শেখ মুজিবের - TopicsExpress



          

শেখ মুজিবের শাসনব্যবস্থা কেমন ছিলেন লিখেছেন কার্টাসি,,,ওসমান আহমেদ সাকিব ছবি.....!Sabina Ahmed এর ওয়াল থেকে। -------------------------------------------------------- শেখ মুজিবের আমলে দ্রব্যমূল্যের “পাগলা ঘোড়া” সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত আছেন। এ পর্বে দ্রব্যমূল্যের এই লাগামছাড়া হাল এবং শাসনযন্ত্রের অপশাসন এবং অনিয়ন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের রাহুগ্রস্ত হয়েছিল সারা বাংলা, তা নিয়েই আলোকপাত করছি। দ্রব্যমূল্যের এহেন চওড়া গতির বাজারে নিয়ন্ত্রণ হারানোর সাথে সাথে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার অব্যাহত রেখেছিল প্রতারণামূলক এবং গণবিরোধী বিভিন্ন নীতি। বড় কথা ‘কেমন বুঝছেন শহরের সাহেবেরা’ এধরনের নির্মম রসিকতার মধ্যে শেখ মুজিব শেষ পর্যন্ত ডুবে থাকতে চেয়েছিলেন। বাস্তবোচিত কোন প্রতিকারের পদক্ষেপ তিনি নেননি এবং তার ফলেই ’৭৪ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের এযাবতকালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। লাখ লাখ মানুষ এই দুর্ভিক্ষে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের অধিকাংশের কাফনের কাপড় পর্যন্ত মেলেনি। এমনকি কলাপাতা ও নয়। কেননা, দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের কাছে সামান্য একটি কলাপাতাও তখন অত্যন্ত দুর্লভ এক খাদ্যদ্রব্যে পরিণত হয়েছিল। দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার মাত্রাঃ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে দ্রব্যমূল্য দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ১৯৭৪ সাল জুন-জুলাই থেকে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। [ মওদুদ আহমেদের “বাংলাদেশঃ শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল” এর পৃঃ ২০১ ] প্রথমদিকে খাদ্য ঘাটতি জেলাগুলোতে দুর্ভিক্ষদেখা দেয়। সিলেতে, ময়মনসিংহ, রংপুরেরঅবস্থা ছিল ভয়াবহ। তবে সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয় রংপুরের। এইদুর্ভিক্ষে আনুমানিক ২-৩ মাসের খাদ্যাভাব ও পুষ্টিহীনতার জন্য ৮০ হাজার থেকে ১লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে। সূত্রমতে... [ অমর্ত্য সেনের “Poverty and Famines” এরপৃঃ ১৩৪ ] আরেকটি তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে যে ‘আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম’ নামক একটিসংস্থা শুধু রাজধানী শহরেই ২৮৬০টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছিল। অবস্থা এতো বেশি শোচনীয় হয়ে উঠেছিল যে আওয়ামী লীগ সরকারকেও বাধ্য হয়ে মৃত্যুর হিসেব প্রকাশ করতে হয়েছে। দৈনিকইত্তেফাক, ২৩নভেম্বর,১৯৭৪ এর বরাত দিয়ে বলছি “ ৭৪ এর নভেম্বরে সাড়ে ২৭ হাজার মানুষ ‘অনাহার ও ব্যাধির ফলে’ মৃত্যূবরণ করেছে বলে খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানিয়েছিলেন। ”আওয়ামী লীগের যুক্তি এবং তৎকালীন বাস্তবতাঃরাজনৈতিক নৈতিকতায় এই ব্যর্থতা অমার্জনীয় অপরাধের শামিল। এরপরওআওয়ামী লীগ নেতারা কখনওদেশবাসীর কাছে সততা চালিত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা কিংবা দোষ স্বীকারকরেননি। উপরন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনের কৌশল হিসেবে নানা ধরনের যুক্তির অবতারণা করেছেন বিভিন্ন সময়ে। এক্ষেত্রে তারা প্রধানত দুটি যুক্তিকে সামনে আনতে চানঃ ১) যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থা২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রতৎকালীন বাস্তবতাইয় আদৌ কি সেই যুক্তিগুলো ধোপে টিকে?? আলোচনা থেকেই না হয় অনুধাবন করি। ১ম যুক্তি-যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থা এবং প্রকৃত বাস্তবতাঃ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে একটা তথ্য মনে রাখতেহবে যে, জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১২০০ মিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ’৭২ সালের আগস্টেই আওয়ামী লীগসরকার ৯০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য হিসেবে পেয়েছিলেন, বাকী৩০০ মিলিয়ন ডলারওএসে গিয়েছিল বছর শেষ না হতেই। এরবাইরেও প্রতি বছরই বিপুল অর্থ ও পণ্যের সাহায্য পাওয়া গেছে এবং এদিক থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সাহায্য এসেছিল দুর্ভিক্ষের বছর তথা ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে। হায়দার আকবর খান রনোর “এ মোহ পরিত্যাগ করুন-সিপিবির বন্ধুদের প্রতি” এর পৃঃ১০-১২ এ উল্লেখিত তথ্যে আরো বলা হয়েছে যে ৭৪-৭৫সালে প্রাপ্ত সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৯১৯.২ মিলিয়ন ডলার। পাঠকদের সুবিধার্থে সাহায্যের কিছু উদাহরণ উল্লেখ করা প্রয়োজনবোধ করছি। দৈনিক ইত্তেফাকের ৫ জুন,১৯৭৪ এর সম্পাদকীয়তে উল্লেখ রয়েছে ‘বাংলাদেশেপরিচালিত ত্রাণ কর্মসূচিকে জাতিসংঘের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আখ্যা দিয়ে আনরব(UNROB) প্রধান ফ্রান্সিস লাকোস্ট বলেন, ১৯৭৩এর ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিকসম্প্রদায় জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছে। একই সময়ে খাদ্য সাহায্য পেয়েছে ৪৮ লক্ষ টন। ’Flow of External Resources into Bangladesh,ERD, Ministry of Finance, Dhaka,1993 এরপৃঃ৭১ এদেয়া তথ্যানুযায়ী শেখ মুজিবের সময়কালে রাশিয়ার কাছ থেকে প্রকল্প সাহায্য বাবদ ১৫.৩১২ মিলিয়ন ডলার,পণ্য সাহায্য বাবদ ৪৩.৫৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর খাদ্য সাহায্য বাবদ ৪৯.৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য পায়। একই বইয়ের পৃঃ৭০ এ রুমানিয়ার কাছ থেকে ০.১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের খাদ্য সাহায্য পায় বাংলাদেশ। ৭৪-৭৫ এর ক্রান্তিকালে রাশিয়া,রুমানিয়া সহ অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ যেমন বুলগেরিয়া,যুগোশ্লোভিয়া, হাঙ্গেরী, পোল্যান্ডসবাই সাধ্যমত প্রকল্প সাহায্যপ্রদান করে। Flow of External Resources into Bangladesh,ERD,Ministry of Finance, Dhaka,1992 এরপৃঃ ৬৫ থেকে অবগত হওয়া যায় ৭৪-৭৫সালে চীন বাংলাদেশকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খাদ্য সাহায্য, পৃঃ৫২ থেকে সৌদি আরব বাংলাদেশকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খাদ্য সাহায্য এবং পৃঃ ৭৪ থেকেপাকিস্তান বাংলাদেশকে ৫.৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খাদ্য সাহায্য এবং ১.৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করে। স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামীলীগ বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস এবং ইন্ধিরা গান্ধীর বিশেষ আনুকূল্য অর্জন করেছেন এবং সেই সুবাদে শুরু থেকেই ভারত বাংলাদেশকে নানান ভাবে (অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক,প্রতিরক্ষা, খাদ্য সাহায্যসহ প্রভৃতি খাতে) সহায়তা করেছে। এ ব্যাপারে মোহাম্মদ সেলিম এর লেখা “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক” এর পৃঃ ১৯২-২১৯ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ১৯৭১-৭২ সাল থেকে ১৯৮০-৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে ভারত মোট ৩০৯.৬৮৬মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য প্রদানকরে যার মোট ৮৮.৮৫% প্রদান করে মুজিব আমলে। Flow of External Resources intoBangladesh,ERD, Ministry of Finance, Dhaka,1992 এরপৃঃ ৬৫ অনুযায়ী মুজিব আমলে সবচেয়ে বেশী সাহায্য প্রদান করা হয় ৭১-৭২ সালে ১৮১.৪৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৭৪-৭৫ সালে ১৯.৬০৯মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করে। ফলে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থার যুক্তিটিকে কোনভাবেই গ্রহণ করা যায়না,বরং ইতিহাসের আলোকে বলা যায় যে, ঐএক যুক্তি এবং ‘কিছুইদিবার পারবো না’ মার্কাদেমাগী করেই শেখ মুজিব সুযোগ পেলে আরো কয়েকটি বছর নিঃসংকোচে কাটিয়ে দিতেন। ২য় যুক্তি- মার্কিন ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গঃদ্বিতীয় যুক্তি হিসেবে কথায় কথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ষড়যন্ত্র’ তথাখাদ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিলম্বের কথা বলা হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে অভিযোগটি উত্থাপনকালে আওয়ামী লীগকিংবা তার সমর্থক নেতাদের কেউই এরমধ্যে স্ববিরোধিতার দিকটি খেয়াল করেন না কিংবা সুকৌশলে নিজের মনকে ভুলিয়ে রাখেন। শেখ মুজিবের যে সরকার‘সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠায় ‘বদ্ধপরিকর’, সুযোগ পেলেই যার নেতারা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আস্ফালন করতে ছাড়তেন না, সেই সরকারকে কোনযুক্তিতে ‘মার্কিনসাম্রাজ্যবাদ’সাহায্যেরভাণ্ডার পৌঁছিয়ে দিবে? বরং যে কে উল্টো প্রশ্ন তুলতে পারেন যে,‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী’ একটি ‘সমাজতান্ত্রিক’ সরকারইবা কোন কারণে মার্কিন মুল্লুকের ওপর সাহায্যের জন্য নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল ! আওয়ামী লীগ সরকার আসলে সকল ক্ষেত্রেই প্রতারণার আশ্রয় নিতে চেষ্টাকরেছে। এক্ষেত্রেও সেটা নিতে গিয়ে অমন একটিপরিণতির মুখোমুখি হয়ে পড়েছিল। একদিকে ভারতএবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মত দেশগুলোর কাছে সে ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী’সাজার অভিনয় করেছে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও চেষ্টাকরেছে তাল মেলানোর। তথাপি, একথা অবশ্যই মানতে হবে যে , প্রচুর বাগাড়ম্বর সত্বেও প্রথম থেকেই আওয়ামীলীগ সরকার মার্কিন সাহায্য পেয়ে এসেছে।১৯৭৩-৭৪ এবং ৭৪-৭৫ অর্থবছরে শুধু খাদ্য ক্রয়ের জন্য যে ১০৯ এবং ১৭১ মিলিয়ন ডলার ঋণ (অনুদান বাদে) পাওয়াগিয়েছিল তার সিংহভাগ ই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া। এর পরিমাণ ছিল ৪৯ এবং ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। (হায়দারআকবর খান রনোর পূর্বোক্ত বইয়ের পৃঃ ১২) এছাড়াও,৮ নভেম্বর,১৯৭৪ এ মার্কিন সরকার ২ লক্ষ টন গমএবং৫০ হাজার টন চাল দেয়ার চুক্তি ও করে। ( “বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক” –মোহাম্মদ সেলিম এর পৃঃ ২০৬) ।সুতরাং, ‘মার্কিনসাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র’ কিংবাঅন্য কোন দেশের ওপরদোষ চাপিয়ে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে চাওয়া ঠিক নয় বরং এর মাধ্যমে অপরিবর্তনীয় চরিত্রের স্বরূপই উন্মোচিত হয়ে উঠে বারংবার। এতো সাহায্যের পরও কেন এতো এতো প্রাণহানি?এক শব্দে উত্তরঃ দুর্নীতি। এই দুর্নীতির অংশ ছিল লুটপাট, চোরাচালানি,সিন্ডিকেট করে চওড়া দামে বিক্রি আর শেখ মুজিবুর রহমানের কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ‘ওরা পেয়েছে সোনার খনি,আমি পেয়েছি চোরের খনি’রমতন আক্ষেপ ! মোদ্দা কথা, স্বাধীনতা লাভের পর স্বাভাবিকভাবে জনমনে এ মর্মে আশা সঞ্চারিত হয়েছিল যে, এবার হয়তো প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হবে এবংসরকারী প্রশাসনে দুর্নীতিরহার কমবে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব না হয়ে প্রশাসনিক দুর্নীতির মাত্রাবৃদ্ধি ঘটেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। মুজিব শাসনামলে প্রশাসনে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব বেড়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে মেধার পরিবর্তে স্বজনপ্রীতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। ক্রান্তিকালের সময় এদেশে প্রচুর রিলিফ সামগ্রী আসে। এসব রিলিফ বিতরণের ক্ষেত্রেযথেষ্ট পরিমাণ দুর্নীতি হয়। সরকারীদলের নেতারা অনেক ক্ষেত্রেই রিলিফ সামগ্রী আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিম্ন পর্যায়ে পৌছাবার পূর্বেই রাজনৈতিক নেতারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অনেক ক্ষেত্রে এ রিলিফ সামগ্রী আত্মসাৎ করেন। Henry F. mettenry এর “Food Bungle in Bangladesh”এরপৃঃ ৭২-৮৮ তেএ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে । সেই বিদেশী গবেষকের ভাষায়, “আমেরিকারদেয়া খাদ্য সাহায্যের মাত্র শতকরা দশভাগ পৌঁছেছে সেসকল গ্রামীণ দরিদ্রদের হাতে যাদের এ সাহায্য খুবই প্রয়োজন।”এক ঝলকে দেখে নিন ততকালীন কয়েকটি বিদেশী পত্রিকা ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী কি বার্তা দিয়েছেঃ
Posted on: Wed, 06 Aug 2014 19:04:05 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015