“ বউ , কি কর তুমি ? ঘুমাও - TopicsExpress



          

“ বউ , কি কর তুমি ? ঘুমাও , নাকি ঝিমাও ?” “ না , আমি আমার জামাইয়ের জন্য ঘাস কাটতেছি রাত দুইটার সময় !! আর কিছু জানতে চাস ?” “ না বউ , আমি এতেই খুশি । তুমি আমার জন্য এই গভীর রাতে , ঘুমানো বাদ দিয়া , বসিয়া বসিয়া ঘাস কাটিতেছ , আমি এতেই খুশি ।। এমনিতে তো ডালও রাধতে পারো না , আর ভাত রাধতে গিয়া যে লবণ মিশাও , তাতেও আমার কোন আপত্তি নাই “ “ তুই এই গভীর রাতে কি এইসব প্রেম বাক্য শুনাবার লাইগা আমারে ফোন দিছোস ?” “না , বউ ...। আমি তোমারে ফোন দিছিলাম , আমার জন্যে তোমার মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত ভালবাসাটাকে একটু জাগিয়ে তুলতে !” “ আমি শিওর , তোরে পাবনায় পাঠানোর টাইম চলে আসছে “ “ বউ রে , এতো কিছু বোঝো তুমি , মন বোঝোনা “ “ রুদ্র , রাত এখন সোয়া দুইটা বাজে ...। কাল আমাদের দুইজনেরই প্রেইজেন্টেশন আছে ...... প্লিজ , দোস্ত , এখন এইসব ফাজলামি রাখ । আমারে একটু ঘুমাইতে দে’ ‘ঠিক আছে বউ , তুমি ঘুমাও ... আর আমি রাতের আকাশের তারা গুনি’ ‘ আর , সেইসাথে বসে বসে মাছিও মার’ বলেই আমি ফোনটা কেটে দিলাম । এই পাগলটারে নিয়া আমি সত্যি খুব বিপদে আছি ! আল্লাহই জানেন , বিয়ের পর আমার কি হবে !! ২ আমার ইউনিভার্সিটি জীবনের দ্বিতীয় দিন । ছোট বেলা থেকেই আমি একটু চুপচাপ স্বভাবের , নিজ থেকে যেচে কারোর সাথে কথা বলতে পারিনা । নিজের সিটে বসে আছি ক্লাস শুরুর অপেক্ষায় । হঠাৎ কে যেন আমার পিঠে একটা ঢিল মারলো । পিছন ফিরে দেখি অনেকগুলো ছেলে জটলা পাকিয়ে , ডেস্কের উপর বসে আছে আর গল্প আর হাসাহাসি করছে । পাশে ফিরে দেখি , একটা দলাপাকানো কাগজ ডেস্কের নিচে পড়ে আছে । নিচু হয়ে ওটা তুলে আনলাম । কাগজটা খুলতেই দেখি , তাতে লিখা , “ মিস সামিয়া সুপ্তি খান কি আপনি কটকটি ?” আরে আজব ! এইটা কেমন ফাজলামি ! আমার যে এতো রাগ লাগলোনা ! আবারো পিছনে তাকালাম , এই কাগজটা কে ঢিল মারছে , তা খোজার জন্য । কিন্তু , এতগুলো ছেলের মাঝে আসল বদমাশটাকে খুজে পেলাম না । প্রায় এক মাস পরের ঘটনা । একদিন সকালে যখন ইউনিভার্সিটির গেটে, রিক্সা থেকে নামছি , তখন খেয়াল করলাম যে , রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দেওয়ার মতো ভাংতি আমার কাছে নাই । পাশের টংদোকানে গেলাম ভাংতি করাতে । হঠাৎ পাশ থেকে কে জানি বলে উঠলো , “ কেন , ভাংতি টাকাগুলো দিয়ে কি কটকটি খেয়েছ নাকি ? “ চমকে উঠে পাশে তাকাতেই দেখি , একটা ঢ্যাঙ্গামতন ছেলে , দেখতে একদম বখাটেদের মতো , আমার দিকে তাকিয়ে , তার বত্রিশ খান দাঁত বের করে হাসতেছে ! তারমানে , এই সেই পাবলিক , যে আমায় ঐদিন ওই ফালতু ছড়া লিখে কাগজটা ঢিল মারছিল ! ঐদিকে দোকানদারমামা বলছে , ‘ আপামনি , যদি কিছু না কিনেন , তাই কেমনে ১০০ টাকার ভাংতি দেই ?’ আমি কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলে উঠলো , ‘ মামা , তাইলে একটা কাজ কর । আমারে পাঁচটা বেনসন দাও , আর ওনারে বাকি ষাট টাকা ফেরত দাও । ‘ আমি তো অবাক ! বলে কি এই ছেলে ! অবশেষে মুখটা খুললাম , ‘ এই যে মিস্টার ! আপনার প্রব্লেম কি ? সিগারেট খান তো নিজের টাকায় কিনে খান ! আমার টাকাগুলো পোড়ানোর কি দরকার ?’ ‘মিস কটকটি বেগম , এইখানে আপনি ভাংতি পাবেন না , যদি না আপনি কিছু কিনেন । আর আপনি তো সিগারেট খান না , তাই সিগারেটগুলো আমিই নিলাম । তবে , এইখানে যদি কটকটি পাওয়া যেত , তবে ওইটাই আমি কিনতাম আপনার জন্য ‘ বলেই উনি আমার সামনে দিয়ে গট গট করে চলে গেলেন । কিন্তু , একটু দূরে যেতেই , হঠাৎ থেমে গেলো , আর আমার দিকে ফিরে একটা হাসি দিল । তারপর চলে গেল EEEয়ের বিল্ডিংয়ের দিকে । কেন জানি , ছেলেটার এইভাবে আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে , এইভাবে হাসতে দেখে আমি একটু অবাকই হলাম । ছেলেটা একটু ঢ্যাঙ্গা টাইপের দেখতে হলেও , হাসিটা অনেক সুন্দর । মুহূর্তেই মনের সব খারাপ অনুভতিগুলো চলে গিয়ে , একটা ভালোলাগা কাজ করতে শুরু হল । আচ্ছা , ছেলেটার নামটাও জানা হল না ! ক্লাস শেষে যখন রিকশায় উঠলাম বাসায় যাওয়ার জন্য । ওই ছেলেটার কথাই মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে । ও আমাদেরই সেকশনে । কয়েকবার চোখাচখি হয়েছে , প্রত্যেকবারই উনি আমাকে ভেংচি কেটেছেন , কিন্তু কোন কথা হয়নি । হটাত রিক্সায় কে যেন উঠে পড়লো আমার পাশে । আমি তো চমকিয়ে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখি , সেই ঢ্যাঙ্গা ছেলেটা , আমার পাশে বসে !! ‘ এই ছেলে , তুমি আমার রিক্সায় কি করছো ? নামো , এক্ষুনি নামো আমার রিকশা থেকে !’ ‘ কি ভাবে নামবো ? লাফ দিয়ে , নাকি ঝাপ দিয়ে ?’ ‘ যেভাবে নামতে ইচ্ছা হয় , সেইভাবে নামো । কিন্তু আমার রিক্সা থেকে নামো ।‘ ‘ কেন গো ? আমি কি তোমাকে জ্বালাচ্ছি , নাকি কামড়াচ্ছি , যে আমাকে তুমি নামিয়ে দিতে চাও ? আজ রাস্তায় এমনিতেই রিক্সা অনেক কম । তুমি নিজেইতো আধাঘণ্টা দাড়িয়ে থেকে তারপর রিক্সা পেলে । প্লিজ ইয়ার , এমন কইরো না । আমি তোমার বন্ধু মানুষ , তাছাড়া আমি অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট লেজবিশিষ্ট ছেলে , আমার মতো ভালো ভদ্র পোলা তুমি এই পৃথিবীতে আর একটাও খুজে পাবে না ! অবশ্য তুমি যদি মহাকাশে খুজতে যাও , সেটা আলাদা কথা ‘ বলেই তার বিখ্যাত ভেংচি মার্কা বত্রিশটা দাত বের করা হাসি দিল আমার দিকে চেয়ে । কেন জানি , ওর উপর কোন রাগ হচ্ছিলোনা । বরং , ওর কথাগুলো শুনে অনেক মজা পাচ্ছিলাম । কখন যে ওর এমন কাণ্ডকারখানা দেখতে দেখতে আমি খিল খিল করে হাসতে শুরু করে দিয়েছিলাম , আমি নিজেও জানি না । সেইদিন থেকে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব শুরু হল । জানতে পারলাম , ওর নাম রুদ্র । ফোন নাম্বারও আদানপ্রদান হল রিকশাতেই । এইভাবে আমাদের বন্ধুত্বের সূচনা । আমার ভার্সিটি লাইফের একমাত্র ফ্রেন্ড হয়ে গেল রুদ্র । প্রায় সবসময়েই আমার আশেপাশে থাকতো ও । অনেক ভালো understanding ছিল আমাদের মাঝে । assingmentএর সময়ও আমরা দুজন একই গ্রুপে থাকতাম । ও অবশ্য অসম্ভব ধরনের ফাঁকিবাজ টাইপের ছেলে । তাই , assingmentয়ের বেশিরভাগ কাজ আমিই করতাম , আর , ও হয় ওর বান্দর টাইপের বন্ধুগুলোর সাথে লাফালাফি করতেছে , নাহলে গিটার বাজাচ্ছে । মাঝে মাঝে রাত জেগে ফোনে কথা হত ওর সাথে । জীবনে প্রথম কোন ছেলের সাথে ফোনে কথা বলছি আমি , তাও এতো সময় ধরে । বেশিরভাগ কথা অবশ্য আমিই বলতাম , আমার ছোটবেলার কথা , আমার প্রিয় অপ্রিয় সবকিছু নিয়ে । ও শুনতো আর হাসতো । আমার গলা শুনেই ও বুঝে যেত আজ আমার মন ভালো , নাকি খারাপ । যেদিন মন খারাপ থাকতো , সেইদিন এতো মজার মজার জোকস বলতো যে , হাসতে হাসতে আমার পেটে খিল ধরে যেত । কখনো আবার গান শুনাতো আমায় গিটার বাজিয়ে , ওর নিজের লেখা গান । গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পরতাম , তা আমি নিজেও টের পেতাম না ...... এইভাবে দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল । পড়াশুনা , ক্লাস , সেই সাথে রুদ্রর দুষ্টুমিতো আছেই । অসম্ভব জ্বালায় ও আমাকে । কিন্তু , ওর এই দুষ্টুমিগুলো অনেক ভালো লাগতো আমার । এরই মধ্যে একদিন , আমাদের এক সিনিওর আমায় টিজ করেছিল বলে , ঐ ছেলের সাথে রুদ্র প্রায় মারামারি লাগিয়ে দিয়েছিল । এর পর থেকেই ভার্সিটিতে আমাদের দুজনকে নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল । আমরা পাত্তা দিতাম না । কারন , আমি জানতাম , রুদ্র আমাদের এক বছরের জুনিওর , ভার্সিটির heartthrob রিয়ার প্রেমে মসগুল । মারাত্তক সুন্দরী মেয়েটা । গেল বছর lux channel I superstar য়েও ডাক পেয়েছিল । কিন্তু বেশীদুর যেতে পারেনি । ভার্সিটির সব ছেলেরাই ওর জন্য পাগল । কিন্তু , ও নিজ থেকে খুবই অল্প সংখ্যক ছেলেদের পাত্তা দেয় , আর তাদের মধ্যে রুদ্র একজন । 3rd yearয়ে উঠার পর থেকেই রুদ্রের সাথে আমি একটু দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করি । আসলে । এরই মধ্যে , রিয়া নিজেই রুদ্র কে propose করেছে । রুদ্রই বলেছে আমাকে । রিয়ার পাঠানো msgটাও আমায় দেখিয়েছে । তারপর জিজ্ঞাসা করল , ওর এখন কি করা উচিত ? আমি আর কি বলতাম ওকে , এতো সুন্দর একটা মেয়ে ওকে নিজ থেকে propose করেছে , তাছাড়া ওকে রুদ্রের পাশে ভালোই মানাবে । তাই বললাম ওকে , ‘ভালোই হল , এতদিনে তোর একটা গতি হল । এইবার তুই ঠিকই বান্দর থেকে মানুষ হবি ।’ কথাগুলো শোনার পর , ও কিছুই বললোনা । চুপচাপ আমার পাশ থেকে উঠে চলে গেল । কিচ্ছুক্ষণ পর , আমার মোবাইলে একটা msg আসলো ওর নাম্বার থেকে । তাতে লিখা , “ আমি তোকে খুব জ্বালাই , তাই না ?” ৩ সময় কেটে যাচ্ছে নিজের গতিতে । রুদ্রর সাথে ওভাবে আগের মতো আর মেশা হয় না , কথাও হয়না । ভার্সিটিতে লেকচার আর assignment নিয়ে বিজি থাকতাম । কিন্তু রাতের বেলায় খুব কষ্ট হতো , খুব ওর কথা মনে পরতো , একমাত্র ওইতো ছিল যার সাথে আমি মন খুলে কথা বলতে পারতাম । মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হতো , যখন ওর কথা মনে পরতো , মনে হতো বুকের মাঝে একটা বড় পাথর চেপে বসে আছে , শ্বাস নিতে যেন খুব কষ্ট হচ্ছে । কখন যে ওর কথা ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো জলে ভরে আসতো , তা নিজেও বুঝতাম না । প্রতিটা মুহূর্তে অনেক মিস করতাম ওকে । মনে হতো , ওকে মনের সব কথা বলে দেই । ওকে বলে দেই , কত কষ্ট হয় আমার যখন ওকে রিয়ার সাথে বসে গল্প করতে দেখি । কিন্তু কথাগুলো আর ওকে বলা হয়ে উঠে না । ৪ একরাতে আমি পড়ছিলাম । পরদিন আবার আমার quiz test । হঠাৎ রাত একটার দিকে আমার মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো । ফোন ধরতেই কেউ একজন আমায় মোটা গলায় প্রশ্ন করল , ‘সামিয়া সুপ্তি বলছেন ?’ ‘জী , বলছি । আপনি কে বলছেন ?’ ‘আমি আপনার জামাই বলছি’ ‘what the hell are u talking about ? who are u ?’ ‘ বাহ ! আমার বউ দেখি কুটুর কুটুর করে ভালোই ইংলিশে কথা বলতে পারে !’ আমি ভয় পেয়ে ফোনটা কেটে দিলাম । কিছুক্ষন পর আবার ফোন , ঐ নাম্বার থেকে । আমিতো তো টেনশনে পড়ে গেলাম । এইরকম ফাজলামিতো কখনো কেউ করেনি আমার সাথে । ইতিমধ্যে , আমার মোবাইলের স্ক্রীনে দশটা মিসকল ঐ নাম্বারটা থেকে । আবারো ফোনটা বাজতে শুরু করল । এইবার ফোনটা রিসিভ করলাম । ‘হ্যালো , কে আপনি ? এইভাবে এতো রাতে আমায় ডিস্টার্ব করছেন কেন ?’ ‘কেন ডিস্টার্ব করব না আপনাকে ? আপনি জানেন না , আপনাকে ডিস্টার্ব না করলে আমার পেটের ভাত হজম হয় না , রাতে ঘুম হয় না ?’ কথাগুলো শুনতেই বুকটা ধরাস করে কেপে উঠলো । আরে ! এই কথাটাতো রুদ্র বলতো । কিন্তু রুদ্রর গলা তো এতো মোটা না ! কোন মতে বলতে পারলাম একটাই কথা , ‘আপনি কে কথা বলছেন ?’ ‘ মিস কটকটি বেগম , আপনি আমায় এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাবেন , এতটা অবশ্য আশা করি নাই । যাই হোক আমি হচ্ছি আপনার প্রাক্তন বন্ধু রুদ্র । কি , এখনো চিনতে পারলেন না আমায় ?’ ‘ তোর ভয়েস এতো মোটা শোনাচ্ছে কেন ?’ ‘ খোঁজখবর তো নিস না । নিলে জানতিস , আমি গত চারদিন ধরে সর্দি জ্বরে ভুগছি । অবশ্য নিবিই বা কেন ? আমি তোর কে এমন যে , আমার খোঁজখবর তোর রাখতে হবে ?’ গলার কাছে কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে আছে । ইচ্ছা করছিলো , বলে দেই আজ আমার মনের সব কথা , ওকে ভেবে আমার নির্ঘুম রাতের কথা । কিন্তু আজ গলা দিয়ে কোন শব্দই বের হচ্ছে না । ‘ দেখ , কটকটি বেগম , এখন মোটেও কান্নাকাটি করার টাইম না , এমনিতেই আমার মোবাইলের balance শেষের পথে । শোন , কাল একটু ক্লাস শেষে আমাকে একটু টাইম দিস । আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে তোকে ’ ‘কোথায় যাবো ? কেন , কি হয়ছে ?’ ‘তোরে কইছি আমার সাথে যেতে , যাবি , এতো কথা কিসের ? ফোন রাখলাম , ব্যালান্স শেষ । এইবার ভ্যা ভ্যা করে কাঁদ ’ বলেই বদমাইশটা ফোনটা খট করে কেটে দিল । আরে আজব , আমাকে কথা বলারও সুযোগ দিলোনা একফোটাও । আচ্ছা , ও আমাকে এই ভাবে বউ বউ করে ডাকছিল কেন ? আজবতো !!!!! পরদিন ক্লাস শেষ করে যখন বের হচ্ছিলাম , তখন ভিড়ের মধ্যে কে যেন আমার ডান হাতটা ধরে টানতে টানতে হাটা শুরু করলো । চেয়ে দেখি , রুদ্র ! ‘আরে , তুই কি করছিস ? এইভাবে হাত ধরে টানাটানি করছিস কেন ? মানুষ কি বলবে ?’ ‘সুপ্তি , দেখ , ফটর ফটর করা বন্ধ কর । চুপচাপ আমার সাথে চল !’ বলেই আমাকে ওর বাইকের পিছনে উঠালো আর বাইক চালানো শুরু করলো । ‘ বলনা রুদ্র , কই যাচ্ছি আমরা ?’ ‘কাজি অফিস !’ ‘মানে কি ?’ আমি চিল্লায়ে উঠলাম । ‘মানে হচ্ছে , আজ তোরে আমি বিয়ে করমু’ ‘মানে কি ? কি সব উলটা পাল্টা কথা বলছিস ? বাইক থামা বলছি , এক্ষুনি তোর বাইক থামা !’ ‘এই মুহূর্তে বাইক থামানো যাবেনা । তবে তুই যদি বাইক থেকে নামতে চাস , তাইলে আল্লাহর নাম নিয়া একটা লাফ দে !’ আমি যে কি করব কিছুই বুজতেছিলাম না । টেনশনে পড়ে গেলাম , পাগলটা কি প্ল্যান করছে , তা আল্লাহই জানেন ! অবশেষে বাইকটা থামলো । সামনে তাকিয়ে দেখি , কাশবন । ‘ কি ব্যাপার , আমাকে কাশবনে নিয়ে এলি যে ?’ ‘ওহ , তার মানে ম্যাডাম সত্যি সত্যি কাজি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি ছিলেন ? ঠিক আছে চলেন , এখুনি কাজি অফিসে যাই ’ ‘কি যে বলিস না তুই ! এখন বল কি হইছে ? এইরকম অস্থির বিহেব করছিস কেন ? আর এমন বউ বউ করছিস কেন কাল রাত থেকে ? জানিস , কাল রাতে তোর ওই ফাজলামিতে আমি খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ! ’ ‘ এতদিন জানতাম , কোন মেয়েকে বউ বলে ডাকলে , সে নাকি অনেক খুশি হয় । আর এইদিকে , আমার বউরে আমি বউ বলে ডাকলে , সে নাকি ভয় পায় ! আল্লাহগো ! আমার কি হইব গো ??” “ রুদ্র , প্লিজ দোস্ত , ফাজলামি বন্ধ কর । তুই কিন্তু আমার মেজাজটা অসম্ভব খারাপ করে দিচ্ছিস ! আর , আমি তোর কোন জন্মের বউ হই ! একটা থাপ্পর মারব তোকে এই টাইপের উল্টাপাল্টা কথা আর একবারও যদি বলিস !’ ‘ তুই আমারে থাপ্পর মারবি ??? যে মেয়ে আজ পর্যন্ত একটা মশাও মারতে পারলোনা , সেই মেয়ে নাকি আমারে থাপ্পর লাগাবো ! ঠিক আছে , মারতে চাইলে মারতে পারিস ! আমি তাইলে তোর নামে স্বামী ও পুরুষ নির্যাতন আইনে মামলা করুম !’ আমার কাছে ওর এমন ফাজলামি মার্কা কথাবার্তা আর ভালো লাগছিল না । আমি কিছু না বলেই উল্টা দিকে হাটা শুরু করলাম । ‘ আরে সুপ্তি , ওই দিকে কই যাস ? ওইখানে কি কোন কটকটি মামা কেনাবেচা করতেছে নাকি ? আগে বললেই পারতিস , আমিই তোরে কটকটি কিনে দিতাম।’ ‘আমি কটকটি কিনতে যাচ্ছি না । এইখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তোর ফালতু বকবকানি শোনার চেয়ে বাসায় চলে যাওয়া অনেক ভালো । আর , আমি রিয়া না , আমি সুপ্তি ! যাকে বউ ডাকার কথা , তারে গিয়া বউ ডাক !’ ‘দেখ সুপ্তি , ভাব মারবিনা । তুইই বললি , যারে বউ ডাকার কথা , তারে গিয়া বউ ডাক ! এইজন্যই তো তোরে বউ বলে ডাকতেছি ! ’ কথাটা বলেই রুদ্র ওর ব্যাকপ্যাক থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিলো । আমি জিজ্ঞাসা করলাম , ‘ প্যাকেটে কি ?’ ‘আহা , সুপ্তি , এতো কট কট করে কথা না বলে প্যাকেটটা খুলে দেখলেইতো পারিস !’ ওর কথামতো প্যাকেটটা খুললাম । দেখি একটা সবুজরংয়ের ওড়না , সুতার কাজ করা তাতে । আরে , এটাতো সেই ওড়নাটা , যেটা অনেকদিন আগে নিউমার্কেটে দেখেছিলাম । সেইদিন পার্সে তেমন টাকা ছিলনা বলে , ওড়নাটা আর কেনা হয়নি । পরে তো আর ঐদিকে যাওয়াই হয়নি , ভুলেও গিয়েছিলাম ওড়নাটার কথা । কিন্তু এটার কথা রুদ্র কিভাবে জানলো ? প্রশ্ন চোখে ওর দিকে তাকাতেই , উনি আমাকে একটা ভেংচি কেটে উনার সেই বিখ্যাত বত্রিশখান দাঁত বের করা হাসি দিয়ে বললো , ‘ কিরে , পছন্দ হয়েছে তোর ? অনেক শখ করে আমার বৌটার জন্যে কিনেছিলাম রে ! তোকে এই ওড়নাটা পড়লে অনেক মানাবে ।’ ‘হুমম , অনেক পছন্দ হয়েছে । কিন্তু হঠাৎ এই ওড়না ? আর সেই কখন থেকে বউ বউ করতেছিস , কে তোর বউ ?’ ‘বউ , সবাই বুইঝা গেল , খালি তুমিই বুঝলা না আমার মনের কথা !’ ‘ মানে ?’ চিল্লায়ে উঠলাম আমি । রুদ্র আর কোনো কথার উত্তর দিল না । একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সে আমার দিকে । অনেক গভীর ছিল ওর চোখের ভাষা , আমি আর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছিলামনা । অনেক কষ্টে ওর সামনে নিজেকে শক্ত করে মুখোমুখি হয়েছি । পাথরের মতো শক্ত হয়ে কি যেন বুকের মাঝে চেপে ধরে আছে এখন। নিঃশ্বাসটাও যেন ঠিকমতো নিতে পারছিনা .... বুকভরে শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে খুব ...... চোখ নামিয়ে ফেললাম নিচের দিকে . যাতে ও কিছুই না বোঝে আমার চোখ দেখে । ওড়না তখনোও আমার হাতেই ধরা ছিল । হঠাত্ রুদ্র আমার হাত থেকে ওড়নাটা প্রায় টান মেরেই নিয়ে নেয় ওর কাছে । তারপর , আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ও ওড়নাটা আমার মাথার উপর দিয়ে দেয় । এরপর ও মুখ খুললো, ‘সুপ্তি , আজ তোকে একদম বউদের মতো লাগছে । সুপ্তি , তুই আমার বৌ হবি ? আমার সোনাবউ ?’ কিছুই বলতে পারছিলামনা তখন । মাথা একদমই কাজ করছেনা । কানের মাঝে শুধু রুদ্রের একটা কথাই যেন বার বার শুনতে পাচ্ছি , ‘ তুই আমার বৌ হবি ? আমার সোনাবউ ?’ ‘বলনা সুপ্তি , হবি তুই আমার সোনাবউ ? আগলিয়ে রাখবি তোর এই অগোছালো পাগল রুদ্রকে ? তুই যেদিন থেকে আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকা শুরু করলি , জানিস , সেইদিন থেকে আমার গলায় আর গানের সুর আসেনা । গানের ডাইরীতে আর নতুন গান লিখা হয়না । কেন সুপ্তি কেন ? কেন বুঝলিনা তোর এই রুদ্রকে ? তোর কি একবারো আমাকে নিয়ে কোনো ভালোলাগা কাজ করেনি ? বল সুপ্তি , আজ আমি তোর মুখ থেকে তোর মনের কথা জানতে চাই । আজ যদি আমাকে তুই ফিরিয়েও দিস , তাতেও আমার কোনো কষ্ট হবেনা ! শুধু , একবার বল , তুই কি আমাকে একটুকুও ভালোবাসিস না ? ‘ আমার চোখ দিয়ে যেন তখন শ্রাবণমেঘের বৃষ্টি ঝড়ছে , কি বলবো কিছুই বুঝতেছিনা । কোনোমতে অস্ফুষ্টস্বরে এতটুকুই বলতে পারলাম , ‘কিন্তু তোর সাথে না রিয়ার রিলেশন আছে ?’ ‘আরে টিউবলাইট , পুরা ভার্সিটি জানে আমি তোরে ভালোবাসি , আর উনি এখন আইসা কন , আমার সাথে নাকি রিয়ার রিলেশন আছে !’ ‘কিন্তু তোকে যে রিয়ার সাথে ঘুরতে দেখতাম , ওর সাথে গল্প করতে দেখতাম ?’ ফোস ফোস করে কাদতে কাদতেই কথাটা জিঞ্জাসা করলাম ওকে । ‘হায় আল্লাহ ! আমি এই মাইয়াডারে নিয়া কি করুম ! সুপ্তি , তোরে যদি আমি টিউবলাইট কই , তাইলে টিউবলাইট সমাজ হাইকোর্টে মানহানির মামলা করবে আমার নামে ! তোরে তো সোডিয়াম লাইট বলা উচিত ! আরে গাধা , রিয়ার সাথে কোথায় একটু ঘুরলাম , তাতেই তোর এই অবস্থা । যখন অন্য মেয়ে ক্লাশমেটদের সাথে ঘুরি , তখনতো কিছু বলিসনা ।’ ‘কিন্তু রিয়া যে তোকে প্রপোজ করছিল ? আমাকে যে msgটা দেখালি ?’ ‘ওরে আমার সোডিয়াম লাইট ! তোকে বলবোনা তো কারে বলবো আমার সব কথা , আমাগো ডিপার্টমেন্টাল হেড কে !!!!! আরে গাধা মেয়ে , যে ছেলের পেটের ভাত হজম হয়না ,যতহ্মন না তোকে আমার দিনের সবকিছু বলি , সেই ছেলে রিয়ার প্রপোজ করার কথা তোকে বলবে নাতো , কারে বলবো ? অবশ্য রিয়া খুব একটা খারাপ না , বিয়ের পর ওর সাথে পরকিয়া করা যাবে ! জানিস না , বিয়ের পরের প্রেমই নাকি আসল প্রেম !’ কথাটা বলেই ও জ্বিহায় কামড় মারলো । আমি ওরদিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই , ও ওর দুহাত দিয়ে আমায় ওর বুকের মাঝে টেনে নিল । এইবার আর নিজেকে পারলাম না সামলিয়ে রাখতে । হু হু করে কেদে ফেলি ওর বুকে মাথা রেখে । ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে , “এই পাগলী , এই আমার পাগলী বউ , এইভাবে কাঁদে কেউ ? আরে , এইভাবে কাদে না সুপ্তি । তোকে এইভাবে কাঁদতে দেখলে মানুষ কি ভাববে বলতো ? আর , এতো যে কান্নাকাটি করছিস , তোর সর্দিতো আমার টিশার্টে লেগে যাবে রে ! তখন টিশার্টটা কে ধুয়ে দেবে , আমার সোনাবউ ? ” উফফ ! এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারলাম না ! এতো ফাজলামি করে ! নিজের বউটাকেও ছাড়লো না ! ৩ এর কয়েকদিন পর , ওর আম্মু মানে আন্টি আসলেন আমাদের বাসায় , আমাকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেলেন আর কড়া নির্দেশ দিয়ে গেলেন , আজ থেকে যেন আন্টিকে আমি মা বলে ডাকি । ঠিক হলো , আমাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলে আমাদের আকদ হবে । ঐদিন রাতে বদমাশটা ফোন দিয়ে বলে , জানিস কটকটি বেগম ! আমাদের ভার্সিটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে , আমার সাথে সামিয়া সুপ্তি নামের একটা মেয়ের আকদ হবে । আমাদের বিয়েতে আসিস কিন্তু , তোরে স্পেশাল ইনভাইটেশন দিলাম আমাদের বিয়েতে !” আমি বললাম , “আসবো আসবো ! তোর বিয়েতে আমি না আসলে তো , তোর বিয়েই হবেনা রে ” ‘এইতো ! এতদিনে টিউবলাইটে আলো জ্বলছে । গুডনাইট সোনাবউ !’ আর , এইদিকে ভার্সিটিতেও আমার রহ্মা নাই পাজিটার হাত থেকে । সারাহ্মণ মুখে একটাই কথা , বউ আর বউ ! বউ , আমার কলমের কালি শেষ হয়েছে , তোর কলমটা দে ! বউ , চল ক্যান্টিনে চা খাই । বউ , দশটাকা দে , ভাংতি নাই , বেনসন খামু ! বউ , দেখ দেখ মাইয়াটা কতো জোশ ! মাঝে মাঝে মনে হয় , আমার আসল নাম যে সুপ্তি , এটা বুঝি রুদ্র ভুলেই গেছে ! ৪ না ! ফোনটা এইভাবে কাটা ঠিক হয়নি । বেচারা আমায় এতো মিস করে , এতো ভালোবাসে , আমিতো ওরমতো এইভাবে অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারিনা । ইশশ ! ও কত আশা নিয়ে ফোন দিয়েছিল আমার সাথে কথা বলবে বলে , আর আমি বোধহয় ঘুমের ঘোরে কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছি , সেগুলোও এখন মনে করতে পারছিনা । কি করবো , কি করবো , এটা ভাবতে ভাবতে ওর নাম্বারে ডায়াল করি । একবার রিং হতেই ফোনটা ধরলো ও । আমি হ্যালো বললাম , কিন্তু ও প্রান্ত থেকে কোনো সারাশব্দ নেই । কিছুহ্মণ পর ওর গলা শুনতে পেলাম । “সুপ্তি , তোকে অনেক ভালোবাসিরে ” “আমি তোকে অনেক ভালোবাসিরে । স্যরি রুদ্র তখন এইভাবে কথা বলার জন্য । কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল , তাই মাথা একদমই কাজ করছিলোনা । ” “বউ , একটা গান গুনবি ?” “তুই শোনাবি ?” ওই প্রান্ত থেকে কোনো সাড়াশব্দ দেই । শুধু গিটারের টুংটাং শব্দ শুনতে পাচ্ছি । এইতো এখন ওর গলা শুনতে পাচ্ছি ..... যখন নিঝুমরাতে সব কিছু চুপ ...... নিষ্প্রাণ নগরীতে ঝিঝিরাও ঘুম ...... আমি চাদের আলো হয়ে তোমার কালো ঘরে জেগে রই সারানিশি এতোটা ভালোবাসি
Posted on: Wed, 05 Nov 2014 10:27:44 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015