আজকে এমন কিছু কথা বলব যা - TopicsExpress



          

আজকে এমন কিছু কথা বলব যা শুনলে চট্টগ্রামের অনেক মিউজিশিয়ান আমার উপরে ক্ষেপে যাবেন এইটা আমি জানি। কিন্তু তাও আমি কথাগুলো বলব। কারন এইটা খালি চট্টগ্রাম না, দেশের পুরো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা। কিছুদিন আগে আমি আমার নিজের শহর চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে এলাম। ভালো মন্দ অনেক অনুভুতিই ছিল। কিন্তু খুব খারাপ লাগলো যখন চট্টগ্রামের বাংলা হোটেল এবং লুসাই হোটেলে গেলাম। যারা চট্টগ্রামের বাসিন্দা তারা সবাই জানেন, এই দুইটা হোটেল শুধুমাত্র মিউজিশিয়ান দের জন্য বরাদ্দ করা। এ হোটেল গুলোতে প্র্যাকটিস প্যাড আছে, সাউন্ড সিস্টেম রাখার জন্য রুম আছে, এবং আছে ভালো মানের কাজ চালানোর মতন স্টুডিও। জেমস ভাই, বাচ্চু ভাই, পার্থ ভাই, নকীব ভাই সহ বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীতের জন্মদাতাদের অনেকেই এই জায়গা থেকেই প্র্যাকটিস করে উঠে এসেছেন আজকের সুপারস্টার হিসেবে। মূল প্রসঙ্গে আসি - ২৭ শে সেপ্টেম্বর রাত পৌনে নয়টা। "ক" ব্যান্ডের (এইটা কাল্পনিক নাম দিলাম, কারন ঐ ব্যান্ডের নাম দিতে চাইনা) প্র্যাকটিস রুম বাংলা হোটেলে। এদের সবাইকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। ইন ফ্যাক্ট যখন আমি আমার ব্যান্ড নিয়ে বেনসন এন্ড হেজেস স্টার সার্চ এবং ডি রকস্টার কম্পিটিশনে আসার জন্য দিন রাত এক করে পরিশ্রম করছিলাম তখন এই ব্যান্ডের মেম্বার রা আমার প্র্যাকটিস সেশনে আসতো। ওদের স্বপ্ন ছিল নভেম্বর রেইন, সুইট চাইল্ড ও মাইন, হলি ডাইভার এর মতন রুচিশীল ইংরেজি গান করা এবং নিজেদের কম্পোজ করা গান গুলো নিয়ে কাজ করার। যাই হোক, অনেক বছর পরে তাদের দেখে ভালো লাগলো এবং যেহেতু ওরা প্র্যাকটিস প্যাডে ছিল তাই কোন কথা বার্তা ছাড়াই জ্যামিং শুরু হল। জ্যামিং এর শুরুতেই অবাক হয়ে গেলাম আমি। রীতিমত ৪৪০ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক শক খেলাম তাদের জ্যামিং দেখে। পাঁচ বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে পৃথিবীর এইটা সত্যি কথা, কিন্তু যে ছেলেগুলো একটা সময়ে এক্সেল রোজ, স্ল্যাশ, জন পেট্রসি, পল গিলবার্ট, মাইক পর্টনয় সহ বিশ্বের অন্যান্য ব্যান্ড সুপারস্টার দের নিয়ে চিন্তা করত, ভুল বললাম, এরা রীতিমত গবেষণা করত। তারা এখন জ্যামিং করে ছাম্মাক ছাল্লো, শিলা কি জওয়ানি, মুন্নি বদনাম হুয়ি টাইপ হিন্দি গান দিয়ে!! :O :O :O খুব ইচ্ছে হল জানতে এই পরিবর্তনের পেছনে কি কাজ করছে। প্রশ্ন করে উত্তর পেলাম এরকম। আমি তাদের ভাষায় লিখছি - ## উত্তরদাতা ১ - তুহিন ভাই, ৬/৭ বছর ধরে চেষ্টা করেছি নিজেদের গান নিয়ে কাজ করতে কিন্তু সম্ভব হয়নি। আমরা ফেমাস কোন ব্যান্ড না, তাই আমাদের পেছনে কেও টাকা ইনভেস্ট করতে রাজি না। তাই ঐসব স্বপ্ন ঝেড়ে মুছে ফেলে দিয়েছি মন থেকে। ## উত্তরদাতা ২ - এখন চট্টগ্রাম শহরে কনসার্টের পরিমান খুব কমে গিয়েছে। তখন রুটস, সফট টাচ, স্পার্ক, রাস সহ আরও অনেক ব্যান্ড রেগুলার কনসার্ট করত এবং অনেক ভালো ইংরেজি গান সহ নিজেদের কম্পোজ করা বাংলা গান উপহার দিত। কিন্তু এখন এই ধরনের কনসার্ট খুব কম হয়। ## উত্তরদাতা ৩ - ভাই চট্টগ্রামের শ্রোতারা এখন শুধু হিন্দি গান শুনতে চায়। যার কারনে ফিমেইল সলো আর্টিস্টদের কদর বেড়ে গেছে। যারা গানের গ বুঝেনা, সুর তাল লয় সম্পর্কে যাদের নুন্যতম কোন ধারনা নেই তারাও এখন চট্টগ্রামের বেশ নামি দামি শিল্পী!! এখন আপনিই বলেন মিউজিক তো আর খালি পেটে করা সম্ভব না। আমি গান করব আমার স্রোতার জন্য, সেই শ্রোতাই যেখানে আমার নিজের গান শুনতে চায়না সেখানে আমার কি করার থাকতে পারে? আমার পেট চালাতে হলে স্রোতার মর্জি মাফিক গান গাইতে হবে, কারন এই স্রোতাই কিন্তু আমাকে টাকা দিবে। অতএব নিজেদের গান বাদ, ইংলিশ গান বাদ। শুধু হিন্দি গান করলেই এখন পেটের দায় মেটানো যায়। আমি অনেকক্ষণ চুপ করেছিলাম। এরপর সোজা তাদের প্র্যাকটিস প্যাড থেকে বের হয়ে চলে এলাম। বলার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখন। এই যদি হয় আমাদের দেশের শ্রোতাদের অবস্থা, তবে সেদিন আর বেশী দূরে না যখন শিয়াল কুকুরও গান গাইবে আর আমরাও মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে হাত তালি দিতে দিতে বলব মারহাবা মারহাবা। Tuhin Bhattacharjee 8th October 2013 3:03 AM
Posted on: Tue, 08 Oct 2013 19:13:15 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015