আমাদের জীবনে প্রায় সব - TopicsExpress



          

আমাদের জীবনে প্রায় সব ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে লেজার রশ্মি। শুরুর দিকে সিডি বা ডিভিডিতে ছোট ছোট লেজার রশ্মি ব্যবহার করা হতো। এরপর লেজার রশ্মি ব্যবহার হারের পরিধি প্রসারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আধুনিক বিশ্বে লেজার প্রায় সর্বেেত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। লেজার যখন প্রথম আবিষ্কার করা হয়, তখন কেউ চিন্তা করেনি এর ব্যবহার কী হবে। শুরুতে লেজার রশ্মিকে রাডার-ব্যবস্থা অথবা সামরিক কাজে ব্যবহার করা হতো। ইংরেজি অর লেজার (LASER) এর পূর্ণ শব্দটি হলো Light Amplification by Stimulated Emission Radiation. . অর্থাৎ উত্তেজিত বিকিরণের সাহায্যে আলোক বিবর্ধন। সাধারণ আলোতে বিভিন্ন মাপের তরঙ্গ থাকে। একই বর্ণের আলোতে একই মাপের তরঙ্গ থাকলেও তারা বিভিন্ন তলে চলে। কিন্তু লেজারে সব তরঙ্গই হয় একই মাপের এবং তারা চলে একই তলে। লেজার রশ্মি অত্যন্ত ঘন সংবদ্ধ একমুখী বলে তা অনেক পথ অতিক্রম করতে পারে এবং এরা মাত্র কয়েক মাইক্রন (১ মাইক্রন= ১০-৩ মি. মি.) চওড়া। এ জন্য এতে প্রচণ্ড তাপশক্তি সঞ্চার করা সম্ভব হয় এবং তাপমাত্রা সূর্যের তাপমাত্রার চেয়েও বেশি হয়। লেজার রশ্মি দিয়ে মানুষের একটা চুলকেও ছিদ্র করা সম্ভব। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতিদিনের মানুষের জীবনে যে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়, তার বিশাল একটি অংশ লেজার রশ্মির মাধ্যমে আদান-প্রদান করা হয়। এ ছাড়া প্রযুক্তির বিভিন্ন আবিষ্কার কম্পিউটার ডিস্ক থেকে শুরু করে অপটিক্যাল ডিস্ক সবখানেই আছে লেজারের অবদান। আমাদের টেলিভিশন থেকে শুরু করে গাড়ির দরজা-জানালা কাটা হয় লেজারের মাধ্যমে। বিমান তৈরির উপকরণও সঠিক মাপে কাটতে ব্যবহার করা হয় লেজার রশ্মি। অর্ধশত বছর আগের লেজার রশ্মির আবিষ্কার সম্পর্কে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোকিন গবেষক টমাস বেয়াড় জানিয়েছেন, লেজার রশ্মি প্রথম আসে ষাটের দশকের দিকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন গবেষণার সুবিধার্থে লেজার আবিষ্কার করা হয়। মূলত ভালো একটি রাডার-ব্যবস্থা তৈরিতে উচ্চ একটি ফ্রিকোয়েন্সি আছে, এমন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গবেষকদের মাথায় লেজার রশ্মির ধারণা আসে। শুরুতেই বিপুল পরিমাণ অর্থ এ গবেষণায় ব্যয় করা হয়। রাডার-ব্যবস্থায় মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করা হয়, একে আরো উন্নত করতে নতুন এক ধরনের ব্যবস্থা আবিষ্কার করা হয়। আর গবেষকেরা তখন বুঝতে পারেন, একই পদ্ধতি দৃশ্যমান আলোর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা সম্ভব। এই গবেষণা লেজার আবিষ্কারের পথ খুলে দেয়। আর বর্তমানে মানবজীবনে লেজারের প্রতিনিয়ত ব্যবহার দেখতে পারলে এর আবিষ্কার কর্তারা অবাক হতেন। আধুনিক জীবনে আপনি যা কিছু ব্যবহার করেন এর সাথে কোনো না কোনোভাবে লেজার জড়িয়ে আছে। আলোকের এক অসাধারণ অবস্থান হচ্ছে লেজার। সহজ কথায় বলতে গেলে বলা যায়, এটি এক ধরনের বাল্ব, যেখানে আলো খুবই ঘনীভূত অবস্থায় থাকে। অর্কেস্ট্রের শুরুতে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয় পরীার জন্য। সেখানে একেক বাদ্য একেকভাবে বাজে। সাধারণ আলো তেমনি। যেখানে অনেক রঙ অনেক দিকে আলো ছোটে। আবার বাদ্যযন্ত্র যখন