বাড়িতে আসলে নিরুপায় হয় - TopicsExpress



          

বাড়িতে আসলে নিরুপায় হয় জি বাংলা দেখতে হয় । জি বাংলা ছাড়া আমাদের গ্রামে শত শত পরিবার অচল । সব কাজ দ্রুত সেরে সন্ধ্যার পর বসে পড়ে টিভির সামনে, চলতে থাকে একের পর এক সিরিয়াল । আমি নিরুপায় । সে স্বার্থে আমিও বেশ কয়েকবার বুলিয়েছি চোখ, দেখেছি কয়েকটা সিন । সে হিসেবে আমি বেশ পরিচিত জি বাংলার সিরিয়ালগুলোর সাথে । মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্ট নিয়ে করা মূলত সিরিয়ালগুলো । আবেগ আর ক্লাইমেক্সে ভরপুর, রহস্যের পর রহস্য, চ্যালেন্জের পর চ্যালেন্জ, ভিলেনের পর ভিলেন, জয়ের পর নায়িকার আরেকটি জয় । কেন্দ্রীয় চরিত্রে বেশিরভাগ সময় থাকে নায়িকা কারণ এগুলো বানানোই হয় নারীদের জন্য । তাও আধুনিক নারীর জন্য না, গৃহিনীদের জন্যে । সেসব তরুনী, কিশোরিরা ভাল স্ত্রী-বাদ আদর্শ লালন করে তারাও সিরিয়ালগুলোর মূল গ্রাহক । সিরিয়ালগুলোতে পুরুষদের থাকে ভাব গম্ভীর, ভার ভারিক্কি চালচলন । অনেকটা ঈশ্বর সুলভ । নারী (নায়িকা) থাকে প্রেমে অন্ধ, অত্যন্ত সতী সাধ্বী, বিরহে কাতরিনী, স্বামীপরায়ণা । তারা স্বামী ছাড়া কিছু বুঝে না; তারা শশুরবাড়ির পরিবার ছাড়া কিছু বুঝেনা । তাদের ধ্যান জ্ঞান সম্পূর্ণ নিবেদিত থাকে স্বামী/শশুরবাড়ির প্রতি । স্বামীর জীবনই তার জীবন । স্বামীর বিশ্বাস অর্জনই তার প্রথম এবং শেষ লক্ষ্য । স্বামী তাকে বারবার অবিশ্বাস করবে, বারবার যন্ত্রণা দিবে, শত কষ্টে ফেলে দেবে তাকে তবুও স্বামী তার প্রভু । শত অবিশ্বাস করলেও তার জীবনের দায় যেভাবেই হোক তাকে পূণ্যবতী দেখাতে হবে । স্বামী অন্যায়ভাবে তাকে অবিশ্বাস করছে বারবার তাতেও সে অন্যায়কারী-অসভ্য স্বামীর ওপর তার কোন ক্ষোভ নেই; তার জন্ম নেয় না কোন দ্রোহ । স্বামী তাকে বারবার ফিরিয়ে দেয় আর বারবার কেঁদেকেটে একটা অস্থির অবস্থা তৈরী করে । তুমি ভুল বুঝছ বলে বুকের কাছে পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে । স্বামী হয়ে যায় প্রকৃতির মত নির্মম । সে তবুও বিশ্বাস করে না, তার চাই প্রমাণ । আত্মবিশ্বাসে চোয়াল শক্ত হয়ে থাকে স্বামীর । সে নিশ্চিত সমস্ত অপরাধ তার স্ত্রীর । যদিও এর আগেও এরকম সকল অবিশ্বাস প্রমাণ হয়েছে মিথ্যায় । প্রত্যেকবারই বেমালুম ভুলে যায় পুরোনোটা । দিনকে দিন, বারকে বার স্বামীর চোয়াল শক্ত থেকে শক্ততর হতে থাকে । তার অবিশ্বাস ভ্রান্ত প্রমাণিত হলে সে অনুতপ্ত হয় না, লজ্জায় মুখ আগুনের মত লাল হয়ে ওঠে না, স্ত্রীর পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে না ক্ষমা চেয়ে; বুকে টেনে নেয় । আর স্ত্রীও সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন হয়ে গেল মনে করে বুকে জড়িয়ে পড়ে । নিজেকে তার ধন্যা ধন্যা মনে হয় । খুশিতে উদ্ভাস