যে যে উপায়ে একটি চুক্তি - TopicsExpress



          

যে যে উপায়ে একটি চুক্তি বাতিল হতে পারে এ্যাড.মোঃ সোহরাব হোসেন ভুঁইয়া, এ্যাডভোকেট ঢাকা বার এসোসিয়েশন, ঢাকা। বহুকাল আগে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন ইত্যাদি বহুবিহি কাজে এক পক্ষ অন্য পক্ষের উপর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য তৃতীয় কোন পক্ষকে সাক্ষী হিসেবে রাখা কিংবা কাগজে লিখে তাকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এইসব প্রমাণ কিংবা সাক্ষী থেকেই মূলত চুক্তির উৎপত্তি। কেনাবেচা, ধারদেনা ইত্যাদি কাজে চুক্তি প্রমাণ উভয়ই সাক্ষী উভয় হিসেবেই কাজ করত। আর এরই ফলশ্রুতিতে কেউ বিশ্বাস ভঙ্গ বা নির্দেশনার কিছু অমান্য করলে, তাকে চুক্তি অনুসারে তা করতে বাধ্য করা বা ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়েছে। অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশেও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি করে আসছে। আর এই চুক্তি সমূহ নিয়ন্ত্রণ কিংবা চুক্তির গঠনপ্রণালী সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ইত্যাদি সবকিছুই একটি আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ব্রিটিশ শাসন আমলের ব্রিটিশ সরকার চুক্তি আইন, ১৮৭২ নামে একটি আইন তৈরি করেছিল, যা আজ অবধি আমরা অনুসরণ করছি। একটি চুক্তি তৈরি হওয়ার পর তা আইন দ্বারা বাতিল ঘোষিত হবে যদি তা আইনের কোন একটি নির্দেশনা কিংবা বিধি লঙ্ঘন করে। চুক্তি আইন, ১৮৭২ এ কখন এবং কীভাবে একটি চুক্তি বাতিল হতে পারে তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই বাতিল চুক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ঠিক এইভাবে, যে চুক্তি চুক্তি আইনের মাধ্যমে কার্যকর করা যায় না, তাকেই বাতিল চুক্তি বলে। নিম্নে যে যে উপায়ে একটি চুক্তি বাতিল হতে পারে, তা উল্লেখ্যঃ অযোগ্য ব্যক্তি সাথে চুক্তিঃ চুক্তি আইন, ১৮৭২ এর ১১ ধারায় প্রাপ্তবয়স্ক(১৮ বছর বয়স), সুস্থ মস্তিষ্কের যে কোন ব্যক্তির সাথে চুক্তিকে বৈধ বলে ঘোষণা দিচ্ছে। অর্থাৎ, পাগল, অপ্রাপ্তবয়স্ক, দেউলিয়া ইত্যাদি ব্যক্তিদের সাথে কোন চুক্তি করা হলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। উভয়পক্ষের অজ্ঞাত ভুলঃ ধারা ২০ অনুসারে, উভয়পক্ষের কারো কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল কিংবা উভয় পক্ষের অজ্ঞাতসারে কোন মৌলিক ভুল একটি চুক্তিকে বাতিল বলে গণ্য করতে পারে। অবৈধ প্রতিদান ও উদ্দেশ্যঃ আইন সবসময় প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য দেখে। চুক্তি আইনের ২৩ ধারা অনুসারে, যদি কোন চুক্তির প্রতিদান ও উদ্দেশ্য অবৈধ হয়, তবে সেই চুক্তিও অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে চুক্তি র প্রতিদান ও উদ্দেশ্য অবৈধ বলে পরিগণিত হয়- যদি কোন অবৈধ কাজের চুক্তি হয় যা দেশের আইনে নিষিদ্ধ; যেমন খুন করার চুক্তি। যদি চুক্তি অনুসারে তা সম্পাদন করতে গিয়ে পরোক্ষভাবে দেশে প্রচলিত কোন আইন ভঙ্গ করা হয়। যদি তা কাউকে প্রতারনার জন্য করা হয়। যদি তা অপর কোন ব্যক্তি বা সম্পত্তির জন্য ক্ষতিকর হয়। আদালত যদি তা দুর্নীতি মূলক বা জনস্বার্থ বিরোধী ও রাষ্ট্রনীতি বিরোধী বলে মনে করেন। প্রতিদানহীন চুক্তিঃ ইংরেজিতে একটি কথা আছে, No consideration, no contract. অর্থাৎ প্রতিদানহীন চুক্তি, চুক্তি নয়। ধারা ২৫ অনুসারে প্রতিদান অর্থাৎ অর্থের বিনিময় না হলে তা কখনই চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে না। অর্থের বিনিময় থাকতেই হবে হোক না তা সামান্য বা আংশিক। তবে, গিফট, উইল ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিদান না থাকলেও তা চুক্তি হিসেবে বিবেচিত। বিবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী চুক্তিঃ কোন সাবালক ব্যক্তি বিয়ে করতেও পারে আবার নাও করতে পারে। তবে, সাবালক কোন ব্যক্তি বিয়ে করতে চাইলে, সে বিয়েতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কারও বিয়ের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করে যদি কোন চুক্তি করা হয় তবে তা চুক্তি আইনের ধারা ২৬ অনুসারে আইনত বাতিল বলে গণ্য হবে। যেমন, একজন মুসলমান একাধিক বিয়ে করতে পারে, সুতরাং তার দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বিয়েতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না, করলে তা আইনত বাতিল বলে গণ্য হবে। আইন সঙ্গত পেশায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী সম্মতিঃ জীবন ধারনের জন্য যে কেউই যে কোন বৈধ পেশায় অবলম্বন করতে পারে। চুক্তি আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী কারও বৈধ পেশা বা ব্যবসা স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করে কেউ যদি কোন চুক্তি করে, সে চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে; কিছু ব্যতিক্রম সাপেক্ষে। মামলায় প্রতিবন্ধকতাঃ চুক্তি আইনের ২৮ ধারানুযায়ী যদি কোন চুক্তি এক পক্ষকে তার কোন অধিকার আইনের মাধ্যমে কার্যকর করতে বাধার সৃষ্টি করে, সেই চুক্তি বাতিল হিসেবে বিবেচিত হবে। অনিশ্চিত চুক্তিঃ যে চুক্তির অর্থ নিশ্চিত নয়, কিংবা নিশ্চিত করাও যায় না, সেই চুক্তি বাতিল চুক্তি হিসেবে গণ্য হবে ২৯ ধারানুযায়ী। মাঝিহীন নৌকার যেমন কোন উদ্দেশ্য বা গন্তব্য নেই, ঠিক তেমনি লক্ষ্য বা অর্থহীন চুক্তি বাতিল বলে বিবেচিত। বাজী ধরার চুক্তিঃ যে চুক্তির মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে ভবিষ্যৎ কোন অনিশ্চিত ঘটনা ঘটলে বা না ঘটলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান বাধ্য থাকে, তাকে বাজী ধরার চুক্তি বলে। বাজী ধরা হচ্ছে, একতরফা হার জিতের খেলা; যে হারে হারেই, যে জিতে জিতেই। কিন্তু, বৈধ চুক্তি দুই তরফা ন্যায়সঙ্গত দেয়া পাওয়ার ব্যাপার এখানে উভয়পক্ষই কিছু পায় ও কিছু দেয়। বাজী ধরার চুক্তি ভবিষ্যৎ ঘটনার উপর নির্ভরশীল একতরফা হার জিতের ব্যাপার বলে তা চুক্তি আইনের ৩০ ধারা অনুসারে বাতিল। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ভারত ক্রিকেট ম্যাচে পূর্ব থেকেই কোন একদল জিতবে কিংবা হারবে এটা ঠিক করে বাজী ধরলে, বাজীর সেই চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। অসম্ভব কার্য সম্পাদনের চুক্তিঃ কেউ যদি অসম্ভব কোন কাজ করে দেবে বলে চুক্তি করে, সেই চুক্তি ৫৬ ধারানুযায়ী বাতিল হবে। যেমন, আমি তোমাকে মঙ্গল গ্রহ থেকে একটি বাঘের ছানা এনে দিব, যা মোটামুটি অসম্ভব; এটি বলে কেউ কোন চুক্তি করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। উপরিউক্ত, বিষয়বস্তুগুলো মাথায় রেখেই চুক্তি করা গ্রহণযোগ্য। জেনে রাখা ভালো, বাতিলযোগ্য চুক্তির অসম্পূর্ণ কাজ পূর্ণ করলে তা বৈধ হয়ে যায়, কিন্তু বাতিল চুক্তিকে বৈধ করতে হলে তা শুরু থেকে শুরু করতে হয়, নহেত তা বাতিলই থেকে যায়।
Posted on: Fri, 20 Sep 2013 14:47:10 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015