সন্ধ্যাছায়া By- Raufun Noor - TopicsExpress



          

সন্ধ্যাছায়া By- Raufun Noor Ratul সিদ্দিক সাহেব অসময়ের এই সন্ধ্যা বেলা ইজি চেয়ারে বসে দুলুনি খাচ্ছেন।অসময় বলার কারন এই সময়টাতে তিনি বাজারে যান আগামীকালকের জন্য বাজার করতে।কিন্তু তিনি বাজার না করে এখানে বসে দুলুনি খাচ্ছেন।দুলুনির বেগ অন্যান্য দিনের থেকে বেশি।কারন আজকে তাঁর রাগের বেগ দুলুনির বেগের থেকেও বেশি। রাগের কারন তার একমাত্র সুকন্যা তূরনা।বাজারে যাওয়ার পথে দেখেন তার আদরের দুলালি তূরনা একটা ভ্যাবলা টাইপের ছেলের সাথে গা ঢলাঢলি করতে করতে যাচ্ছে।গা ঢলাঢলিটা কথাটা যদিওবা অশ্লীল কিন্তু সেভাবে কাছাকাছি বসার কথাটা এর থেকে ভাল কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।দেখার পর থেকে তিনি মাথা নিচু করে এসে তাঁর ইজি চেয়ারে বসেছেন।রাহেলা একবার জ্বিজ্ঞেস করেছিল,আজ তুমি বাজারে যাবে না?কিন্তু সিদ্দিক সাহেবের রক্তচক্ষু দেখে সাথে সাথে বাজারের কথাটা উবে গেছে মুখ থেকে।এই বাসার সবাই তাঁকে ভয় পান।এতে তিনি আনন্দিত বোধ করেন।বাড়ির কর্তা থাকবে বাঘের মত কোন বিড়াল কোনদিন বাড়ির কর্তা হতে পারে না।বাড়ির কাজের ছেলে মকবুল একদিন না বুঝে ভ্যাবলার মত হেসেছিল বলে কষে একটা থাপ্পর মেরেছিলেন তিনি।তারপর থেকে মকবুল তাঁকে দেখলেই ভয়ে কেমন যেন সিঁটিয়ে যায়।যার ভয়ে কিনা মকবুলের মত ছেলে ভয়ে সিটিয়ে যায় আজ তারই সামনে দিয়ে কিনা তারই মেয়ে গা ঢলাঢলি করতে করতে গেল আরেক ভ্যাবলার সাথে।নাহ এর একটা বিহিত করতেই হবে আজ।আসুক আজ তূরনা খালি বাসায়। -তূরনা এই তূরনা।এদিকে আসো তো একটু।ব্জ্র কন্ঠে হাঁক ছাড়লেন তিনি তূরনার আসার শব্দ শুনে। -বাবা এখন আসতে পারব না।ফ্রেশ হয়ে আসছি তোমার কাছে।সিদ্দিক সাহেব মেয়ের এরূপ আচরণে ব্জ্রাহত হয়ে দুলুনী বন্ধ করে দিলেন।তার ব্জ্র কন্ঠের ডাককে পাত্তাই দিল না তার মেয়ে।গা ঢলাঢলি করার সাথে সাথে দেখি মেয়ের দুপাশে দুখানা পাংখা গজিয়েছে।এমনকি সেই পাংখা বড় হবার পাশাপাশি সেই মিনমিনে বিড়ালের স্বর আজ বাঘিনীর স্বরে রূপান্তরিত হয়েছে। -বাবা বল কি জন্য ডেকেছ?তূরনা চুল ঝারতে ঝারতে বলল। -এতক্ষন কোথায় ছিলে? -বাবা ঘুরলাম রিক্সাতে করে।অনেকদিন ঘুরি না তো -কার সাথে ঘুরেছো?আগের থেকে থেকে গলা আরো গম্ভীর করে বললেন তিনি। -বাবা কেন মিছিমিছি জিজ্ঞেস করছ?আমি ভাল করেই জানি তুমি আমাদের দেখেছ।এই কারনেই তুমি আজ বাজার বাদ দিয়ে এখানে বসে আছো।বাবা আমি রনিকে বিয়ে করেছি।লুকিয়ে বিয়ে করেছি তোমাকে বলতে পারছিলাম না তাই আজকে তোমাকে দেখানোর জন্য এলাকার আশপাশ দিয়ে ঘুরাঘুরি করেছি দুই ঘন্টা যাবৎ যাতে করে তুমি দেখতে পাও আমাদের। সিদ্দিক সাহেব মেয়ের এই এতবড় উত্তর শুনে তিনি কি হত হয়েছেন এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না।সেই ভ্যাবলার মত ছেলেটা নাকি তার সুকন্যার জামাই।আগে ভেবেছিলেন মেয়ের পাখা গজাচ্ছে এখন দেখা যায় মেয়ের পাখা গজিয়ে ঊড়াউড়িও শুরু করে দিয়েছে।তাঁর প্রচন্ড রাগ উঠছে।রাগে শরীর বেয়ে ঘাম বের হচ্ছে।কিন্তু কেন জানি তিনি রাগ প্রকাশ করতে পারছেন না।নিজের কাছে নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তাঁর। -বিয়ে করেছো তো বাবার বাড়ি কি কর?তল্পিতল্পা নিয়ে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দাও এখনি।কিছুক্ষন চুপ থেকে কথাটা বললেন তিনি। -হ্যা বাবা আমি আজ চলে যাব।