পাখির বাসা ভালবাসা January 30, - TopicsExpress



          

পাখির বাসা ভালবাসা January 30, 2013 at 8:28am পায়রা : ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে আমি কিছুক্ষন এদিক ওদিক অনর্থক ঘুরাঘুরি করলাম ।নাহ নীড় কে কোথাও পেলাম না , বেকুব টা কোথায় যে ডুব দেয় বোঝা মুশকিল ।নীড় আমার বন্ধু , না বন্ধু বলে মজা পাচ্ছি না , ও আমার দোস্ত । ওকে ছাড়া আমার এক মুহূর্তও চলে না । পড়াশুনা থেকে শুরু করে মুভি দেখা , সবকিছুতেই নীড়ের সরব উপস্থিতি না হলে আমার চলেই না ।আমার ক্লাস শেষে ওর আসার কথা ছিল । এখনও মনে হয় আসেনি । ঠিক আছে, ভালই হল,আজকে আমার হাত থেকে ওর চুল ছিঁড়া কেউ আটকাতে পারবেনা । আমি আরেকটু হাঁটাহাঁটি করতে লাগলাম । পেয়ারা বেগম কি করিস ? , নীড়ের গলা শুনে পিছনে তাকালাম । পেয়ারা বেগম নাম টা শুনলে আমার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত রাগে জলে উঠে, আমি মুহূর্তেই তেলে বেগুনে জ্বলে গেলাম । দাঁত খিঁচিয়ে বললাম , who is your পেয়ারা বেগম? নীড় দাত কেলিয়ে হেসে বলল , নিজের নাম ভুইলা গেসস নাকি ? দুঃখজনক রে আমি নীড়ের চুল টানতে টানতে বললাম , আমার নাম পায়রা , পেয়ারা নাআআআ নীড় আমার হাত থেকে কোনরকমে নিজেকে বাঁচিয়ে নিরাপদ দুরত্তে সরে গিয়ে বলল , তোর মত ডাকাইত মাইয়ার নাম হওয়া লাগত ঘষেটি বেগম । আমি তোর বাপ হইলে......... নীড় কথা শেষ করতে পারল না । আশপাশের সাদা চামড়ার মানুষ গুলি দেখল , নীড় দৌড়াচ্ছে এবং আমি ধাওয়া দিচ্ছি । এটা খুবি পরিচিত ঘটনা । আমরা নিউইয়র্ক থাকি । আমি , আমার বাবা মা আর বড় ভাইয়ের সাথে থাকি ।নীড় ওর বাবার সাথে থাকছে , broken family ওর ।আমার সাথে ওর পরিচয় হওয়ার কারন , আমরা একি এলাকায় থাকি । নীড় দৌড়ে কুলাতে না পেরে বলল , আর ফাল দিতে পারবনা , তুই পিটাইলে পিটা । আমি ঘুসি দেখিয়ে বললাম , আর ডাকবি ওই নামে ? নীড় জোরে জোরে মাথা নাড়াল , যা আর বলবনা । আমি ছেঁড়ে দিলাম , যা বাইচা গেলি । নীড়ের সাথে আমি যখন কফিশপে এসে বসলাম তখন পড়ন্ত বিকেল । কফিশপটার নাম antora , নামটা প্রথমদিন বাঙ্গালি ঠেকছিল । কদিন বাদে সন্দেহ দূর হয় আমার, কফিশপটির মালিক অন্তরা নামের এক বাঙালি ভদ্রমহিলা । আমি আর নীড় আগে প্রচণ্ড কফি নিতাম , এখন অবশ্য চা প্রীতি বেড়েছে , এই কফিশপ টাতে খুব ভালচা ও পাওয়া যায় । নীড় : আমি কফিতে একটু চুমুক দিয়ে পায়রার দিকে তাকালাম । পায়রাকে আজকে একদম গোলাপি পায়রার মত লাগছে । পায়রার সবকিছুই অবশ্য সুন্দর । ওর মন , ওর সারল্য , হাসি , চোখ ,এলোমেলো চুল এমনকি ওর নামটাও । ওর নামটা আমার ভীষণ প্রিয় , সেটা অবশ্য কোনদিনই বুঝতে দেইনি ওকে । পায়রা বিলাস নামটা শুনলে প্রথমে মনে হবে কোন বড়লোকের সৌখিন বাড়ির আদুরে নাম , কিন্তু না বস , ধারনাটি ভুল , এটা আমার পেয়ারা বেগমের নাম , আ আ আমার ? কি যে ভাবি ! আমি কফিতে দ্বিতীয় চুমুক দিতে দিতে দেখলাম পায়রা তার স্বভাব অনুযায়ী ডানে বামে আশেপাশে তাকাচ্ছে । এটা ও সবখানে গেলেই করে , আমি অন্তত তাই দেখেছি ।তাকানো ব্যাপারটিতে কোন সমস্যা নেই , কিন্তু ওর দৃষ্টিতে শুধুই তাকানো না ,আমার কেন জানি মনে হয় ও কাউকে খুঁজছে । ও আমাকে জানের দোস্ত মানলেও কখনও এই ব্যাপারে কিছু বলেনা । পায়রা হু বল তোর সমস্যাটা কি ? পায়রা চোখ কপালে তুলে বলল , আমার সমস্যা আবার কি ? আমি একটা ফিচলা হাসি দিয়ে বললাম , সেটাই তো জানতে চাইছি । পায়রা চেচিয়ে বলল , তুই আমার সাথে ত্যাঁদড়ামি করস ?