“মহাভারতে - TopicsExpress



          

“মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ”- (পর্ব ১৩) ----------------------------- দ্রোণকে বধ করার পর কৌরবদের সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয় কর্ণকে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ১৭তম দিনে কর্ণ ও অর্জুনের যুদ্ধ হয়। অর্জুনের সাথে যুদ্ধের সময় কর্ণের রথের চাকা বসে যায়। কর্ণ নিরুপায় হয়ে অর্জুনকে ধর্মের নামে যুদ্ধ বিরতির জন্য অনুরোধ করে। তখন অর্জুনের সারথি শ্রীকৃষ্ণ কর্ণকে বললো, “জতুগৃহে পাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনার সময় তোমার এই ধর্ম কোথায় ছিল, কর্ণ? অস্ত্রহীন বালক অভিমুন্যর উপর তীরবর্ষণের সময় তোমার ধর্মের কথা মনে পড়ে নি?? তাই, আজ ‘ধর্ম’ ‘ধর্ম’ বলে চিৎকার করলেও ধর্ম তোমাকে রক্ষা করবে না, কর্ণ।” অবশেষে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে অর্জুন কর্ণকে বধ করে। কর্ণ ছিল দুর্যোধনের সবথেকে বিশ্বস্ত বন্ধু ও সেনাপতি। দুর্যোধন তাঁর কোন ভাইয়ের মৃত্যুতে শোক করেনি, কিন্তু কর্ণের মৃত্যুতে সব থেকে বেশি শোক করে। মহাভারতে কর্ণ চরিত্রটি দ্বিমুখী। কর্ণের বীরত্বের সঙ্গে ছিল দম্ভ, অহংকার ও আত্মাভিমান। নিজের দম্ভ ও অহংকারের জন্যই তিনি অন্যদের কাছ থেকে সন্মান পায় নি। তাই, “সুতপুত্র (সারথির পুত্র) বলেই যে সবাই কর্ণের প্রতি অবিচার করেছে”- এটা ভাবা কখনোই ঠিক না। কারণ, ধৃতরাষ্ট্রের সারথি সঞ্জয়ও কিন্তু সুতপুত্র ছিল। বিদুর নিজেও দাসীর সন্তান ছিল। অথচ, সঞ্জয় ও বিদুর দুইজনেই নিজেদের চরিত্রবলে সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিল। সুতপুত্র বা দাসীর সন্তান বলে কেউ তাদের প্রতি কখনোই অত্যাচার বা অবিচার করে নি । কিন্তু, কর্ণ নিজের স্বার্থের জন্য অর্থাৎ অর্জুনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শ্রেষ্ঠ বীরের সম্মানলাভের জন্যই নিজের সকল প্রতিভাকে স্বার্থপরায়ণ ও নীচ দুর্যোধনের কাছে উৎসর্গ করেছিলো। নিজের অদম্য উচ্চ আকাঙ্খার জন্যই কর্ণ পরশুরামের নিকট মিথ্যা বলে অস্ত্রবিদ্যা লাভ করে। তাই, গুরুভক্তি থাকা সত্ত্বেও পরশুরাম কর্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। বীরত্ব আর মহত্ত্ব এক নয়। মহৎ জীবনের অধিকারী হতে গেলে সাধনা ও ঈশ্বরের কৃপা প্রয়োজন। ধর্মের চর্চা আমরা সবাই করি, কিন্তু প্রকৃত ধর্মের তত্ত্ব সবাই উপলব্ধি করতে পারি না। সারা জীবন ধর্মচর্চা করলেও কর্ণ ছিল অধর্মের সহায়ক। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনেক চেষ্টা করেও কর্ণকে ধর্মপথে আনতে পারে নি। তাই, ধর্মযুদ্ধে কর্ণের পরাজয় অনিবার্য ছিল। সুতরাং মহাভারতের কর্ণ চরিত্র থেকে আমরা একটি শিক্ষাই নিতে পারি, সেটা হচ্ছে- “সকল দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও নিজের সন্মানের জন্য আমাদের ধর্ম পথে থেকেই সাধনা করতে হবে। তবুও অধর্মের সঙ্গ দেওয়া উচিত নয়। নিজের অধিকারের জন্য অবশ্যই সংগ্রাম করা উচিত, কিন্তু যার উপর আমাদের অধিকার নেই তাঁর আকাঙ্ক্ষা কখনোই করা উচিত না।” (To be Continue….)
Posted on: Mon, 01 Dec 2014 02:15:52 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015