প্রতিবেশী এক ছেলের মা - TopicsExpress



          

প্রতিবেশী এক ছেলের মা আমার কাছে এসেছিলেন বছর দুয়েক আগে, ছেলেকে আমার মত হাফেজ বানাতে চান। কোথায় কীভাবে ভর্তি করবেন সে পরামর্শ চেয়েছিলেন। আমি আমার মত করে বলেছিলাম। উনি জানালেন, ওনার বোনের জামাই শহরে এক মাদারাসার শিক্ষক। উনি তার দায়িত্বে ছেলেকে দিবেন। দেয়া ঠিক হবে কিনা তা জানতেই মূলত এসেছেন। জানতে চাইলাম, ছেলেকে কেন হাফেজ বানাতে চান? বললেন, ছেলের জন্মের সময় নিয়ত করেছিলেন, ছেলেকে আল্লাহর রাস্তায় দিবেন। আরও জানলাম, তার ভগ্নীপতি শহরে একটা কওমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ছেলেকে আপনি কী বানাতে চান? বলেছিলেন, “দীনের খাদেম হবে”। কওমি মাদরাসার সনদ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কওমি মাদরাসায় ছাত্রদের মানসিক বিকাশ ঘটে না। আমি আবারো বলছি, তাদের মানসিক বিকাশ ঘটে না। মানসিক বিকাশ ব্যাপারটি ভদ্রমহিলাকে বুঝানো কঠিন। সনদের ব্যাপারটা বলেছিলাম। উনি বলেছিলেন, “আল্লাহ খাওয়াবে। বলেছিলেন, কওমি মাদরাসায় শিক্ষিত অন্যেরা যেভাবে বেঁচে আছে সেভাবেই থাকবে।” কওমি মাদরাসায় পড়ুয়া যারা “সমাজে ভালো ভাবে বেঁচে আছেন” তারা সবাই পারিবারিকভাবে স্বচ্ছল এবং তারা সবাই ব্যাবসা করেন। আর বাকিরা কোন কওমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন অথবা কোন মাসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিন পদে চাকুরী করেন। মাসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিনের যদি ইমামতি বা মুয়াজ্জিনি বাদে আর কোন সামাজিক অবদান না থাকে অর্থাৎ তিনি যদি আর কোন কাজ না করেন তবে তাঁকে বেঁচে থাকতে হয় মানুষের দয়ায়। মাসজিদ কমিটির পা চেটে তিনি দিনাতিপাত করেন। কেউ অন্যভাবে নিবেন না। তিনি মোল্লা গালি শোনেন লোকের কাছে। ইহা নির্মম বাস্তবতা। কারো দ্বিমত থাকলে মন্তব্যের ঘর খোলা আছে। আজ সেই ছেলেটি এসেছিল আমাদের বাড়িতে। সে তার খালুর সেই হেফজখানায় ভর্তি হয়েছে এই রামাদানে ২ বছর গেল। এতদিনে সে কুরআন নাজেরা পড়ে খতম করেছে। এবার গিয়ে হেফজ শুরু করবে। জীবন থেকে ২ বছর গেল টোটালি নন-প্রোডাক্টিভ। আমি দেখতে পাচ্ছি, এই ছেলের জীবনের গতি থেমে গেছে। ভবিষ্যতে আল্লাহ তাকে খাওয়াবে। কীভাবে আর খাওয়াবে? সে কোন এক মাসজিদে ইমামতি করবে। এই মুহূর্তে আমার পাশে শুয়ে আমার মামাতো ভাই, নাইম মুসা। বয়স প্রায় ১৪। হেফজ শেষ করেছে ২০১১ তে। ২০১১ তেই সে পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ৪.৫০ পেয়েছিল। সে হিসেবে সে এবার ক্লাস সেভেনে। ২০১৪ তে জেএসসি দিবে। নাইমের যে বয়স তাতে তার এমনিতেই সেভেনে পড়ার কথা। মাঝখানে সে পিএসসি দিয়ে ফেলেছে। এ বছর সে গ্রামের মাসজিদে তারাবিও পড়িয়েছে। আমার মনে হয় প্রকৃতপক্ষে আমার এই ভাইই আছে আল্লাহর রাস্তায়।আল্লাহর রাস্তা তো সেই রাস্তা যে রাস্তায় নিজে যেমন দীনের উপর থাকবে তেমনি অন্যকেও দীনের পথ দেখাবে। আমার যদি সামাজিক কোন প্রভাব না থাকে তবে আমার কাজ কেবল মাসজিদে নামাজ পড়ানো পর্যন্তই। মোল্লার দৌড় মাসজিদ পর্যন্ত- এ প্রবাদ মনে হয় ঐসব তথাকথিত আল্লাহর রাস্তায় থাকা নন-প্রডাক্টিভ হুজুরদের জন্য এসেছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রাস্তা বলে আলাদা কোন রাস্তা নেই। আপনি ব্যাবসা করেন। তো ওজনে কম দিয়েন না, মিথ্যা বলিয়েন না, সৎভাবে ব্যাবসা করুন। তাহলে আপনিই আল্লাহর রাস্তায় আছেন। আপনি চাকুরী করেন। তো সময়মত অফিস যান। নিজের কাজ ঠিকমতো করুন। তাহলে আপনিই আল্লাহর রাস্তায় আছেন। মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (দঃ) একদল সামাজিক খোদাভীরু মানুষ বানাতে সংগ্রাম করেছিলেন। তথাকথিত কেবল মাসজিদগামী মোল্লার দল বানাতে নয়...
Posted on: Mon, 12 Aug 2013 11:20:29 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015