ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় নেতৃত্ব কখনোই অসাম্প্রদায়িক নয় মো হা ম্ম দ জ য় না ল আ বে দী ন 29.09.2013 এর পরেও ধর্মনিরপেক্ষতা। এর পরেও ধর্মনিরপেক্ষ ভারত। আর কয়েক হাজার নিরপরাধ মুসলিমকে হত্যার পুরস্কার হিসেবে কুখ্যাত নরেন্দ্র মোদিকে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করার তোড়জোড় চলছে। ধর্মনিরপেক্ষতার এমন প্রতারণা, মিথ্যাচারিতা ও ভাঁওতাবাজি আর হতে পারে না। নরেন্দ্র মোদি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ না পেলেও ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে লালগালিচা সংবর্ধনা পাবে, এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? মোদি কসাই হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও কংগ্রেসসহ পুরো ভারতের কি বাম কি ডান সবাই সাম্প্রদায়িক, সবাই মুসলিমবিরোধী মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী। সেই গান্ধী-নেহেরু-প্যাটেল থেকে শুরু করে যারাই ভারতের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে এসেছিলেন, তাদের সবাই মুখে ধর্মনিরপেক্ষ, বাস্তবে মুসলিমবিরোধী কট্টর সাম্প্রদায়িক। এ পরিস্থিতি একেবারে সর্বস্তরে। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র অনলাইন সংস্করণে উত্তর ভারতে দাঙ্গা প্রসঙ্গে পাঠক-প্রতিক্রিয়ার দিকে দৃষ্টি দিলে অনুভব করা যায়, ভারতে মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িকতা কত প্রবল। অথচ মুসলমানদের অবস্থা নমঃশূদ্র অস্পৃশ্য কথিত হরিজনদের চেয়েও কয়েক ধাপ নিচে। এমন নয় যে ভারত সরকার ভারতীয় মুসলমানদের বাংলাদেশী হিন্দুদের মতো, যারা মোট সংখ্যার আট শতাংশের নিচে, ভারতের সর্বত্র গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসিয়েছে, মুসলমানরা তাদের আয়ের পুরোটাই পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় জায়গা-জমি কেনার জন্য কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগের জন্য, কিংবা বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তানের প্রতি সামান্যতম হলেও তারা ভালোবাসা পোষণ করে। ভারতের সাংস্কৃতিক মানচিত্র উপড়ে ফেলে হিন্দুদের মধ্যে মুসলিম সংস্কৃতিচর্চাকে উত্সাহিত করে বলেই তাদের মনে এমন মুসলিমবিরোধী মানসিকতা গড়ে উঠেছে। ভারতীয় মুসলমানরা এসবের কিছুই করে না। ৯০ ভাগ ভারতীয় মুসলমান একেবারে নিঃস্ব, বলতে গেলে বেকার। ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত কমিশনের রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে, মুসলমানরা কী হারে সব ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত, বেকার, দীনহীন জীবনযাপন করে। এই নিরীহ, অনেক ক্ষেত্রে নিরন্ন, মুসলমান সাম্প্রদায়িক ভারতীয়দের বিরামহীন হামলা ও নিগ্রহের শিকার। ভারতের সব রাজনৈতিক দল তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার বাহন হিসেবে মুসলমানদের ব্যবহার করে। মুখে অসাম্প্রদায়িক বাস্তবে কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী কংগ্রেস অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশ পরে মুসলমানদের ভোট নিশ্চিত করে। আর বিজেপি মুসলমানদের কচুকাটা সমর্থন করে কট্টর হিন্দুদের প্রশংসা কুড়ায়, তাদের ভোট দখল করে। যে কোনো দাঙ্গা হলে কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়ে লাভবান হয়। তাই কংগ্রেসও মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা প্রশ্রয় দেয়। ভারতীয় সাংবাদিক আশিস নন্দীর ভাষায়, ভারতে প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে দাঙ্গা হয়ে থাকে। এসব নিত্যদিনকার দাঙ্গার কথা বাদ দিলেও ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতে সংগঠিত সব বড় বড় দাঙ্গা মুখোশধারী কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালেই ঘটেছে। আর এবার সাম্প্রতিকতম দাঙ্গার সময়ও কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন সরকারই দেশ শাসন করছে। দাঙ্গা বন্ধে কংগ্রেস কিংবা কেন্দ্রীয় অথবা