আমার সমস্যা আছে ? আমি ঘোর কাটিয়ে বললাম , তাইলে প্লিজ বল তুই কোথাও গেলে এমন ডাইনে বামে কি দেখস ? পায়রার চেহারা মুহূর্তেই চেঞ্জ হয়ে গেল । রাগ রাগ ভাব উবে গিয়ে তার মুখহাসি হাসি হয়ে গেল । কিছু না... কই কিছু দেখিনাত আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম , মিথ্যা বলিস না , না বলতে চাইলে বলিস ই না , তাও মিথ্যা না ,ok ? পায়রা হেসে বলল , আসলে দেখি আরকি আশেপাশে বাঙালি আছে নাকি বাঙালি ? হুম দেশের মানুষজন আমি বুঝলাম ও বলতে চাইছেনা , লুকাচ্ছে । তাও বললাম , আমি হতাশ । ক্যান ? তোর সামনে মেডিকেলে পড়া এমন হ্যান্ডসাম বাঙালি যুবক বইসা আছে , তুই তারে দেখলি না উলটা আর ও বাঙালি খুজস ? পায়রা চোখ পাকিয়ে বলল , অই ফাইজলামি করবিনা একদম ! ধইরা নাইড়া কইরা দিব একেবারে ! আমি হেসে মাথার চুলে হাত বুলালাম । গর্ব করবনা কিন্তু আমি জানি আমার চুলগুলা খুব সুন্দর এবং এজন্যে পায়রা অনেক জেলাস । তার মতামত হল ছেলেদের মাথায় এত সুন্দর চুলের কোনই দরকার নেই । আর তাই মাঝেমাঝেই সে আমার মাথা ন্যাড়া করার ইচ্ছা পোষণ করে । মাথা ন্যাড়া করে দিতে চাইলে সাধারনত আমি কিছু বলিনা , কিন্তু আজকে মুখ ফসকে গেল । তুই ন্যাড়া করে দিবি ? তুই নাপিতের বউ কবে হইলি ? দাওয়াত দিলি না ! দুঃখ পাইলাম । ধইরা একটা আছাড় মারলেই দাওয়াত হবে ! আমি হাসতে লাগলাম । পায়রাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি বাসায় আসলাম । না, আব্বু এখন ও বাসায় আসেনি।এক মগ গরম চকলেট ড্রিঙ্ক খেতে খেতে আমি পায়রার কথা ভাবতে লাগলাম ।মেয়েটা নিজের ভিতর কি যেন একটা লুকিয়ে রাখছে । কি সেটা ? ওকে এতদিনেও বুঝতে পারিনি আমি , আজ ই বা কিভাবে বুঝব ! দুদিন পর ---- পায়রাকে দাড় করিয়ে রেখে আইস্ক্রিম কিনতে এসেছি । এই মেয়েটা একদম বাচ্চাদের মতন , আইস্ক্রিমের কথা শুনলেই পাগলের মত খুশি হয় । রাস্তার এপাশ থেকে দেখছি ওকে । সেই একি অভ্যাস , কি যেন অথবা কাকে যেন খুঁজছে ও । মাঝেমাঝে রাগ হয় ওর উপর , কি হয় আমাকে বললে সবকিছু ? ওর ভিতরের অস্থিরতা দেখলে আমি ও যে অস্থির হয়ে যাই এই কথাটা ও কি কোনোদিন বুঝবেনা ?আমি রাস্তাটা পার হয়ে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম , ও টের ই পায়নি , খুব রাগ লাগছে । যে কারনে রাগ লাগছে সেই রাগ দেখানোর অধিকার টা তো আমার নেই , রাগটা তাই হজম করলাম। আইস্ক্রিম টা ধর । গলে যাইতেসে । ওহ এসে গেসিস সেটা কি আর ম্যাডাম টের পাবেন নাকি পায়রা একটু লজ্জা পেয়ে গেল । আমি দেখেছি , যখনি ও এই রকম খোঁজাখুঁজির কারনে ধরা খায় , ও খুব লজ্জা পেয়ে যায় । পায়রা অন্য দিকে তাকিয়ে বলল , আমার উপর তুই খুব বিরক্ত তাই না ? হাহ আজকে আমি শ্যাষ ! কি ???? মানে বছরে দুই একটা দিন আপনি মাত্রাতিরিক্ত উদাস থাকেন এবং পেইনফুল কথাবার্তা বলতে থাকেন ! নীড় বল তুই আমার কাছ থেকে যা জানতে চাস সেই কথাগুলি আমি আজকে তোকে বলব ।প্লিজ ফাইজলামি করিস না । আমার হার্টে ড্রাম বাজছে । কোন রকমে বললাম , তুই বল দোস্ত পায়রা শুরু করল , আমি যখন ক্লাস ৮ এ পড়ি তখন থেকে আমাদের স্কুলের একটা ছেলেকে খুব পছন্দ করি । ছেলেটা খুব ভাল স্টুডেন্ট , ক্লাস টেনে পড়ত তখন, নাম সামিন । কখনও মুখে বলা তো দূরে থাক আমার অনুভুতিটা প্রকাশ করার সুযোগ টাও পাইনি । ভয়ে , লজ্জায় ... তারপর এইচ এস সি পাস করে ও দেশ ছাড়ে , আমি তখন টেনে , অনেক চেষ্টায় জানতে পারি ও আমেরিকাতে এসেছে । এস এস সি পাস করে আমি ও এখানে চলে আসি , তারপর জানতে পারি সামিন ও নিউইয়র্কে থাকে ... তখন থেকেই ওকে খুজি , জানি পাবোনা তাও আমি অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখে বললাম , ফেইসবুকে ? পুরো নাম তো জানিনা রে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম , পায়রা কে আর কষ্ট পেতে দিবনা । আমি যেহেতু এখন থেকে জানি ,আমিও খুঁজব , তুই চিন্তা করিস না পায়রা ,ঠিক পেয়ে যাবি তোর সামিন কে , তুই দেখিস আমি বললাম তো ওকে খুঁজে এনে দেব কোথায় গিয়ে খুজবি ? যেখান থেকে পারি পায়রা খুশি হয়ে বলল , সত্যি পারবি নীড় ? তোর জন্যে সব পারব এটুক বলেই জিভ কাটলাম । কেন যে বললাম , ছি ছি ছি । পায়রার মুড মনে হয় ফিরে এসেছে , ও চোখ নাচিয়ে বলল , কি কি পারিস রে ? এইতো, যেমন ধর মশা মারতে , মাছি ধরতে , তেলাপোকা তোর গায়ে ছেড়ে দিতে ...... অসভ্য , হারামি , চুপ কর । বজ্জাত ! হাহাহা , হাসতে খুউব কষ্ট , এত কষ্ট কেন ? পায়রা : বাসায় আমি একা , টিভিতে স্পাইডারম্যান মুভি দেখছি আর বসে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছি , সাথে খুব সুন্দর একটা কাঁচামরিচ । কাঁচামরিচ টা কামড়ে কামড়ে খাচ্ছি , জানি একটু পর কি ঘটবে , আমার এসিডিটি উঠবে , আমি একা একা হাহুতাশ করব , ওষুধ খাব এবং কয়দিন পর সব ভুলে গিয়ে আবার দেখা যাবে আমি মুভি দেখতে দেখতে কাঁচামরিচে কামড় লাগাচ্ছি ! আমি কাঁচামরিচে শেষ কামড়টা দেয়ার পর কলিং বেল বাজল । আমি দরজা খুলে দেখলাম , নীড় । ওকে খেপিয়ে বললাম , ফোন ডেড ? নীড় মুখ কাঁচুমাচু করে বলল , জরুরি দরকারে আসছি , ঢুকতে দে আমি ওকে ঢুকতে দিয়ে বললাম , টয়লেট ওইদিকে নীড় চোখ গোল গোল করে বলল , টয়লেট মানে ? বললি না জরুরি দরকার ? ধুর খালি দুষ্টামি ওকে বল কি কাজ ? আমি যে লাইব্রেরিতে কাজ করি , কালকে সেখানে ডিউটি আছে বাট আমি আব্বুর সাথে একটু ব্যাস্ত থাকব, তুই কালকে আমার জায়গায় প্রক্সি দিতে পারবি ? ক্যান তোকে ছুটি দেয় না ? মালিক টা ক্যাচক্যাচ করে ছুটি নিলে কি কাজ করস লাইব্রেরিতে ? তেমন কিছুনা , বই সবার কাছ থেকে নিয়ে জায়গামত রাখা , বই খুঁজে দেয়া , বইএর ধুলা ঝারা এইসব হাবিজাবি কাজ আর কি । চিন্তা করলাম , ওর এই উপকারটা আমার করা উচিত , ও আমাকে সবসময় অনেকভাবে সাহায্য করে ।বই দেয়া , এসাইনমেন্টে হেল্প করা , নিউ মুভির ডিভিডি ম্যানেজ করে দেয়া , আরো কত কিছু । সিদ্ধান্ত নিলাম , ওকে হেল্প করব । ওককে নীড় তুই আড্ড্রেস রেখে যা আমি প্রক্সি দিয়ে দিব । তোর মালিককে বলে রাখিস । নীড় সবগুলা দাঁত বের করে অ্যাড্রেস লিখে ফ্রিজ থেকে বিনা অনুমতিতে আপেল বের করে খেতে খেতে ওর বাসায় চলে গেল । আলফাবিট লাইব্রেরি , একটু আগে আব্বু নামিয়ে দিয়ে গেছে । লাইব্রেরির মালিকটা আসলেই বেশি ক্যাচক্যাচ করে । আমাকে এমনভাবে কাজ বুঝাতে লাগল যেন আমি কচি খুকি । আমি কিছু বই নিয়ে গুছাচ্ছি , হঠাত পেছন থেকে excuse me শুনে ফিরে তাকালাম ।তাকিয়ে আমি মোটামুটি একটা টাশকি খেলাম । আসলে আমি মনে হয় পাগল হয়ে গেছি নয়ত এখানে সামিন কে কেন দেখছি ?একবার চোখ বন্ধ করে আবার তাকালাম , আচ্ছা এটা কি সত্যিই সামিন ? ছেলেটাহেসে বলল , পায়রা ? me right ? আমি কিছুই বলতে পারলাম না । সে ই আবার বলল , আমরা একি স্কুলে পড়তাম ? চিনেছ আমাকে ? একসাথে ড্রইং শিখতাম , আমি সামিন আমি তোতলাতে তোতলাতে খুব কষ্টে বলতে পারলাম , চিনেছি ভাইয়া কিন্তু তুমি এখানে ? জব কর ? আগে তো দেখিনাই আমার এক বন্ধুর জায়গাতে প্রক্সি দিতে এসেছি । ও আচ্ছা , আমি রেগুলার ই আসি এখানে , সবাইকে মোটামুটি চিনি , তোমার বন্ধুর নাম কি ? নীড় , নির্ঝর নীড় ow i see i know him . তার মানে তুমি ওর ফ্রেন্ড । কি করছ ইদানিং , পড়াশোনা ? এখানকার একটা ভারসিটিতে , পদার্থ নিয়ে , আপনি আমি জবে আছি , টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছি । অনিচ্ছা সত্তেও বললাম , সামিন ভাইয়া , ম্যানেজার একটু হার্ড , আমরা পরে কথা বলি ? সামিন বুঝতে পেরে বলল , তোমার কাজ কতখন ? ১২টা ok i will come then , অনেক কথা হবে সামিন চলে গেল । আমার নিজেকে বিশ্বাস হতে কষ্ট লাগল । কি যে খুশি লাগছে !