নির্দিষ্ট বাজনা বাজায়, তখন সবাই এটা টিউনে বাজায়। লেজারও অনেকটা তাই, সেখানে সবকিছু বাদ দিয়ে এক ধরনের আলো তৈরি হয়। আলোর সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস হচ্ছে লেজার। সব জায়গায় সব সময় এই আলোকরশ্মি একই রকম কাজ করে। এটা ফোটন কণার এমন ধরনের অবস্থা, তাকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। এ কারণে মানুষের কল্পনার বিভিন্ন স্থানে এই আলোকরশ্মি মানে লেজার অবস্থান করে নিয়েছে। আধুনিককালে বিভিন্ন অপারেশনের কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে লেজার। আবার জিঙ্ক নির্ণয় করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে এ বিষয়ে। লেজার ব্যবহার করে জিঙ্ক নির্ণয় করতে আগে একজন মানুষের সময় লাগত প্রায় চার হাজার বছর। একই কাজ লেজারের মাধ্যমে করতে এখন এক দিন সময় লাগে। আর এতে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে তার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এমনকি রোগের আক্রমণের আগেই জানা যাচ্ছে রোগের ধরন সম্পর্কে। অর্থাৎ চিকিৎসােেত্র লেজার অপরিসীম সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে আমাদের মাঝে। ভবিষ্যতে আরো অনেক ক্ষেত্রে লেজারের অবদান আমাদের বিস্মিত করবে এটাই বলা যায়। বৃষ্টি নামাবে লেজার রশ্মি! বিজ্ঞানীরা জোরালোভাবে মনে করছেন, লেজারের মাধ্যমে মেঘ থেকে বৃষ্টি ও বজ্রপাত ঘটানো সম্ভব হবে। সেন্ট্রাল ফোরিডা কলেজ অব অপটিকস অ্যান্ড ফটোনিকস এবং ইউনিভার্সিটি অব এরিজোনার বিজ্ঞানীরা উচ্চশক্তির লেজার রশ্মিকে কোনো মেঘের মধ্যে নিপে করে বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত ঘটানোর ল্েয প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বিষয়ে কাজ করছেন। কোনো একটি লেজার রশ্মিকে দ্বিতীয় একটি রশ্মি দিয়ে ঘিরে রেখে শক্তির আধার (এনার্জি রিজারভার) হিসেবে কাজ করিয়ে মাঝের লেজার রশ্মিকে আগের চেয়ে আরো অধিক দূরত্বে নিপে করা সম্ভব হবে। সেকেন্ডারি রশ্মি প্রাথমিক রশ্মিকে রিফুয়েল করবে এবং অধিক তীব্রতায় নির্গত হওয়া থেকে বাধা দেবে, যাতে এটি দ্রুত ভেঙে না যায়। এটাকে বলা হচ্ছে ‘এক্সটারনালি রিফুয়েলড অপটিক্যাল ফিলামেনন্টস’। মেঘের মধ্যে পানির কনডেনসেশন এবং বজ্রপাতজনিত ঘটনা বিপুল পরিমাণে স্থির জড়তা সম্পন্ন চার্জড পার্টিক্যালের সাথে সম্পর্কিত। সঠিক মাত্রার লেজার রশ্মি দিয়ে এসব চার্জড পার্টিক্যালকে আলোড়িত করা গেলে নিকট ভবিষ্যতে এক দিন অবশ্যই বিজ্ঞানীরা মেঘ থেকে প্রয়োজনীয় স্থানে ইচ্ছামতো বৃষ্টি ঝরাতে সম হবেন এবং মেঘ আর লেজারের ওপর নতুন দিনের প্রযুক্তি অবশ্যই খরা এলাকায় পানির সমস্যা সমাধান করার সুযোগ এনে দেবে। মেঘ থেকে বৃষ্টি নামানোর প্রচেষ্টা এক যুগান্তকারী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ইন অপটিকস অ্যান্ড লেজারের একজন শিক্ষানবিস ম্যাথিউ মিলস জানান, যখন কোনো লেজার রশ্মির তীব্রতা অনেক বেশি করা হয় সে তখন আর স্বাভাবিক আচরণ করে না এটি এর নিজের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। এই ধ্বংস হয়ে পড়ার সময় এর তীব্রতা এত বেশি মাত্রায় পরিণত হয় যে, বাতাসের অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের ইলেকট্রনগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি প্লাজমা তৈরি করে, যা সাধারণত ইলেকট্রনের এক স্যুপ। এই প্লাজমা তখন চেষ্টা করে লেজার রশ্মিকে উল্টো দিকে ধাবিত