তরুণ প্রজন্মের কাছে - TopicsExpress



          

তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রার্থনা - মুহম্মদ জাফর ইকবাল খুব সহজে আমার মন খারাপ হয়না কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে আমার খুব মন খারাপ। যারা এক নজর পত্রিকার দিকে তাকাবে কিংবা টেলিভিশনে খবর শুনবে তাদেরও মন খারাপ হয়ে যাবে। শুধু মাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে এই দেশে মানুষের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভয়ে আতংকে জীবন বাঁচানোর জন্য এই মানুষগুলো নিজেদের বাড়ীঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। বাড়ীর মেয়েদের বাড়ী থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। ১৯৭১ সালে হিন্দু মুসলমান সবাই আক্রান্ত হয়েছিলো। মুসলমান বলে কখনো কখনো মানুষ বেঁচে গিয়েছে কিন্তু হিন্দু হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত থেকে কেউ কখনো প্রানে বেঁচে ফিরে আসেনি। ১৯৭১ সালে আমরা গ্রামে লুকিয়ে আছি তখন দেখেছি একজন হিন্দু মা তার শিশু সন্তানকে বুকে চেপে ধরে স্বামীর পিছু পিছু ছুটে যাচ্ছে, তাদের চোখ মুখের সেই উদভ্রান্ত অসহায় দৃষ্টি আমি কখনো ভুলতে পারবোনা। তেতাল্লিশ বছর পর এই বাংলাদেশে এখনো একজন অসহায় হিন্দু মা তার সন্তানকে বুকে চেপে প্রান বাঁচানোর জন্য ছুটে যাছে। এর মানে যে দেশকে নিয়ে আমরা এতো গর্ব করি সেই দেশটি আসলে তেতাল্লিশ বছরে এক ইঞ্চিও সামনে অগ্রসর হয়নি। এর চাইতে বড় দুঃখ লজ্জা আর অপমান কী হতে পারে? আমি মাঝে মাঝে কল্পনা করি আমি যদি এই দেশে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হতাম তাহলে আমার কেমন লাগতো। আমি জানি গভীর হতাশায় আমার বুক ভেঙে যেতো, আমি কোনো দোষ করিনি কিন্ত শুধুমাত্র একটি হিন্দু পরিবারে জন্ম নিয়েছি বলে আমার উপর যে নৃশংস অত্যাচার করা হচ্ছে তার জন্য আমার বুকে যেটুকু ক্ষোভ জন্ম নিতো তার চাইতে শতগুন বেশি অভিমান হতো আমার চারপাশের নির্লিপ্ত মানুষজনকে দেখে। কেউ কোনো কথা বলছেনা, নীরবে এক ধরনে করুণা নিয়ে আমাকে দেখছে। সম্ভবত সবচেয়ে বেশী ক্ষোভ হতো রাজনৈতিক দলগুলোর উপর, প্রতিবার নির্বাচনের পর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় হবার পর, রায় কার্যকর হবার পর আমাদের উপর হামলা করা হবে। বি.এন.পি হামলা করবে আওয়ামীলীগ বা বামদলগুলো সেটা ঘটতে দেবে। খুব বেশি হলে নিরাপদ দূরত্ব থেকে প্রতিবাদ করবে কিন্তু আসলে কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে আসবেনা। এই দেশে আমি যদি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হতাম তাহলে নিশ্চয়ই আমার বারবার মনে হত আমি এই দেশের মানুষ কিন্তু এই দেশটি আমাকে রক্ষা করছেনা। আমি নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিযোগ করে বলতাম তুমি আমাকে এমন একটি দেশে জন্ম দিয়েছ যেই দেশ আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেয়না? সেই দেশে প্রতি মুহূর্তে আমাকে আতংকে থাকতে হয়? কিন্তু আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী না, তাই প্রকৃতপক্ষে তাদের বুকের ভেতর গভীর দুঃখ ক্ষোভ হতাশা আর অভিমান পুঞ্জীভূত হয়ে আছে আমি সেটা কোনদিন অনুভব করতে পারবোনা। আমাদের প্রিয় দেশটি নিয়ে আমাদের কত কল্পনা, কতো স্বপ্ন। আমরা আশা করে আছি আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে, জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে যাবে একদিন দেশটা মাথাতুলে দাঁড়াবে। আমরা এর মাঝে সেগুলো এদেশে শুরু হতে দেখেছি, কিন্ত এই মুহূর্তে আমার কাছে সবকিছু অর্থহীন বলে মনে হচ্ছে। যদি আমরা একজন মানুষকে শুধুমাত্র ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার জন্য এই দেশে তাকে নিরাপত্তা দিতে না পারি তাহলে এই দেশটি কাদের জন্য? আমার মনে হয় এই দেশ নিয়ে আমাদের যত কল্পনা, যত স্বপ্ন, যত পরিকল্পনা সবকিছুকে পেছনে সরিয়ে সবার আগে আমাদের এখন একটি মাত্র লক্ষ্যকে টেনে নিয়ে আসতে হবে। সেই লক্ষ্যটি হচ্ছে এই দেশে একটি হিন্দু শিশু যেন নিশ্চিন্ত নিরাপত্তায় তার মায়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারে। গভীর রাতে ধর্মান্ধ মানুষের চিৎকারে তাদের যেন জেগে উঠতে না হয়, আগুনের লেলিহান শিখায় আপনজনের আতংকিত মুখ দেখতে না হয়। একজন হিন্দু কিশোরীকে যেন তার বাবার রক্তশূন্য মুখের দিকে তাকিয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে যেন বলতে না হয়, “এখন কি হবে বাবা?” আমরা পদ্মা সেতু চাইনা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাইনা, যানযটমুক্ত বাংলাদেশ চাইনা, শতকরা একশোভাগ নিরক্ষর চাইনা, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশা চাইনা, শুধুমাত্র হিন্দু এবং অন্য সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা চাই যেন তারাও ঠিক আমাদেরমতো এই দেশটিকে তাদের নিজেদের ভালোবাসার দেশ বলে ভাবতে পারে। তীব্র অভিমানে তাদের বুক ভেঙে যেন আর কোনদিন খান খান হয়ে না যায়। আমি কার কাছে এটি চাইবো জানি না, তাই তরুন প্রজন্মের কাছে চাইছি। তোমরা আমাদেরকে একটি নূতন বাংলাদেশ উপহার দাও । যে বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প চিরদিনের জন্যে মুছে দেয়া হবে। আমি জানি তোমরা পারবে। Muhammed Zafar Iqbal
Posted on: Sat, 11 Jan 2014 20:54:05 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015