মার্কসের ‘আফিম’ আর শফির ‘তেতুঁল’ মূর্খদেরকে বিভ্রান্ত করেছে সৈয়দ মবনু কার্ল মার্কস বললেন ধর্ম আফিনের মতো নেশা তৈরি করে। আমাদের বাম বন্ধুরা মনে করলেন কার্ল মার্কস ধর্মকে খারাপ বলেছেন। তারা একবারও পড়ে দেখলেন না ধর্ম আফিনের মতো নেশা তৈরি করার কথা বলে কার্ল মার্কস কি বুঝাতে চেয়েছেন। তারা পড়েন নি কার্ল মার্কসের ধর্ম বিষয়ক অন্য গ্রন্থটিও। কার্ল মার্কসের গুরু হেগেলস ছিলেন একজন খ্রিস্টান ধর্মবাদি সমাজতান্ত্রিক। বর্তমান বামদের মতো তৎকালিন ইয়ং হেগেলিয়ানরা হেগেলের বিরোধীতা শুরু করলে কার্ল মার্কস তাদের সমালোচনা করে বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখেছেন। এই সব সমালোচনা আছে কার্ল মার্কসের ‘জার্মান ভাবাদর্শ’ গ্রন্থে। চরিত্রহীন দুষ্ট ক্ষমতালোভী বামরা মানুষকে ধর্ম থেকে দূরে নিয়ে যেমনে ইচ্ছে তেমনে ব্যবহারের জন্য এবং পূঁজিবাদিদের স্বার্থে কার্ল মার্কসকে ধর্ম বিদ্বেষি বলে প্রচার করলো। অথচ মার্কসের বিষয় ধর্ম নয়, ছিলো অর্থনীতি। কিন্তু বামদের অপপ্রচারে বিশ্ববাসি জানলো মার্কস মানে ধর্মদ্রোহী। সুবিধাটা হলো পূঁজিবাদের। মার্কসের যেটুকু উন্নত চিন্তা ছিলো সবই গেলো বিফলে। একইভাবে একাত্তরের স্বাধীনতার পর দেশটাকে গড়ার আগেই বামরা শুরু করে দিলো হৈ চৈ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেল থেকে বের হয়ে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে আসার আগেই বামরা দেশটাকে বিক্রি করার সকল ব্যবস্থা সম্পর্ণ করে। শেখ সাহেব দেশে ফিরে দেখেন তাঁর চার দিকে বাম চোররা বসে আছে। তিনি চিৎকার দিয়ে বারবার বিষয়টিকে জাতির সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু চারদিকে চোর থাকলে কে শোনে তাঁর কথা। বঙ্গবন্ধু যখন দেশটাকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করতে চেষ্টা করলেন, যখন বামদের অশুভ আচরণ থেকে নিজকে রক্ষার জন্য বললেন তোমরা আমাকে লাল চোখ দেখাবে না। তোমাদের জানা প্রয়োজন আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। তখন আমরা বুঝিনি তাঁর এই চিৎকারের উদ্দেশ্য কি। আজকের বঙ্গবন্ধুর নৌকার তথ্য মাঝি হাসানুল হক ইনুর মতো বামরা আমাদের গোটা জাতিকে উল্টো বুঝিয়েছেন বঙ্গবন্ধু দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো দেশপ্রেমিককে ভুল বুঝলাম। বাসর চোকের সামনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পটভূমি তৈরি করে দিলো বামরা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তাঁর রক্তের উপর নৃত্য করলেন ইনু সাহেবের মতো বামরা। তারা ভেতর বাইর থেকে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যকে গোটা জাতির সমানে ভুলভাবে উপস্থাপন করলেন। বিপদে পড়লেন বঙ্গবন্ধু। কিছু করার ছিলোনা তাঁর স্বপরিবারে জীবন দিয়ে আপোষহীন থাকা ছাড়া। আমার কেনো জানি মনে হয় শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গন্ধুর সরকারের মতোই বিপদে এবং ভয়ে আছে বামদের ষড়যন্ত্রের সামনে। আল্লাম শাহ আহমদ শফি’র একটা বক্তব্য নিয়ে বামরা আবার মাঠে ভুল ব্যাখ্যায় তৎপর। নারীকে তিনি তেঁতুলের সাথে উপমা দিয়েছেন। কার্ল মার্কসের ধর্ম আফিমের ব্যাখ্যা যেমন বামরা বুঝেনি, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তারা আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে। তেমনি তারা শাহ আহমেদ শফির নারীকে তেঁতুলের সাথে উপমা বুঝে নি। কিংবা বুঝলেও তারা বিভ্রান্তি বিস্তারের জন্য অপব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি কথাকে লম্বা করতে চাই না। বামদের অনেকের ঘরের খবর আমার কাছে আছে। পর নারী দেখলে নিজের স্ত্রী