মেয়েদের কিছু কান্না আছে। গোপন কান্না। যে কান্নার কথা তারা কাউকে বলে না। নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটাকেও না। কিন্তু গোপন কান্নাও কি গোপন থাকে? কেউ না কেউ দেখে ফেলে ঠিক। নিজের শৈশবে আমার বড়বোনকে এমন কান্না দুবার কাঁদতে দেখেছিলাম। প্রথমবার, ও মনে হয় ক্লাস নাইন কি টেনে পড়ে, কাঁদছিল, আর নিজের ডায়রির পাতা, নীল খাম ছিঁড়ে ছিঁড়ে আগুনে ফেলছিল। সেই কান্না যে ভালোবাসার জন্য, সেই চোখের জল যে আর্দ্র হৃদয়ের গভীরতম উৎস থেকে ধেয়ে আসা, বুঝেছিলাম আরও পরে। ১৯৯৮ সালে। এবার তার গোপন প্রেমিক কিংবা অচেনা ভালোবাসাটি অন্য কেউ, অন্য কিছু। আর্জেন্টিনা! আমার বোন গতকালও কেঁদেছে কিনা জানি না। আমি কেঁদেছি। প্রতিটা বিশ্বকাপই আমার জন্য কান্নার হয়ে আসে। কিন্তু গতকাল কাঁদলাম অন্য কারণে। আমার জীবনে এই প্রথম আর্জেন্টিনাকে সেমিফাইনালে উঠতে দেখলাম! আমরা জন্মেছি ব্রাজিলের প্রবল দাপটের সময়। ঠিক যেন জমিদার। আর আর্জেন্টিনা নেহাতই বস্তিবাসী এক আধনেংটো ছেলে। যে কিনা বাইরের সিংহ দরজার শিক ধরে লোলুপ চোখে দাঁড়িয়ে শুধুই ভেতরের রাস উৎসব দেখে। আমার ব্রাজিল সমর্থক বন্ধুরা এই বলে খোঁচায়, আর্জেন্টিনাকে তো জীবনে কিছুই জিততে দেখিস নাই। সেকেন্ড রাউন্ড–কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়া দল, তবু সাপোর্ট করিস! বন্ধুদের বলি না, এইখানেই তো আমার ভালোবাসার শ্রেষ্ঠত্ব। কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা না করেই ভালোবেসে যাওয়াই তো বিশুদ্ধতম ভালোবাসা। গোপন কান্নার মতো আমাদেরও আছে সিন্দুক–গোপন ভালোবাসা। আর্জেন্টিনা সেই অহংকারী প্রেমিকা, প্রেমিককে যে অনবরত খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কাঁদায়। চোখের জল কখনো শুকোতে দেয় না। তবুও আর্জেন্টিনাকে ভালোবাসি। হতে পারে সেই প্রেমিকা বড্ড অহংকারী, আদুরে, আহ্লাদী, একটু অভিমানীও; কিন্তু তার আলতো একটু স্পর্শের জন্যই আজন্ম ধ্যানে বসতেও আমরা রাজি!
Posted on: Sun, 06 Jul 2014 07:01:06 +0000
Trending Topics
Recently Viewed Topics
© 2015