শূন্য থেকে মহাবিশ্ব আপডেট: শূন্য থেকে এত বড় মহাবিশ্ব তৈরি হল কিভাবে ? সাদা চোখে মনে হতে পারে স্বতঃস্ফুর্তভাবে মহাবিশ্ব তৈরি হওয়াটা শক্তির নিত্যতার লঙ্ঘন, ঙ্কিন্তু জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন, আসলে তা নয়। স্ফীতিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরা গণনা করে দেখেছেন যে, মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরমাণ সব সময়ই শূন্য থাকে। শক্তির যোগ ফল শূন্য হলে এই পৃথিবী সূর্য, চেয়ার টেবল সহ হাজারো রকমের পদার্থ তাহলে আসলো কথা থেকে? বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মহাবিশ্বের দৃশ্যমান জড়পদার্থগুলো তৈরি হয়েছে আসলে ধনাত্মক শক্তি থেকে, আর অন্যদিকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের রয়েছে ঋণাত্মক শক্তি। এই দুটো পরষ্পরকে নিস্ক্রিয় করে দেয়। তাই, মহাবিশ্বের শক্তির বিজগনিতীয় যোগফল হিসেব করলে সবসময় শূন্যই পাওয়া যায়। স্টিফেন হকিং তার বিখ্যাত ‘দ্য ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ গ্রন্থে ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে - ‘মহাবিশ্বে এই পরিমাণ জড়পদার্থ কেন রয়েছে তা মহাস্ফীতির ধারণা দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। মহাবিশ্বের যে সব অঞ্চল আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি সেখানে রয়েছে দশ মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন (অর্থাৎ ১ এর পিঠে আশিটি শূন্য = ১.০ x ১০^৮০) সংখ্যক জড়-কণিকা। কোত্থেকে এগুলো সব এলো? এর উত্তর হল কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী শক্তি থেকে কণিকা ও প্রতি-কণিকা যুগল আকারে উৎপত্তি হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই শক্তি এল কোত্থেকে? এরও উত্তর হল মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ হল শূন্য। মহাবিশ্বে পদার্থ সৃষ্টি হয়েছে ধনাত্মক শক্তি থেকে। অবশ্য জড়পদার্থ মহাকর্ষণের দ্বারা নিজেকে পরিপূর্ণভাবে আকর্ষণ করছে। দুটি বস্তুখণ্ড যখন কাছাকাছি থাকে তখন তাদের শক্তির পরিমাণ যখন তারা অনেক দূরে থাকে তা থেকে কম। এর কারণ হল এদেরকে পৃথক করতে হলে যে মহাকর্ষীয় বল দ্বারা তারা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে সেই বলের বিরুদ্ধে আপনাকে শক্তি ব্যয় করতে হবে। তাই এক অর্থে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের রয়েছে ঋণাত্মক শক্তি। এমন একটি মোটামুটি স্থানিক সুষম (approximately uniform in space) মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে দেখানো যেতে পারে যে এই ঋণাত্মক মহাকর্ষীয় শক্তি পদার্থের প্রতিনিধিত্বকারী ধনাত্মক শক্তিকে নিখুঁতভাবে বিলুপ্ত করে দেয়। কাজেই মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ সব সময়ই শূন্য’। হকিং এর উপরের বক্তব্যের মর্মার্থ হচ্ছে, মহাবিশ্ব ‘সৃষ্টি’র জন্য বাইরে থেকে আলাদা কোন শক্তি আমদানী করার প্রয়োজন হয় নি। সহজ কথায়, ইনফ্লেশন ঘটাতে যদি শক্তির নীট ব্যয় যদি শূন্য হয়, তবে বাইরে থেকে কোন শক্তি আমদানী করার প্রয়োজন পড়ে না। অ্যালান গুথ এবং স্টেইনহার্ট নিউ ফিজিক্স জার্নালে (১৯৮৯) দেখিয়েছেন, ইনফ্লেশনের জন্য কোন তাপগতীয় কাজের (thermodynamic work) দরকার পড়েনি। মোটাদাগে মহাবিশ্ব ‘সৃষ্টি’র আগেকার মোট শক্তি যা ছিল অর্থাৎ শূন্য, সৃষ্টির পরেও আমরা তাই পাচ্ছি –অর্থাৎ শূন্য। কাজেই মহাবিশ্বের উৎপত্তি ঘটতে গিয়ে শক্তির নিত্যতার লংঘন ঘটেনি । মহাবিশ্বের ব্যাপারে মূলধারার অধিকাংশ পদার্থবিদদেরই এই একই অভিমত। ব্যাপারটা ভাল করে বোঝা যাবে পদার্মিথবিদ মিচিও কাকুর এই ছোট্ট ভিডিও থেকেও -
Posted on: Fri, 26 Jul 2013 04:35:44 +0000