স্থানীয় রাজ্য সরকার বাস্তবে কোনো কার্যকর ভূমিকাই রাখেনি। ভারতীয় পত্রপত্রিকার মতে, মুজাফ্ফরনগরসহ বেশ কটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় অসহায় মুসলমানদের হত্যা করা হয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। ‘ইন্ডিয়া টু ডে’ সাময়িকী সাম্প্রতিক এক সংখ্যায় (১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩) এতদসংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ভোটের জন্য দাঙ্গা’ (Riot For Votes)| সাময়িকীটি ‘অপারেশন : রায়ট ফোর ভোটস’ এ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখিয়েছে—কীভাবে ভারতে নগ্ন সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততা রাজনীতিকে আচ্ছন্ন করেছে এবং পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, মুজাফ্ফরনগরের সড়ক ও চক্গুলো রাজনীতিকদের দাবাখেলার বোর্ডে পরিণত হয়েছে। ছদ্মবেশে ‘টুডে’ সাময়িকীর অনুসন্ধানী দল মুজাফ্ফরনগরে জঘন্য দাঙ্গাচলাকালে ও দাঙ্গা-পরবর্তী সময়ে দায়িত্বে নিয়োজিত উত্তরপ্রদেশ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের একজন এ দলকে জানান, আরও বেশি কিছু ভোটের জন্য এটা ছিল জঘন্যতম প্রশাসনিক গজব, যা পুলিশকে পুলিশের ওপর অর্পিত মূল দায়িত্বের বিপরীতে অবস্থান নিতে বাধ্য করে। এটা ছিল ‘অপারেশন : ভোটের জন্য দাঙ্গা’। (indiatoday.intoday.in/story/muzaffarnagar-headlines-today-sting-riots-for-votes/1/310298.html) পুলিশ কর্মকর্তারা যা বলতে চেয়েছিলেন তা ছিল এমন— কল্পনা সাকসেনা, এসপি, অপরাধ (ক্রাইম) বলেন, অনেক বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এগুলো অনেক ব্যাপক-বিস্তৃত। এখন আমরা অনেক চাপের মুখে রয়েছি। অনেক কাজ আছে। শান্তি ফিরে এলে আমরা কথা বলব। ‘টুডে’র পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়—ম্যাডাম, বলুন তো কেন একটি খুনকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়া হয়? কল্পনা সাকসেনা বললেন, আমি কী বলব? আমি যদি আপনাকে সবিস্তারে বলি, তা হলে তা হবে পুরোপুরি রাজনৈতিক (বক্তব্য)। মুসলমানরা এক ধরনের চিন্তা করেন। হিন্দুরা মনে করেন, মুসলমানদের তোয়াজ (appeased) করা হচ্ছে। অনেক কিছুই ঘটছে। এরপরে শাহপুরোতে নিয়োজিত সত্য প্রতাপ সিং বললেন, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ ও প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমাদের মনে রাখতে হচ্ছে—সরকার কী চায় এবং কীভাবে আমরা আমাদের চাকরি রক্ষা করতে পারি। ভোটব্যাংক রাজনীতি দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর এস ভাগওয়ার ‘ফুগনার’ এসআই। তিনি বলেন, আপনাদের একটি কথা জানাচ্ছি যে, আমি এ থানায় বসেছি এজন্যই যে, তারা (প্রশাসন) যা চাইবে আমি সেভাবে কাজ করতে বাধ্য। অন্যথায় আমাকে সাসপেন্ড করা হবে, বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। আমার সন্তানরা বিপদে পড়বে। আমি কোথা থেকে খাবার পাব? (indiatoday.intoday.in/story/muzaffarnagar-headlines-today-sting-riots-for-votes/1/310298.html) এমন পরিস্থিতির নির্মম শিকার হলো ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মুসলমানরা। রাজনীতিকদের সব পক্ষই চায় মুসলমানরা নির্মূল হোক। বহির্বিশ্বকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে ভারত সরকার ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে দাবি করে। বাস্তবে ভারতের মতো এমন কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী রাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বে নেই। কেবল ইসরাইলের সঙ্গেই ভারতে হিংস্রতা ও নির্মমতা তুলনীয় হতে পারে। বিজেপি ও কংগ্রেস এবং তাদের শরিক দলগুলোর অভিন্ন লক্ষ্য ও স্লোগান হলো—মুসলিম হত্যা করো ভোটের সংখ্যা বাড়াও। এমনকি দাঙ্গার বাইরেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মুসলিম হত্যা অতি সাধারণ ব্যাপার, যেহেতু তাদের হত্যা করলে কোনো ভয় নেই। সরকার তদন্ত করবে, দু-চারজনকে ধরবে, দু-চার দিন কারাগারে রাখা হবে, তারপর