে, কোন এক ব্যক্তির হুংকারেই জাতীয়তাবাদ বা জাতীয় ঐক্য গ্রথিত হয়ে গেল। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে খন্ড খন্ড করার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা যারা নিয়েছেন, যারা এ পরিকল্পনার সহযোগীতা করেছেন তারা লাভবান হয়েছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ উত্তরাধিকারের ধারবাহিতায় লালিত পালিত মতবাদ। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ উত্তরাধিকার মানে না। এ জাতীয়তাবাদীরা বাঙালিত্ব মানেন না। বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষার সংগ্রামকে নিজেদের ঐতিহ্য মনে করে না। নৃ-জাতিরা নিজ নিজ জাতীয়তাবাদ মানে। এদিকে কমিউনিষ্টরা ও ইসলাম ধর্মের উম্মাহ পন্থীরা আন্তর্জাতিকতাবাদী। হিন্দু ধর্মের বর্ণবাদীরা মহাভারতপন্থী। এ সব জাতীয়তাবাদী ও আন্তর্জাতিকতাবাদীরা শতকরা ৯৯ ভাগ বাঙালির সকল সংগ্রামী অর্জনকেই বিলুপ্ত করে দিতে চায়। আজ বাঙালির আত্ম-পরিচিতির নামে আজ আর কোন রাজনৈতিক দল নাই। আওয়ামী লীগ হলো নৃজাতিক বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদী দল। তবে এরা ক্ষমতার জন্য বাঙালি আইডিন্টিটি রাজনীতির চাইতে মুসলিম আইডিন্টিকেই বেশী গুরুত্ব দেন। ক্ষুদ্র নৃজাতিকতার নামে বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতি আছে। যেমন, চাকমা, মারমা, গারো লূসাইদের ক্ষুদ্র জাতি স্বত্তার রাজনীতি। ধর্মের নামে রাজনীতি আছে। যেমন ধর্মভিত্তিক জামাতে ইসলামি-বাংলাদেশ, নেজামে ইসলামী, ইসলামী ঐক্য জোট। এ ছারাও রয়েছে বহিরাগত আশরাফী মুসলমানদের ধর্মভিত্তিক ক্ষমতা বলয়। এ রা অতি চতুরতার সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, জাতীয় পার্টীর মত ক্ষমতার দল নিয়ন্ত্রন করে। এ ছাড়াও রয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টানের নামে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ক্ষমতা বলয়। সরকারের স্তরে স্তরে এসব ক্ষুদ্র ক্ষদ্র ক্ষমতা বলয়গুলু দেশী বিদেশী বৃহত্ ক্ষমতাবলয়ের আশির্বাদপুষ্ঠ হয়ে বাংলাদেশের বাঙালি জাতিস্বত্ত্বাকেই অধিনস্থ করে রেখেছে। এ ক্ষমতা বলয়গুলুর ঐক্য জোট দেশের শাসক। আর বাঙালিদের নামে যেহেতু কোন ক্ষমতার বলয় নেই, সেহেতু আওয়ামী লীগ ও বাঙালি, বাঙালি জাতীয়বাদ নাম নিতে লজ্জাবোধ করে। তাই বাঙালি সন্তানের কপালে ক্ষমতা নেই, সরকারী চাকুরী নেই। অর্থনৈতিক ক্ষমতার উত্সগুলু বাঙালির হাতে নেই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষমতাবলয়গুলু বানরের পিঠা ভাগের মত সরকারী চাকু্রীর সিংহভাগ হস্তগত করে নিয়েছে। এ যেন অতীতের পাঠান-মুঘল বৃটিশ-পাকিস্তান আমলেরই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। বাঙালি এখন নিজ দেশেই পরবাসী। বিদেশ গিয়েও তারা হয় বাংলাদেশী শ্রমিক। তাদের কঠোর শ্রমের পয়সায় বাংলাদেশের ক্ষমতা বলয়গুলুর ধনবানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশী ব্যাংকের একাউন্টের এ দের টাকার অংক দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষমতাবানরা আরও ধনবান হচ্ছেন। আর ক্ষমতাবানরা এ ভাবে আরও নয়া নয়া ক্ষমতার বলয় গড়ে তুলছেন। দেশ আজ এসব ক্ষমতাবান বলয়গুলুর হাতের পুতুল। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগষ্টের পর থেকে বাঙালি শব্দটিকে জাতীয় জীবনের সকল স্তর থেকে মুছে ফেলার যে কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছিল তা আজ ষোলকলায় পুর্ন হয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশী ক্ষমতার খেলোয়াররা লর্ড ক্লাইবের মত এখন আর ব্যবসায়িক মূনাফায় সন্তুষ্ট নয়, তারা বাংলাদেশের সকল ক্ষমতার নিয়ন্ত্রন চায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদ তাদের জন্য ভীতিজনক প্রত্যয়। এদিকে ক্ষমতায় বসার জন্য বাংলাদেশের ক্ষমতাবানরা প্রভুদের ইচ্ছায় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বলির পাঠা বানিয়েছে। লারমার নিপীড়ন গাঁথায় বাঙালি নিপীড়ক। মোস্তাক –জিয়ার নিপীড়ন গাঁথায় রয়েছে ইসলামের ইতিহাস। শেরে বাংলা-র বাঙালি জাতীয়তাবাদের নিপীড়ন গাঁথায় ছিল হাজার বছরের বর্নবৈষম্য বিরোধী সংগ্রামের দিক-দর্শন। এ দর্শনকে বলির পাঠা করে দেশের বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের দু’ নেত্রী কেবল পারিপারিক শোকগাঁথাকে বড় করে তুলছেন। এরা তাদের শোক গাঁথাকে ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক করে তুলছেন। এতে জাতির হাজার হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতির উপর বহিরাগত শাসকদের শোষন ও নিপীড়নের বয়ান সংযোগ চ্যূত হচ্ছে। এতে জাতি সংগ্রামী চেতনার উত্স হারিয়ে ফেলছে। এরা সর্বক্ষন পারিবারিক ইতিহাস বয়ান করছেন আর নিজেদের মধ্যে পক্ষ-প্রতিপক্ষ সেজে ক্ষমতার জন্য কাকস্বরে বক্তৃতা করছেন। সে বক্তৃতায় জাতীয় মুক্তির দিশা থাকে না। জাতির গৌরব গাঁথা থাকে না। জাতীয়তাবাদকে টুকরা টুকরা করার পর এখন এরা দিশেহারা। জাতীয়তাবাদ নিয়ে এ ধরনের বিভাজনের রাজনীতি কোন জাতি করে না। ইতিহাসের এ এক বিরল ঘটনা। বিগত সাড়ে তিন দশক ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতাধররা জাতীয়তাবাদের নামে নানা বিভ্রান্তি, অনৈক্য ও সর্বনাশের রাজনীতিতে লিপ্ত ছিলেন। জাতীয়তাবাদী চেতনার অভাবে যে কোন জাতি টিকে থাকতে পারে না, বাংলাদেশের শাসকরা তা ভাবেন না। ঐক্যহীন জাতি যে ভিন জাতির করতলগত হয়, তাও তাদের চেতনায় কাজ করে না। বিশ্বের জাতিসমুহের ইতিহাস পাঠকরা আমাদের সর্বনাশের ইতিহাস পাঠ করে হয়তো বা একদিন বিস্মিত হবেন। অসমাপ্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদী যুদ্ধ অতীতে মওলানা ভাসানীর সাথে থাকা কমিউনিষ্ট নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ আমলে আর জাতীয়তাবাদী মওলানা ভাসানীর সাথে রইলেন না। বাংলাদেশের এ কমিউনিষ্ট নেতৃবৃন্দ ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে গড়ে উঠা কমিউনিষ্ট গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে “অসমাপ্ত গনতান্ত্রিক বিপ্লব” সাধনে ভ্রতি হলেন। তারা বর্ণবাদ বিরোধী “অসমাপ্ত জাতীয় মুক্তির লড়াই”কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আর তাদের কর্তব্য মনে করলেন না। অথচ দক্ষিন এশিয়ার এ অঞ্চলেই পৃথিবীর ভয়াবহতম বর্ণবাদ স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছে। বর্ণবাদ যে সকল অসাম্যের দাত্রী এটা অখন্ড বাংলার কমিউনিষ্টদেরকে কে বুঝাবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৪৭ সালে বর্ণবাদী মহাজাতিধারার গুজরাটি জাতির (Aryan Race) রাজনীতিবিদদের কাছে অস্ট্রো-এশিয়াটিক অবর্ণবাদী মহাজাতিধারার বাঙালি জাতির (Austo-Asiatic Race) রাজনীতিবিদরা পরাজিত হয়েছেন। “বাঙাল খেদাও আন্দোলনে”র নামে এ সময় আসাম-পশ্চিমবংগ- বিহার থেকে ২০ লক্ষ বাঙালিকে বর্ণবাদের তরবারীর আঘাতে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হলো। বাঙালি জাতীয়তাবাদের অনুসারী মওলানা ভাসানীর অনুসারীরাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অগ্রসেনানী ছিলেন। এ কারনে যুদ্ধের প্রারম্ভেই মুসলিম বর্ণবাদী পাকহানাদার বাহিনী (Pakistani Racial Army) টাঙ্গাইলের সন্তোষে গিয়ে মওলানা ভাসানীর কুঁড়ে ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে ছিল। বিস্ময়ের ব্যপার ছিল এই যে, এ যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী ঢাকা শহরের কোন নেতা-মহানেতার ঘর-বাড়ি জ্বালায়নি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মওলানা