সুপার মার্কেটের দুই বা তিনতলার সামনের বারান্দায় দাঁড়ালে অনেক কিছু দেখা যায়। সুন্দরী ললনা, রিকশা চালক ও যাত্রীর ভাড়া নিয়ে ক্যাচাল, ছোট-খাটো সংঘর্ষ আর অনেক মানুষের ঘাম। সবচেয়ে ভালো লাগে অনুভূতির মিলন মেলা। কতো রকম অনুভূতি! ছোট্ট শিশু বাবার হাত ধরে মার্কেটে ঢুকছে। মুখে স্বর্গীয় হাসি। আজ তার জামা কেনা হবে। লাল অথবা নীল যাই হোক, গাঢ় হবে রঙ। নতুন বউ, বিয়ের পরে প্রথম ঈদ। শপিং করতে এসেছে স্বামীর হাতের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে। এই বউটিই বাড়িতে গিয়ে স্বামির সাথে প্রচুর ঝগড়া করবে অথবা একটু আগেই করে এলো অথচ এখন এই মুহূর্তে তার আচরণে ফুটে উঠছে অধিকার। এই স্বামী আমার, এই স্বামীর মানিব্যাগটাও আমারই! নতুন শাড়ি কেনা হবে। নতুন পাঞ্জাবি হবে। কেনা হবে বাবা-মা, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি, ভাই ননদ, শালী সম্বন্ধি কতোজনের জন্য কতো কিছু! অথবা বৃদ্ধ বাবা, সব কিনবেন শুধু নিজেরটা বাদে। তার চোখেও সুখ আছে। ধার করা টাকা হলে কী হবে? এই সুখটা শুধু টাকায় কেনা হয় না। পরিবারের নতুন-পুরোনো সব সদস্যের ঈদের রঙটা সুপার মার্কেটের এই তিন তলার বারান্দা থেকে খুব দেখা যায়। ভীড়ে চোখ ফেলে তাকিয়ে থাকলেই হলো! মাঝে মাঝে বাতাসটাই যা একটু সমস্যা করে! এলোমেলো করে দেয় ভাবনা। নয় টাকাখরচ করে কেনা বেনসন সিগারেটও ভাবনাগুলোকে লাইনে আনতে পারে না। এই ঈদও পাড় করা হবে পুরোনো কাপড়ে। এই ঈদেও বন্ধুর নতুন কেনা ক্যামেরার ফ্রেমের বাইরে থাকা হবে স্বেচ্ছায়, লজ্জায়। পাড়ার কারও বাসার ডাইনিং এ খুব সাবধানে সেমাই খাওয়া হবে না পাঞ্জাবিতে সেমাই লাগার ভয়ে! সুপার মার্কেটের তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার মুখেও কিছু অনুভূতি আছে। নিচে রাস্তার ভীড় থেকে ওর দিকে তাকিয়ে সেটা দেখা যায় না। রাস্তায় খুব আলো, বারান্দায় বেশ অন্ধকার। ছেলেটার নামটাও অন্ধকার হলে ভালো হতো, মানাতো।
Posted on: Sun, 28 Jul 2013 19:02:32 +0000