ছেড়ে দেয়া হবে। এই তো সেদিন মণিপুরে বহিরাগত শ্রমিক খেদাও আন্দোলনের নামে ৯ মুসলমানকে একই সঙ্গে হত্যা করো হলো। আর অন্য বারোজন জীবনে বেঁচে গেলেও পঙ্গু হয়ে গেলেন। তারা সবাই নির্মাণ শ্রমিক। বাড়ি আসামে। ‘ইম্পল ফ্রি প্রেস’ জানিয়েছে, এ নয়জন দরিদ্র মুসলিম যুবক ছিলেন বাবুল হোসেন (২৫), দিলদার আলী (২২), মো. মোকসিদুল ইসলাম (২৩), মুজিবুর আলী (২৫), রফিকুল ইসলাম (২৪), মুকতার হোসাইন (২৬), সামসুল হুসাইন (২৩), লোকচাঁদ আলী (২১) এবং সোহিবুল ইসলাম (২০)। নিহত ও আহতরা মণিপুরের একটি নির্মাণ প্রকল্পের শ্রমিক হিসেবে আসাম থেকে এসেছিলেন। সবাই একই কক্ষে অবস্থান করতেন। স্থা্নীয় সময় সন্ধ্যে সাড়ে ৭টায় ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাদের হত্যা করে। (ifp.co.in/nws-16921-ied-blast-rips-through-temporary-shed-at-khuyathong-9-dead-12-injured/) মুজাফ্ফরনগর দাঙ্গার অব্যবহিত পরেই ভারতীয় মুসলিম নেতারা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে গেলে তার ‘নীরব ভূমিকা’য় (lukewarm) হতাশা ব্যক্ত করেন। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানায়, এ দাঙ্গায় ৪৭ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এর পরেও প্রধানমন্ত্রী মুসলিম নেতাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে কিছুই বলেননি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সুন্নি মুসলিমদের সবচেয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় সংগঠন ‘জামাতুল ওলেমা-ই-হিন্দ’-এর মাওলানা মাহমুদ মাদানী ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠকটি ছিল অতীব হতাশাব্যঞ্জক। আমাদের প্রত্যাশা ছিল—তিনি অবশ্যই আমাদের আশার বাণী শোনাবেন। কিছু শক্ত ও কঠোর নিশ্চয়তা প্রদান করবেন যে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আর ঘটতে দেয়া কিংবা সহ্য করা হবে না। কিন্তু নির্মমতা ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বচক্ষে দেখে আসার পরেও তিনি এমন মন্তব্যও করেননি যে, মুজাফ্ফরনগরে ঘটে যাওয়া দাঙ্গা অন্যায় কিংবা দুঃখজনক। মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা বলার পর মুসলিম নেতাদের মন্তব্য ছিল, ‘তিনি কেবল কৃত্রিম ঠোঁটসেবা (lip-service) প্রদান করেছেন।’ (timesofindia.indiatimes/india/Muslim-leaders-disappointed-with-PM/articleshow/22644356.cms) মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন এমন একজন মুসলিম নেতা ভারতীয় জাকাত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ জাফর মাহমুদ বলেছেন, এ দাঙ্গা ঘটেছিল মানবতার বিপরীতে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, মুসলিম নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ইউপিএ ও এনডিএ’র মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতাপ্রাপ্তির দ্বন্দ্ব-লড়াইয়ে মুসলমানরা বলির পাঁঠা হয়েছে। ইউপিএ সরকার মুসলমানদের রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। প্রতিনিধিদলের আরেকজন মুসলিম নেতা জানিয়েছেন, মুসলমানদের রক্ষা না করে সরকার নীরব দর্শকের মতো মুসলিম নিধন প্রত্যক্ষ করেছে। একই বৈঠকে সর্বভারতীয় মুসলিম মজলিস-ই-মুসাওয়ারের সভাপতি ড. জাফরুল ইসলাম খান প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, গত ১৭ মাসে উত্তর প্রদেশে কমপক্ষে ২৭টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটানো হয়েছে। তার অভিযোগ ছিল, ‘কিন্তু প্রাদেশিক সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি।’ একই তারিখে (১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩) অন্য একটি খবরে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, মুজাফ্ফরনগরের দাঙ্গা ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গুজরাটের ভয়াবহ দাঙ্গার নির্মমতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে দুই হাজারের বেশি মুসলিম নরনারীকে হত্যা করা হয়েছিল। উত্তর প্রদেশ সরকার সোমবার সুপ্রিমকোর্টকে জানিয়েছে, এবারের দাঙ্গায় মুজাফ্ফরনগর এবং স্যামলি জেলাগুলোর ৯৪টি গ্রামের ৪০ হাজারের বেশি বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং ৪৪ জন (একই পত্রিকায় পরে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ৪৭ জন) জীবন হারিয়েছেন। বাসগৃহ ছাড়াও প্রার্থনাগার হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে। সাহারানপুর বিভাগের কমিশনার ভূবনেশ কুমার ইঙ্গিত দিয়েছেন, মুসলমান ও হিন্দু উভয়কে লক্ষ্যবস্তু করে এ দাঙ্গা লাগানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যমতে, এ দাঙ্গায় জড়িত থাকার সন্দেহে দুই হাজার ৪৬২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। (timesofindia.indiatimes/india/42000-forced-to-flee-religious-sites-damaged-in-UP-riots/articleshow/22644866.cms) এদিকে দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তর প্রদেশ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য বহুজন সমাজ পার্টির মুসলিম নেতা নুর সেলিম রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মুজাফ্ফরনগর কোর্ট বুধবার লোকসভায় বহুজন সমাজ পার্টির লোকসভা সদস্য কাদির রানা, এমএলএ নুর সেলিম ও মাওলানা জামেল, কংগ্রেস নেতা সায়েদুজ্জামানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। (timesofindia.indiatimes/india/Muzaffarnagar-riots-Two-more-MLAs-arrested/articleshow/22847761.cms) ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ ২০ সেপ্টেম্বর (২০১৩) অন্য এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ সালের প্রথম চার মাসের মধ্যে ভারতে এক হাজারের বেশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এতে ৯৬৫ জন নিহত এবং ১৮ হাজারের বেশি আহত হয়। পত্রিকাটি ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রদত্ত তথ্য উদ্ধৃত করে উপযুক্ত পরিসংখ্যান প্রদান করেছে। (timesofindia.indiatimes/india/1000-communal-clashes-965-dead-in-last-8-years/articleshow/22777352.cms)। তবে একই পত্রিকায় উপরোক্ত তথ্যের বিপরীতে বিভিন্ন ভারতীয় মহল এমনকি পাঠকবর্গ পর্যন্ত তাদের মন্তব্যে অভিযোগ করেছেন যে, ঘোষিত পরিসংখ্যান বাস্তবতার পরিপন্থী। বাস্তবে দাঙ্গা ও হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারত সরকার, এমনকি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার কথা মাথায় রেখে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা-হাঙ্গামা, এমনকি বিভিন্নভাবে মুসলিম হত্যার ঘটনাগুলোকে যতদূর সম্ভব সাধারণ ঘটনা হিসেবে দামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। সেসব দাঙ্গার কথা মোটেই গোপন রাখা সম্ভব নয়, কেবল সেগুলোই সংবাদমাধ্যমে স্থান পায়। যেমন মণিপুর রাজ্যে সম্প্রতি যে নয় মুসলিম তরুণ বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন, সেগুলোকে বহিরাগতবিরোধী আক্রমণ বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ নয়জন কোন ধর্মাবলম্বী তাও উল্লেখ করা হয়নি। ‘ফ্রি ইম্ফল প্রেস’ কেবল তাদের নাম প্রকাশ করায় প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা মুসলমান। উল্লেখ্য, মণিপুর উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র হিন্দুপ্রধান রাজ্য। মণিপুরে অবস্থানকারী বিহার, পশ্চিম বঙ্গ, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, নেপাল, গুজরাটসহ অন্যান্য দূরবর্তী রাজ্য থেকে আসা হিন্দুরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি, হয়েছে নিকটবর্তী প্রতিবেশী আসামের অধিবাসীরা, তাও কেবল মুসলমান তরুণরা। এ হত্যাকাণ্ড বাস্তবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ হলেও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তা তেমন গুরুত্ব পায়নি। উল্লেখ্য, এর আগে জুলাই মাসে আসামেও মুসলিমবিরোধী ব্যাপক দাঙ্গা হয়েছিল। বস্তুত হিন্দুপ্রধান ভারতের নেতারা মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন। বাস্তবে হিন্দু নেতানেত্রীদের কেউই মুসলিমবিদ্বেষ থেকে মুক্ত নন; গান্ধী-নেহেরু থেকে জ্যোতিবসু-মমতা-গাগৈ সবাই। বাস্তব বিশ্লেষণে তারা অন্তরে নরেন্দ্র মোদির চেয়ে কোনো অংশেই কম নন। এমনকি ভারতীয় আদালতও কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী। ১৯৯৬ সালের ২১ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিম বাংলার মোট জনসংখ্যার ২৫.