নীড়কে না বলা পর্যন্ত শান্তি পাব না ! নীড় : সোফাতে শুয়ে আছি । আমার প্ল্যান অনুযায়ী সামিনের আজ বই নিতে লাইব্রেরিতে যাওয়ার কথা । ওকে বলেছিলাম ইন্ডিয়ান বইটা আজকে পাওয়া যাবে । পায়রার ও ওখানেই থাকবার কথা । নিশ্চয়ই দেখা হয়েছে ওদের । আমি জানি সামিন আমাকে পছন্দ করে না , আমি ও করিনা অবশ্য । কারন ও আছে , ও কেমন যেন , মেয়ে পটানোর বাজে অভ্যাস ওর আছে । ওর নাম ইশরাক আহমেদ ই জানতাম , যেদিন জানলাম ওর নাম সামিন , খোঁজ নিয়ে দেখলাম ও ই পায়রার সেই সামিন ,আমি হয়ত পায়রাকে বলতে পারতাম যে আমি ই সামিন কে খুঁজে বের করেছি , কিন্তু আমি জানি ও নিজে যদি সামিন কে খুঁজে পায় তাহলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে । আর আমি তো ওকে খুশিই দেখতে চাই । ফোন বাজল । ধরলাম, হ্যালো দোস্ত মনিইইইই , পায়রার গলা , শুনেই বুঝলাম আমি সার্থক । তারপর একে একে সব শুনলাম । পায়রা আজ সামিনের সাথে খেতেও গেছে , ও এতটা আশা করেনি , আমিও না ! কিন্তু ও ভীষণ খুশি । আমি মনে প্রানে দোয়া করতে লাগলাম , সামিনের এই ব্যবহার যেন মেয়ে পটানোর আরেকটি অপকৌশল না হয় !!! ল্যাপ্টপে linkin park এর breaking the habit ফুল ভলিউমে বাজিয়ে শুনছি ।নিজেকে ভাঙছি , গড়ছি , আড়াল করছি । কখনও ভাবি ই নাই এরকম পলান্টিক্স খেলতে হবে আমাকে , নিজের সাথে , পায়রার সাথে । খুবি খারাপ সময় যাচ্ছে ।পায়রার কাছ থেকে ইদানিং দূরে দূরে থাকছি ,ও এখন সামিনের সাথে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করে ,আমি ইচ্ছা করেই দূরে দূরে থাকি , হাজার হোক আমি পায়রার বন্ধু , আমি ওদের মাঝে বাগড়া বাধাতে চাইনা । কিন্তু আমি একটু একটু ভয় পাচ্ছি আর সেটা সামিনকে নিয়ে , ছেলেটার স্বভাব তো মোটেই ভাল না । আমি ওকে দেড় বছর ধরে দেখছি । ও যে আমাকে দেখতে পারেনা তার একটা কারন অবশ্য আছে । কয়েক মাস আগে ------ সামিন ওর মেয়েবন্ধুদের নিয়ে লাইব্রেরিতে আসতো , একেক দিন একেক জন কে নিয়ে । বই পড়ার উদ্দেশ্য না , গল্প করার ঠিক জানিনা , ওকে একদিন সতর্ক করলাম লাইব্রেরিতে আড্ডাবাজি না করতে । খুব খেপে গেল ।ম্যানেজারকে নালিশ করল আমার নামে । এতে অবশ্য লাভ হয়নি , ম্যানেজার লাইব্রেরিতে নিজের স্বভাব না দেখানোর অনুরোধটাই করেছে সামিন কে । তারপর থেকেই ছেলেটা আমাকে পছন্দ করেনা । থোরাই কেয়ার করতাম আমি ! কিন্তু ভাগ্য আমাকে হারিয়ে দিল । এই ছেলেটাই কিনা পায়রার ............ আমার মাথা ঘামানোর কিছুই থাকত না , কিন্তু আমি গত পরশুই সামিন কে আরেকটা মেয়ের সাথে হাত ধরে হাটতে দেখেছি । তখন থেকে শুধু এটাই ভাবছি যেচে গিয়ে পায়রার ক্ষতি করলাম না তো ? আমি না করলে তো সামিন কে পায়রা খুজেই পেত না,সেটাই কি ওর জন্যে ভাল ছিল ? কিছুই ভাবতে পারছি না! really ,life is painful !!! কারও সাথে কথা গুলি শেয়ার করতে না পারলে মরে যাব , আমার সামিনের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত । পায়রা আমাকে খুব ভাল বন্ধু ভাবে ,আমি জানি আমি ওর জানের দোস্ত ই , যেটা ও বলে ,এই সামিনের জন্যে ও যদি কষ্ট পায় আর এটা যদি বুঝতে পারে যে আমি আগে থেকেই সব জানতাম , কখনই আমাকে ক্ষমা করবেনা ও , আমি হলে কি করতাম ?? আর ক্ষমা করা না করা ম্যাটার না ,আমি ওকে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না এইটাই ম্যাটার ! পায়রা : পড়তে বসেছি , কয়দিন পর পরীক্ষা শুরু হবে । এখন পড়াশুনার সাথে একটু সম্পর্ক রাখা উচিত ।