করতে, যা একটি আল্ট্রা শর্ট লেজার পালসকে ছড়িয়ে পড়ার এবং ধ্বংস হওয়ার মধ্যকার ঘটনায় এক ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত করে দেয়। এই যুদ্ধ বা রিঅ্যাকশনকে বলা হয় ‘ফিলামেন্টেশন’। এটা একটি ফিলামেন্ট বা ‘আলোর স্ট্রিং’ তৈরি করে, যা বাতাসের বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট হওয়ার আগে অল্প সময়ের জন্য এগিয়ে চলে। যেহেতু একটি ফিলামেন্ট তার চলার পথে আলোড়িত ইলেকট্রন সৃষ্টি করে সে কারণে এটা বৃষ্টি ও বজ্রপাত ঘটানোর প্রয়োজনীয় অবস্থার উদ্ভব ঘটাতে পারে। আবর্জনা ধ্বংস করবে লেজার রশ্মি পৃথিবীর কপথে আবর্জনার তালিকা তৈরি করে লেজার রশ্মি দিয়ে সেগুলো ধ্বংস করার পরিকল্পনা চলছে। আগামী এক দশকের মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দণি আমেরিকার ফরাসি গুইয়ানায় ইউরোপের মহাকাশ বন্দর কুরু থেকে ছয় হাজারের বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ কপথে পাঠানো হয়েছে। এককালে মহাকাশ মহাশূন্যই ছিল। এখন সেখানে পাঁচ লাখের বেশি ভাঙাচোরা যন্ত্রপাতির টুকরো ঘুরছে ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার গতিতে। এগুলো হলো পুরনো স্যাটেলাইট আর রকেটের টুকরো। মহাকাশে যা অকল্পনীয় বিপদ ঘটাতে পারে। এই মহাকাশ আবর্জনার বিরুদ্ধে কিছু না করলে এমন একটা সময় আসবে, যখন স্যাটেলাইটগুলোকে আর কপথে রাখা সম্ভব হবে না। ইতোমধ্যে এই মহাকাশ আবর্জনা হালের স্যাটেলাইটগুলোর পইে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্যাটেলাইট বিকল হয়ে যাচ্ছে, স্যাটেলাইটে-স্যাটেলাইটে ধাক্কা লাগছে। এক দিকে হাজারখানেক স্যাটেলাইট রয়েছে কপথে। অন্য দিকে রয়েছে সাত লাখের মতো বিপজ্জনক লোহালক্কড়ের টুকরো। জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টারে ঠিক এই সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করছেন অ্যাডল্ফ গিসেন। তিনি একটি নতুন ধরনের লেজার ব্যবস্থা তৈরি করছেন, যা অত্যন্ত জোরালো ও নিখুঁত হবে। এই লেজারের সাহায্যে মহাকাশে আবর্জনা কমানো হবে। প্রথম কাজ হবে, পৃথিবীর চার পাশে যে সাত লাখের মতো টুকরোটাকরা ঘুরপাক খাচ্ছে, সেগুলোর একটা তালিকা করা। যদিও কিছু টুকরোর আয়তন এক সেন্টিমিটারের বেশি নয়। এরপর ভূপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে ঘুরপাক খাওয়া আবর্জনার টুকরোগুলোর গতি কমানো হবে লেজারের কামান দিয়ে, যাতে সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। মহাকাশ আবর্জনার তালিকা তৈরি করাটাই কঠিন কাজ, কেননা মহাকাশে নিত্যনতুন পরিবর্তন ঘটছে, পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। অ্যাডল্ফ গিসেন বলেন, এক দিকে স্যাটেলাইটগুলো ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে নতুন আবর্জনা সৃষ্টি হচ্ছে, যা বাকি স্যাটেলাইটগুলোর জন্য বিপজ্জনক। জলদস্যু ঠেকাতে লেজার রশ্মি সোমালিয়া উপকূলে বেড়েই চলেছে বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনতাই। তাই জাহাজ ছিনতাই এবং অপহরণের ঘটনা ঠেকাতে নতুন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা। প্রাণঘাতী নয় এমন লেজার রশ্মি ব্যবহার করেই ঠেকানো যাচ্ছে এসব জলদস্যুদের। যুক্তরাজ্যের প্রতিরা প্রতিষ্ঠান বিএই সিস্টেমসের গবেষকেরা জানিয়েছেন, নতুন প্রযুক্তির এই লেজার ক্যানন জাহাজের ওপর রেখে জলদস্যুদের আটকানো যাবে। জলদস্যুরা যখন জাহাজে আক্রমণ করবে তখন এই লেজার রশ্মি দিয়েই