হিন্দু ধর্মের - TopicsExpress



          

হিন্দু ধর্মের ত্রিমূর্তি(ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব)র রহস্যের উন্মোচন আজ #হিন্দু ধর্মের ত্রিমূর্তি(ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব)র রহস্যের উন্মোচন করব আপনাদের কাছে, তবে সবার প্রথমে জানিয়ে রাখি যে, • আমার এই লেখা পড়ে প্রথমবারেই কিছু বিশ্বাস করে ফেলবেন না; পড়ুন, বিচার করুন এবং সত্যিটা যাচাই করুন। আধুনিক বিজ্ঞান বলে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয় জলে। একারণেও জলের আরেক নাম জীবন। এই জল আবার হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনর যৌগে তৈরি। এর মধ্যে অক্সিজেন বায়ুর মূল উপাদান যা জীবন ধারণের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। শুধু তাইই নয় এই অক্সিজেনই আবার দহন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। সহজ কথায় বাতাস ছাড়া আগুন জ্বলতে পারেনা। কিন্তু আপনি হয়ত ভাবছেন আমি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব এর কথা বাদ দিয়ে জল, বাতাস, আগুনের কথা কেন বলছি! না এখুনিই সেটা বলবনা, তার আগে আমি হিন্দু ধর্মে প্রতীক(Symbol বা Symbolism) এর ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলব। সে বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমেই যা বলতে হয় তা হল প্রতীকের এমন সমৃদ্ধি বিশ্বের আর অন্য কোন ধর্মে নেই। হিন্দু ধর্মের অধিকাংশ বিষয়, ক্ষেত্র এবং কার্যকলাপই প্রতীকি। প্রতীকের এমনই একটি বৃহত্ উদাহরণ হল মূর্তি। অর্থ্যাত্ হিন্দু ধর্মের দেব-দেবী গণের মূর্তিগুলি শুধুই যে পৌরাণিক চরিত্রের অবয়ব মাত্র তা কিন্তু নয়, সেই মূর্তির মধ্যে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন প্রতীক এবং এই প্রতীকের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে বিশদ সত্য। তা যাইহোক, আমি শুরু করেছিলাম ত্রিমূর্তির রহস্য উন্মোচন নিয়ে; এবার সেদিকেই যাব তবে এতক্ষণ আমি যা যা তথ্য দিলাম সেই সেই তথ্য গুলো মাথায় রেখে। ত্রি-মূর্তি দেবতা ত্রয় যথা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। ক্রমানুসারে এই দেবতাদের ক্ষমতাগুলি হল সৃষ্টি(ব্রহ্মা), সংরক্ষণ(বিষ্ণু) ও ধ্বংস(শিব)। জগত্ এই তিনের আবর্তনের নিয়মেই চলে। তবে এখানেই শেষ নয়, শুরুতে আমি জলে প্রাণের সৃষ্টির কথা বলেছিলাম, এখন প্রশ্ন, সেই প্রথম প্রাণ এলো কোথা থেকে? তবে কি তা ব্রহ্মা সৃষ্টি করে ছিলেন? না। আসলে জলেই যে প্রথম জীবন সৃষ্টি হয়েছিল এই ঘটনার প্রতীক হলেন ব্রহ্মদেব। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে ব্রহ্মদেবের আবির্ভাব হয় জল থেকেই। তবে সে প্রথম জল আসল কোথা থেকে? উত্তর: বরফের গলন থেকে। একসময় পৃথিবীর একাংশ শুধুই বরফাবৃত ছিল। সূর্যের তাপে ক্রমে সেই বরফ গলে জলে পরিণত হয় এবং সেই তাপ বা তেজ এর প্রতীকই হলেন বিষ্ণু। পুরানানুসারে বিষ্ণুর পদ্ম-নাভ থেকেই ব্রহ্মার জন্ম। আশাকরি এতক্ষণে আপনাদের কাছে প্রতীক ব্যাপারটা ধীরেধীরে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টির এক বিশাল ইতিহাস, এক বিশাল সত্য যে শুধুমাত্র তিনটি মূর্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে তা কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মেই সম্ভব। আর যখন সেই সত্য বেরিয়ে আসে তখন ধর্ম বিষয়ক সংশয় গুলি মন থেকে দূর হয়ে যায়। তাহলে চলুন এবার ত্রিমূর্তির তৃতীয় ও শেষ মূর্তি মহেশ্বর শিব কিসের প্রতীক দেখা যাক। শিব যার বাসস্থান