মুহাম্মদ জাফর ইকবালের - TopicsExpress



          

মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন সম্পর্কে লিখেছিলাম, যা সম্পর্কে কয়েকজন বন্ধু আপত্তি তুলেছেন এবং রেফারেন্স দেখতে চেয়েছেন। প্রসঙ্গ হচ্ছে, মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কোন লেখা নাম উল্লেখ না করেই বিদেশি কোন বইয়ের বা গল্পের হুবহু বা আংশিক অনুবাদ, বা কপি, বা কয়েকটি গল্প থেকে টুকে নেয়া কিনা। সেই বিষয় নিয়েই আলোচনা করছি। সমস্যা হচ্ছে, এই সম্পর্কে কিছু লিখতে যাওয়াটাই বিপত্তিকর। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সম্পর্কে এমনিতেই এক শ্রেণির মানুষ সদাসর্বদা মুখিয়ে থাকেন, কখন তারা উনাকে এক হাত নিতে পারবে। এরকম পরিস্থিতিতে জাফর ইকবাল সম্পর্কে কোন অভিযোগ তোলা আসলে সেই সব জামাত শিবির ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের পক্ষেই চলে যায়। কিন্তু তারপরেও কিছু বিষয় প্রকাশ জরুরী হয়ে পরে, এবং এই সমালোচনাটা মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে খাটো করার উদ্দেশ্যে নয়। বরঞ্চ মনে করি বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা তার গুরুত্ব বৃদ্ধিই করবে। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল শুধুমাত্র একজন সায়েন্স ফিকশন লেখক নন, তিনি এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। বর্তমান সময়ে তিনি ধর্মান্ধ জামাত শিবির ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর মূর্তিমান আতংক। সদাহাস্যমুখ একজন নিপাট ভদ্রলোক কীভাবে অস্ত্রধারী মৌলবাদীদের ত্রাস হয়ে উঠতে পারে, তা খুবই অনন্য ঘটনা। হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কেও একই ধরণের অভিযোগ এসেছিল, শ্রদ্ধেয় আহমদ ছফা নিজেই হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। এবং হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কেও কিছু বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যায়, উনার কয়েকটি প্রবচন হুবহু ইউরোপীয় কয়েকজন নারীবাদী কিংবা দার্শনিকের বাণী থেকে অনুদিত। আচ্ছা, সে নিয়ে আরেকদিন লেখা যাবে। আপাতত মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখার সাথে হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ একটি লেখার বিবরণ দিচ্ছি। উল্লেখ্য, এরকম আরো অনেকগুলো উদাহরণ হাতের কাছে একসময় জড়ো করেছিলাম, কিন্তু দিনশেষে তা জামাত শিবিরের কাজে আসবে মনে করে আর লেখা হয়ে ওঠে নি। আজকে একটিমাত্র উদাহরণ দিচ্ছি। ২০০৪ সালে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল একটি সায়েন্স ফিকশন লেখেন, বইটার নাম অবনীল। কাহিনীটা অনেকটা এরকমঃ ভবিষ্যৎ সময়কাল। একটি মহাকাশযানে করে কিছু মহাকাশযাত্রী যাচ্ছে। সেই মহাকাশযানটিতে তাদের সাথে রয়েছে একদল বন্দী, যাদেরকে বলা হয় নীল মানব। এই নীল মানব হচ্ছে মানুষের বিচ্ছিন্ন একটি হিংস্র প্রজাতি, যারা নিজেরাই নিজেদের এক ধরণের বিবর্তন ঘটয়ে নিয়েছে। মানুষের সাথে এই নীল মানবের ভয়ংকর সংঘর্ষ এবং শত্রুতা। এরা একে অন্যকে পেলেই হত্যা করে। এরকম কিছু নীল মানবকে বন্দী করে মহাকাশযানটি যাচ্ছে। নীল মানবরা পালাবার চেষ্টা করার সময় মহাকাশযানটির সবাই মারা যায়, বেঁচে থাকে একটি নীল মানব এবং একজন মহাকাশযাত্রী। মহাকাশযানের নিরাপত্তা প্রসেসর বারবার নীল মানবটিকে হত্যা করতে বলার পরেও যেই মেয়ে মহাকাশযাত্রীটি বেঁচে ছিল সে তা করে না। তারা একটি গ্রহে নামে, যেই গ্রহটিতে বুদ্ধিহীন কিছু নৃশংস প্রাণী বসবাস করে। নিজেদের বিবর্তিত করে ফেলার কারণে নীল মানবগুলো মানুষের চাইতে বেশি শক্তিশালী, তাদের সারভাইভিং ক্ষমতা বেশি, তারা অন্ধকারেও চোখে