তাদের প্রতিহত করতে হবে। প্রাণঘাতী নয় এমন লেজার রশ্মি তাদের চোখের ওপর ফেললে তাদের চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। প্রায় এক মাইল দূর থেকেই এই লেজার রশ্মি নিপে করা যাবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই সবুজ রঙের লেজার রশ্মি ছুড়লে জলদস্যুদের চোখের আড়াল হয়ে যাবে জাহাজ। তখন জলদস্যুদের দিকে লক্ষ ঠিক রেখে অস্ত্র চালানো কঠিন হবে। বিএই সিস্টেমস অ্যাডভান্সড টেকনোলজি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ রয় কার্ক জানিয়েছেন, নতুন এই ডিভাইসটি ব্যবহার করলে ডামি সূর্যের মতো আলো তৈরি হবে। আর এই আলোর পেছনেই জাহাজ আড়াল হয়ে যাবে। এই লেজার অস্ত্রটি থাকলে ফোকাল পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ লেজারবাহী জাহাজের কাছেই থাকবে। এই লেজার প্রযুক্তিতে দূরের জাহাজকে সতর্কবার্তা পাঠানোর পাশাপাশি নিরাপদ দূরত্বের সাথে মানিয়ে আলো ফেলার ব্যবস্থাও আছে। তবে ৪০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে জলদস্যুদের পেলেই সবচেয়ে ভালো আক্রমণ করা যাবে এই ডিভাইসটির সাহায্যে। মহাশূন্যে তথ্য পাঠাবে লেজার রশ্মি মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে পৃথিবীর সাথে স্পেস-শিপ কিংবা স্পেস-স্টেশনের মধ্যে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে এত দিন ধরে বেতার তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই তরঙ্গের সমস্যা হলো এটি বহুল ব্যবহারের ফলে অনেক জটিল অবস্থায় থাকে। এ ছাড়াও দূরত্ব অতিক্রমের সাথে সাথে সিগন্যালটিও দুর্বল হতে থাকে। ফলে ট্রান্সমিশনের যন্ত্রগুলোকে ক্ষেত্র বিশেষে অত্যধিক শক্তি উৎপাদনকারী জেনারেটরের সাথে যুক্ত করতে হয় ও বিশালাকার এন্টেনাও প্রয়োজন হয়। অবশেষে মহাকাশ অভিযানের পথে এক নতুন মাইলফলক রচনা হয়েছে। মহাকাশের লুনার অরবিটাল সফলভাবে পৃথিবী থেকে পাঠানো ‘মোনালিসা’র ছবি ধারণ করতে সমর্থ হয়েছে। এটি পৃথিবী থেকে প্রথমবারের মতো লেজার তরঙ্গের মাধ্যমে পাঠানো কোনো সঙ্কেত, যা সফলভাবে মহাশূন্যে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। লেজার রশ্মির সুবিধা অনেক। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেতার তরঙ্গের চেয়ে ১০০০০ গুণ কম। তাই ফোকাসকৃত লেজার রশ্মির সাহায্যে অনেক বেশি তথ্য অনেক কম সময়ে পাঠানো সম্ভব। এ ছাড়াও লেজারের মাধ্যমে প্রদত্ত সিগন্যাল তেমন একটা দুর্বল হয় না বললেই চলে। তাই ট্রান্সমিশনে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলোর জন্য শক্তি অনেক কম খরচ হয় এবং ছোটখাটো এন্টেনা হলেই চলে। অর্থাৎ এর সফল ব্যবহার মহাকাশ অভিযানের খরচ কমিয়ে দেবে অনেকটাই। এ ছাড়াও ইউরোপিয়ান মহাকাশ এজেন্সির পাঠানো Alphasat স্যাটেলাইটটি লেজার রশ্মি ব্যবহার করে কাজ করা শুরু করেছে। আর নাসার প্রকৌশলীরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মহাশূন্যের যোগাযোগ আরো সহজ করতে এই রশ্মি নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন; তারা এর জন্য ২০১৭ সালকে ল্যমাত্রা হিসেবে ঠিক করেছেন এবং এর নাম দিয়েছেন- The Laser Communications Relay Demonstration। চিকিৎসায় লেজার রশ্মি লেজারনির্ভর কণ্ঠনালীর লাইভ সার্জারির মাধ্যমে কণ্ঠনালীর সূক্ষ্ম অপারেশনসহ নাক-কান-গলার অনেক অপারেশনই অত্যন্ত সফলভাবে লেজারের মাধ্যমে করা যায়। লেজার হচ্ছে বিশেষ ধরনের আলোক রশ্মি। এই রশ্মিকে ব্যবহার