সিডনীতে অনেক ধরনের বাড়ি - TopicsExpress



          

সিডনীতে অনেক ধরনের বাড়ি আছে, তার মধ্যে এক প্রকার হলো fibro দিয়ে বানানো বাড়ি। এ বাড়ির সমস্যা হলো, আপনি যদি পুরো বাড়ি নতুন করে পেইন্টিং করান তাহলে কারো পক্ষেই বুঝার কোনোই উপায় নেই বাড়ির দেয়াল-খাম্বার ভিতরের কী অবস্থা। অনেক সময় এমন হয়, ঝকঝকে তকতকে একটা fibro বাড়ি কিনলো কেউ, তারপর কোনো কারণে বাড়ির কোনো অংশ মেরামত করতে গিয়ে দেখা গেলো, পুরো বাড়ির ভিতরে ভিতরে একদম নষ্ট হয়ে গেছে! তখন পুরো বাড়ী ভেংগে বানানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই! একদমই উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট অবস্থা যাকে বলে! আমরা বাংলাদেশীরা আসলে মানুষ হিসেবে কেমন, আমাদের সামষ্টিক মন-মানসিকতা কী ধরনের তা জানার আগ্রহ আমার অনেকদিনের। কারন কোনো নির্দিষ্ট এলাকার/গোত্রের/এরিয়ার মানুষের বর্তমান অনেক কর্মকান্ডকে বুঝতে হলে তার অতীত থেকে চলে আসা সামষ্টিক আচার-আচড়ন চিন্তা-ভাবনাকে আগে বুঝতে হয়। আমার কাছে কেনো যেন আমাদের সমাজকে (এর মানুষগুলো সহ) fibro house এর মত fibro society মনে হয়! আমরা আমাদের সামষ্টিক মন-মানসিকতায় ভিতরে কী হচ্ছে, নষ্ট হয়ে ভচকে সদরঘাটের মত অবস্থা হলেও, বাইরে থেকে ফিটফাট ভান করে থাকতে পছন্দ করি। কেউ যদি ভুলেও ভিতরের অবস্থার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাতে চেষ্টা করে, তার খবরই আছে! কেনো একথা বলছি, তা একটা নির্দিষ্ট এংগেল থেকে বলি- হুমায়ুন আহমেদ ঘেঁটুপুত্র কমলা মুভি বানানোর পর হায় হায় রব উঠেছিলো! সমাজটাকে নষ্ট করে দিলো এই হুমায়ুন আহমেদ! ছি! এ ধরনের মুভি বানানোর উদ্দেশ্য কী? ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ মুভিটা যে আমাদের সামষ্টিক অতীতেরই খুব মার্জিত এবং সামান্য রিফ্লেকশান তা কেউ বলতে চায়নি, বা বিভিন্ন লজিকে সে বলাটাকে থামিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে। অথচ স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম ঘেঁটু-দলের সাথে ছিলেন, মেয়ে সেজে অংগ-ভংগি করে মঞ্চে গান গাইতেন [যাকে এখনকার বিচারে অনেকেই নির্দ্বিধায় অশ্লীল বলবেন, ইনক্লুডিং মী]। শুধু ঘেঁটুপুত্র কেনো, বাঁঈজিদের কাহিনীও কিন্তু মোটামুটি সবারই জানা যারা এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-ধারা নিয়ে পড়েছেন, অতীত ঘেটেছেন। একটা নির্দিষ্ট মাদ্রাসায় পড়ার সময় [নাম বলবো না কোন মাদ্রাসা] সমকামিতা নিয়ে কিছু ঘটনা শুনেছিলাম এবং অল্প একটু দেখেও ফেলেছিলাম। তখন ছোট আমি, মেথডলজিক্যাল রিসার্চ কীভাবে করতে হয় জানতাম না, খালি অবাক হয়ে ভাবতাম, কীভাবে সম্ভব?! আজকে যারা বাংলাদেশে সমকামীদের ম্যাগাজিন প্রকাশ হওয়া নিয়ে হায় হায় করেন, তাদেরকে আমার ডেকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করে, আপনি/আপনারা সমাজের ক্যান্সারের চিকিৎসা করবেন না, অথচ ক্যান্সার ছড়াতে ছড়াতে চামড়া