আকাশে মেঘ হয়েছে কাল - TopicsExpress



          

আকাশে মেঘ হয়েছে কাল বৈশাখীর কালো মেঘ নয়, যে মেঘ হুট করে এসেই লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় চারপাশ।এ মেঘ হচ্ছে সন্ধ্যামেঘ, ঠিক সন্ধ্যার একটু আগে আসবে ধিরে ধিরে রক্তিম সূর্যটাকে ঢেকে ফেলবে নিজের পর্দার আড়ালে তারপর নিজেই মিলিয়ে যাবে রাতের আঁধারের সাথে, তারপর মাঝরাতে কিংবা রাতের শুরুতে শুনতে পাবো মেঘ কাঁদছে, সন্ধ্যামেঘ। . বাবা কিছুক্ষন আগেই ঘরে ফিরেছেন, সাথে নিয়ে এসেছেন ছোটোর জন্য একটা শার্ট। প্রায় দু বছর পর নতুন শার্ট পেল ছোট। আমাদের পরিবারে প্রতি বছর যেকোন একজন কাপড় কিনতে পারবে। কিন্তু এই হিসাবে বাবা কবে কিনেছে তা আমাদের কারোর ই মনে নেই, বাবার শার্ট একটাই। গত বছর কিনেছিলাম আমি, হালকা গোলাপী রঙ এর শার্ট কিনেছিলাম। এখন একটু ছোট হয়ে গেছে ধোয়ার পর বোঝা যায়, কিন্তু ওটা আমাদের জন্য কোন ব্যাপার না।এত কিছু চিন্তা ভাবনা আমাদের জন্য না। আজ ছোট অনেক খুশি। হয়তোবা আগামী কয়েকদিন খেলা করবে না, নতুন শার্টে ময়লা লাগবে তাই। মাও আজ ছোটোর শার্ট কেনা উপলক্ষে ভালো রান্নাবান্না করছেন, কালিজিরা বেটেছেন আর ঘি দিয়ে আলু ভর্তা এই খাবারটাই আমাদের জন্য অনেক। ঈদ ছাড়া আমাদের ঘরে মাংস খুঁজে পাওয়া দায়। সামান্য একজন স্কুলের দফতরী এর থেকে আর ভালো কি ই বা জোগার করতে পারবে! অবশ্য আমরা এতটুকুতেই খুশি হতে শিখেছি, তাই আজ শার্ট কেনা উপলক্ষে সবার মাঝে খুশি খুশি ভাব। . নিন্মবিত্ত পরিবারের খুশিটা খুব সহজেই পাওয়া যায়। বেড়ার ফাঁক, টিনের ফুটা দিয়ে দুঃখের সাথে কিছু সুখও কেমন করে যেন ঢুকে যায়। আর তারা তখন এই সামান্য সুখটুকু প্রকাশ করার জন্য এরা পাগল হয়ে যায়! . কয়েক বাড়ি পরে বিয়ে হচ্ছে জোরে জোরে গান বাজাচ্ছে, কিন্তু গানের কথা গুলো আমি ঠিক ধরতে পারছি না। হয়তোবা সাওন্ড সিস্টেমে কোন প্রব্লেম আছে। -দাদ তোর চা।শানু এসে চা এগিয়ে দেয়। -কিরে এখন চা কেনো? -তুই না একটু আগে চাইলি! -চেয়ছিলাম না কি! -তোর কি হয়েছেরে দাদা? -কেন রে? -না কিছুই মনে রাখতে পারিস না ইদানিং তাই। গতকাল মা তোকে চিঠি নিয়ে পোস্ট করতে বলল তা না নিয়েই চলে গেলি! -ভুলে গেছিলাম র! -নে তারাতাড়ি চা টা খেয়ে কাপ দে, আমি একটু বিয়ে বাড়ি যাবো। -কেনো? -এমনি, ওর নাকি আজ গায়ে হলুদ তাই দেখতে যাবো। -ও, তাহলে তুই যা আমি আস্তে আস্তে খাই। -আচ্ছা। বলে শানু চলে গেল। যে মেয়েটার বিয়ে হচ্ছে তার বয়স কতই বা আর! শানুর থেকে এক দু বছরের বড় হবে হয়তো বা ওর সমানই হবে। শানুটাওতো কত বড় হয়ে গেল! ওর জন্যও পাত্র দেখা দরকার। দু্দিন পর হয়তো ওর ও বিয়ে হয়ে যাবে।বাবা কি পাত্র দেখছে? একবার জিজ্ঞেস করতে হবে। যদিও বাবার সাথে আমি এসব ব্যাপারে কথা বলতে অভ্যস্ত নই। শানু বের হয়েছে। মায়ের মলিন হলুদ শাড়ি খানা পরে। সন্ধ্যাকুমারী লাগছে, যেন দুপুরের সূর্য যেতে যেতে তার কিছুটা রঙ একে ঢেলে দিয়ে গেছে। -কি রে শাড়ি পড়লি যে? -কেনো দাদ তুমি জানো না?