দেখে, এবং তাদের ফুসফুস সাধারণ মানুষের চাইতে অপেক্ষাকৃত বড় হবার কারণে বেশিক্ষণ নিঃশ্বাস ধরে রাখতে পারে। অন্ধকারে দেখতে পাবার কারণে তাদের চোখে এক ধরণের চশমা পরতে হয়। গ্রহটিতে নামার পরে হঠাৎ করেই গ্রহটি অন্ধকার হয়ে যায়, এবং এক ধরণের ধারালো মুখের প্রাণী তাদের আক্রমণ করে। প্রাণীগুলো একই সাথে সরীসৃপ কিংবা কীটের মত মনে হয়। অন্ধকারেও নীল মানবটি দেখতে পাবার কারণে সে দেখতে পায় সেই বড় বড় প্রাণীগুলোকে। পালাবার সময় তারা আবিষ্কার করে, সেই প্রাণীটি আসলে অন্ধকারের জীব এবং আলো ভয় পায়। আলোতে তাদের চামড়া পুড়ে যেতে থাকে। তারা মহাকাশযানটির এনার্জি ব্যবহার করে আলো জ্বালতে শুরু করে। টর্চ লাইট দিয়ে রাস্তায় আলো ফেলতেই প্রাণীগুলো রাস্তা থেকে চিৎকার করে সরে যেতে থাকে। পরে জানা গেল, এই গ্রহে মানুষ থাকতো, কিন্তু জ্বালানী শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা মারা পরে আলো না জ্বালাতে পারার কারণে। ষাট কিলোমিটার দূরে তাদের একটি স্টেশন রয়েছে। সেখানে তারা যায় একটি যোগাযোগ মডিউল ঠিক করতে, কিন্তু ফেরার সময় দেখে গ্রহটি অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। আর ধেয়ে আসছে লক্ষ লক্ষ হিংস্র প্রাণী। সেই হিংস্র প্রাণীগুলোর বিরুদ্ধে এই দুইজন মানুষ যুদ্ধ করতে করতে হিংস্র নীল মানবের মধ্যেও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। মেয়েটাও বুঝতে পারে নীল মানবদের হিংস্রতা আসলে নিজেদের টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই। হিংস্র নীল মানবটি যে হিংস্র হলেও এত খারাপ কিছু না তা মেয়েটি বুঝতে পারে। তাদের মধ্যে এক ধরণের মানবিক সম্পর্ক তৈরি হয়, প্রেম হয় এবং মেয়েটিকে জীবন বাজি রেখে রক্ষা করার পরে শেষ পর্যন্ত নীল মানবটি মারা যায়। এবারে আসুন আরেকটি গল্প শুনি। ২০০০ সালে একটি সিনেমা মুক্তি পায়, সিনেমাটার নাম পিচ ব্লাক। বিখ্যাত অভিনেতা ভিন ডিজেল সিনেমাটার নায়ক(বন্দী নীল মানব); সিনেমাটি ডাউনলোড করে দেখুন এবং এরপরে মিলিয়ে নিন। অথবা Pitch Black: Fight Evil With Evil, by Frank Lauria বইটাও পড়ে দেখতে পারেন। যাইহোক, প্রয়োজনে এরকম আরো আট দশটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বইটি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও গল্পটি যে আসলে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে, এরকম কোন কথাবার্তা খুঁজে পেলাম না। তবে মনে রাখতে হবে, এই হুবহু সাদৃশ্য অনুসন্ধান কোনভাবেই মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে খাটো করার প্রচেষ্টা নয়। যে যা, তাকে সেটুকু সম্মান দিতেই হবে। এই ধরণের অভিযোগ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের চাইতে অনেক বড় বড় কবি, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিকের উপরেও দেয়া হয়। সেই খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সামনে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল নিতান্তই শিশুমাত্র। জ্যা পল সার্ত্রে সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে তিনি তার অস্তিত্ববাদী দর্শনের মূল সূত্র সিমোন দ্যা বুভোয়ার বই থেকে নিয়েছেন। কিন্তু তাতে সার্ত্রে বিন্দুমাত্র খাটো হন বলে আমি মনে করি না। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে জীবনানন্দ সবার সম্পর্কেই এমন কিছু অভিযোগ রয়েছে। তাতে তারা কেউই খাটো হন নি। স্ট্যাটাসটি প্রদান করেছেন - আসিফ মহিউদ্দিন
Posted on: Thu, 28 Nov 2013 13:09:50 +0000

Trending Topics



" style="min-height:30px;">
as we move into a new political , HealthCare.gov, i reflect

Recently Viewed Topics




© 2015