ইদানিং নীড়কে খুব মিস করছি , কতদিন ওর সাথে আমার দেখা হয়না । ঠিকমত কথাই বলেনা আমার সাথে , আচ্ছা আমার উপর ও রাগ করেছে ?রাগ কেন করবে ? ও তো আমার সাথে কখনই রাগ করেনা । তাহলে কি আমি ওকে কষ্ট দিয়েছি কোনভাবে ? ও তো আমার সাথে দেখাই করেনা আমি আবার ওকে কষ্ট কেমন করে দিলাম ! ওই তো আমাকে কষ্ট দিয়েছে । আমাকে এভয়েড করছে । মনটা খারাপ লাগছে। ফোনে রিং বাজতেই দৌড়ে গেলাম , নীড় ফোন দিয়েছে কি ? হ্যালো পায়রা কি কর বেইবি ? সামিনের গলা । পড়তে বসেছি বেবি , তুমি ? পড়তে? এত পড় কেন ? রেডি হও ,আমি গাড়ি নিয়ে আসছি , মুভি দেখব আজকে ।বাসায় খুব বোরিং লাগছে । এইটুক বলেই সামিন ফোন কেটে দিল । পড়া জলে গেল আমার । রেডি হয়ে ওয়েট করতে লাগলাম সামিনের জন্যে । সামিনের উপর আমার মেজাজ খুব খারাপ । ২ দিনে ৩ দিনে খোজ নেয়না,আজকে আবার ............ আজাইরা ঢং যতসব ! সামিনের গাড়িতে উঠে আমি চুপচাপ বসলাম । সামিন কে বোঝাতে চাইলাম ওর উপর রেগে আছি আমি । সামিন আমার রাগের ধার না ধরে বলল , snow white মুভিটা দেখব , তুমি নিশ্চয়ই দেখনি ? দেখেছি সামিন আমার দিকে ফিরল , কবে যেদিন রিলিজ হয়েছে সেদিনি দেখেছি সামিন হেসে বলল , নিশ্চয়ই নীড়ের সাথে ? আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম ।এরপর সামিন কোন কথা বলল না । ও কি মন খারাপ করল ? আমি একটু পর নিরবতা ভাঙ্গলাম , একবার দেখেছি তো কি হইসে আরেকবার দেখব । তোমার সাথে দেখব । আমার মনে হয় দরকার নেই আমার কান্না পেতে লাগল , কান্না চেপে বললাম , তুমি রাগ করেছো ? আমিও করেছি , তুমি দুইদিন contact কর নাই মানুষ ব্যাস্ত থাকতে পারে না ? আর কিছু বললাম না আমি , সামিন কে আমার খুব অচেনা লাগল । সামিন আমাকে আর মুভি দেখতে নিল না , একটা কফিশপে বসলাম । সামিন বলল , আমি বুঝিনা ওই মাথা খারাপ ছেলেটার মধ্যে তুমি কি পাও ? আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল , নীড় মোটেই মাথা খারাপ না , না জেনে কাউকে নিয়ে কিছু বলা ঠিক না সামিন ও তোমার খুব ভাল ফ্রেন্ড , তাই কি ? আমার জানের দোস্ত ও , আমি জানিনা কেন ওকে তুমি দেখতে পার না , কিন্তু ও খুব ভাল ছেলে । তোমাকে রিলিজ হওয়া নতুন মুভি দেখতে নিয়ে যায় বলে ? আমি হতবাক হয়ে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।সামিন হাসতে হাসতে বলল , বাদ দাও আমি নীড়কে নিয়ে আর কিছুই বলতে চাই না, ওর মত একজনের জন্যে আমাদের মধ্যে ঝামেলা হওয়া ঠিক না তাইনা ? খুব খারাপ লাগতে থাকল আমার । নীড় আমার খুব ভাল বন্ধু , সামিনের জন্যেই কি আমি ওকে হারাতে বসেছি ? সামিন ওকে এমন চোখে কেন দেখে ? আচ্ছা সামিন কি নীড়কে সন্দেহ করছে ? জানি না কেন , হঠাত করে আমার সামিন কেই সন্দেহ হতে থাকে ।। নীড় : আমার এই আঁধার আমার কবিতা সময়ের পাতায় যা লিখে চলি ছিল সবই তোমারই আছে আজো তোমার ----------------- কলিং বেলের আওয়াজ শুনে গান থামাই । দরজা খুলে দেখি পায়রা থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । ওকে দেখে ভয়ে আমার আত্তা শুকিয়ে গেল । ওর এরকম মলিন চেহারা আমি কোনদিন দেখিনি । ঢুকতে দিবিনা দোস্ত ? আমি ঢুকতে দিলাম ।পায়রা সোফাতে বসল । বাসার ড্রেস পরে চলে এসেছে । ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এতখন কাদছিল ।আমি পরিবেশ হালকা করার জন্যে ফাইজলামি করার চেষ্টা করলাম , চেহারা সুরত তো মাশাল্লাহ শাঁকচুন্নি ফেইল দিবে । এই অবস্থা হইল কেমনে ? লাত্থি দিয়া তোর সব কয়টা দাঁত ফেইলা দিব হারামি বদ মাইশ আমি কি করলাম ? পায়রা চোখ বড় বড় করে বলল , আমি কোনদিন তোর ফ্রেন্ড ছিলাম না তাইনা ? সামিনের সাথে ঝগড়া হইছে দোস্ত ? , পায়রার হাত ধরে বললাম ।পায়রার নাক লাল হয়ে গেল , সে কাদতে শুরু করল । আমি ওর কান্না দেখতে লাগলাম , আমার পৈশাচিক আনন্দ হতে লাগল । আমি প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে দিলাম , নাক মুছ পায়রা রুমাল টা দিয়ে নাক চোখ মুছতে লাগল । ওকে একটা স্ট্রবেরির মত লাগছে। আমি ওর মাথায় হাত দিলাম , আমার খুব ইচ্ছা হল ওকে বলি ,সামিনের কয়টা হাড্ডি ভাংগুম আমাকে বলে দে । কিন্তু আমি সেটা না বলে বললাম , একটু আধটু ঝগড়াতে কিছু হয়না দোস্ত , আর কাদিস না প্লিজ পায়রা বাচ্চাদের মত ফোপাতে ফোপাতে বলল , ও তোকে কেন দেখতে পারে না আমাকে বলবি ? কি শত্রুতা তোর সাথে ? মানে ?সামিন তোকে কিছু বলেছে ? আমার সাথে তো ওর শত্রুতা নাই ও তোকে সহ্য করতে পারেনা রে ... আমার কি মনে হয় জানিস ও তোকে সন্দেহ করে আমার রাগ উঠে গেল , তুই সন্দেহটাকে পাত্তা দিচ্ছিস কেন ? ওকে কেন সব বোঝাচ্ছিস না ? ক্যান বুঝাব আমি ? ও আমাকে বিশ্বাস করেনা তার মানে জানিস ও আসলে আমাকে লাভ ই করেনা আমি আমার মত বলতে থাকলাম , আমি কেন তোদের রিলেশানে সন্দেহ হব ? আমাকে নিয়ে কেন তুই সামিনের সাথে ঝগড়া করিশ ?কেন করিশ ? ও তোকে নিয়ে উলটা পালটা বলবে কেন ? বলুক । তুই গায়ে লাগাস কেন ? তুই গায়ে লাগাচ্ছিস বলেই ও সন্দেহ করছে রিলেশানে গেলে ফ্রেন্ডশিপ কুরবানি দিতে হয় , এসব তো মানতে পারব না ভয়ংকর রেগে গেলাম , আমাকে কেন বলছিস ? যখন সামিন কে ভালবেসেছিস আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলি ? এখন সবকিছু নিয়ে শান্তিতে থাকবি তা না , আমাকে নিয়ে লেগেছিস ! আমি একটা আউটসাইডার পায়রা উঠে দাঁড়াল , তোরা সব একরকম , দুইদিন পরপর গুইসাপের মত কালার চেঞ্জ করিস । আমি আজকে সারাদিন কাদছি , তুই আমার সাথে দেখা করতে চাস না তাও আসছি , আমি জানতাম না তুই ও বদলাবি বদলাইনাই আমি ১০০ ভাগ বদলাইসিস ! আগের নীড় থাকলে আজকে আমাকে কাদতে দেখলে বলত,সামিনের কয়টা হাড্ডি ভাঙ্গুম আমাকে বলে দে ।হাহ সরি রে আর ডিস্টার্ব করবনা । পায়রা দুপদাপ করে পা বাড়িয়ে সোয়েটারের কলার দিয়ে কান ঢাকতে ঢাকতে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল । দরজা লাগাতে ভুলে গেলাম আমি । বাইরের অসম্ভব ঠান্ডা বাতাস আর স্নো ঘরের মাঝে ঢুকতে লাগল । ঠাণ্ডায় আমার হাত পা হয়ত অবশ হয়ে আসছিল , কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল ছিল না । আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে , পায়রা আমি বদলাইনি । তুই বিশ্বাস কর !!! প্রায় একমাস পর---- পায়রাদের ক্যাম্পাস থেকে কিছুটা দূরে ক্যান্টিনের সিঁড়িতে বসে আছি ।আধাঘন্টা হয়ে যায় আমি বসেই থাকি , পায়রা আসেনা , ওর কি আসার কথা ? ওকে তো আমি আসতে বলিনি , কেন আসবে ও?দেড় ঘন্টা পর পায়রাকে চোখে পড়ল আমার , ব্লু ফুলহাতা টিশার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স ওর পরনে । মাথায় এলোমেলো চুল সামলাতে সামলাতে আসছিল ও । কিভাবে যেন আমাকে দেখে ফেলে , আমি মাথা নামিয়ে রাখি । ও এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবে , তারপর আমি অবাক হয়ে দেখলাম ও ছুটতে ছুটতে আমার দিকে আসছে ।