হয়ে যায় সে । শশুড় শাশুড়িকে সেবা দেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে । কিছুদিন তার আদরযত্ন ভাল চলে । আবার কিছুদিন পর শুরু হয় আরেকটা অপবাদ ও অবিশ্বাস । স্ত্রী আবার শাড়ি কাছা দিয়ে তার মোকাবিলা করে । এত আত্মত্যাগ যে সিরিয়ালে নারীর সে সিরিয়ালেই ভিলেন থাকে নারীরা । নারীর পাপী মাথা থেকে একেরপর এক বের হতে থাকে কালো সাপের মত ফণা তোলা বুদ্ধি । প্রত্যেকটা কাজের আগে থাকে তাদের সুগভীর এবং ঠাণ্ডা পরিকল্পনা, তাদের একেকজনের অভিনয়কলা অসাধারণ ! তারা করতে পারে একের পর এক ছলনা । সিরিয়ালে তারা থাকে আগুণের মত ভয়ংকর, যেখানেই প্রবেশ করে ছাড়খাড় করতে চায় সেখানটা । ষড়যন্ত্র ছাড়া তারা কিছু বুঝে না । সাপের মত চ্যাড়া জিব তাদেরও লকলক করে । নায়িকা যেমন হার মানে না তেমনি হার মানে না তারাও । পরাজয়ের পর আরেকটা নারীর সাথে যোগ দিয়ে শুরু করে পূর্ণোদ্যমে আরেকটা ষড়যন্ত্র । পুরুষরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, অফিস আদালত করে, অথবা বেকার ঘুরেফিরে, বুক ফুলিয়ে ঘুরে, বুক ফুলিয়ে চ্যাতাচিতি করে, ঘাড় উচিয়ে সন্দেহ করে । তাদের লাঞ্চিত হবার কোন ভয় নেই । ঘুরেফিরে চরিত্রগুলো এরকমই । নারী এত নিবেদিত যে তার আর ফ্যানের ভেতর পার্থক্য থাকে না । সারাদিন আমরা ফ্যান চালিয়ে যেমন ফ্যানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি না অথচ নষ্ট হয়ে গেলে তোর মায়রে বাপ বলে গালি দেই তেমনি নায়িকা নারীর অবস্থা । সারাদিন ফ্যানের মত ঘুরেঘুরে গরম হয় অথচ সে উত্তাপ আসে না কারো শরীরে; আসে আরাম । সেই কৃষিসমাজ থেকে আর ফ্যানের ঘুরা বন্ধ হয় নি । এখন সিরিয়াল নির্মাতারা দায়িত্ব নিয়েছেন ভোল্টেজ বাড়িয়ে সে ঘূর্ণণ বৃদ্ধি করা । প্রত্যেকটা সিরিয়াল (পূর্বের সুবর্ণলতা ছাড়া) অসভ্যদের করা সিরিয়াল । প্রত্যেকটা সিরিয়াল করা অপ্রতিভাবানদের । নায়িকাকে ততটুকুই দ্রোহী করা হয় যতটুকু দ্রোহ তার সতীত্বকে আগুনের মত গনগনে করে । কেন কোন নারী চলে গেল না অন্যপুরুষের হাত ধরে ? কেন করল না যৌনতা নিচের ফ্ল্যাটের পুরুষের সাথে ? কেন নারী অপরাধ করতে জানে না ? কেন যারা (ভিলেন) অপরাধ করে তাদের পরাজয় ঘটে ? নায়িকা, ভিলেন উভয়ই স্ববিরোধী চরিত্র । তাদের মিল একটা জায়গায়ই । তাদের দেখিয়ে চরমভাবে হেয় করা হয় নারীর । প্রথমটিতে চরমভাবে দেখানো হয় নারীর নির্ভরশীলতা । প্রথম নারী স্পষ্ট করে নারী আদমের বাম পাজর থেকে সৃষ্ট । দ্বিতীয়টিতে দেখানো হয় নারীকে অপদেবী, প্যান্ডোরার বাক্স । নারীর চেয়ে হিংসুটে আর কেউ হতে পারে না । এই নারী স্পষ্ট করে আদমের হাড়টি বাঁকা । বাংলা সিরিয়াল ও অধিকাংশ কমার্শিয়াল ফিল্মের নারী অন্যের বাঁকা হাড় ।
Posted on: Fri, 25 Oct 2013 16:49:52 +0000

Trending Topics




© 2015