মিশরে যা হচ্ছে সেটা ঐ - TopicsExpress



          

মিশরে যা হচ্ছে সেটা ঐ অঞ্চলের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। নাজমুস সাকিব নির্ঝর ১৯৫৩ সালে ইরানের জাতীয়তাবাদী মোসাদ্দেক সরকারকে “বিগ ব্রাদারস” এবং “দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী” উৎখাত করেছিলেন, কারন এই সরকার তেল জাতীয়করন করছিলেন। ১৯৬০ সালে তুরস্কের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, মুসলিম জাতীয়তাবাদী নেতা আদনান মেন্দারেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন তুর্কি “জাতীর জনকের” চেতনার সৈনিকেরা। তুর্কি জাতীর জনকের আমলে বন্ধ মসজিদ মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়া আদনান মেন্দারেসকে ফাঁসিতে লটকিয়েছিলেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৩৭ জন অফিসার। ৮০ সালে তুরস্কের দেশপ্রেমিক সেকুলার সেনাবাহিনী, মধ্যমপন্থী-ইসলামপন্থী কোয়ালিশনের সরকারকে আবার ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং একটি গনহত্যা চালিয়ে সফল ভাবে একটি ক্যু সংঘটিত করেন। ইসলামী দল ব্যান করেন। ৮৯ সালে তিউনিসিয়ার দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও বিগ ব্রাদারস সমর্থিত শাসক যখন দেখতে পেলেন রশীদ ঘান্নৌশির নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্রাদারহুড ইন তিউনিস (আন নাহদা) নির্বাচনে অংশগ্রহনে বাধা স্বত্তেও স্বতন্ত্রভাবেই বিপুল ভোট পাচ্ছে, তখন ২৫ হাজার ইসলামপন্থীকে “বিশৃংখলা” ও “রাষ্ট্রদ্রোহের” অপরাধে জেলে ঢুকিয়ে দিলেন আর সেই সাথে কয়েকজন নেতাকে লটকে দিলেন ফাঁসিতে। ৯২ সালে আলজেরিয়াতে ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট যখন বিপুল ভোটে বিজয়ী হল তখন সেখানে যেসব দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীরা ছিলেন তারাও দেখলেন যে এটা ক্যু করার মৌসুম। তো দেশপ্রেমিকরা ৩০ হাজার ইসলামপন্থীকে জেলে ঢুকালেন। স্যালভেশন ফ্রন্ট ব্রাদারহুডের চাইতে একটু বেশি রগচটা ছিল বিধায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ক্যু টা আরামে করতে পারেনাই, একটা হালকা গৃহযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। চলেছে ১০ বছর আর মারা গেছেন ৪৪ হাজার মতান্তরে ২ লাখ মানুষ। ৯৭ সালে তুরস্কের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আবার বুঝতে পারলেন যে আরবাকান এর Millî Görüş আসলে উসমানীয়া খিলাফতে প্রত্যাবর্তনের একটা আপগ্রেডেট ভার্শন, কাজে কাজেই আরবাকানের ৭ মাস বয়সী জনপ্রিয় ইসলামী সরকারকে পত্রপাঠ বিদায় করে দিলেন। ২০০৬ সালে বহুদিন পর যখন আবার ইসলামী বক্তব্য সহকারে কোনো রাজনৈতিক দল মধ্যপ্রাচ্যে নির্বাচিত হল তখন বিগ ব্রাদারসরা হাউকাউ শুরু করলেন। এটা ছিল ফিলিস্তিনে হামাসের ব্যাপক বিজয়। এখানে একটা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী না থাকায় (মানে ফিলিস্তিনে প্রচুর “দেশপ্রেমিক” আছেন, কিন্তু সেনাবাহিনীই তো হইতে দেননাই ইজরাইল) গাজা উপত্যকাকে পৃথিবীর ওপেন এয়ার কারাগার বানালেন বিগ ব্রাদারস। কারাগারে নিয়মিত খাবার/পানি/ওষুধ/বিদ্যুত পৌঁছায়, কিন্তু গাজায় এ সব কিছুই নিয়মিত ছিলনা। আর মিশর? মিশরে ৬০ বছরে কোনো গনতান্ত্রিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী অনুভব করেনাই। এজন্য তারাই ক্ষমতায় ছিলেন, এই সময়ে ৩২ হাজার মুসলিম ব্রাদারহুড মেম্বারকে জেলে ভরা হইছিল, ১১ হাজার নির্বাসনে, ১৪০০ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত, আর অসংখ্য ব্রাদারহুড মেম্বার লাশ হয়ে ফেরত এসেছিলেন, কারও কারও লাশ কি করা হইছে জানা যায়নাই- যেমন ফী যিলালিল কুরআন এর লেখক সাইয়্যেদ কুতুব। ২০১১ সালে কিছু পোলাপান ভাবল যে জন্ম অবধি মুবারক ছাড়া ঈদই করতে পারলাম না, এবার একটু অন্যকিছু করা যাক। বিপ্লব হইল, প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্টা আসলেন ব্রাদারহুডের মুরসি। ২ বছর পর পোলাপানের দেশপ্রেমিক ও চেতনাধর অংশ বুঝছে যে দেশপ্রেমিকরাই ভাল, নির্বাচিতরা অতটা ভালো না। তাই তাহরীর স্কয়ারে আসছে আবার বিপ্লব করতে, মুবারকের পোস্টার বেচা বিক্রি চলতেছে। তাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এখন নড়েচড়ে উলটে পালটে খাওয়ার কথা ভাবতেছে। তো এই হইল ঐ অঞ্চলের ইসলামপন্থীদের ও গনতন্ত্রের একটা স্ন্যাপ শট। মধ্যপ্রাচ্যের “গনতন্ত্রের” ইতিহাস হচ্ছে ইসলামপন্থীদের জনসমর্থন পাওয়ার ইতিহাস এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হওয়ার ইতিহাস। লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রকাশিত
Posted on: Fri, 05 Jul 2013 08:18:06 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015