কমেডিয়ান বিল মাহেরের - TopicsExpress



          

কমেডিয়ান বিল মাহেরের একটা টক শোতে ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রজেক্ট করা, সেইটায় অভিনেতা বেন এফ্লেকের জবাব এবং ক্যালিফোর্নিয়ার একটা ইউনিভারসিটির প্রফেসর রেজা আসলানের সিএনএনের সেই বিষয়ে বক্তব্য সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছে। এই বিষয়ে বন্ধুদের ওয়াল থেকে বিভিন্ন মন্তব্য পেয়ে, ইসলামকে টেরররিজমের সাথে লিঙ্ক করে যে প্রচারনা, তা নিয়ে কিছু পড়াশোনা করছি। সেই নিয়ে আমার অব্জারভেশান গুলোর থেকে কিছু আগামি দিনের স্ট্যাটাসে ছাড়া ছাড়া ভাবে দিবো। খেয়াল রাখবেন, কোনটাই আমার নিজস্ব অব্জারভেশান না। বরং, বড় বড় ইসলামিক আলেমদের ব্যাখ্যা, আমি এই কন্টেক্সেটে হাজির করছি, কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে। আমরা একটু দেখি, কিসের ভিত্তিতে ইসলামকে সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসে উৎসাহ দেয়া হয় এমন ধর্ম হিসেবে দেখানো হয়। ইসলাম যে একটা সন্ত্রাসী ধর্ম, ইসলাম টেররিজমকে উৎসাহ দেয়, এইটার সব চেয়ে কড়া রেফারেন্স হিসেবে আল কোরানের, ৮ নাম্বার সুরা আনফালের ১২ নাম্বার আয়াতকে ব্যবহার করা হয়। এই আয়াতে বলা হয়েছে, [Remember] when your Lord inspired to the angels, I am with you, so strengthen those who have believed. I will cast terror into the hearts of those who disbelieved, so strike [them] upon the necks and strike from them every fingertip. quran/8/12 সুরা ৮, আয়াত ১২। সুরা আল আনফাল। যখন তোমার প্রভু, ফেরেস্তাদেরকে বললেন, “ আমি তোমাদের সাথে আছি। তাই, যাদের বিশ্বাস আছে তাদের বিশ্বাসকে মজবুত করো। আমি অবিশ্বাসীদের হৃদয় সন্ত্রস্ত করবো। তাই, তাদের মাথাকে আঘাত কর (ইউসুফ আলি,পিকহল এবং শাকিরের অনুবাদে এইটা মাথাকে বিচ্ছিন্ন করো হিসেবে আসছে। কিন্তু আমি রেফারেন্সের সুবিদারথে উপরের লিঙ্কের ইংরেজি অনুবাদটা ব্যবহার করলাম), এবং তাদের সকল আঙ্গুলের মাথা বিচ্ছিন্ন করো।“ এই আয়াতকে অভিজিত রায় সহ , বিল মাহের সহ সকলেই ব্যবহার করেছে, রেফারেন্স হিসেবে যে, ইসলামের আল কোরানে, সকল অবিশ্বাসী বা ননমুসলিমদের মাথায় আঘাত করে, মেরে ফেলার কথা বলা হয়েছে। আমরা এখন দেখি। আসল বিষয়টা কি। এই আয়াতটা নাজিল হইছে, ইসলামের প্রথম যুদ্ধ, বদর যুদ্ধের কয়েক ঘণ্টা পরেই বদর যুদ্ধের রিভিউ হিসেবে। এই সুরায় বদর যুদ্ধের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সম্ভবত সব চেয়ে গুরুত্তপুরন যুদ্ধ। মক্কার পৌত্তালিকেরা ইসলামের চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে, মদিনায় আক্রমন করতে আসে এবং তার ফলে এই যুদ্ধটা সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে, সংখ্যায় কম হলেও, অস্ত্রে শস্ত্রে দুর্বল হলেও রাসুল (সাঃ) এবং উনার সাথীরা জয় লাভ করেন। এবং, আল কোরানের রেফারেন্স অনুসারে আল্লাহ ফেরেস্তাদেরকে এই যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে পাঠান। সেই ফেরেস্তাদেরকে