চরম বিরক্তিরকর, মেজাজ - TopicsExpress



          

চরম বিরক্তিরকর, মেজাজ খিটখিটেকারী, পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্টকারী, অস্থিরতা বৃদ্ধিকারী, শ্রবণশক্তি বিনষ্টকারী, উচ্চরক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রাসহ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী এক ঘাতকের নাম শব্দ দূষণ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলো বর্তমানে অতিমাত্রায় শব্দ দূষণে আক্রান্ত। রাজধানী শহর ঢাকার এমন কোন নাগরিক হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যে, শব্দ দূষণের শিকার হয়নি। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের হাইড্রোলিক হর্নের আওয়াজ রাজধানীর শব্দ দূষণকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বস্তুত ঢাকা শহরের শব্দ দূষণের জন্য মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও ট্রেনই অধিকাংশ দায়ী। শব্দ দূষণ এমন এক মহামারি আকার ধারণ করেছে যে, মনে হচ্ছে এখান থেকে পরিত্রাণের আর কোন পথ নেই। শব্দ দূষণ রোধের জন্য অনেক আইন আছে কিন্তু এর কোন কার্যকারিতা নেই। শব্দ দূষণ রোধের আইন যেন ‘‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই।’’ এর বাস্তবরূপ। এ রকম একটি নীরব ঘাতকের ব্যাপারে এ দেশের শাসকগোষ্ঠীকে সব সময় নির্লিপ্ত মনে হয়েছে এবং হচ্ছে। কারণ তারা সব সময়ই এয়ার কন্ডিশন গাড়ি হাঁকান। শব্দ দূষণ তাদের স্পর্শ করতে পারে না। শব্দ দূষণের শিকার এ দেশের সাধারণ মানুষ, যাদের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়ে এয়ার কন্ডিশন গাড়িতে ওঠার সুযোগ পান এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করে কালো টাকার মালিক হয়ে আজীবন বিলাসবহুল গাড়িতে ওঠার ব্যবস্থা করেন। আপাত দৃষ্টিতে শব্দ দূষণ রোধ কঠিন মনে হলেও বাস্তবে এত কঠিন নয়। এর জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা, আন্তরিকতা ও এর বাস্তবায়ন। মনে রাখা দরকার, এ দেশে নকল মহামারি রূপ ধারণ করার পর নকল তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এ দেশে পলিথিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করার পর পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এ দেশের রাজধানী থেকে থ্রি হুইলার তুলে দিয়ে পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। সুতরাং এ দেশে শব্দ দূষণ রোধ সম্ভব হবে না- এমন কথা বলা বা শব্দ দূষণ রোধ করতে না পারা অযোগ্যতা বা দায়িত্বহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়। আসলে ‘‘শব্দ’’ পরিবেশের কোন খারাপ উপাদান নয়। বরং শব্দ আমাদের জীবনযানপনের জন্য এক অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু শব্দ দূষণ পরিবেশের এক চরম বিরক্তিরকর উপাদান। জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি এই শব্দ দূষণ। ইন্ডিয়ার বিখ্যাত পরিবেশ বিজ্ঞানী N. Manivasakam-এর ‘‘ভৌত পরিবেশে (বিশেষত বায়ু মাধ্যমে) শ্রুতিসীমা বা সহনক্ষমতা বহির্ভূত অপেক্ষাকৃত উচ্চ-তীব্রতা বা তীক্ষ্ণতা সম্পন্ন শব্দের (বিশেষ করে সুরবর্জিত শব্দ বা নয়েজ) উপস্থিতিতে জীব-পরিবেশ তথা মানুষের উপর যে অসংশোধনযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়, সেই পরিবেশ সংক্রান্ত ঘটনাকে শব্দ দূষণ বলে’’ অন্যভাবেও বলা যায় যেমন, বজ্রপাত অথবা মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে যে বিকট শব্দ; যা সাধারণভাবে মানুষের শ্রবণসহন ক্ষমতার বাইরে ও মানুষের শ্রবণ শক্তির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং মানুষের মস্তিষ্ক ও দেহে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে তাকে শব্দ দূষণ বলে। বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে শব্দ দূষণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ডিজেল ও পেট্রোলচালিত ইঞ্জিন যেমন বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পু ইত্যাদির হাইড্রোলিক হর্ন (৬০-৯০ ডেসিবল)। রেলগাড়ির হুইসেল (৯০-১১০ ডেসিবল), পটকা, বাজি (৯০-১২০ ডেসিবল), ডিজেল চালিত জেনারেটর (৮০ ডেসিবল), ঝগড়া বিবাদে পারস্পরিক উচ্চ স্বরে কথা বলার সময় (পুরুষের ১২০ হার্জ এবং নারীর ২৫০ হার্জ), মিছিল, মিটিং এ স্লোগান, লাউড স্পিকার ও মাইকের মাধ্যমে (১১০ ডেসিবল), (ঢোল ১০০ ডেসিবল), নিউজ পেপার প্রেস (১০০ ডেসিবল), টেক্সটাইলঃ, পাওয়ার লুম এবং চাবি পাঞ্চিং মেশিন (৮০ ডেসিবল), রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেট প্লেয়ার (৪৫-৮০ ডেসিবল), জেড বিমান ও সুপারসনিক বিমান (১৪০ ডেসিবল), বিভিন্ন নির্মাণ কাজে (৬০-৮০ ডেসিবল), জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সময় Vac U Vator-এর শব্দ, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার (৯০-১০০ ডেসিবল), লঞ্চ, ফেরি, স্টিমারের ভেঁপু (৮০ ডেসিবল), হোটেল, বার কাউন্সিল, বাজার, খেলাধুলার মাঠ, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ইত্যাদিতেও অযাচিতভাবে শব্দ দূষণ হয়ে থাকে। বাহ্যিকভাবে শব্দ দূষণ তেমন কোন ক্ষতিকর মনে না হলেও এটি মানুষের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। শব্দ দূষণ এক নীরব ঘাতক। এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের শতকরা ১০০ % লোক শব্দ দূষণের শিকার। ‘‘পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপ অনুসারে সহনীয় মাত্রার চাইতে বেশি শব্দ মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ ঘটায়। যে কোনও স্থানে আধাঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে মাইকে ১০০ মাত্রার শব্দ দূষণের মধ্যে কাউকে থাকতে হলে তাকে সাময়িক বধিরতার শিকার হতে হবে। দীর্ঘদিন উচ্চ শব্দের মধ্যে কাজ করলে যে কেউ বধির হয়ে যেতে পারে। যে কোনও ধরনের শব্দ দূষণ সন্তানসম্ভবা মায়ের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ। পরীক্ষায় দেখা গেছে লস এঞ্জেল্স, হিথ্রো এবং ওসাকার মতো বড় বিমানবন্দরের নিকটবর্তী বসবাসকারী গর্ভবতী মায়েরা অন্য জায়গার চাইতে বেশি সংখ্যক পঙ্গু, প্রতিবন্ধী ও অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেয়।’’ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. সোলায়মান খান বলেন, ক্রমাগত শব্দ দূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে তখন সে স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতি দেখা দেয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুসের কারোনারি হার্ট ডিজিজ হতে পারে। পরিবেশ গবেষক কাজী হেদায়েতুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘শব্দ দূষণের ফলে, মানসিক ও শারীরিক বিপত্তি ঘটে থাকে। রক্তচাপ ও স্বাভাবিক হৃদ-কম্পন ব্যাহত হয়। শ্রবণশক্তি কমে যায়। বধির হবার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। কণ্ঠনালির প্রদাহ, আলসার, মস্তিষ্কের রোগ হতে পারে। সাময়িক রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। হাসপাতালসমূহের রিপোর্ট অনুসারে আগত রোগীদের মধ্যে শতকরা ৫-৭ ভাগই অতিমাত্রার শব্দের ভুক্তভোগী এবং স্থায়ী বধিরতায় আক্রান্ত।’’ বর্তমানে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইন্ডিয়ান মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারগুলোর হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। ইদানীং হাসপাতালগুলোতে নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে রোগীর আধিক্য দেখা যায়। এর মূল কারণ শব্দ দূষণ। পরিবেশবিদ ড. এফ এম মনিরুজ্জামানের মতে, ৫০ ভাগ রোগের উৎস শব্দ থেকে হয়। শব্দ দূষণ রোধের জন্য আমাদের দেশে আইনের কমতি নেই। কমতি রয়েছে প্রয়োগের। ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সংস্থা (বেলা) শব্দদূষণ বন্ধে আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। ২০০২ সালের ২৭ মার্চ উচ্চ আদালত হাইড্রোলিক হর্ন এবং বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী যে কোন ধরনের হর্ন গাড়িতে সংযোজনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং গাড়িতে বাল্ব হর্ন সংযোজনের নির্দেশ প্রদান করে। এই আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানও প্রচলিত আছে। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর ২৫, ২৭, ২৮ ধারামতে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদন্ড ও কারাদন্ড উভয়েরই বিধান রয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৩৯ এবং ১৪০ নং ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে। ১৯৯৭ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নীরব এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল এবং রাতে ৪০ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ডেসিবল ও রাতে ৫০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ডেসিবল ও রাতে ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবলের মধ্যে শব্দের মাত্রা থাকা বাঞ্ছনীয়। এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১শ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। শব্দদূষণ রোধ করার জন্য সরকার হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এরপরও শব্দদূষণ কমছে না বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে যানজট সমস্যার পাশাপাশি শব্দদূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা। আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ না থাকার কারণে দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এ জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। চরম বিরক্তিকর, অসহ্য, অসহনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং হঠাৎ মেজাজ খিটখিটে করে পরিবেশ নষ্ট করার অন্যতম মাধ্যম হলো শব্দ। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের শহরগুলোতে গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন, গ্রামের হাটবাজারে হকারদের মাইক ও ক্যাসেট প্লেয়ার, টি স্টলগুলোতে উচ্চস্বরে টেলিভিশন, বিয়ে বাড়িতে মাইক ও ব্যান্ড পার্টি, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে মাইক ও মিছিলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ করা হয় যা শুধু কষ্টকরই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে সহ্যসীমা অতিক্রম করে যায়। হাঁসপাতালের ৫-৭ ভাগ রোগীই অতিমাত্রায় শব্দের ভুক্তভোগী এবং স্থায়ী বধিরতায় আক্রান্ত।’’ তাহলে এটা কি জুলুম নয়? এটা কি একজন ভাইকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া নয়? অথচ মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংস কর না। শব্দ দূষণের মাধ্যমে কি অসংখ্য মানুষকে শ্রবণশক্তির মত একটি বড় নিয়ামত থেকে আজীবনের জন্য বঞ্চিত করা হচ্ছে না? এর মাধ্যমে কি সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকাত এর মস্তিষ্কের বিকৃতি হচ্ছে না? একজন মানুষের উপর এর চেয়ে জুলুম আর কি হতে পারে? একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, তা হলো, যারা দূষণকারী তারাও কিন্তু দূষণের শিকার। অর্থাৎ, আমরা সবাই শব্দ দূষণের শিকার। আল্লাহর রাসূল (স.) শব্দদূষণের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- হযরত আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স.) মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় ছিলেন, তখন সাহাবীদের উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ শুনতে পেলেন। অতঃপর তিনি পর্দা সরিয়ে বললেন-নিশ্চয়ই তোমরা প্রত্যেকে আল্লাহর পরিবেশে শামিল। সুতরাং একে অপরকে কষ্ট দিবে না এবং কুরআন পাঠের সময় অথবা নামায পড়াকালীন একে অপর থেকে স্বরকে উঁচু করবে না। কালামে হাকীমে আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাক কাকুতি-মিনতি করে এবং অতি সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না’’। ‘‘উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.)-এর অবস্থা ছিল এরূপ যে, মসজিদে নববীর আশপাশে কোন বাড়ির দেয়ালে পেরেক বা এ জাতীয় কিছু পোতার সময় আওয়াজ নবী (সঃ) এর হুজরা পর্যন্ত পৌঁছত, তখন সঙ্গে সঙ্গে তিনি কাউকে বলে পাঠাতেন যে, এভাবে পেরেক পোতার আওয়াজ দ্বারা রাসূল (স.)কে যেন কষ্ট দেয়া না হয়।’’ ‘‘হযরত আলী (রা.) একদিন নিজের ঘরের কপাট বানাতে শুরু করেন। তাকে হুকুম করা হয়েছিল যে, মদীনার বাইরে গিয়ে যেন কপাট তৈরি করা হয়। কপাট তৈরির আওয়াজ যেন মসজিদে নববীতে না আসে এবং এ আওয়াজের কারণে রাসূল (স.)-এর যেন কষ্ট না হয়’’। উল্লিখিত আলোচনার মাধ্যমে এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হলো যে, শব্দদূষণ ইসলামে নিষিদ্ধ। এটা মানবতা বিরোধী, গর্হিত, সর্বজন পরিত্যাজ্য। শব্দদূষণরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নে ইসলামে মৌলিক সমর্থন রয়েছে। এমনকি কারো যানবাহনের তীব্র শব্দের মাধ্যমে কারো শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেললে সে যথারীতি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে এবং ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে। একজন নিরপরাধ ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবে আর একজন গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে তাঁর শ্রবণশক্তি নষ্ট করে দিবে এর জন্য তার কোন শাস্তি হবে না এটা হতে পারে না। বিনা অপরাধে একজন ব্যক্তি যদি অপর কোন ব্যক্তির কোন অঙ্গের ক্ষতি করে তাহলে অনুরূপভাবে তাকেও সে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। মহান আল্লাহ কালামে হাকীমে ইরশাদ করেছেন, আমি এতে তাদের জন্য বিধান দিয়েছিলাম, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম। তবে যদি কেউ ক্ষমা করে তবে তারই পাপ মোচন হবে। আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না তারা জালেম। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নযর (গোত্রের এক কন্যা একটি বালিকাকে চপেটাঘাত করলে বালিকাটির সম্মুখস্থ দাঁত ভেঙ্গে যায়। তারা (বালিকাটির নিকটাত্মীয়রা) নবী করীম (স.)