হিমালয়, যিনি ধ্বংসের দেবতা রূপে পরিচিত, যাকে দেবতা দের দেবতা মনে করা হয় তিনিও ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মতনই প্রতীক বটে তবে তার গুরুত্ব এই দুই তুলনায় বেশি। প্রথমদিকে যে অক্সিজেনের কথা বলেছিলাম সেটাই ছিল কারণ। শিব, রুদ্র, মরুত্, বায়ু, পবন এরা পৃথক পৃথক দেবতা নন বরং একই; শিব নিজেই। যেভাবে অক্সিজেন বাতাসের থেকে পৃথক নয় একই ভাবে শিবও এই সকল বায়ু তত্ত্বের দেবতাদের থেকে পৃথক নন। শিবই সেই অক্সিজেন যা জলে বা ব্রহ্মায়(বরুন, অপ) উপস্থিত একইভাবে বিষ্ণু বা আগুন কে জ্বলতে সাহায্য করেন তিনিই। হিমালয়কে তার বাসস্থান মনে করা হয় এজন্য নয় যে শিব নামের কেউ একজন সেখানে থাকেন, মনে করা হয় একারণে যে সেখানকার বরফাবৃত অনুর্বর এলাকায় সর্বদা শিতল বাতাস রাজত্ব করে। এই বাতাসই প্রতীকি শিব। অন্যদিকে তাকে ধ্বংসকারি এজন্যে বলা হয় যে বায়ু ব্যতীত জীবকূল মৃত বা জড়ের সমান। যেখানে বায়ু নেই সেখানে জীবন নেই। বায়ুহীন স্থানে জল বা আগুন কোনটাই থাকতে পারেনা। বিজ্ঞান এর প্রমাণ বহু আগেই দিয়েছে। আমাদের সৌরজগত্ সমেত আকাশগঙ্গায় এমন অসংখ্য গ্রহ আছে যেখানে অক্সিজেন নেই, নেই জল, নেই অনুকূল পরিবেশ। ফলস্বরূপ সেখানে কোন জীবন নেই। বায়ুর অনুপস্থিতি এককথায় ধ্বংস স্বরূপ। *তবে এত গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু ধর্মে শিবের পূজা তুলনামূলক ভাবে কম কেন? তার কারণগুলি হল: আমাদের পূর্বপুরুষ আর্যরা ছিলেন অগ্নি ও সূর্যের উপাসক। অগ্নি, সূর্য উভয়কে বিষ্ণুর তেজ মনে করা হয় তাই হিন্দু ধর্মে প্রধাণ পূজ্য দেবতা বিষ্ণু; শিব নন। দ্বিতীয়ত আর্য পূর্ববর্তী ভারতীয়রা পূজো করত পশুপতি নামক দেবতার। আর্যরা যেহেতু অগ্নির উপাসক ছিল তাই ভারতে প্রবেশ করার পর তাদের সাথে অনার্যদের ধর্মীয় সংঘাত শুরু হয়। কিন্তু উন্নতবুদ্ধির আর্যরা সেই সংঘাত নিবারণ করে তাদের ধর্মগ্রন্থে পশুপতিকে বৈদিক দেবতার স্থান দিয়ে যে আজ শিব/রুদ্র নামে পরিচিত। উল্লেখ্য যে শিবের স্থান হয় পশু, অসুর ও দেবতাদের দেবতা হিসেবে, মানুষের দেবতা হিসেবে নয়। মানুষের দেবতার জায়গায় রইলেন বিষ্ণু। শিব আসলে যেহেতু বৈদিক দেবতা নয় তাই কোন যজ্ঞ বা আহুতিতে শিবকে স্মরণ করা হয়না করা হয় অগ্নি ও বিষ্ণুকে। তৃতীয়ত, হিন্দু ধর্ম সৃষ্টিকর্তা/স্রষ্টার পূজো করেনা যেখানে #ইসলাম ও খ্রীষ্টান(আব্রাহামিক বিশ্বাস) তাদের ঈশ্বরকে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হিসেবেই মানে। অন্যদিকে হিন্দুরা সৃষ্টি সংরক্ষণ ও ধ্বংসকারী কে নয় বরং এই তিনের চক্রাকার নিয়মকেই ঈশ্বর হিসেবে পূজো করে। আর সেই চক্র ধারণকারীর আরেক নামই হল বিষ্ণু। এখানে উল্লেখ্য যে ধর্মে বর্ণিত শিব কর্তৃক ব্রহ্মার হত্যা এবং তারপর ব্রহ্মার পূজো বন্ধ হয়ে যাওয়া এটা আর্যদের সুকৌশলের পরিচয়। ভারতবর্ষে নাহলেও ইন্দোনেশিয়ায় এখনও ব্রহ্মার পূজো হয়। এত সবকিছুর পরেও দেখা যায় যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব এদের গুণাবলি পৃথক পৃথক হলেও এরা এক জায়গাতে পৃথক নয়, সেটা হল এদের তিন জনের মধ্যে উপস্থিত পুরুষত্ব। হিন্দু ধর্মে এই পুরুষই হলেন পরমাত্মা যার স্থান সর্বোচ্চ। যার সম্পর্কে ব্যক্ত করা ততটাই কঠিন যতটা কল্পনা কিংবা অনুভব করা। তাই হিন্দুরা এই এক ঈশ্বর পরমেশ্বরকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে পূজো করে। অবশেষে সাকারবাদ ও নিরাকারবাদের সমস্ত বিভেধ এই এক জায়গাতে এসে শেষ হয়।
Posted on: Fri, 09 Jan 2015 07:15:21 +0000

Trending Topics




© 2015