দিয়ে ফোঁড়া হয়ে বের হলে তখন কপাল চাপড়ে মাতম শুরু করবেন এটা কী ধরনের কথা?! তারেক মাসুদের মাটির ময়না দেখে বাংলাদেশী সমাজ আতংকে হায় হায় করে উঠেছিলো! মান-সম্মান সব গেলো, লোকটা এটা কী মুভি বানিয়েছে? কী প্রমান করতে চায় সে? আর আমি যখন মুভিটা দেখেছিলাম, বিরক্ত লেগেছিলো, লোকটা এত কম করে দেখিয়েছে সব! আসলে যে আরো কত কিছু হয়... আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, বাংগালী [বাংলাদেশী] মন-মনন-মানসিকতায় যৌনতার এক ধরনের বিকৃত (ঠিক বিকৃত কিনা জানিনা, এটাকে fancy-ও বলা যেতে পারে মনে হয়) কল্পনা আছে, এবং তার ছাপ তাদের বাস্তব জীবনেও আছে অনেক অনেক আগের থেকেই। তবে আমার আরেকটা ধারণা ছিলো- যেহেতু জমিদারদের/অর্থবানদের বিকৃত যৌনতৃপ্তির যুগ পেরিয়ে আগের সেই জমি-কেন্দ্রিক জীবন ধারা থেকে বেরিয়ে এসে এই অঞ্চলের মানুষ এখন urbanization পাল্লায় পড়ে বদলে গেছে অনেকটাই, হয়তো আমাদের সামষ্টিক মন-মানসিকতায় যৌনতার যে একটা বিকৃত-ধারা আছে সেটাও বদলেছে। কিন্তু অনেক অনেকদিন পর, সিডনীতে একটা প্রাইভেট ল-ফার্মের চৌদ্দতলার উপরের এসি-রুম অফিসে বসে, সামনে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকা ঢাকার মেয়েটার তার সলিসিটরের সাথে বলা কথাগুলো শুনতে শুনতে, অনেকদিন পর আমি আবার আমাদের সামষ্টিক মন-মানসিকতায় যৌনতা নিয়ে ভাবছিলাম। বড় হতে হতে কয়েকটা পরিবারে -খুব closest কিছু পরিচিতদের মধ্যে- বাবা-মেয়ে কেন্দ্রিক কিছু ঘটনা শুনেছিলাম। তারমধ্যে একটা ঘটনা খুব ভাল করেই মনে আছে। একদিন দুপুরে ঘুমুচ্ছিলাম। ঘুমের মধ্যেই টের পেয়েছিলাম একজন আন্টি এসেছেন, আম্মুর সাথে কথা বলছেন। যেহেতু বাসার ড্রইং রুমটাই ছিলো আমাদের ভাই-বোনদের রুম, আন্টিরা ঐ রুমেই আম্মুর সাথে কথা বলতেন। আমি আন্টির কান্নার আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে গেলেও, কৌতুহলের কারনে ঘুমের ভান করে ছিলাম। আন্টি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন আর আম্মুকে বুঝাতে চেষ্টা করছিলেন যে উনি কিছুতেই উনার হাজবেন্ডের কাছে বাচ্চাদেরকে নিয়ে ফিরে যেতে চান না। একবার, দুইবার না, কয়েকবার উনার জামাই নিজের বড়মেয়েকে বিশ্রীভাবে ধরতে গিয়ে উনার সামনে ধরা খেয়েছে, কী কী যেন করতে চেষ্টা করেছে। একটা মেয়েকে চিনতাম যে তার বাবাকে দুচোখে দেখতে পারতোনা। অনেকদিন পরে সে আমাকে বলেছিলো তার বাবা সুযোগ পেলেই তার বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয়, ঘষাঘষি করে, সে তার মাকেও বলতে পারেনা, কাউকেই বলতে পারেনা! আর আমি সবসময়ই চেষ্টা করেছি এ ধরনের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে চিন্তা করতে। কিন্তু বড় হয়ে ভাবতে চেষ্টা করি- এগুলো কী আসলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা? নাকি আমাদের বাইরে থেকে ফিটফাট দেখতে fibro societyর ভিতরে লুকিয়ে রাখা অনেক পুরানো ক্যান্সার? জানিনা, এটা জানতে হলে অনেক ইন-ডেপথ রিসার্চ লাগবে। কিন্তু কে যাবে আমাদের সামষ্টিক যৌন চিন্তা-ধারা-আচার-আচড়ন নিয়ে গবেষণা করতে? মাইর একটাও মাটিতে পড়বে?? যারা ওয়েষ্টকে কথায় কথায় তুলো ধুনা করেন [ওয়েষ্টের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে কিছু বলছিনা, কিন্তু আমাদের সামষ্টিক হিপোক্র্যাসির একটা দিক দেখানোর জন্য বলছি-], ওয়েষ্টের incest [রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে যৌনতার সম্পর্ক] নিয়ে বড় বড় লেকচার দেন আর তার বিপরীতে আমাদের সমাজ যে এখনো কত ভাল বলে গর্ববোধ করেন, I swear, ছোটবেলা থেকে আমি আমাদের সমাজেই যে পরিমান incest এর ঘটনা শুনেছি, দেখেছি, বলতে নিলে আমাকে যে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই! আমাদের fibro societyর কাহিনী শেষ করি মেয়েটার ঘটনা দিয়ে। লম্বা কাহিনী সংক্ষেপে- মেয়েটার হাজবেন্ড ডিভোর্সের পর এখন তার ছোট মেয়ে-বাচ্চাটাকে কোর্টের মাধ্যমে নিজের কাছে রাখতে চায়। [সিংগল ফাদার হিসেবে সরকারী টাকা তো পাবেই, তার উপর বাচ্চার জন্যও সরকার যে টাকা দিবে সেটাও পাবে, আবার কেয়ারার ইনসেন্টিভ বলে আরেকটা আছে, ওটাতেও টাকা পাবে যেহেতু চাকরি না করে চব্বিশ ঘণ্টা তার বাচ্চাকে দেখতে হবে!] মেয়েটা তার সলিসিটরকে কাঁদতে কাঁদতে যা বলছিলো তার মূল কথা হলো সরকার সব টাকা তার [এক্স]জামাই-কেই দিক, সে টাকা চায়না, স্রেফ বাচ্চাটাকে কোনোভাবেই যেন তার বাপের কাছে না দেয়! বাচ্চা ছোট অবস্থায় মা যখন মেয়ের ন্যাপি চেইঞ্জ করতো সে লোক [নিজে বাপ হয়েও] বাসায় থাকলে সব কাজ ফেলে পাশে এসে বসতো, আর বিশ্রী বিশ্রী কমেন্ট করতো! কয়েকবার মার সামনেই মেয়ের ন্যাপির ভিতর আংগুল ঢুকিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে। অনেক সময় টিভি দেখতে বসলে মেয়েকে নিজের কোলে রাখতো আর মা যদি মেয়েকে চাইতো বিশ্রী হেসে বলতো কেনো? নিজের মেয়েকে কি সতীন মনে হচ্ছে? ডিভোর্সের সময় প্রতিশোধের বিশ্রীরকম ভংগিতে হেসে বলেছে যা, যা, তুই যা, তোর মেয়ে তো আছে! মেয়েটা তার বাচ্চারা কথা বলতে বলতে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা! তার সলিসিটর খালি গম্ভীর গলায় কান্না থামাতে বলে আর একটু পর পর এভিডেন্স চায়!! আর আমি তার চেয়েও গম্ভীর চেহারায় দুজনকে দেখি আর মনে মনে সলিসিটরের গোষ্ঠী কিলাই, ফর গডস সেইক, বাপ তার মেয়েকে যা যা করেছে এগুলোর এভিডেন্স কোথ থেকে দিবে এই মা?? সে কী ভিডিও করে রেখেছে?? আমার বাসা থেকে সেই ল ফার্ম অনেক দূরে। ট্রেনে করে ফিরতে ফিরতে পুরোটা রাস্তা ট্রেনের জানালা দিয়ে আকাশ দেখেছি আর ভেবেছি- আমাদের firbro societyর ভিতর আমি একলাই যদি এত ঘটনা শুনে আর দেখে থাকি, অনলি গড নোজ, ভিতরে ভিতরে না জানি আরো কত নোংরামীর ক্যান্সারই না আমরা পুষে যাচ্ছি! কীভাবে সম্ভব এই ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা করা? জানিনা...
Posted on: Sun, 26 Jan 2014 21:11:34 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015