"শেইখ আবদুর রহমান - TopicsExpress



          

"শেইখ আবদুর রহমান আল-আরিফি বলছিলেন ডায়াবেটিস রোগী এক যুবকের কথা। সে চায়ের সাথে চিনি খেতে পারতো না বলে তার খুব আফসোস ছিলো। শেইখ আরিফি তাকে প্রশ্ন করলেন, “এই যে তোমার এত আফসোস এবং বিষন্নতা -- এগুলো কি চায়ের তিক্ততাকে সামান্য মিষ্টতা এনে দেয়?” স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা প্রেম প্রেম একটা খেলা খেলে। কয়েকটা ব্রেক-আপ, মেইক-আপের পর শেষ পর্যন্ত যখন আর টেকে না তখন বিশেষত মেয়েরা (আমার দেখা মতে) বিভিন্ন ছ্যাকা খাওয়া টাইপ পেইজের সান্তনাবানী সম্বলিত ছবি একটার পর একটা শেয়ার দেয়। আর ক্যাপশন হয়, “So true …” মানুষের নিজের জীবনের কোন একটা ঘটনার সাথে কোন লেখা, ছবি, কাহিনী মিলে গেলে সে তাতে অবাক হয়ে সেটাকে একটা আলাদা ডাইমেনশনে নিয়ে যায়। সেজন্য আমরা দেখি গানের বাজারে প্রায়ই “অন্যের হাত ধরে দূরে চলে গেছ। ভুলতে পারছি না, প্রিয়া তুমি কোথায়” জাতীয় গান বেশ হিট করে। কারন কি? কারন হচ্ছে এই যে, বেশিরভাগ মানুষ ক্ষতস্থানটা চুলকিয়ে আরো বেশি ক্ষত তৈরী করতে ভালোবাসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিন্তু ব্যাপারটা তার জন্য খারাপই হয়ে দাঁড়ায়। ফেইসবুকের নিউজফিডে প্রায়ই কিছু লেখা চোখে পড়ে ... একগাদা হতাশা, দেশ- জাতি- সমাজের ওপর ত্যাক্ত-বিরক্ত, কোন দেহবিক্রেতার নামে বাজারে কি আসছে সেটা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার একদম চুলচেরা বিশ্লেষণ দিয়ে ভরপুর। আজকালকার ছেলেমেয়েরা ভাল না, সমাজ ভাল না, মা-বাবা ভাল না, এই ভালো না, সেই ভালো না। হ্যাঁ, সস্তা শ্রেণীর পাঠক এই লেখাগুলো খুব পছন্দ করে। কিন্তু ফলাফল খুব খারাপ। একপেশে খারাপের বিবরণ শুনতে শুনতে ক্ষতটা কেবল বাড়ে। (১) অনেকে খারাপের সাথে পরিচিত হয় এর মাধ্যমে। (২) যারা ইতোমধ্যে বিষয়গুলো জানে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। খারাপটাকেই স্বাভাবিক বলে মনে হতে শুরু করে তাদের কাছে। (৩) অবিরাম এই খারাপ জিনিসগুলোর কথা শুনতে শুনতে একসময় সে ভাবতে শেখে যে এই নষ্ট সমাজে ভালভাবে বেঁচে থাকাটাই বুঝি অসম্ভব। সেও এভাবে এক সময় খারাপের পথেই হাটা শুরু করে। কয়েকদিন আগে একটা লেখা পড়লাম যার শুরুতে স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া একটা মেয়ের উদাহরণ ছিলো যে কোন একটা বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার ঠিক আগ মূহুর্তে গর্ভবতী হয়ে পড়ে অবৈধ সম্পর্কের ফলে। তো লেখাটা প্রচুর জনপ্রিয়তা পেলো। অনেকদিন ধরে বিভিন্ন লেখা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে করতে কোন একটা লেখা দেখলে পাবলিকের কাছে সেটার একসেপটেন্স সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা পেয়ে যাই আলহামদুলিল্লাহ। এই ধরনের হতাশা ব্যঞ্জক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার টপিকসে লিখলে লেখাগুলো খুব “টাচি” হয় তা ভালভাবেই জানি। আমি নিজেও লেখাটা প্রোমোট করেছি তবে প্রথমের অংশটার জন্য নয় বরং পরের ভাল অংশটার জন্য। এখন কথা হচ্ছে, আমরা যখন এই বিষয়গুলোকে সবার সামনে টেনে আনবো তখন অসুবিধাটা কোথায়? হিন্দি সিরিয়াল দেখা হয় নি কখনও, তারপরে মনে হয় না