গায়ে হলুদে মেয়েদের শাড়ি পরতে হয়। -সে তো যে পাত্রী থাকে তার পরতে হয়। কথাটা বলেই মনে হল, কথাটা বলা উচিত হয় নি! শানু হয়তো লজ্জা পেলো। আর লজ্জা কাটানোড় জন্য এমন কিছু বলতে হবে যেন লজ্জাটা কেটে মুখে হাসি ফুঁটে। -দেখিস যে ভাবে সেজেছিস আবার তোরও বিয়ের প্রস্তাব না আসে। শানু লজ্জা পেয়ে প্রায় দৌড়ে বের হয়ে গেলো। আমি কথাটা বলা ঠিক হল কি না তাই নিয়ে ভাবতে বসলাম। তবে বালিকার মনে রঙ লেগেছে তা আমি বুঝতে পেরেছি অনেক আগেই। যখন দেখেছি, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে দেখতে, চুল আঁড়াতে আঁছড়াতে মুখে হাসি ফুঁটিয়ে তুলতে। এখন আমার চিন্তা শুধু একটাই ও কোন ভুল করে না ফেলে। এখন যে ওর ভুল করারই বয়স! যে ভুলের জন্য হয়তো সবার কাছে মাফ পেয়ে যাবে কিন্তু নিজের কাছে মাফ পাবে না কোন দিনই। . আমি কাপ হাতে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। রান্না ঘরের আগের ঘরটাতে থাকি আমরা তিন ভাইবোন। ঘরে ছোট আছে, আমি একটু উকি মারতেই দেখলাম, ছোট শার্ট গায়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছে। আমি কাপ রাখতে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম, মা এখনও রান্না করছে। -কি রে খোকা কিছু লাগবে? -না মা, চা শেষ। -আর এককাপ দেব? -না। রান্না ঘর থেকে বের হতে গিয়ে আমি আবার ফিরে গেলাম, -আচ্ছা মা, শানুর জন্য একটা পাত্র দেখতে হবে না? -হ্যা রে খোকা। তোর বাবাও তাই বলছিলো। সে না কি কাকে দেখেছে, খুব ভালো ছেলে। তা তোর জানা শোনা কেউ আছে না কি? -না মা। বলে আমি বের হয়ে আসলাম। গিয়ে ঢুকলাম আমাদের রুমে। সেখানে আমাদের ছোট বাবু এখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। -কি রে কি ভাবছিস? -কিছু না দাদ। -শার্ট পছন্দ হয়েছে? -হ্যা। দাদা দেখো শার্টে দুইটি পকেট। আমি ভাবছি একটা খুলে ফেলবো, কেমন জানি পিওন পিওন লাগছে নিজেকে। -না, থাক খোলার দরকার নেই, রেখে দে। বান্ধবীদের চিঠি রাখতে সুবিধা হবে। -কি যে বল না দাদ, আমাকে চিঠি দিবে কে! -থাক আর ঢং করিস না। আর দুটি পকেট থাকলে তো সুবিধা রে। -কি সুবিধা? -দোকানে গিয়ে এক পকেটে মায়ের পান আর অন্য পকেটে বাবার সিগারেট নিয়ে আসবি। আর হাত ফাঁকা থাকল। তাহলে মারা মারি বাদলে আর মার খেতে হবে না । উলটা তুই মেরে আসতে পারবি।ভালো হবে না বল? ছোট আমার কথা শুনে আবার ভাবতে শুরু করে দিলো। আমি বাইরে বের হয়ে আসলাম। করুক আমাদের ছোট বাবু এলাকার বীর, একটু চিন্তা করুক, চিঠি পাও্যার জন্য একটু চিন্তা করতেই হয়, আর বীর দের তো আরো বেশি। . বাইরে স্নিগ্ধ বাতাস বইছে, তার সাথে বেলি ফুলের সুগন্ধ, যেন এক মোহময়ী নারীর চুল উড়ে যাচ্ছে নাকের ঢগা দিয়ে। যাকে ছুয়ে দেখা নিষেধ! শুধু মাত্র অনুভব করতে হবে। আমি আদেশ মান্য করে তাকে ছুয়ে দেখার বিন্দুমাত্র স্পর্ধা না করে অনুভব করতে থাকলাম। (প্রথম পর্ব,বিদ্রঃ আমি অতিমাত্রায় হুমায়ুন স্যারের লেখার প্রতি নেশাগ্রস্থ, তাই তার লিখার ছাপ আমার লিখার মধ্যে অবশ্যই থাকবে।) লিখাঃ সাগর আহম্মেদ
Posted on: Fri, 28 Nov 2014 09:44:35 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015