আমার শ্বশুড় শাশুড়ি কেউ নেই তাই রনি একাই থাকে।এখন নতুন বাসা নিয়েছে আজ আমরা রাতেই ওখানে উঠব।তোমার সাথে এই কথাগুলো বলার জন্য বাসায় এসেছিলাম।তূরনা মাটির দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলে গেল কথাগুলো। কথাটা শুনে সিদ্দিক সাহেবের খুব কষ্ট হতে লাগল।তার মেয়েটা এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে তা তিনি কখনো ভাবতে পারেন নি।কষ্ট হলেও তা তিনি মুখে প্রকাশ করলেন না।শুধু বললেন, -এই বাড়িতে আর এসো না।এই বাড়ি এখন আর তোমার জন্য নয়। সেই রাতে তূরনা চলে যায় বাড়ি ছেড়ে।রেহালা কিছুক্ষন কান্নাকাটি করলেও সিদ্দিক সাহেবের একটা রাম বকা খেয়ে চুপ হয়ে যান।রাত গভীর হয়ে আসলে মনের সকল চাপা কষ্ট চোখের কোনে এসে ধরা দিতে থাকে। সেই ঘটনার পর তিন বছর কেটে যায় দেখতে দেখতে।এক সকালবেলা ঘুম থেকে ঊঠে দেখতে পান রাহেলা নেই বাসায়।জানে রাহেলা কোথায় গিয়েছে।রাহেলা তূরনাকে দেখতে গিয়েছে।কারন আজ তূরনার জন্মদিন।প্রতিবছর এই দিনে রাহেলা তূরনার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করে।সিদ্দিক সাহেব সব জানেন কিন্তু কিছু বলেন না।এই তিন বছরে রাহেলা গেলেও তূরনাকে নিয়ে সেদিনের পর থেকে আর কোন কথা বলেন নি তিনি।রাহেলা না থাকার ফলে সকাল বেলার নাস্তা নিয়ে নিজেই খাওয়া শুরু করে দেন তিনি।হঠ্যাৎ ঘরের কোনে ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠে। -হ্যালো কে বলছেন? -হ্যালো এটা কি সিদ্দিক সাহেবের নাম্বার?আপনি কি একটু আল মদিনা ক্লিনিকের ৫১২ নাম্বার কেবিনে আসতে পারবেন?সেখানে আপনার স্ত্রী ভর্তি হয়েছেন।তিনি এক্সিডেন্ট করেছেন কিনা। সিদ্দিক সাহেব কোনমতে ফোনটা রেখে বেড়িয়ে পড়েন ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে।যাবার পথে নানা খারাপ চিন্তা ভর করতে থাকে তার মাথায়খোদাতাআলার নাম জপতে জপতে তিনি এসে দাড়ান ৫১২ নাম্বার কেবিনের সামনে।কেবিনের ভেতর ঢুকে দেখেন শুধু রাহেলা কেন কোন মানুষের অস্তিত্ব নেই সেখানে।তিনি বের হয়ে আবার দেখে নেন নাম্বারটা।আবার ভেতরে যেয়ে দেখতে পায় কোনার দিকে এক বাচ্চা একদম তূরনার মত দেখতে।ছোটবেলা তূরনাকে যেমন লাগত ঠিক তেমনি লাগছে বাবুটাকে।সেই তুলোর মত হাত পা,সেই সুন্দর মুখ।সিদ্দিক সাহেবকে দেখেই বাচ্চাটা যেন একটু হাসল।চারপাশে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ নেই।এতটুকু বাচ্চাকে একা ফেলে সব গিয়েছে কই মরতে?বিরক্তিতে আর বাচ্চাটিকে দেখার চিন্তায় তিনি ভুলেই গেলেন ক্ষনিকের জন্য রাহেলার কথা।হঠ্যাৎ বাচ্চাটি তারস্বরে কেঁদে ঊঠল।হয়তোবা ক্ষুধা পেয়েছে।তিনি দৌড়ে বের হয়ে চীৎকার দিয়ে নার্সকে ডাকতে লাগলেন কিন্তু কেউ সাড়া দিল না।তারপর ভেতরে গিয়ে নিজেই কোলে তুলে নিলেন বাচ্চাটাকে।কোলে তুলে নিয়েই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন রাহেলা,তার সুকন্যা তূরনা আর ভ্যাবলা রনিটা হাসছে দাঁত বের করে। -এই গাধী ছিলি কই এতক্ষন?এত ছোট বাচ্চাকে কেউ ফেলে রেখে যায় নাকি?নে কোলে ধর। আর এই ভ্যাবলা আসো আমার সাথে সকাল বেলায় তোমাদের এই নাটকের জন্য চা টা পর্যন্ত খেতে পারে নি ঠিকমত।নিচে গিয়ে চা খেতে খেতে দেখি তুমি কেমন চালাক। কৃ্ত্রিম বিরক্তি ঢালা কন্ঠস্বরে বললেন তিনি।
Posted on: Fri, 20 Sep 2013 04:01:46 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015