যে ওগুলোতে পরকীয়াকে খুব ভাল একটা কিছু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তারপরেও বারবার যখন এইসব মন্দ জিনিসগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরে খোচানো হয় তখন মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তিটা নষ্ট হয়ে যায়। হয়ত এগুলো সমাজের একদমই বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা কিন্তু এত বেশি করে মানুষের সামনে উপস্থাপনের ফলে মানুষ এগুলোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যেতে শুরু করে। সমস্যাটা এখানে। যারা আমরা এভাবে হতাশা-ব্যঞ্জক, মন্দ ঘটনার উদাহরণ টেনে লিখছি -- লেখার উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে মোটেই সন্দেহ নেই। সমাজে আসলেই এ বিষয়গুলোর অস্তিত্ব আছে - মানুষকে সচেতন করার জন্য উপস্থাপন করছি। কিন্তু সচেতন করতে গিয়ে বাস্তবচিত্রের চাইতে বেশি উপস্থাপন হয়ে গেলে সমস্যা। সমাজের সব ছেলে-মেয়ে খারাপ। ছেলেমেয়েরা সবাই এরকম হারাম কাজ কর্মে লিপ্ত থাকে - এমন একটা পিকচার যদি সবার মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয় তবে ফলাফল হবে কী? স্বামী - স্ত্রী একে অপরকে সন্দেহ করতে শুরু করবে অহেতুক। একটা নিশ্চয়তার মত চলে আসবে যে যেহেতু সবাই এরকমই তাহলে এও তো ব্যতিক্রম না। সামাজিক বন্ধনগুলো হালকা হবে। যে লেখাটার কথা বলছিলাম। ঐ লেখাটা আমি প্রমোট করে দেয়ার পরে আমার কাছে ইনবক্সে এক ছোটভাই জানতে চাইলো বেশ হতাশার সুরে, “ভাই! বিয়ের পর যদি দেখি আমার স্ত্রী এরকম খারাপ ছিলো তাহলে কী করবো? বিয়ের আগে সরাসরি জিজ্ঞেস করে নেবো? আমি অমুক ভাইকে জিজ্ঞেস করেছি। উনি চুপ করে ছিলেন। উত্তর দেন নি। আপনি প্লিজ কিছু একটা বলুন।” এটা তো আসলে একটা মেয়েকে সরাসরি প্রশ্ন করার বিষয় না। একটা সচ্চরিত্রা নারীর জন্য আরো উলটা এটা একটা চরম অপমানজনক এবং মারাত্নক বিব্রতকর প্রশ্ন হবে। আমরা তো চেষ্টা করবো প্র্যাকটিসিং মেয়ে বিয়ে করার জন্য ইনশাআল্লাহ। মেয়ে যদি খুব ভাল দ্বীনদার হয় তাহলে এই বিষয়টা হবার সম্ভাবনা একদম শুন্য না হলেও একেবারেই কম। সাধারনত কিছু ফিতরাহ থাকে মানুষের মাঝে। কিছু কিছু ফ্যামিলিতে সামান্য মূল্যবোধ থাকে। সেজন্য এরা রিলেশনে যাওয়া ঠিক আছে, কিন্তু শারীরিক সম্পর্ক করা যাবে না - এমনটা মনে করে থাকে। ব্যাসিক আন্ডারস্যান্ডিং না থাকলেও একদম খারাপের সর্বনিম্ন পর্যায়ে যাওয়াটা খুব বেশি সহজ না। “না ভাই। কী বলেন! আপনার বর্তমান সোসাইটি সম্পর্কে কোন আইডিয়াই নাই। এরা যে কতোটা খারাপ হতে পারে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।” -- ওকে। আমার আইডিয়া নাই। ধরে নিলাম সমাজের সব মানুষ খারাপ। কিন্তু তাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখাটা কি আমার জন্য জরুরী? ইসলামে খারাপ দিকগুলো লুকিয়ে রাখার একটা বিষয় আছে। এমনকি একটা মেয়ের যদি খারাপ অতীত থেকেও থাকে সে সেটা লুকোবে, প্রয়োজনে মিথ্যে বলবে স্বামীর সাথে। (বিস্তারিত পড়ুন https://facebook/note.php?note_id=528840297131931) সুতরাং যদি প্রকৃতপক্ষেও কোন খারাপ থেকে থাকে সেটা তুলে এনে সবার সামনে উপস্থাপন করাটাকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে। এরকম আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে গীবতের নিষেধাজ্ঞা। একজন মানুষের আসলেই যে দোষগুলো থাকে সেগুলো আরেকজনের সামনে তুলে ধরাই হচ্ছে গীবত, আর কারও মধ্যে যদি আসলেই সে দোষ না থাকে তবে তো মিথ্যাচারই। কারো দোষ থাকে থাকুক, চেষ্টা করেন তাকে বিরত রাখতে। সেটা সবার কাছে বলে বেড়ানো তো সলুশন না - উল্টো বিপত্তি। একথা সত্য যে অনেক সময়ে প্রয়োজন পড়ে সমাজের কিছু বাস্তবচিত্র দিয়ে বক্তব্যকে উপস্থাপন করা। কিন্তু সেক্ষেত্রেও ওভারঅল চিত্রটা নিরপেক্ষভাবে ফুটিয়ে তোলাটা জরুরী। যেমন আমি বললাম যে, “কলেজ পড়ুয়া সব ছেলে মেয়ে প্রেম করে বেড়িয়ে মহা সুখে আছে। আর মাঝখান থেকে ইসলাম মেনে চলা সরল ছেলেগুলো সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রেখে কষ্ট করছে। আমাদের সাফল্য এ পাড়ে নয়, ওপারে আখিরাতে।” কথাটা একশতভাগ সত্য না। প্রথমত, একটা বিগ পিকচার এখানে মিসিং। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের ফেইসবুক প্রোফাইলটাই একটু ঘেটে দেখুন। প্রোফাইল-পিকচার, কভার ফটো সব কিছুতে অনেকেরই দেখবেন রাখঢাক ছাড়াই ফুটে ওঠে কতটা আরামে আছে। বিভিন্ন সময়ে এরকম কিছু জিনিস চোখে পড়েছিলো। কতিপয় মেয়েলি কভার ফটোঃ - You are my boy-friend. Not my owner. - বয়ফ্রেন্ড বেশিই প্যারা দিচ্ছে। - Every time my phone rings I wish it was you [চরম বিষন্নতার ইমো হইবেক] বোঝা যাচ্ছে ব্রেক আপ হইছে দুইদিন আগে। - I won’t share you with anyone else. বোঝা যাচ্ছে লুচু বয়ফ্রেন্ডের নজর নতুন কারো দিকে পড়ছে। কী? খুবই সুখে আছে? একটা ব্যাসিক প্রিন্সিপল হচ্ছে এই যে আল্লাহতালা মুমিনদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জায়গাতেই উচুতে রাখবেন। ইসলাম মেনে চলা সরল যুবকটা সামান্য কিছু গা ভাসানো মূহুর্ত থেকে বঞ্চিত হয়ে কিছুটা একাকীত্ব বোধ করলেও বিরাট বিরাট বিষন্নতার পাহাড় থেকে আলহামদুলিল্লাহ দূরে আছে। চারদিকে অবাধ মেলামেশার জয়জয়কারের কথা প্রচার করার সময় পত্রপত্রিকায় দুদিন পর পর আত্নহত্যাকারী মেয়েগুলোর কথাও উল্লেখ করুন। আরো ব্যাখ্যা করুন কেন বেশিরভাগ ছাত্রী হলে সিলিং ফ্যান থাকে না। “আমি সাহায্য করব (আমার) রসূলগণকে ও মুমিনদেরকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে।” [সুরা গ্বফির ৫১] আপনি মানেন আর নাই মানেন, আপনি বোঝেন কি নাই বোঝেন -- আসলে সত্য এটাই। সুখ-দুঃখ, বিপদ ইত্যাদি চক্রাকারে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সবার জন্যই আসবে। আল্টিমেট বিজয় মুমিনদের জন্য। মনে মনে কখনও হতাশ হতে পারেন, বিরক্ত হতে পারেন। তবে সেটা ভেতরে রেখে দিন। চেষ্টা করুন ভেতর থেকেও দূর করে দিতে। এগুলোকে পাবলিসাইজ করার তো মানে হয় না। কিন্তু আপনি হতাশাগুলোকে প্রকাশ করে দিলেন সবার সামনে- মানে হচ্ছে শয়তান এখানে সফল। একটা কথা খুব ভালো লেগেছিলো, “If you have a problem, then face it. Don’t facebook it.” আর হতাশা, নৈরাশ্য - এগুলো এমনিতেও ভালো কিছু না। “নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।” [সুরা ইউসুফ ৮৭]" Collected from Mohammad Rakibul Hasan
Posted on: Thu, 15 Aug 2013 02:15:36 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015