আল্লাহ কি আদেশ দিয়ে পাঠান, সেইটাই এই আয়াতে বলা হয়েছে। আপ্নারা যদি সুরা আনফালের ১২ নাম্বার আয়াতের আগের আয়াত গুলো দেখেন তাইলে দেখবেন, ৮ঃ৯ [Remember] when you asked help of your Lord, and He answered you, Indeed, I will reinforce you with a thousand from the angels, following one another. আমি জাস্ট এইটা অনুবাদ করলাম। মনে রাখবেন। আপনি যখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন, তিনি আপনার (সাহায্যের ) উত্তর দিলেন “অবশ্যই, আমি আপনার সাথে সংজোযন করবো, সহস্র ফেরেশতা, একজনের পরে আরেকজন” ৮ঃ১০ And Allah made it not but good tidings and so that your hearts would be assured thereby. And victory is not but from Allah . Indeed, Allah is Exalted in Might and Wise. ৮ঃ১১ [Remember] when He overwhelmed you with drowsiness [giving] security from Him and sent down upon you from the sky, rain by which to purify you and remove from you the evil [suggestions] of Satan and to make steadfast your hearts and plant firmly thereby your feet. এই খানে আসলো বারো নাম্বার আয়াত, যেই খানে ফেরেশতাদেরকে কি বলে পাঠানো হয়েছে তার কথা বলা হয়েছে ৮ঃ১২ [Remember] when your Lord inspired to the angels, I am with you, so strengthen those who have believed. I will cast terror into the hearts of those who disbelieved, so strike [them] upon the necks and strike from them every fingertip. যখন তোমার প্রভু, ফেরেস্তাদেরকে বললেন, “ আমি তোমাদের সাথে আছি। তাই, যাদের বিশ্বাস আছে তাদের বিশ্বাসকে মজবুত করো। আমি অবিশ্বাসীদের হৃদয় সন্ত্রস্ত করবো। তাই, তাদের মাথাকে আঘাত কর, এবং তাদের সকল আঙ্গুলের মাথা বিচ্ছিন্ন করো।“ ৮ঃ১৩ That is because they opposed Allah and His Messenger. And whoever opposes Allah and His Messenger - indeed, Allah is severe in penalty. ৮ঃ ১৪ That [is yours], so taste it. And indeed for the disbelievers is the punishment of the Fire. ৮ঃ ১৫ O you who have believed, when you meet those who disbelieve advancing [for battle], do not turn to them your backs [in flight]. আগেই বলছি, এই সুরাটা যুদ্ধের ঠিক পরে পরে নাজিল হইছে। এই যুদ্ধে, ৭০ জন আক্রমনকারী নিহত হয়। ক্লিয়ারলি এই খানে বদর যুদ্ধে কোন পরিস্থিতিতে ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন, সেই কাহিনী বর্ণিত হইছে একটা সুরায়। তো এই যুদ্ধের সময়ে, রাসুল (সাঃ) আল্লাহর সাহায্য চাইলেন। এবং সেইটা শুনে যেই বানি দিয়ে , যুদ্ধের আক্রমনকারীদেরকে ঠেকানোর জন্যে আল্লাহ ফেরেস্তাদেরকে নির্দেশ দিছেন, সেইটাই হইলো আয়াত নাম্বার ১২। একটা যুদ্ধের সময়, আক্রমনকারীদের কিভাবে ঠেকাতে হবে সেই আদেশ টা এখন হয়ে গ্যাছে , মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানোর আয়াত। এই বানির রেফারেন্সে বলা হয়, ইসলাম ধরমে বলা আছে, বাকি সকল ননমুসলিমদেরকে গলা কাটতে। আউট অফ কন্টেক্সটে