৪ ভাগ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মূলত মুসলমানদের লক্ষ করেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে লাউড-স্পিকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এক রুলিং জারি করেছিল। জাস্টিস ভগবতী প্রসাদ ব্যানার্জি ও জাস্টিস এ কে চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এ রুলিং জারি করে। তাদের মতে, যেহেতু ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র (যা বাস্তবে মোটেই সত্যি নয়, বরং উল্টো), তাই ‘শব্দদূষণ’ নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সে বছর ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটসংলগ্ন মসজিদে এক মিলাদ মাহফিলে লাউড স্পিকার ব্যবহার করায় মসজিদ কমিটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বিচারে তাদের অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ওই বছরের ৬ মার্চ কমিউনিস্ট হিসেবে পরিচিত পশ্চিম বঙ্গের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসু মুসলমান, শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় তাদের হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চলতে অনুরোধ করেন। কমিউনিস্টরা যদি এমন অনুরোধ করতে পারে, তবে সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা কেমন মুসলিম কিংবা খ্রিস্টানবিরোধী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। জ্যোতিবসুর দীর্ঘ রাজত্বকালে মুসলমানরা সব ক্ষেত্রে বঞ্চিত ছিল। সাচার কমিটির প্রতিবেদনমতে, মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার ২৫.৪ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব ছিল চার শতাংশেরও নিচে। ১৯৪৭ সালে বনেদি উচ্চবিত্ত মুসলিম পরিবারগুলোর অধিকাংশ উত্তরাধিকারীই সব ক্ষেত্রে সুযোগ ও সুবিধাবঞ্চিত হয়ে বর্তমানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তারা দিনমজুর, রিকশাচালক, জোগালি, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, দর্জি, ফেরিওয়ালা, ক্ষুদ্র দোকানি, ভাগ্য খুব ভালো হলে স্কুলশিক্ষক প্রভৃতিতে পরিণত হয়েছেন। এর পরেও ভারতীয় হিন্দুরা অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ! আর বাংলাদেশে এমন হিন্দু পরিবার নেই বললেই চলে—যাদের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা বেকার আছে, ধর্মীয় কারণে তাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে, তাদের ঢোল বাজানো কিংবা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। হিন্দুরা বর্তমানে বাংলাদেশে সাত শতাংশের বেশি নয়, কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব শিক্ষিতদের ক্ষেত্রে শতভাগ বললে ভুল হবে না। এর পরেও ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া রাজনীতিক ও বুদ্ধিবিক্রিজীবীদের চোখে বাংলাদেশের মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, আরো কত কী? প্রভুকে খুশি করতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারিতা যেন ওদের চাকরি। তারা বাংলাদেশের জনগণের পয়সা দিয়ে তাদের ভারতীয় প্রভুদের খুশি করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের অনেকের কাকাবাবু, যিনি কাউকে কাউকে নোবেল পুরস্কার পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়েছিলেন, জ্যোতিবসু যুগের অবসান ঘটিয়ে পশ্চিম বাংলার সিংহাসনে বসল আমাদের অনেকের ‘দিদিমণি’ মমতা ব্যানার্জি। ভারতের একটি ক্ষুদ্র প্রদেশে তৃণমূল কংগ্রেস প্রাদেশিক পরিষদে আসন বেশি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের বাঘা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব প্রটোকল ভেঙে সারা দুনিয়াকে