ফেলে কেমনে দৌঁড়েন তাও আমি জানি। জানি তারা কেমনে নারীকে আরো কাঁচা ভাষায় উপমা দেন। আমি সেই সকল উপমা এখানে উচ্চারণ করতেও লজ্জাবোধ করছি। নারী আমার মা, আমি তাঁকে মা বলে সম্মান করি। নারী আমার বোন আমি তাকে বোন বলে স্নেহ বা সম্মান করি। নারী আমার প্রেমিকা বৌ, আমি তাকে বৌ বলে ভালোবাসি এবং সম্মান করি। কিন্তু মাকে আর বৌকে দৃষ্টিগত দিকে এক পাল্লায় নিলে পাপ হয়। মা, মাই, বৌ বৌ। আর নারী যখন পরকিয়া করে তখন সে তেতুঁল ছাড়া আর কি? পরকিয়া কি হয় না সমাজে? পতিতালয়ে যে নারী যায় সেও কি তেতুঁল নয়? আহমদ শফি তাঁর বক্তব্যে বার বার বলেছেন-নারী আমাদের সম্মানের জিনিষ। তাদেরকে সম্মানের সাথে রাখতে হবে। আমি এখানে একটি কথা বলতে চাই। শাহ আহমদ শফি আমার আদর্শ না, আমার আদর্শ হযরত মুহাম্মদ (স.)। আমি শাহ আহমদ শফি কিংবা অন্য কারো মধ্যে যতটুকু রাসুল (স.) কে পাই ততটুকু গ্রহণ করি। বামদের মধ্যে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব-আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। আমি তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলতে চাই দয়া করে বেশি করে পড়তে চেষ্টা করুন এবং একমুখি পড়া বাদ দিয়ে বহুমূখি পড়ার অভ্যাস করুন। কারণ বাংলাদেশের বামরা পড়েন কম। তারা যতটুকু পড়েন তাও শুধু বাম নোট বই। ফলে তারা বামের উপর মৌলবাদি হয়ে যান। তারা মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, অথচ তারাই থাকেন বড় মৌলবাদি। প্রকৃত অর্থে তারা মৌলবাদ শব্দের অর্থই বুঝেন না। তারা মৌলবাদ বলতে বুঝেন ইসলামী রাজনীতি। আমি তাদেরকে বলি ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলুন আমার আপত্তি নেই, কিন্তু মূর্খদের মতো-অন্ধদের মতো না। ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলুন ইসলাম সম্পর্কে জেনে। বটতলার বই পড়ে যদি মনে করেন ইসলামের জ্ঞান অর্জিত হয়েছে তবে ভুল করলেন, যেমন ভুল করেছেন রাশিয়ান এবং চীনা এম্বেসি থেকে প্রকাশিত ক্ষমতা এবং অর্থলোভী বামদের অনুবাদকৃত কার্ল মার্কস পড়তে গিয়ে। কার্ল মার্কসের চিন্তা এবং মার্কসবাদি বামদের চিন্তা যেমন এক না, তেমনি বটতলার ইসলাম আর কোরআন-হাদিসের ইসলাম এক না। আমি সবাইকে বলবো ইসলাম কোরআনের সহীহ তাফসির এবং হাদিসের গ্রন্থগুলো পড়তে। সরাসরি বোখারি, মুসলিম, তিমিজি, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমেদ, আবু দাউদ ইত্যাদি হাদিসের মৌলিক গ্রন্থ এখন বাংলায়ও পাওয়া যায়। সরাসরি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবনীগুলো পড়তে হবে। ইসলামকে জানতে হবে। বিরুদ্ধবাদিদের বক্তব্য দিয়ে যদি ইসলামকে জানতে চেষ্টা করেন তবে ভুল জানবেন। যেমন অনেকে পবিত্র কোরআনের সুরা কাফিরুনের ‘লাকুমদ্বিন হুকুম ওয়ালিয়া দ্বিন’ আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে ধর্মনিরপেক্ষবাদের প্রচার করেন। অথচ কোরআনের শানে নুজুল অনুযায়ী এই ‘আয়াত সব চাইতে বেশি ধর্মনিরপেক্ষবাদের বিরোধীতা করে। না বুঝলে রাম আর বাম সমান অর্থ বহন করে। বুঝলে ব্যবধান আকাশ জমিন। একটা ঘটনা দিয়ে বক্তব্যটা শেষ করি। একজন বাঙালি গেছেন এক উর্দু ওয়ালা আলেমের ওয়াজ শোনতে। মাওলানা সাহেব ওয়াজে বলেছেন-মরা মিছলি খাওয়া জায়েজ হে। বাঙালি ভদ্রলোক বাড়ি এসে শুরু করলেন চিৎকার-এই মৌলভি বলে কি; মরা মসল্লি খাওয়া জায়েজ। শালা মানুষ খেকু মৌলভি। আমাদের সিলেটে একটা প্রবাদ আছে-বুঝলে বুঝপাতা, নাইলে তেজপাতা। আমার বক্তব্য কেউ বুঝলো ভালো, না বুঝলে পাঠকের সময় নষ্ট করার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।
Posted on: Sat, 13 Jul 2013 11:42:43 +0000