ভাসানীর প্রত্যক্ষ অনুসারী গ্রাম বাংলার অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন দান ও সংগ্রামের ইতিহাস বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা মুছে ফেলেছে। এতে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যে মুছে যায়, এ কথা ক্ষমতাসীনদের কে বুঝায়। ১৯৭১ সালের ৯ মাসব্যপী মুক্তিযুদ্ধকালে মওলানা ভাসানী ভারতে অন্তরীণ অবস্থায় ছিলেন। দীর্ঘকাল সর্বভারতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বদানকারী এ মহান নেতা বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাঙালি জাতি পাকিস্তানী মুসলিম বর্ণবাদী শাসকদের হাত থেকে ভারতের হিন্দু বর্ণবাদী শাসকদের হাতে গিয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতীয় বর্ণবাদী শাসকদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে নব পর্যায়ে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সুচনা করেন। ভাসানী ন্যাপের নগরবাসী নেতারা সেদিন এ রাজনীতির ধারা বুঝে উঠতে পারেননি। সে সময়ে আগ্রাসী শক্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বাধীন চেতনাকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করার জন্য যে চক্রান্তের জাল বিস্তার করেছিল, তাতে অসাম্প্রদায়িক ন্যাপের বহু নেতা-কর্মী জড়িয়ে পড়ল। এতে ভাসানী ন্যাপ মুলতঃ নেতাশূন্য গেল। আমরা স্বল্প সংখ্যক ছাত্র-কর্মী “নয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদ” এর ঝান্ডা নিয়ে মওলানা ভাসানীর আদর্শ রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রইলাম। আমাদের বিশ্বাস দেশের মানুষ একদিন মওলানা ভাসানীর বর্ণবৈষম্যবাদ (Racism) বিরোধী বাঙালি জাতীয়তাবাদের পতাকা উর্দ্বে তুলে ধরবেই। এটাই প্রমাণিত সত্য যে, দুনিয়ার দেশে দেশে ধর্মের নামে কায়েমী স্বার্থবাদীদের দ্বারা সৃষ্ট বর্ণবৈষম্যবাদই সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিয়েছে। অতীতের ভারতবর্ষ এ বর্ণবৈষম্যবাদের পালন ভূমি ছিল। বাঙালি জাতি ঘোরতরভাবে বর্ণবৈষম্য বিরোধী জাতি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকশিত হয়েছে বর্ণবৈষম্য বিরোধী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। এ সত্যকে আড়াল করে দিতে চায় দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সাম্প্রদায়িকতাবাদে বিশ্বাসী পাকিস্তান ও ভারতের বর্ণবাদী শাসক গোষ্ঠী। কারন আর্য রক্তধারার জাতি (Aryan Race) হিসেবে পাকিস্তানী শাসক শ্রেণী আর ভারতের শাসক শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে মিল-মহব্বতের ভ্রাতৃ-প্রতীম সম্পর্ক। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিকে হিন্দু-মুসলমানের নামে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভাজিত করা আজ এ উভয় রাষ্ট্রের প্রধান কূটনৈতিক কর্তব্য হয়ে পড়েছে। লক্ষ্যনীয় যে, বিগত ৪৪ বছর ধরে বাংলাদেশে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতাসীন সরকারগুলু এ ঊভয় রাষ্ট্রের কূটনৈতিক চালে পড়ে দেশের সাধারন মানুষকে হিন্দু ও মুসলমান বানানোর রাজনৈতিক জেহাদে লিপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান ধর্মীয় রাজনীতির উত্থানকে এ দৃষ্টিতে বিচার করলে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি। চলবে...। পড়ুনঃ কোলকাতার “বাবুসাব”দের বাঙালিত্ব কিরূপ ছিল জানুন। নিন্মের লিংক দেখুন- https://bangalnama.wordpress/2009/10/25/bangal-shabdarther-sandhane/ https://bangalnama.wordpress/2009/07/06/koyek-chhotro-prolaap/ https://bangalnama.wordpress/2010/12/22/editorial/
Posted on: Wed, 10 Dec 2014 06:45:47 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015