সিঁড়ির উপর উঠে ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । কি যেন ভাবে তারপর ধপ করে বসে পড়ে ।আমি ওর দিকে তাকিয়ে দুর্বল ভাবে হাসার চেষ্টা করে বললাম , কেমন আছিস পাগলি ? পায়রা শুধু বলল , ভাল আমি আর কোন কথা খুঁজে পেলাম । হঠাত করে আমার মনে হল , একটা সুন্দর বন্ধুত্তের সম্পর্ককে আমি নিজের হাতে খুন করেছি । গলা টিপে । পায়রা অস্থির চোখে তাকিয়ে বলল , তুই এত অসুস্থ কিভাবে হইছিস ?তুই মানুষ ? ছিহ ! না মানুষ না , আমার সাথে কথা বলিস না আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম ,আমার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে । আমি চশমার আড়ালে বৃথাই চোখ মুছার চেষ্টা করলাম । আমি আবার ওর দিকে তাকালাম ,ও আমার দিকে একি ভাবে তাকিয়ে আছে । ওর দৃষ্টিতে আমি আবার অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম , মুখ ঘুরিয়ে নিলাম । আমি যদি এখন পায়রাকে ভালবাসি বলে দেই আমার কি মৃত্যুদণ্ড হবে ? একটাই জীবন আমার , আর কতবার হারানোর ভয় করব ?কিন্তু আমি বলার সুযোগ পেলাম না । পায়রা আমার হাত ধরে বলল , কথা বলবিনা আমার সাথে ? আমি একটু হাসলাম , আমি কখন বলেছি যে তোর সাথে কথা বলবনা ? পায়রা আমার চুল ধরে টানতে টানতে বলল , অসভ্য ! বদমাইশ ! হারামি ! আমি মাথায় হাত দিয়ে বললাম , আগে জানতিনা ? কই ছিলি এতদিন ? ছিলাম ছিলাম । তা তোর ঘর সংসার কেমন চলতেসে ? কেমন আছে সামিন ? ঝগড়া মিটছে ? পায়রার মুখটা বিষণ্ণ হয়ে গেল , ওর সাথে আমার কিছু হবেনারে । he doesnt care আবার কি হইল রে ? পায়রা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল , নতুন করে কিছু হয়নাই । ও আগে থেকেই এরকম আর এখনও সেরকমি আছে । তারপর হঠাত ই প্রসঙ্গ পালটে বলল , তুই এতদিন আমার সাথে কথা বলিস নাই কেন ? সামিনের ভয়ে ? আমি চোখ পাকিয়ে বললাম , সামিন কি বাঘ টা আসছে যে আমি ভয় পাব ? পায়রা হিহিহি করে হাসতে লাগল । আমি জ্বলতে জ্বলতে বললাম , জামাই রে নিয়া এখনি এত দেমাগ দেখাস পরে যে কি করবি ! আমি উঠে চলে যেতে পা বাড়ালাম ,কিন্তু পায়রা আমার সার্ট টেনে ধরে আমাকে আটকাল । আমি ঝাঝিয়ে বললাম , শার্ট ছাড় নাআআআআ বাঁদরামি করিস না । বড় হইছিস না ? বড় হইনাই বুড়ি হইসি হিহি ভালা এখন যাইতে দে নাহ আমি এখন তোর সাথে খাইতে যাব । আমি নাস্তা কইরা আসিনাই , খুব খিদা লাগসে , পায়রাও উঠে দাড়াল । নাস্তা করিস নাই কেন আমারে জ্বালাইতে খুব মজা না ? পাইছস তো আমারে ,পাইকারি হারে জালাইতে থাক পায়রা ফিকফিক করে হাসতে লাগল । আমি ওর মাথায় বাঢ়ি দিয়ে বললাম , চল হাতি ঘোড়া তিন চারটা যদি না খাইছিস তাইলে তুই কচু করবি , পায়রা ওর হাতের বুড়া আঙ্গুল দিয়ে আমাকে কচু দেখাতে লাগল । আমি পায়রাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসলাম । ও এত্ত এত্ত খাবার অর্ডার দিয়েছে । আজকে আমাকে ফকির হতে হবে , আমার আফসোস লাগতে থাকল ইশ আমি যদি সারাজিবন এভাবে ফকির হওয়ার সুযোগ পেতাম ! পায়রা খেতে খেতে বকবক করতে লাগল । ও কখনও এরকম অনবরত বকবক করেনা , আমার খটকা লাগল , ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম । ও বকবক করতে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল , বলল , কি ? তুই এমন বাচাল হইলি কবে থেইকা ? পায়রা মুখ দুখি দুখি করে বলল , অনেকদিন কথা বলি নাতো তাই আজকে খিড়কি ছুইট্টা গেসে কেন সামিন কই ? জানিনা এক সপ্তাহ হইল আমাকে ফোন