করা হয় অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত ব্লেডের বিকল্প হিসেবে কিংবা বৈদ্যুতিক প্রবাহ দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার উন্নত বিকল্প প্রযুক্তি হিসেবে। লেজারের সুবিধা হচ্ছে অত্যন্ত সরু ও সূক্ষ্ম রেখার মতো এটি যেমন কাটতে পারে তেমনি কাটা অংশটুকু কতটুকু গভীর হবে তাও আগে থেকে নির্দিষ্ট করে দেয়া যায়। লেজার রশ্মি একই সাথে কাটে এবং রক্তরণ বন্ধ করতে পারে। কোনো কোনো সময়ে কোষ-কলাকে বাষ্পীভূত করে দেয়া যায়। এসব কাজের সময় আশপাশের কোষ-কলা ততটা প্রভাব পড়ে না। তাই অপারেশনজনিত ইনজুরি খুবই কম হয়। নাক-কান-গলা বিষয়ে যেসব অপারেশন লেজার রশ্মি প্রয়োগে করা যায় সেগুলো হচ্ছে নাকের টারবিনোপ্লাস্টি বা এলার্জিজনিত কারণে নাসারন্ধ্রে বেড়ে যাওয়া মাংসপিণ্ডকে কার্যকরভাবে সঙ্কুুচিত করে দেয়া। নাকের পলিপ কেটে ফেলা। কানের পলিপ কেটে ফেলা। জিহ্বার কিংবা গালের ভেতরের দিকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা মাংসপিণ্ড কিংবা টিউমার বা ক্যান্সারের অপারেশন। নাকডাকা কিংবা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের জন্য প্রযোজ্য অপারেশন। টনসিলের অপারেশন, কণ্ঠনালীর ভোকাল কর্ডে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের পিণ্ড কেটে ফেলা। নাকের ভেতর ও চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়া দূর করার জন্য প্রযোজ্য অপারেশন ইত্যাদি। লেজার হচ্ছে বিশেষ এক ধরনের আলোকরশ্মি, যা ত্বকে প্রবেশ করে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় পরিবর্তন ঘটায়। সূর্যের আলোকরশ্মিকে কতগুলো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে ভাগ করা হয়। ত্বকে লেজার চিকিৎসার জন্য ল্যবস্তুর শোষণের ধরনের সাথে মিলিয়ে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে নির্ণয় করা হয়। উদ্দেশ্য এমন একটি ওয়েভলেন্থ পাঠানো, যা একটি নির্দিষ্ট ল্যবস্তু দ্বারা শোষিত হবে। ফলে তাপ জমা হয়ে ল্যবস্তুকে ধ্বংস করবে। এই ল্যবস্তুকে বলা হয় ক্রোমোফোর, ত্বকে যা পানি, হিমোগ্লোবিন ও মেলানিন হিসেবে উপস্থিত থাকে। আদর্শগতভাবে এই নির্দিষ্ট ওয়েভলেন্থে পার্শ্ববর্তী কোনো সুস্থ বস্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সময় ও শক্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আশপাশের বস্তুর সামান্যতম তিও রোধ করতে পারেন। লেজারের মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধি মুখের বলিরেখা দূর করে হারানো সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার জন্য ফটো রেজুভেনেশন করা হচ্ছে। এভাবে ব্রণের দাগ, বসন্তের দাগ এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করা যায়। যেকোনো বয়সের লোকই এখন ত্বকের জৌলুস বাড়াতে লেজারের সাহায্য নিতে পারেন। সাধারণত প্রতি মাসে একবার করে কয়েক মাস পর্যন্ত রোগের প্রকারভেদে সমস্যা সেরে ওঠা পর্যন্ত লেজার চিকিৎসা দেয়া হয়। লেজার শুধু চেহারার সৌন্দর্য বাড়ানোই নয়, বরং হ্যারপিও ও মস্তিষ্কের চিকিৎসা, জরায়ুর টিউমার, চোখ ও দাঁতের অসুখ, নাকডাকা ও টনসিল ফোলা, সর্বোপরি ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, মূত্রনালীর বিভিন্ন অসুখে এবং হাড়ের সমস্যায় লেজার এখন নিয়মিত ব্যবহৃত হচ্ছে। source: Website
Posted on: Thu, 18 Sep 2014 15:52:59 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015