রাজাকারের তালিকা করতে - TopicsExpress



          

রাজাকারের তালিকা করতে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী! নিজ দল জামায়াতসহ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে থাকা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শান্তি কমিটির সব পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নামের তালিকা তৈরি করছে দলটি। গত দুই মাস ধরে এ কাজ করছেন দলটির নেতারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের আইনজীবীদের পরামর্শে দলটি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। ধর্মভিত্তিক এ দলটির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্ট জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে রায় দেওয়ার পর সুপ্রীমকোর্টে আপিল করে দলটি। বিষয়টি বিচারধীন রয়েছে। আগামীতে যদি দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সামনে আসে, তখন রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করবে জামায়াত। ওই সূত্রের দাবি, রাজাকারের এই তালিকায় দেখা যাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লোকজনই বেশি। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেশের সব জেলা আমিরের কাছে পাঠানো হয়। জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলার নেতারা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে অনেক জেলার পক্ষ থেকে সে তালিকা কেন্দ্রীয় জামায়াতের দফতরেও পাঠানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী যে মুহূর্তে রাজাকারদের তালিকা করছে ঠিক সেই সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টের আপিল বিভাগে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে দলটির শীর্ষ নেতাদের একই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে বিচার চলছে। এরই মধ্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। তা কার্যকর করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে দলটির নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। এ ছাড়া অন্যান্য নেতাদের মধ্যে কারো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন সাজা দিয়েছে। আবার অনেকের বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার চেয়ে তদন্ত প্রতিবেদনও প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। চিঠিতে ডা. শফিকুর রহমান শীর্ষ নেতা এবং দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বশীলদের (জেলা ও মহানগর আমির) উদ্দেশে বলেন, ‘বর্তমান জালিমশাহী সরকার দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার ঘৃণ্য এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারই অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছে।’ ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘তাদের (তদন্ত সংস্থার) ওই কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে আমাদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ডিফেন্স টিমের (জামায়াতের আইনজীবী) নির্দেশনার আলোকে কেন্দ্রীয় গবেষণা বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে আপনার জেলায় সফর সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত সফরকালে তারা আপনাদের সাথে ১৯৭১ সাল সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের ব্যাপারে আলোচনা করে এসেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে ওই কাজগুলো অনতিবিলম্বে সম্পন্ন করতে হবে।’ চিঠিতে কী কী কাজ করতে হবে এ নিয়ে ৬টি নির্দেশনা দেন শফিকুর রহমান। প্রথমেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে নিজ নিজ জেলায় সংঘটিত ঘটনাসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসহ তালিকা প্রণয়ণের কথা বলা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলায় শান্তি কমিটি/রাজাকার বাহিনীর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়। এখানে বলা হয়, ‘পূর্বে প্রদত্ত নির্দিষ্ট ফরমেট অনুযায়ী’। তৃতীয়তঃ জেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ অথবা কোনো ব্যক্তি প্রকাশিত জেলার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্রান্ত বইসমূহ সংগ্রহ করতে বলা হয়। চতুর্থতঃ ১৯৭২ থেকে ৭৪ সালে সংশ্লিষ্ট জেলার জি.আর বই সংগ্রহ, ওই সময়ে জেলার দালাল আইনের জি.আর বই সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয় চিঠিতে। এ ছাড়া ‘জামায়াত-শিবির, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ বা বিএনপি-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অস্ত্র মামলা, হত্যা মামলা অথবা সন্ত্রাস দমন আইনের মামলাসহ অন্যান্য আলোচিত মামলার তালিকা তৈরি করা’র নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। এ ব্যাপারে দেশের কয়েকটি জেলা জামায়াতের নেতার মোবাইলে দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে ফোন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ নেতার নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। আবার কারো কারো ফোনে কল ঢুকলেও তারা রিসিভ করেননি। ফরিদপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বদর উদ্দিন দ্য রিপোর্টের কাছে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ফরিদপুর অঞ্চলে কার কী ভূমিকা ছিল তা বিভিন্ন বইয়ে বর্ণনা রয়েছে। আমরা সে বইগুলো সংগ্রহ করছি। এ সব বইয়ে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের নাম রয়েছে। এ বিষয়ে যশোর জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন দ্য রিপোর্টের কাছে প্রথমে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। পরক্ষণেই প্রশ্ন করেন, এ তথ্য আপনাকে কেন দিতে হবে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ঠিক আছে দেখি দেওয়া যায় কী না। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে রাজাকারদের তালিকা কেন করা হচ্ছে এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতা দ্য রিপোর্টকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আবারও যদি সামনে আসে, তখন রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই তালিকায় দেখা যাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লোকজনই বেশি। কারণ শান্তি কমিটির স্থানীয় নেতাদের অধিকাংশই সে সময়ের ইউনিয়ন মেম্বার বা চেয়ারম্যান ছিল। যাদের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে সে সময়ে আওয়ামী লীগ কিংবা পরে আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য নিতে তাদের মোবাইলে ফোন করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। দু’একজনের ফোনে কল ঢুকলেও তারা তা রিসিভ করেননি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের আইনজীবীদের পরামর্শে দলটি রাজাকারদের তালিকা তৈরি করছে— এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।’
Posted on: Sat, 18 Oct 2014 23:00:27 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015