বিস্মিত করে পরাধীন পশ্চিম বাংলার সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে অভিনন্দন জানালেন, যা প্রধানমন্ত্রীর তথা বাংলাদেশের মর্যাদাকে চরমভাবে নিচে নামিয়েছে। আর যায় কোথায়, আকাশচারিণী দীপু মনি অস্থির হয়ে পড়লেন। তিনিও দিদির মনোরঞ্জনে এগিয়ে এলেন। তিনিও তাকে অভিনন্দন জানালেন। মমতার বিজয়ে তাদের এমন আনন্দিত ও আবেগপ্রবণ হওয়ার রহস্য আজও অজানা। কিন্তু তারা অনুভবই করতে পারেননি, দিদিমণি মমতা হিন্দু সাম্প্রদায়িক চেতনামুক্ত নন, বরং তিনিও একই গুরুর শিষ্য। সাম্প্রদায়িক মানসিকতায় আচ্ছন্ন ভারত সরকার বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত করতে সেই মমতাকেই ব্যবহার করল। বলা হলো, মমতা বাংলাদেশের ব্যাপারে মমতাহীন, তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দিতে চায় না। কেমন মিথ্যাচারিতা? কেমন অদ্ভুত প্রতারণা? পরাধীন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে ভারত সরকারের নির্দেশ অমান্য করে? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? গান্ধী, নেহেরু, মনমোহন, জ্যোতি, মমতা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ—সরাসরি মুসলিমবিরোধী কট্টর সাম্প্রদায়িক। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে কিংবা সীমান্ত ভূমি বিনিময়ের যে চুক্তি হয়েছে, মমতা সেসব চুক্তি মোটেই মানতে রাজি হচ্ছেন না। মুসলিম বাংলাদেশকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে মমতা মোটেই ইচ্ছুক নন। ভারতীয় বিচার বিভাগ যে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে নয়, কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশই শেষ নয়—এ ধরনের অনেক রায় ও নির্দেশনা ভারতীয় বিচার বিভাগ থেকে দেয়া হয়েছে, যেগুলো ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম দেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে। সুপ্রিমকোর্ট ভারত সরকারকে এ মর্মে এক আদেশে বলেছে, আন্তঃনদী সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া সব নদীর পানি ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে সরিয়ে নিতে হবে, যাতে ওই অঞ্চলের কৃষিসহ সাধারণ মানুষের পানিকষ্ট দূরীভূত হয়। সুপ্রিমকোর্ট এ নির্দেশনা তদারকি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করতে বলেছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আন্তঃনদী সংযোগ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছে। কেমন ভয়াবহ আগ্রাসী অমানবিক নির্দেশনা? তথ্যাভিজ্ঞমহলের অভিযোগ—বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান হওয়াতেই স্বয়ং সুপ্রিমকোর্ট এমন অন্যায্য রুলিং প্রদান করেছে ভারত সরকার তথা নীতি-নির্ধারকদের পরামর্শে, যদিও এ ধরনের নির্দেশনা প্রদানের কোনো নৈতিক ও আইনগত অধিকার ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট কিংবা সরকারের নেই। বিচারপতিরা হিন্দু বলেই সাম্প্রদায়িকতা-দোষে দুষ্টু, তাই আন্তর্জাতিক আইন সরাসরি লঙ্ঘন করতে তারা সামান্যতম লজ্জাবোধও করেননি। সুতরাং ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র—এমন দাবি করা চরম মিথ্যাচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের ভারতবান্ধব কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারীরা ভারতে মুসলিম নিধনের বিরুদ্ধে ‘টুঁ’ শব্দও করেননি, প্রতিবাদলিপি পাঠানো তো দূরের কথা। মুসলিম নিধনে ভারত সরকারের মতো এরা নীরব। বাংলাদেশী ভারতবান্ধবদের দৃষ্টিতে হয়তো মুসলিম নিধন কোনো অপরাধই নয়, কারণ আমাদের দেশেও তো বহু মুসলমান ভারতবান্ধব সরকারের হাতে খুন হচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের উভয়ের ভূমিকাই কি এক ও অভিন্ন? তাই তারা ভারতে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদ না করে বরং প্রশংসা করলেও কেউ বিস্মৃত হবেন বলে মনে হয় না। লেখক : বাংলাদেশী আমেরিকান সাংবাদিক ও গবেষক noa@agni
Posted on: Sun, 29 Sep 2013 05:06:49 +0000
Trending Topics
Recently Viewed Topics
© 2015