ব্যবহার করে অভিজিত রায়েরা আর বিল মাহেররা দেখাইতে চান মুসলমানরা সবাই, আইসিলের মত। বাস্তবতা হইলো, ইসলামে অন্য একটা মানবকে হত্যা করাকে সব চেয়ে জঘন্য অপরাধ হিসেবে দেখানো হইছে। Whosoever kills a human being without (any reason like) man slaughter, or corruption on earth, it is as though he had killed all mankind ... (5:32) And whoever saves a life it is as though he had saved the lives of all mankind (5:32). এই রিজনটা কি ? সেইটাকে বলা হইছে আর একটা আয়াতে। Do not kill a soul which Allah has made sacred except through the due process of law (6:151) এই ডিউ প্রসেস অফ ল হইলো একটা কোর্ট সিস্টেমের মাধ্যমে দেয়া, সর্ব সাইড বিবেচনা করে, ডিফেন্সের যুক্তি শুনে দেয়া একটা শাস্তি। এইটা রাষ্ট্রকে দেয়া ভায়লেন্সের অধিকার। যেই অধিকারে, আমেরিকাতেও ফাসি দেয়া হয়। এইটা রাস্ট্রের অধিকার। খুব ক্লিয়ারলি বলা হইছে, একটা ইন্সটিটিউশনাল প্রসেসে শাস্তি ছাড়া, আরেকজনকে হত্যার অধিকার ইসলামে দেয়া হয় নাই। আপনার ইচ্ছা হইলো, আপনি কাফের মারবেন, শিয়া মারবেন, এইটা ইসলামে নাই। পিরিয়ড। ফলে এইটা ক্লিয়ার আইসিল এখন যেইটা করতাছে সেইটা ইসলাম সিদ্ধ না। এবং আইসিলের কাজের রেফারেন্সে আজকে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে, বলা হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম টেররিজমকে প্রমোট করে, সেইটা আসলে অনেক বড় প্ল্যানের অংশ। বাস্তবতা হইলো, সব চেয়ে নবীন ধর্ম হিসেবে, ইসলাম তার জন্মের শুরূ থেকেই অনেক ধরনের আক্রমনের সম্মুখীন হইছে। ক্রিসচিয়ানিটি যেই ভবে জিউদের হাতে হইছে, বুদ্ধিস্টরা যেই ভাবে হিন্দুদের হাতে হইছে, ইসলামও জন্মের পরে পরেই বেশ কিছু যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গ্যাছে। সেই রেফারেন্স ইসলামের আল কোরান এবং হাদিসে আছে। এই গুলোকে আউট অফ কন্টেক্সট প্লেস করে ইসলামোফবিয়া দিয়ে আজকে বিশাল বড় ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকে যার উপরে মার্কিন এবং অনেক ইউরোপিয় অর্থনীতি নির্ভরশীল । তবে শুধু, অভিজিত রায় আর বিল মাহেরদের দায়ী করে লাভ নাই। আমাদের দেশের মোল্লারাও, এই আয়াতের রেফারেন্স ধরে ভিন ধর্মীদেরকে বিভিন্ন ভাবে নিগ্রহ করা জায়েজ মনে করেন। আমার বেশ কিছু বন্ধু ইসলাম নিয়ে আলাপে যেই ধরনের অন্য ধর্মের প্রতি অসহিস্নু মন্তব্য করেন, সেই গুলো দেখেও অবাক হই, বিল মাহেরদের আর কি দোষ দিবো। এবং ফেসবুকে অবমাননাকে ইস্যু করে, যেই সব ধর্মীয় আক্রমন হইছে, তারাও এই আয়াত বিল মাহেরদের চোখে দেখে। এবং এই একটা মাত্র আয়াতের বঙ্গানুবাদ খুজতে গিয়ে, আমি ইন্টারনেটে যেই রকম অদ্ভুত অদ্ভুত ভয়াবহ বঙ্গানুবাদ পেলাম, তাতেও স্তম্ভিত হইলাম। রাতে ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে এই স্ট্যাটাসটা লিখলাম। আগামি কয় দিন, আমি বিল মাহের দের বাকি প্রচারনা গুলোর জবাব দেয়ার চেষ্টা করবো।
Posted on: Mon, 06 Oct 2014 22:47:28 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015