টোন দেয়না , কাজে নাকি বিজি কি বলিস ! আমার নিজেকে এত জঘন্য মনে হল । সামিন কে কেন আগেই খুন করে ফেললাম না সেই দুঃখে নিজেরি মরে যেতে ইচ্ছা করল । খেতে খেতে মাথা তুলতেই রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেখে আমি বরফের মত জমে গেলাম । সামিন একটা মেয়েকে নিয়ে ঢুকছিল। খাবারের বিল আগেই দিয়েছিলাম , আমি উঠে দাঁড়িয়ে পায়রা কে বললাম , চল আর খাওয়া লাগবেনা পায়রার হাত ধরে টেনে আনতে লাগলাম , আমার উদ্দেশ্য পেছনের দরজা দিয়ে পায়রাকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়া যাতে ও সামিন আর মেয়েটাকে না দেখে । কিন্তু পায়রা আমাকে থামিয়ে পেছনে তাকাল এবং সামিন কে দেখতে পেল । সামিন ও আমাদের দেখে এগিয়ে আসল ।কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে পায়রা শীতল গলায় সামিন কে বলল , তুমি খুব ব্যাস্ত না ? কে এই মেয়েটা ? সামিন হাসতে লাগল , পায়রা এটা বোরিং বাংলাদেশ না এইটা ড্যাশিং নিউইয়র্ক ! তুমি নিজেই কিন্তু এইটা জান । তুমি দুইটা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে পারলে আমি কেন ৫টা নিয়ে ঘুরতে পারবনা ? আমার হাতে তখনও পায়রার হাত । আমি পায়রার হাত ছেড়ে দিয়ে বললাম , hold your tongue সামিন , বাজেকথা বলবানা খবরদার সামিন পায়রার দিকে তাকিয়ে বলল , আমার ইচ্ছা কিন্তু দেশি কাউকেই বিয়ে করার ইচ্ছা তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল , তুমি খুব বোকা , আমি কিন্তু ততটা চালাক মানে ? আমি ভেবেছিলাম তুমি নিজেকে বদলাবে , কিন্তু তুমি যে ... আমার কথা শেষ হবার আগেই সামিন পায়রাকে বলল , um leaving newyork tomorrow ,মেক্সিকো চলে যাব, সম্ভবত আর দেখা হচ্ছেনা তোমার সাথে । পায়রা আর দাঁড়াল না , আমার হাত ধরে বেরিয়ে আসল । পায়রার মুখে কোনও কষ্ট নেই , ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও এতদিন যা ভেবে এসেছে আজ তার প্রমান পেয়েছে । তুই সব জানতি নীড় ? তুই আগে থেকেই সামিনের চেহারাটা জানতি ? জানতাম । কিন্তু ও আমাকে কথা দিয়েছিল তোর জন্যে ও নিজেকে বদলাবে । but he didnt keep his words আমাকে কেন বলিস নি এসব ? তুই সামিন কে ভালবাসিস আমি চাইনি এসব জেনে তুই কষ্ট পাস , তাই আমি সামিন কে অনুরোধ করেছিলাম , বিশ্বাস কর তুই ওই কুত্তাটাকে কেন অনুরোধ করেছিস আমি কথা বলতে পারলাম না । ও আবার বলল , আমি জানতাম আমি যে সামিন কে কল্পনা করেছিলাম সেই সামিন ও ছিলনা । তুই সব জেনেও আমাকে বলিস নি , আমাকে একা একা ওর সাথে মনের যুদ্ধে পাঠিয়েছিস । আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থেকেছিস , কেন করেছিস এসব ??? পায়রা আমার চুল টানতে টানতে এসব বলল । আমি ভাবতে পারিনি পায়রা আমাকে এইকথা গুলি আমাকে বলবে । আমি ওর হাত দুটি ধরে বললাম , i love you আর এটাই আমার সবকাজের কৈফিয়ত পায়রা আমার মাথা থেকে হাত নামিয়ে বলল , আমি একটা গাধি রে । যাকে নিজের অজান্তে ভালবাসছি তাকে ফেলে আরেকজনের কাছে ছুটছি । আর তার কাছে গিয়ে প্রত্যেকটা মুহূর্তে তোকে মিস করছি । যে সময়টাতে আমার সামিনের ফোনের ওয়েট করার কথা তখন আমি তোর ফোন চাইছি । আর তুই ??? তুই হারামি তখন আমাকে ফেলে ভাগসিস । আমি তোকে ছাড়া লাড্ডু তুই জানিস না ? আমি কি বলব , আমার তো খুশিতে নাচতে মন চাচ্ছে । সেই সময় ই পায়রার আক্রমন। পায়রা আমার মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল
Posted on: Sat, 22 Nov 2014 09:51:49 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015