-এর খেদমতে আসল এবং নবী (স.) কিসাসের নির্দেশ দিলেন। উল্লিখিত আয়াত ও হাদীসের বিধান অনুযায়ী কোন ব্যক্তি কারো শ্রবণশক্তি নষ্ট করলে তার পরিবর্তে নষ্টকারীর শ্রবণশক্তি নষ্ট করে দেয়ার অধিকার রাখে। এছাড়া যে সব শব্দদূষণে মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয় না কিন্তু অন্য ক্ষতি হয় সে সবেরও ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিধিবদ্ধ আইন রচনায় ইসলামের সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশে শব্দ দূষণের এই মারাত্মক অবস্থা রোধ করার জন্য বিধিবদ্ধ আইন রচনা এবং কঠোর হস্তে তা প্রয়োগ সময়ের দাবি। আমাদের দেশে যে সব যানবাহন প্রচলিত আছে তার প্রত্যেকটি সরকারের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া রাস্তায় নামতে পারে না। সরকার এ সব যানবাহন অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রকমের ফি আরোপ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যদি সরকার একটি পদক্ষেপ নেয় তাহলে শব্দ দূষণরোধ অতি সহজ হবে। তাহলো, বিআরটিএ যখন একটি গাড়ির অনুমোদন দেয়, তখন গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন খুলে রেখে বিআরটিএ অনুমোদিত নির্ধারিত হর্ন লাগিয়ে দিবে। গাড়ি আমদানির সময় এসব হর্ন আমদানি নিষেধ করে দিবে। যারা নিষেধ শুনবে না তাদেরটি খুলে নির্ধারিত হর্ন লাগিয়ে দিবে। কোন গাড়ির জন্য কেমন মাত্রায় হর্ন ব্যবহার করা হবে তা বিশেষজ্ঞ দ্বারা বিআরটিএ নির্ধারণ করবে। এসব হর্ন দেশী কোন কোম্পানি দ্বারা তৈরি করবে। যদি তৈরি করতে না পারে তাহলে ঐ মাত্রার হর্ন বিআরটিএ আমদানি করে সরবরাহ করবে। মোট কথা, যে কোন গাড়িতে হর্ন লাগানোর দায়িত্ব বিআরটিএর একচ্ছত্র অধিকারে থাকবে। আর কোন ব্যক্তি বা কোম্পানী কোন অবস্থাতেই হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি করতে পারবে না। যদি কেউ বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদিত হর্ন ছাড়া অন্য কোন হর্ন ব্যবহার করে তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণে দায়িত্বরত পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিচারও করা যেতে পারে। এ আইন কার্যকর করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। ৬ (ছয়) মাসব্যাপী একটি প্ল্যান হাতে নিয়ে এটা কার্যকর করা যেতে পারে। প্রথমে বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদিত হর্ন বাজারজাত করতে হবে। গাড়ির মালিকদের এ হর্ন লাগানো বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং একটি সময় বেঁধে দিতে হবে। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা লাগাবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে। আবার যারা বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদিত হর্ন সরবরাহ করার পরও অন্য হর্ন লাগাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। Traffic Induced Noise Pollution in Dhaka City!! Excessive noise has become one of the major concerns of urban life. Although urbanization, industrialization and motorization are essential for economic development, urban people always long for calm and quiet rural life. For the physical and mental health of the urban people, particularly of the children, it is imperative for the decision makers, leaders, planners and engineers to keep the noise level within the acceptable limits. Dhaka, the capital of Bangladesh, is one of the noisiest cities in the world. Despite low level of industrialization and motorization, the average level of noise remains far above the acceptable limits in most of the time. With economic development, the situation is expected to worsen further. Motor vehicle is the principal source of noise pollution in the city. This paper illustrates the level of noise pollution in Dhaka City. The noise level was measured at thirty-seven locations of the city. It is observed that the average level of noise at roadside exceeds the allowable limit by twenty percent at all the locations and at sensitive locations like hospital, schools and parks, the figure is much higher than the acceptable level for those sensitive areas. The level of noise pollution is closely related with traffic volume, particularly with the number of heavy vehicles like trucks and buses as well as auto-rickshaw. Other factors influencing noise pollution include improper maintenance of the vehicles, bad road surface condition, use of high pitch horns and frequent usage of horns. In the paper, several measures are proposed to reduce the level of noise pollution in the city which include increase of public consciousness through education, implementation of monitoring system and construction of noise barriers.
Posted on: Sun, 21 Sep 2014 17:52:41 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015